আসুন আমরা সবাই একটি পরিচয়ে একাত্ব হয়। পরিচয়টি হলো 'বাংলাদেশী'। কিছুতেই ঘুম আসছে না! কারণ, সারারাত গবেষণার বিষয়গুলো নিয়ে অনেক ভেবেছি। গবেষণার বিষয়গত অনেক ধারণা মাথার মধ্যে জমাটবদ্ধ হয়ে আছে। মাত্র এক হাজার শব্দে ওগুলো পুরোটাই লিপিবদ্ধ করতে পারিনি।
তখন ছিল ভোর ছয়টা (৬ অক্টোবর, ২০১১)।
ল্যাবের মধ্য থেকেই কূজন শুনতে পাচ্ছিলাম । মনে হলো, আর লেখা ঠিক হবেনা, এবার ফেরার পালা, ঘুমানো জরুরী। কিন্তু আমার যেন আর তর সইছিল না, নতুন কিছু ধারনা এখনই না লিখলেই নয়। কেমন যেন ক্ষুধার্ত হয়ে আছি।
মনে মনে ভেবেছি একবারে যদি সব লিখতে পারতাম। কিন্তু এটা কি সম্ভব! আবার তখনই না লিখলেওতো সমস্যা। চিন্তাগুলো পরে যদি হারিয়ে যায়, বোকা হয়ে যাবোনাতো! এই সব ভাবতে ভাবতে ল্যাব থেকে হোস্টেলে পৌছালাম। তখন সকাল সাতটা।
হাতমুখ ধুয়েই ঘুমানোর আয়োজন করলাম।
কিন্তু না, পারছি না। ইচ্ছা করেও পারছি না চিন্তাগুলোকে ফাঁকি দিয়ে ঘুমের কোলে ঢলে পড়তে। টের পাচ্ছি অন্য সবাই দিনের কাজে বের হবার যোগাড় করছে। Oscar Wilde'r একটা গল্প সংগ্রহ থেকে গল্প পড়া শুরু করলাম, শিরোনাম ‘A Woman of No Importance’ । কিছুদূর পড়তেই খেই হারিয়ে ফেললাম।
যার জন্য পড়া, তারতো কোনো ভাব-লক্ষণই নেয়। কিছুতেই ঘুম আসছে না! তখন সময় সকাল আটটা।
নতুন উপায় খুজলাম। ল্যাপটপটা চালিয়ে ইউটিউবে বাংলা গানের মিষ্টি ছন্দে ঘুমানোর প্ল্যান আটলাম। ইউটিউবে যেতেই ডানদিকে দেখতে পেলাম Steve Jobs এর কিছু recommended video।
সন্দেহ হলো, ব্যাপার কি! ফেসবুক খুললাম। দেখি BBC update করেছে Steve Jobs আর নেই!
উনার সম্মন্ধে খুব একটা যে জানতাম তা নয়। তবে Apple আর Microsoft এর বিকাশ ও অবদান নিয়ে গল্পের সময় উনার নাম শুনেছি। আবার ইউটিউবে ফিরে গেলাম। প্রথমেই চোখে পড়লো Steve Jobs' 2005 Stanford Commencement Address।
দেখতে শুরু করলাম। আজ মৃত্যুর কাছে পরাজিত একজন সফল প্রযুক্তিবিদ ছয় বৎসর পূর্বে কি বলেছিলেন- সেটাই জানার আগ্রহ। উনার ১৫ মিনিটের বক্তব্য তিনটি গল্প দিয়ে সাজানো, সবশেষে কিছু উপদেশ। বক্তব্যের পরতে পরতে হাততালি আমাকে বুঝিয়ে দেয়, উনি কতটায় সফল, গ্রহণযোগ্য, অনুকরণীয়, অনসরণীয়। প্রথম দিকে মনে হয় গল্পগুলো উনার জীবনের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছে, উনার না পারার যত কাহিনী উনি বলে চলেছেন।
শেষ দিকে বোঝা যায়, ঐগুলো মূলতঃ ছিল তাঁর অনুপ্রেরণা, উৎসাহ, আর অজানাকে জানার ক্ষুধা। হতে পারে সেগুলো একজাতীয় বোকামী। কিন্তু বোকামীর ফল তিনি পেয়েছিলেন। তিনি আমাদেরকে দেখিয়ে গেছেন প্রযুক্তিক সফলতা, দিয়ে গেছেন প্রযুক্তির সুবিধা। নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষুধা আর বুদ্দিদীপ্ত বোকামীর অপূর্ব মিলন, তার সফলতার অপূর্ব রহস্য।
এদিকে তখন সকাল নয়টা।
দেখিতো বন্ধুরা সবাই খবরটা পেলো কিনা। আমি নিজেও ভিডিওটা ফেসবুকে শেয়ার করলাম। লিখে দিলাম ‘I Salute Him’ । হ্যাঁ অন্যরাও জানতে পেরেছে।
অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না, মাত্র ৫৬ বৎসর বয়সে উনি চলে গেলেন! উনি সুস্থ থাকলে আরো কত কিছুইনা পেতাম, আরো কতটায় না সহজ হতে পারতো আমাদের জীবন। এইসব ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমানোর অন্য উপায় খুজতে লাগলাম। পাশেই পড়ে আছে আমার iPhone টা। আমি ওটার দিকে তাকাতেই যেন Steve Jobs কে দেখতে পেলাম। হাত দিয়ে স্পর্শ করবো কিনা বুঝতে পারছি না।
মনে হচ্ছে Steve Jobs এর মত আমার ফোনটাও মৃত্যুবরণ করেছে! ফোনটাকে বালিশের কাছে, চোখের সামনে নিয়ে Steve Jobs এর আত্মার মঙ্গল কামনা শুরু করলাম। ঘুম, সেতো আর আসছেই না! তখন সকাল দশটা।
আবারও উনার বক্তব্যের সারমর্ম বোঝার চেষ্টায় মত্ত হলাম। বক্তব্যের শেষ টেনেছিলেন এইভাবে ‘Stay Hungry, Stay Foolish’ । সাহস করে আমার জীবনের সাথে মেলানোর চেষ্টা করলাম।
আসলেই কি আমি ক্ষুধার্ত, আমি বোকা? নাহলে ঘুম আসছে না কেনো? এত জানার ক্ষুধা, আর বোকার মত ভেবে চলা- এই কি জীবন, এটাই কি একমাত্র কর্মস্পৃহা? আমি একান্ত চিত্তে মেনে নিলাম ‘আমি ক্ষুধার্ত আছি, থাকবো; আমি বোকা আছি, থাকবো’। এইসব চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি কে জানে! ঘুম থেকে উঠেই iPhone টায় সময় দেখে নিলাম। কৈ Steve Jobs তো মারা যান নায়, এইতো আমার হাতেই আছেন। আসলেই Steve Jobs কোনোদিন মরবেন না। আমরা মরতে দিতে পারি না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।