... অনেকদিন ঘুরতে যাওয়া হয়নি। তাই সবাই চাচ্ছিলাম কোথাও বেড়িয়ে আসতে। সবাই একসাথে হয়ে ঠিক করলাম আমরা আল সুদা যেতে পারি। আমাদের টিমের অনেকেই আগে ঘুরে এসেছে, তবুও তারা আবার যেতে চায়। লিজা, ইশরাত, ইশরাতের হাজবেন্ড শফিক ভাই ও আমার জন্য হবে এটা প্রথম সুদা ভ্রমন।
আল সুদা হচ্ছে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ চূড়া। ২৯৯৫ মিটার (১০,৮৪৮ ফিট) উচ্চতার আল সুদা সৌদি আরবের সবচেয়ে ঠান্ডা স্থানও বটে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ, চমৎকার আবহাওয়া আর নয়নজুড়ানো সৌন্দর্যের কারনে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে। আবহা’য় যে দুমাস সাফিয়া (গ্রীষ্মকালীন মেলা) থাকে তখন সুদা থাকে অনেক জমজমাট।
সুদা’র সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।
২৯ সেপ্টম্বর (বৃহঃবার), আমরা সবাই তৈরি । আগের দিন ইশরাতের হাজবেন্ড শফিক ভাই জিজান হতে চলে এসেছেন। দু’জন দুই জায়গায় চাকুরী করে। তাই প্রতি উইকেন্ডেই শফিক ভাই আবহা চলে আসেন। আনোয়ার ভাই টোয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার নিয়ে এসেছে (এটা নিয়েই আমরা ফিফা ভ্রমন করেছিলাম) ।
আমরা ৪ ফ্যমিলি (আদিল ভাই, শফিক, মিলন ও আমি)খাবার দাবার সহ দুপুর ১ টার দিকে রওনা হলাম সুদা’র পথে। এই দুপুর বেলাতেও সবাই গরম কাপড় পড়ে নিয়েছিলাম, ওখানে অনেক ঠান্ডা। তবে সামার সিজনে আরামদায়ক আবহাওয়া থাকে। আমাদের বাসা থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের ড্রাইভ। পাহাড়ে উঠার পথে দু’পাশে সবুজের সমারোহ- জুনিপার গাছের বিস্তির্ণ অরণ্য।
পাহাড়ের গা ধাপে ধাপে কেটে বিভিন্ন ফসল চাষ করতে দেখলাম, অনেকটা আমাদের জুম চাষের মতোই।
পাহাড়ের উপর অনেক হোটেল আর কটেজ। এখন অবশ্য তেমন ভীড় নেই। এদের ব্যবসা সাফিয়া’র সময় ২ মাস। যেতে যেতে সবাই আশা প্রকাশ করলাম এখানে একটা রাত কটেজে কাটাতে হবে।
জুনিপার গাছ
পাহাড়ের গায়ে চাষ হচ্ছে
রাস্তার পাশে গ্রাম্য সৌদি (বদু) মধু বিক্রী করছে
আমাদের গাড়ী রাস্তার একপাশে থামলো। চারপাশে সাদা মেঘের ভেলা। পাহাড়ের নীচে তাকাতেই অবিশ্বাস্য দৃশ্য- নীচে “রেজাল আলমা” নামে একটি ছোট গ্রাম আছে, সেখানে নামার জন্য পাহাড়ের গায়ে রাস্তা করা হয়েছে। ভয়ংকর সেই রাস্তা উপর থেকে সাপের মতোই লাগলো। অনেক ঝানু ড্রাইভার ও এই রাস্তা বেয়ে নামতে চায় না, আমাদের ড্রাইভারতো না-ই।
অল্প একটু প্রসস্ত রাস্তাটা এমন একবার নামলে ফেরত আসার উপায় নেই, গ্রাম হতে ঘুরে আসতে হবে। এই রেজাল আলমা গ্রামে আমাদের ইউনি’র একটি ক্যাম্পাস আছে। অনেকে প্রতিদিন এ পথে যাতায়াত করে, ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠে। কেউ কেউ গ্রামে থেকেই চাকরি করে। গ্রামে সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে।
একটা গ্যাস স্টেশন, মসজিদ, ২/৩টা গ্রোসারি শপ এই যা অবলম্বন।
রোড টু “রেজাল আলমা”
রেজাল আলমা গ্রাম
একসময় ঘন মেঘ আমাদের ঢেকে ফেলল। নীচে তাকিয়ে আর রোডটি দেখতে পেলাম না। ... আশেপাশে অনেক বেবুন ছিল। এক সৌদি গাড়ী করে এসে খাবার দিল, বেবুনরা সব তার গাড়ী’র দিকে হামলে পড়লো।
ব্যপারটা বিপদজনক, তবে অনেক সৌদি এভাবে বেবুনদেরকে খাবার দেয়। এক বেবুনকে দেখলাম আমার প্রিয় একটি সৌদি খাবার “আল ফাহাম” মজা করে খাচ্ছে। তার খাওয়ার স্টাইল একেবারে মানুষের মতো। হয়তো আমার মনোভাব বুঝতে পেরে সে খাবার নিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। বেবুনদেরকে নাকি সফট ড্রিংকসের ক্যান দিলে তা মানুষের মতোই খুলে আয়েশ করে খায়।
খাবার দিচ্ছে নাকি?
খাবারের আশায়
আমার প্রিয় “আল ফাহাম” বেবুন কতৃক ভক্ষন
সুদা’র আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে এর কেবল কার। সৌদি’র ৪ টি কেবলকারের মাঝে ৩টি আবহায়। আগে যারা সুদা’য় এসেছিল তারা কেউই কেবল কারে চড়েনি। তাই সবাই কেবলকারে চড়লাম। আমরা ৮ জন, একটি বগিতেই হয়ে গেল।
যাওয়া আসার জন্য ৪০০ রিয়াল গুনতে হলো। কেবল কারটি চূড়া থেকে নীচ পর্যন্ত চলে গেছে। ৩ কিলো দীর্ঘ পথ নামতে ১০ মিনিট লাগে। মেঘের ভেতর দিয়ে নামতে নামতে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। আমরা সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলাম।
মনির আর জুইয়ের কথা মনে পড়লো, হাবালা কেবল কার ভ্রমনে আমাদের সাথে ছিল। জুঁইতো কেবল কারে নামার সময় চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। ...
কেবল কার
উপর থেকে
নীচে সব কিছু সাজানো গোছানো। নীচ থেকে মেঘের কারনে উপরের চূড়া দেখা যাচ্ছিল না। আমরা জায়গাটা ঘুরে দেখলাম, প্রচুর ছবি তুললাম।
এখান থেকে রেজাল আলমা গ্রাম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু চারপাশে বেড়া থাকার কারনে গ্রামে যেতে পারিনি। রেজাল আলমা গ্রামে ৬০০ বছরের পুরনো একটা বাড়ীকে মিউজিয়াম বানানো হয়েছে। ওখানে আগেরদিনের পোশাক, কৃষি যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও নানা কিছু আছে। না দেখতে পারার আফসোসটা রয়েই আছে।
মিউজিয়ামটি দেখতে হলে ভয়ংকর রাস্তা দিয়ে নামতে হবে।
রেজাল আলমা গ্রাম
রেজাল আলমা মিউজিয়ামের সাইনবোর্ড
রেজাল আলমা মিউজিয়াম- ইন্টারনেট হতে
নীচ থেকে সর্পিল রাস্তাটি
পাহাড়ের পাদদেশে “শাহাব পার্ক”—এখানেও যেতে পারিনি, ভয়ংকর রাস্তা দিয়ে নামতে হতো
ঘন্টা খানেকের মতো থেকে আমরা উপরে উঠে এলাম। পাশের একটা পার্কে খাবার নিয়ে ঢুকলাম। দুটি গ্রুপকে দেখলাম বারবিকিউ করছে। ক্যাক্টাস গাছে লাল লাল ফল ধরেছে।
এই ফলগুলো বাজারে অনেক দামে বিক্রী হয়। এগুলো খাওয়া হয়, স্বাদ নাকি অনেক মজাদার। কিন্তু সবাই ফল নিতে পারেনা, হাতে হুল ফোটে। তাই রাস্তায় অথবা মরুভূমিতে এমনিতে হওয়া গাছে শুধু শোভাই বর্ধণ করে।
ক্যাকটাস ফল
খাওয়া দাওয়া আর আড্ডা শেষে রওনা হলাম বাসার পথে।
আবার হয়তো একদিন আসবো, রূপালী জ্যোস্নায় কোন এক পাহাড়ী কটেজে রাত কাটাবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।