একদিন জন্মের চিৎকারে পৃথিবীতে এসেছিলাম। আবার একদিন কিছু চিৎকারের মাঝ দিয়েই চলে যাব। এক বছর আগের ৯ অক্টোবর। আমিনবাজারের তুরাগ নদীতে বৈশাখী পরিবহনের একটি গাড়ি ডুবে গেল। প্রায় ৫০ জনের মতো যাত্রী থেকে বাঁচতে পারল মাত্র দুজন।
একজন বাঁচতে বাঁচতেও মরে গেল। আর বাকিরা হারিয়ে গেল কালের অতলে। সেদিনের মতো শোকাভিভূত কখনোই হইনি আমি। আরো একদিন হয়েছিল। কিছুদিন আগে।
যেদিন চট্টগ্রামের প্রায় পঞ্চাশ জনের মতো স্কুল ছাত্র নিহত হয়েছিল ট্রাক দুর্ঘটনায়। কিন্তু আমিনবাজার ঘটনাটি এতটা নিরবে কিভাবে শেষ হলো! তবে কি এর জন্য আমরা জাতিগতভাবে দায়ী ছিলাম! আমরা সকলেই পঞ্চাশজন মানুষকে জীবন্ত পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করার দায়ে অপরাধী! যদি তাই না হবে, তবে কেন আমরা তাদেরকে ভুলে গেলাম? নাকি তারা কৃষক-শ্রমিক ছিল বলে?
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রটির জানা উচিত, সেও পড়াশোনা করে ভিক্ষুকের দেয়া টাকায়। কৃষক-শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো টাকা দিয়ে হলের নিশ্ছিদ্র জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে একজন ছাত্র। সেও কিনা ভুলে গেল আমিনবাজার ট্র্যাজেডির কথা!!
সেদিনের ডায়েরীতে আমি কি লিখেছিলাম, তা স্পষ্ট মনে আছে। 'পঞ্চাশজন মানুষ হত্যার জন্য আমরা জাতিগতভাবে দায়ী।
এর শাস্তি হওয়া উচিত আমাদের। ষোল কোটি মানুষকে হাত পা বেধে পানিতে ফেলে দেয়া উচিত। ' এটিও নিষ্ঠুরতা। কিন্তু সেই মানুষগুলোর কাছে নয়, যারা মরে গেছে। এবং যারা এই মৃতদের আত্নীয় সজন।
আমার কেউ ছিল না সেই বাসে। তবে থাকতে পারতো। এমনকি আমিও থাকতে পারতাম। আপনিও কি নন? তবে আমরা এতটা নিষ্ঠুর কি করে হলাম? আমরা একে একে হত্যাযজ্ঞ করেই যাচিছ। এর দায়ভার কার? সরকারের? পুলিশের? সড়ক ও জনপথ বিভাগের? এদের কারো নয়।
আমাদের সকলের। এর প্রমাণ, আমরা সেই পঞ্চাশজন মানুষের মৃত্যূতে স্মরণ করতে ভয় পেয়েছিলাম। কতজনকেই না আমরা মনে করি প্রতিদিন। কিন্তু যাদের ঘামে এবং রক্তে বাংলাদেশ গড়ে উঠছে। তাদের মৃত্যূকে ভুলে গেলাম!
এটি কোন বিস্ময়ের ব্যাপার নয়।
এটি অবহেলার বিষয়ও নয়। আমার মতো এমন অনেকেই আছেন, যাদের স্পষ্ট মনে আছে সেই দিনটির কথা। মনে থাকবে আরো অনেকদিন। কিন্তু ২০১০ সালের ৯ অক্টোবরকে স্পষ্ট উচ্চারণে কেউ স্মরণ করবেন না। তাহলে যে বিচার চাইতে হয়।
কিন্তু কার বিরুদ্ধে বিচার চাইবেন? কার কাছে চাইবেন? আমরা সকলেই যে সেই পঞ্চাশজন মৃত মানুষের কাছে দায়ী। যাদেরকে দাফন হওয়ার সুযোগটাও দেয়নি আমরা। যাদের মৃত আত্না এখনো মুক্তির আশায় আমাদের মাঝেই ঘুরে ফিরছে।
আমি এককভাবে তীব্র শোক পালন করলাম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।