আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওবায়েদ আমাকে ক্ষমা করে দিস

রাত অনেক হলো। টিভির সামনে বসে থাকা ছোট্ট মেয়েটি বার বার ঘুমে ঢলে পড়ছে। সবচেয়ে প্রিয় কার্টুন ডরিমনও তাকে জাগিয়ে রাখতে পারছে না। কিন্তু ঘুমালেতো চলবে না! অধীর আগ্রহে সে অপেক্ষা করে আছে। দরজায় শব্দ পেলেই একছুটে গিয়ে ছিটকিনি খুলে দেবে।

মাত্র কদিন হলো, নিজে নিজে ছিটকিনি খুলতে শিখেছে। সদ্য শেখা এই জ্ঞানের কথা বাবা জানে না। আজকে বাবাকে চমকে দেবে। একটু পর পর মা ডাকছে, উমাইমা ঘুমাতে যাও। কিন্তু আজকে মায়ের কথা শুনবে না উমাইমা।

বাবা আসবে, ছোট্ট হাতে সে তোয়ালে-লুঙ্গি এগিয়ে দেবে, বাবা গোসল করে তাকে কোলে বসিয়ে ভাত খাবে। ফাকে ফাকে দু-এক লোকমা তার মুখে তুলে দেবে, তার পর বাবাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে। মা-টাযে কী! এখন ডাকছে ঘুমানোর জন্য। অপেক্ষা করতে করতে তিন বছরের উমাইমা একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। ঠোটের কানো ফুটে থাকে বাবার প্রতি অভিমান।

বাবা বলেছিলো রাতে আসবে। কিন্তু এতো দেরি করছে কেন? মা কতোবার ফোন করলো, ফোনটাও ধরছে না। উমাইমার জানা নেই, পিচঢালা রুক্ষ রাজপথে তখন তার বাবা পড়ে আছে একদলা মাংসপিণ্ড হয়ে। রাতের রাজপথে বেপরোয়া দ্রুতগতির একটি বাস তাকে চাপা দিয়েছে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হযেছে তার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বাবা ওবায়দুল হকের।

গত ২ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে মৎসভবনের সামনের সড়কে এই নৃশংস (মর্মান্তিক শব্দটি এখানে যথার্থ নয়, এটি নৃশংস হত্যাকান্ড) ঘটনা ঘটে। কর্মস্থল চুয়েট (চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ওবায়েদ ঢাকা আসছিলেন স্ত্রী ও একমাত্র কন্যার সঙ্গে দেখা করতে। ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে অবচেতন মনে নিজেকে ওবায়েদের জায়গায় বসিয়ে বিষয়টা কল্পনা করি। এই কল্পনাতেও বাবা ছাড়া আমার ছোট্ট মেয়েটির কথা ভেবে বুক ভেঙ্গে আসে। দুচোখে অন্ধকার দেখতে থাকি।

ওবায়েদের স্ত্রী আর কন্যার কাছে কোন ভাষায় জবাবদিহি করবে আমাদের মন্ত্রীরা; যারা ‘গরু-ছাগল’ চিনতে পারাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার অন্যতম যোগ্যতা বলে প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন। অশিক্ষিত চালকদের পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স দিতে বাধ্য করেন। আর কতোগুলো তাজা প্রাণ এভাবে রাজপথে পিষে গেলে আমাদের নীতি নির্ধারকদের বোধোদয় হবে? এই অযোগ্য লোকগুলোর নেতৃত্ব মেনে নিয়ে আমরা বোধহীন পশুর জীবন কাটাচ্ছি। কাসইখানায় যেমন চোখের সামনে স্বজাতির ধরমুন্ডু পৃথক হতে দেখেও নির্বিকারে জাবর কাটতে থাকে বেঁধে রাখা চতুষ্পদ, এধরনের মৃতু্ও আজকাল আমাদের কাছে ততোটাই গাসওয়া হয়ে গেছে। বন্ধু ওবায়েদ, পারলে আমাদের ক্ষমা করিস।

ক্ষমা চাই তোর স্ত্রী আর পিতৃহারা মেয়েটির কাছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।