[অন্যর দোষ না খুঁজে আগে যদি সবাই নজের দোষটা খুঁজত তাহলে বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত]............... [পথের শেষ নেই, আমার শেষ আছে, তাইত দ্বন্দ্ব] http://mamunma.blogspot.com/
আগের রাতেই প্রস্তুতির মানসিক একটা মহড়া রোমেল নামের ছেলেটি নিয়ে নিয়েছিল বলেই সকালে যখন বারংবার কান্না জড়ানো কণ্ঠে মিথিলা নামের মেয়েটি বহুদিনের ভালবাসার উপসংহার দাবী করছিল, ছেলেটির না বোধক উত্তরে কোন ভিন্নতার আগমন ঘটছিল না।
রোমেলের পরিকল্পনার অদ্ভুত দিকটা তো মিথিলার জানার কথা নয়। জানলে একটানা তিনঘন্টা সে কাঁদতে চাইলেও নিশ্চিত রোমেলকে শোনাতে চাইতোনা।
তিন ঘন্টা পর যখন বুঝেছিল রোমেলের পূর্বেকার কোমল হৃদয়ের চারপাশে কোন গোপন কারনে ভয়াবহ একটি পাথুরে দেয়াল তৈরী হয়েছিল তখন বাধ্য হয়ে মেয়েটা পণ করেছিল- ‘রোমেল যখন মানলোইনা , যাক বাবা মার কথাই মেনে নেব, পাত্র কে চোখে না দেখেই রাজী হয়ে যাব। ’
অবশ্য এ পণটুকু সে মনে মনেই করেছিল।
ফোন রেখে দেয়ার আগে অবশ্য শেষ একবার বলেছিল, ‘রোমেল, তুমি কি আমাকে ভালবাসনা? বল শুধু এই উত্তরটুকু দাও, বিয়ে করতে হবেনা, এতক্ষণ পালিয়ে যাবার যে বায়না ধরেছিলাম, যাও তাও ভুলে যাও , শুধু বল ভালবাস কিনা?’
রোমেল চুপ করে ছিল।
মিথিলা আবার ও বলল, ‘বল না প্লিজ , বল রোমেল , আমি বিয়ের জন্য জোর করব না, কেবল সত্যি কথাটা বল, কেনো বিয়ে করতে চাইছনা জানতে চাইব না, শুধু উত্তরটুকু বলে রেখে দাও। ’
তারপর একটু গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কেবল বলেছিল রোমেল, ‘বাসি, উইশ ইউ গুডলাক। ’
মিথিলা আর কল দেবে না বললেও, পারেনি। দিয়েছিল, একবার দুবার না অনেকবারই।
রোমেল ধরেনি একবারও। ধরবেই বা কেনো, ও তখন ভালবাসার সেই চরম রূপ দর্শনে প্রত্যয়ী ভীষণ। এমনকি মিথিলা দেখা করারও চেষ্টা করেছিল সেদিন, রোমেল যেন হাওয়ায় মিশে গিয়েছিল। কোথাও পায়নি মিথিলা তাকে।
মেয়ে মানুষতো, কত আর কাঁদবে , এক সময় জিদ চেপে বসল।
মা-বাবার মুখের হাসিটুকু অবশ্য একটু শান্তি ঝরালো প্রাণে এবং বিয়েটা পাকাপাকি হয়ে গেলো আমেরিকা প্রবাসী জনৈক আজ্জত সাহেবের সাথে।
হায়! রোমেল, মোহাচ্ছন্ন রোমেল! সে যদি জানত ঐ যে ফোনের শেষকথাটুকু আর ফোনে মিথিলার শেষ কাঁন্নার শব্দটুকু --তার চেয়ে বেশী আর কি উৎকর্ষ থাকতে পারে ভালবাসার, প্রকৃত ভালবাসর ওর চেয়ে আর বেশী কি হতে পারে।
অথচ যার প্রভাবে রোমেলের মত এক আত্মপ্রত্যয়ী এবং সেলফসাফিসিয়েন্ট যুবক এমন অম্ভূত সিদ্ধান্ত নিল সে কি বলতে পেরেছিল উপলব্ধির পরবর্তী অর্হনিশি কষ্টকাল কিভাবে কাটায় একজন ব্যর্থ প্রেমিক। বলেনি।
মাস তিনেক আগে থেকে রোমেলকে গুল্লুদার প্রভাব ভীষন ভাবে প্রভাবিত করেছিল ।
আর করবেই বা না কেনো। পাড়ায় গুল্লু দা তখন উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। যার তার উপর প্রভাব খাটাচ্ছেন। বনে গেলেন পাড়ার সকল কাজের কাজী। কোথাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে।
রোমেলদের পাড়া থেকে অংশগ্রহণ করবে। সংগঠক কে? সেই গুল্লু মহাশয়। তখন সকলকে প্রভাবিত করলেও রোমেলকে অতটা পারেনি। কিন্তু রোমলেকে একদিন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আগে ডেকে বললেন, ব্যাটের গ্রিপ ছোট করতে , ব্যাস তার কথা শুনেই সেদিন রোমেলের ব্যাটে আসল শতক। ফুটবল খেলায় জার্সি ১০ বদলে পড়তে বললেন ১৩।
ব্যাস সেদিন তার একার পায়েই ৩ গোল। এত মেধাবী রোমেলের উপরও প্রভাব তো মারাত্মক ভাবেই পড়লো।
কিন্তু সেটা গুরু শিষ্যের পর্যায়ে গেলো যেদিন রোমেলের বাবা হঠাৎ রাত দুটোয় স্ট্রক করলেন, সবাই খুব বিভ্রান্ত তখন সেই গুল্লুদা যেন ভোজভাজির মত সব ম্যানেজন করে দিল । খুব দৌড়দৌড়ি করল হাসপাতালে সে একাই, রোমেলের বাবা সুস্থ হবার পরেই গুল্লুদার শান্তি হলো।
সেদিন থেকে গুল্লুদার ডান হাত যেন রোমেল।
গুল্লুদাও তাই চাইছিলেন বোধহয়, সে জন্যই এত কিছু হয়তো। কারন এ এলাকায় রোমেলরাই সবচেয়ে প্রভাবশালী। হয়তো অনেক গুণ আসলেই ছিল এই গুল্লুদার। তাই বলে ভালবাসার বিষয়তো আর সব বিষয়ের মত সরল নয় । এই বিষয়টি অন্তত রোমেলকে তার সাথে ডিসকাস করা উচিৎ হয়নি।
একদিন আড্ডায় গুল্লু মহাশয় তার প্রিয় দু’শিষ্য-রোমেল আর শিহাবকে শিখাচ্ছিল -‘ভালবাসা চরম মাত্রা বোঝা যায় কখন...’।
সে বলছিল, ‘দিনের পর দিন প্রেম করে এমনকি বিয়ে করে সারা জীবন পার করলেও ভালবাসা বোঝা যায়না। ভালবাসার প্রকৃত রূপ বুঝতে হলে একটাই উপায়। কিন্তু অনেক কঠিন। ’
রোমেল আর শিহাব, দু বন্ধুই একসাথে বলে উঠেছিল, ‘গুল্লু দা , কি ,কি?’
গুল্লু মহাশয় বলেছিলেন, ‘যে রাতে প্রকৃত প্রেমিকার বাসর রাত হয় অন্য কোন পুরুষের সাথে, সে রাতেই কেবল বোঝা সম্ভব ভালবাসর পৃকত রূপ।
অন্যথায় নয়। ’
শিহাব সাথে সাথে প্রটেষ্ট করেছিল। গুল্লু দা হেসেছিল। বলেছিল, ‘সে কারনেই তো কঠিন বললাম রে। ভেবে দেখ ভালবাসার প্রকৃত রূপ না বুঝে ভালবাসে বলেই বেশীর ভাগ প্রেমের বিয়ে ভেঙে যায় আর না হলে অশান্তি লেগেই থাকে।
এজন্য আগে সকলের ভালবাসার প্রকৃত রূপ বোঝা দরকার। ’
শিহাব তাও মানেনা। তর্ক জুড়ে দেয় গুল্লুদার ওমন আজগুবি কথাবার্তায়। আর রোমেল চুপ করে থাকে।
শিহাব আবার বলে ওঠে, ‘যে ভালবাসা বুঝতে গিয়ে ভালবাসাই হারিয়ে ফেলব সে ভালবাসা বুঝেই লাভ কি আর?’
উঠে চলে গিয়েছিল শিহাব।
আর রোমেল বলেছিল, ‘গুরু কথাটার মধ্যে মনে হচ্ছে যুক্তি আছে। ’
গুল্লু সেদিন আর তাকে খোঁচায়নি। বুঝেলি চালাক গুল্লু ..আঠা লেগেছে।
তারপর মিথিলার সাথে প্রেমের পরিমাণ যেন আরও বেড়ে গেলো রোমেলের। আগে দিনে দুবেলা কথা হতো এখন তিনবেলা।
আগে তিনদিনে একবার দেখলেই মনে শান্তি লাগতো। এখন একদিন পর একবার তো দেখতেই হবে। এই ভালবাসা বৃদ্ধির সাথে মনে মনে গুরুর সেই প্রকৃত ভালাবাস লাভের উপায়টিও ঘুরঘুর করছিল নিয়মিত ।
এর মধ্যে শিহাবটা হঠাৎ পালিয়ে বিয়ে করে ফেলে তার বাল্যকালের প্রেমিকা সস্তিকাকে। এবং সেটাই রোমেলের জন্য হলো আগুনে ঘি দেয়ার মত।
সস্তিকার পরিবার শিহাববে দারুন নাকানিচোবানি খাওয়ালো বেশ কদিন। জেল খাটালো। এবং শেষে দু’পরিবারের মধ্যে যখন একটা মিমাংসা হলো সেখানে সস্তিকা সম্পূর্ণ অস্বীকার করল বিয়ের কথা, ভালবাসার কথা।
গুল্লু দা শিহাবে গুরুতান্ত্রিক নানান উপদেশ আর সান্তনা দিয়ে ঠান্ডা যদিও করেছিলেন, সাথে সেই পুরতন কথাটা মনে করিয়ে একটু ধমকও দিলেন, বললেন,‘ না বোঝা প্রেমের অবস্থা দেখলে তো। ’
শিহাব মাথা নিচু করেছিল।
তারপরই সেই কঠিন সিদ্ধান্ত রোমেলের। বারবার মনে হচ্ছিল্ আসলেই কি তার আর মিথিলার ভালবাসার গভীরতা অপরিমেয়, নিখাদ।
না , যত কষ্টই হোক,তাকে বুঝতেই হবে। সে বোঝার জন্যই মিথিলার সাথে অমন ব্যবহার সেই সকালে যার আগের বিকেলে মিথিলা বলেছিল তার বাসায় বিয়ের জন্য প্রচন্ড চাপ দিচ্ছে।
সেই রাতেই মনে মনে ভেবেছিল রোমেল, ‘এইতো সেই সুযোগ, বিদেশফেরত পাত্র, ভালই হবে, সাথে ভালবাসার প্রকৃত রূপটাও জানা হবে।
’
বুঝতে পেরেছিল। তবে, সে বোঝার মাঝে যে মৃত্যু যন্ত্রনা সেটা সে সহ্য করতে পারছিলনা মোটেও। পারেওনি। তাইতো নেশার রাজ্যকে নতুন গুরু মেনেছিল। গুল্লুদার কোন বানী তখন আর তাকে ফেরাতে পারেনি।
পরিশিষ্ট
মিথিলা রোমেলার উপর ভীষণ রাগ আর বাবা মার অতীষ্টকারক চ্যাঁচামেচিতে বিয়েটা করেই ফেলেছিল। বিয়ের ২০ দিনরে মাথায় আমেরিকান সিটিজেন স্বামী বিদেশে পাড়ি জমায়। ততদিন তার পেটে নতুন অতিথি। বাচ্চা পেটে এলে কি হবে সত্যি স্বামীর দিকে এই ২০ দিনে সে একবারও ভাল করে তাকায়নি পর্যন্ত , কেবল আদেশ শুনেছে আর খুলে দিয়েছে রোমেলের উপর এক কোমল প্রকট রাগে দেহের দুয়ার কেবল।
স্বামী বিদেশে নিয়ে যাবে এমনই কথা তার বাবা মাকে জানানো হয়েছে।
অথচ বাবার যে বন্ধু এ বিয়ের ঘটক সেই খোঁজ জানাল ওমন বিয়ে বিদেশে যাবার আগে যে চারমাস আজ্জত সাহেব দেশে ছিল সে ক মাসে আরও দুটো করেছে। এবং ২য় বউটিকে ইতিমেধ্য আমেরিকা নিয়েও গেছে। আসলে , লাক ট্রাই ছিল তার কাজ। যেটা কপালে স্যুট করে। হায়রে মানুষ!
একটা কাজ অবশ্য সেই লোকটা ভাল করেছিল।
ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েদিয়েছিল মাস চারেক বাদে। প্রথম বউটির মত শেষ মানে মিথিলাকেও। অবশ্য দেনমোহর বাদে।
ছেলে আমেরিকার সিটিজেন, চাইলেও আর কি প্রতিশোধ নিতে পারে? অবশ্য মিথিলার জন্য একরকম প্রতিশোধ ছিল তার মা-বাবার চোখের বিবশ কান্না।
বাচ্চাটা নষ্ট করেনি মিথিলা।
সেটা সম্ভবত রোমেলের উপর রাগে। অন্তত ছেলের জন্মের আগে কোন খোঁজও আর করেনি সে রোমেলের ।
আশা করেছিল হয়তো কোনদিন পথে দেখা হয়ে যাবে। বড় রাস্তায় ওঠার সময় প্রায়ই রোমেলেদের পাড়াটার দিকে চোখ পড়ত। কিন্তু মিথিলা কি করে জানবে ততদিনে রোমেলকে ভর্তি করা হয়েছে মাদকাশক্ত নিরাময় কেন্দ্রে।
এবং সেখান থেকে একসময় মানসিক হাসপাতালে। তার একটাই পাগলামী, সামনে কাউকে দেখলেই সরাক্ষণ বলতে থাকে, ‘প্রেমিকার বাসর রাতেই বোঝা যায় প্রকৃত ভালবাসর রূপ। আর ভালবাসার প্রকৃত রূপ বোঝা মানেই মৃত্যু। ’
ঘটনাটা মিথিলা জেনেছিল আরও অনেক পরে। তখন তার ছেলের বয়স দুই বছর।
টিভিতে মেন্টাল হাসপাতালের উপর একটা ডুকুমেন্টারি দেখাচ্ছিল; সেখানে ।
http://www.mamunmaziz.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।