ঘুমিয়ে থাকা বিবেকের জাগ্রত সত্ত্বা
এবার মানেজ ম্যাষ্টার নিয়োগ করেছে পারসোনার কানিজ আলমাস। তারা অভিযোগকারী এবং তদন্ত কমকতাকে ম্যানেজ করতে আদা-জলে খেয়ে নেমেছে। তবে নাছোড়মান্দা তদন্ত কমকতারা। তারা গোপন ভিডিও প্রকাশ করতে যাচ্ছে। তা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আপডেট জানতে নিজের উপাত্তগুলো চোখ বুলিয়ে নিন
গোপন ক্যামেরা কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে গলদঘর্ম পারসোনা। এ ঘটনার অভিযোগকারী নারী চিকিৎসক ফাহমিদা ও তার স্বামী ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গে আপসরফা করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবার তদন্ত কমিটিকে ম্যানেজ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, একাধিক 'ম্যানেজমাস্টার' নানা প্রলোভন দেখিয়ে তদন্ত কমিটিকে বাগে আনার চেষ্টা করছে। গোপন ক্যামেরার কেলেঙ্কারি যতদূর ছড়িয়েছে, সেখানেই তার ইতি টানার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে তদন্ত কমিটির সদস্যদের চাপ দেয়া হচ্ছে। চেষ্টা চলছে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণের।
বিষয়টি স্বীকার করে তদন্ত কমিটির প্রধান গুলশান জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নিজামুল হক মোল্লা বলেন, পারসোনা কর্তৃর্পক্ষ নানা অজুহাতে তদন্ত কার্যক্রম বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। গোপন ক্যামেরা সম্পর্কে পারসোনার আইটি বিভাগের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বারবার ডাকা হলেও গত চারদিনেও তাদের হাজির করা হয়নি।
এডিসি নিজামুল হকের ভাষ্য, পারসোনা কর্তৃপক্ষের তালবাহানায় মনে হচ্ছে, গোপন ক্যামেরায় আপত্তিকর ভিডিওচিত্র ধারণের যে খবর রটেছিল, হয়তো সেটাই সত্য। আইটি কর্মীদের কৌশলী জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তথ্য বেরিয়ে আসবে এই ভয়েই পারসোনা তাদের সরিয়ে রেখেছে। এমনকি আইটি কর্মীদের নাম-ঠিকানাও তারা পুলিশকে দিতে চাচ্ছে না।
আইটি কর্মীদের সন্ধানে পুলিশ নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়,
জব্দকৃত হার্ডডিস্ক থেকে মুছে ফেলা ভিডিওচিত্র উদ্ধার করতে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এখনো কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু হার্ডডিস্কে রক্ষিত বেশকিছু ফাইল ডিলেট করার বিষয়টি গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছে।
কমিটি প্রধান নিজামুল হক বলেন, পারসোনার কর্মকা-ে অনৈতিকতার বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
এসব তথ্য ক্রসচেক করার পর পর্যালোচনা চলছে। এ কারণে তদন্ত রিপোর্ট দিতে নির্ধারিত সময়ের বাইরে আরো তিনদিন বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে। আগামী রোববার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।
তদন্ত কমিটির অপর সদস্য গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার (পেট্রোল) নুরুল আলম বলেন, পারসোনার বিউটিশিয়ানসহ ক'জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গোপন ক্যামেরার গোপন রহস্য উদ্ঘাটন করতে আইটি কর্মীসহ আরো ক'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
এ কাজ শেষ হলেই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তা ডিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দেয়া হবে।
কমিটির একজন সদস্য জানান, ইতোমধ্যে কানিজ আলমাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি কমিটিকে বলেছেন, কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে নয়, চুরি ঠেকাতেই এ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তবে তার এই বক্তব্য পুলিশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। এর পেছনে ওই প্রতিষ্ঠানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নোংরা মানসিকতা কাজ করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন, জানান কমিটির ওই সদস্য।
এদিকে ক্যামেরা কেলেঙ্কারি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় পারসোনার বনানীসহ প্রতিটি শাখাতেই বিশেষ পাহারা বসানো হয়েছে। সংবাদকর্মীরা ভেতরে ঢুকে পারসোনারার কর্মকর্তা-কর্মীদের কাছ থেকে যাতে কোনোভাবেই কোনো তথ্য নিতে না পারে এজন্য তাদের প্রবেশাধিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গুলশান থানার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্যামেরা কেলেঙ্কারির ঘটনা পুরোটাই ম্যানেজ হয়ে গেছে। এখন লোক দেখানো তদন্ত চলছে। দু'দিন পর তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লেই তা বোঝা যাবে।
ওই কর্মকর্তা জানান, ক্যামেরা কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে হইচই পড়ে যাওয়ার পরপরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তা তাৎক্ষণিক ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায় কর্মকর্তারা। তারা এতে ব্যর্থ হওয়ার পর এ কাজে ব্যবহার করা হয় গুলশান থানার এসআই মেহেদী মাসুদকে। বিষয়টি নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি না করার জন্য অভিযোগকারী ফাহমিদা আকতারকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু তিনি মামলা করার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে পরে তাকে হুমকি দিয়ে তা থেকে বিরত রাখা হয়। একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে পুলিশকেও ম্যানেজ করে পারসোনা কর্তৃপক্ষ।
এ খবর জানাজানি হওয়ার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সাব-ইন্সপেক্টর মেহেদী মাসুদকে সাসপেন্ড করা হয় এবং ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
মাসুদের সাসপেন্ড অর্ডারে বলা হয়, কম্পিউটার হার্ডডিস্ক জব্দ করে আলামত সংরক্ষণ না করে অভিযোগকারীর হাতে তুলে দেয়া এবং কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বনানী শাখায় গোপন ক্যামেরা ধরা পড়ার পর থেকে সেখানে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গোপন ক্যামেরা কেলেঙ্কারির খবর না জেনে দু-চারজন নতুন গ্রহীতা সেখানে সেবা নিতে আসলেও পুরান নিয়মিত গ্রহীতাদের ভিড় অনেক কমেছে। তাদের অনেকেই পারসোনায় আসলেও কোনো সেবা না নিয়েই গোপন ক্যামেরার খোঁজখবর নিয়েই চলে যাচ্ছেন।
তানিজা ফাতেমী জানান, তিনি শুধু গোপন ক্যামেরার ব্যাপারে খোঁজ নিতেই এসেছিলেন। কিন্তু পারসোনার কর্মকর্তা-কর্মীরা সবাই যেন মুখে কুলুপ এঁটেছে। এ ব্যাপারে তাদের কারো কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তানিজা বলেন, এখানে ভবিষ্যতে আর কখন আসার রুচি নেই। যারা পোশাক পরিবর্তন রুমে এভাবে গোপন ক্যামেরা লাগাতে পারে, তারা যে কোনো অনৈতিক কাজও করতে পারে।
এদের বিশ্বাস করা বোকামি।
এদিকে যার অভিযোগ নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড়, রহস্যজনক কারণে তিনি এখন আর কিছুই বলতে চাচ্ছেন না। ফাহমিদা ও স্বামী ইশতিয়াক আহমেদ ইদানীং অপরিচিত টেলিফোন কল রিসিভ করছেন না।
তদন্ত কমিটির বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। উত্তেজিত হয়ে তিনি পারসোনার এক কর্মীকে মারধর করলেও কেন তিনি ওই সময় উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন তা বলতে চাননি বলে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগকারী ফাহমিদার স্বামী ইশতিয়াক আহমেদ তদন্ত কমিটিকে জানান, তারা হার্ডডিস্কটি বাসায় নিয়ে গেলেও তা থেকে কোনো কিছু ডিলেট করেননি। কারণ হার্ডডিস্ক তারা ওপেনই করতে পারেননি। তবে পরবর্তীতে গোয়েন্দাদের কৌশলী জিজ্ঞাসাবাদের মুখে স্বীকার করেন, তার স্ত্রী হার্ডডিস্কটা দেখেছে। কিন্তু হার্ডডিস্ক থেকে কিছু ডিলেট করেনি।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, ফাহমিদা ও ইশতিয়াকের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে, তারা কোনোকিছু গোপন করতে চাইছেন।
এর পেছনে নিশ্চয় কোনো কারণ রয়েছে। সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।