আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পারসোনা আতঙ্ক

পারসোনার গোপন ক্যামেরায় রেকর্ডকৃত বেশকিছু ভিডিওচিত্র হার্ডডিস্ক থেকে মুছে ফেলা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। তাদের ধারণা, গোপন ভিডিও ক্যামেরায় নারীদের আপত্তিকর ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়েছিল। এ কারণেই পুলিশ হার্ডডিস্কটি জব্দ করার আগেই পারসোনার কর্মীরা গোপনে তা মুছে ফেলে। পরে তা কৌশলে পুলিশের মাধ্যমে তুলে দেয়া হয় গোপন ছবি তোলার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী বারডেমের নারী চিকিৎসক ফাহমিদা এবং তার স্বামী ব্যবসায়ী ইশতিয়াক আহমেদের হাতে। তদন্ত কমিটির প্রধান গুলশান জোনের এডিসি নিজামুল হক মোল্লা বলেন, হার্ডডিস্কে অবশ্যই আপত্তিকর কোনো ভিডিও চিত্র ছিল।

তা না হলে তা তাড়াহুড়ো করে কেন মুছে ফেলা হলো। তবে হার্ডডিস্ক থেকে মুছে ফেলা ভিডিও চিত্র উদ্ধার করতে একের পর এক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। বাধ্য হয়ে হার্ডডিস্ক থেকে ভিডিও চিত্র উদ্ধার করতে পুলিশের আইটি বিভাগের সাহায্য নেয়া হচ্ছে। মুছে ফেলা ভিডিও চিত্র উদ্ধার হলেই ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার গোপন রহস্য ফাঁস হবে বলে মন্তব্য করেন নিজামুল হক।

তদন্ত কমিটি প্রধান নিজামুল হকের ভাষ্য, অভিযোগকারী ও পারসোনা কর্তৃপক্ষ সমঝোতা করলেই সবকিছু মিটমাট হয়ে যাবে না। কারণ এর সঙ্গে অনেক কিছুই জড়িত। যদি পারসোনা কর্তৃপক্ষ বিশেষ কোনো উদ্দেশে গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে থাকে তবে সেখানে স্পা সেবা গ্রহণকারী অনেক মহিলারই আপত্তিকর দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। তাদের মান-সম্মান ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখেই তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হবে। তিনি জানান, এ কারণেই পারসোনা ও অভিযোগকারীদের মধ্যকার সমঝোতার বিষয়টি আমলে নেয়নি তদন্ত কমিটি।

স্পর্শকাতর রূপ চর্চার রুমে গোপন ক্যামেরা কী উদ্দেশ্যে লাগানো হয়েছে এবং বিষয়টি কেন সেখানে সেবা গ্রহণকারীদের জানানো হতো না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পারসোনার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও আইটি বিভাগের কর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর পারসোনার বনানী শাখাতে স্পা সেন্টার খোলার পর থেকেই গোপন ক্যামেরার ব্যবস্থা ছিল, নাকি সম্প্রতি তা লাগানো হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে তদন্ত কমিটি। এদিকে পারসোনার গোপন ক্যামেরা নিয়ে পত্রপত্রিকায় নানা সংবাদ প্রকাশের পর সেখানে স্পা সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের কোনো আপত্তিকর স্টিলছবি বা ভিডিও চিত্র তুলে রাখা হয়েছে কিনা এ দুশ্চিন্তায় অনেকেই নিঘুর্ম রাত কাটাচ্ছেন।

অনেকেই মিডিয়াকর্মী ও পুলিশের মাধ্যমে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ স্বশরীরে পারসোনায় হাজির হয়ে এ ব্যাপারে জবাবদিহি চাইছেন। ক্ষুব্ধ অনেকেই এ ব্যাপারে মামলা করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। বনানীতে বসবাসরত এক গৃহবধূ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি একাধিকবার পারসোনায় স্পা করিয়েছেন। কিন্তু সেখানে বিশেষ কক্ষে কোনো গোপন ক্যামেরা লাগানো আছে কিনা তা তিনি খেয়াল করেননি।

উদ্বিগ্ন ওই গৃহবধূর ভাষ্য, বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। অসৎ উদ্দেশ্যে ওই গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে থাকলে ইতোমধ্যেই তারা শত শত নারীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওচিত্র সংগ্রহ করেছে। এসব ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হলে ওইসব নারীর আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না। আপত্তিকর ওইসব ছবি নিয়ে কোনো বিশেষ মহল তাদের বস্ন্যাকমেইলও করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, তারা পারসোনা কর্তৃপক্ষ ও অভিযোগকারী নারী চিকিৎসক ফাহমিদাকেও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

এ জন্য নির্ধারিত তিনদিনের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। সূত্র জানায়, চিকিৎসক ফাহমিদার স্বামী ব্যবসায়ী ইশতিয়াক আহমেদ ও পারসোনা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝির কথা বললেও কমিটির সদস্যরা এটি মানতে রাজি নন। তাদের মতে, ঘটনার সময় ফাহমিদা তার স্বামীকে ডেকে আনলে পারসোনা কর্মীদের সঙ্গে তার বেশকিছু সময় ধরে ঝগড়া চলে। এই সময়ের মধ্যে পারসোনার কর্মচারীরা হার্ডডিস্ক থেকে কিছু ভিডিও চিত্র নষ্ট করে ফেলে। পরে তা গুলশান থানা পুলিশের মাধ্যমে অভিযোগকারীদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

তারা হার্ডডিস্কটি বাসায় নিয়ে যায়। তদন্ত কমিটির ধারণা, হার্ডডিস্কে অন্য নারীদের সঙ্গে নিজের আপত্তিকর ছবি দেখে উদ্বিগ্ন ফাহমিদা সব মুছে ফেলেন। পরে নিজের মান-সম্মানের কথা ভেবে ফাহমিদার স্বামী ইশতিয়াক পারসোনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি আপস করেন। এ ব্যাপারে গুলশান থানার ওসি শাহ আলম বলেন, বিউটি পার্লারে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে আপত্তিকর দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে, পার্লারে আসা একজন নারীর এমন অভিযোগ পেয়েই তারা অভিযান চালিয়েছেন। অভিযোগকারী পক্ষ কোনো লিখিত অভিযোগ না করায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।

পরে এ ব্যাপারে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে তারা ডিএমপি কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপরই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে, রাজধানীতে পারসোনাসহ শতাধিক বিশেষায়িত পার্লার রয়েছে। এর মধ্যে পার্সোনারই ঢাকায় উত্তরা, গুলশান, মিরপুর ও বনানীতে মোট ৪টি শাখা রয়েছে।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামেও তাদের একটি শাখা রয়েছে। অধিকাংশ পার্লারই স্পা সেবা দিয়ে থাকে। পার্লারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রসঙ্গে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম বলেন, পার্লারগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তারা খোঁজ খবর নিচ্ছেন। যারা এসব জায়গা থেকে সেবা গ্রহণ করেন তাদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বনানীর ১১ নং রোডে পরসোনার শাখায় স্পা করাতে গিয়ে কক্ষে গোপন ক্যামেরা থাকার অভিযোগ করেন এক নারী চিকিৎসক। সেখানে একটি কক্ষে পোশাক পরিবর্তনের সময় তিনি একটি গোপন ক্যামেরা দেখতে পান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেনি। এ অবস্থায় চিকিৎসক তার ব্যবসায়ী স্বামীকে খবর দেন। তিনি ঘটনাস্থলে গেলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের ব্যাপক হট্টগোল হয়।

এর এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গোপন ক্যামেরার হার্ডডিস্কটি জব্দ করেন। কিন্তু তা নিজের হেফাজতে না রেখে তুলে দেন অভিযোগকারী দম্পতির হাতে। তারা হার্ডডিস্কটি নিয়ে বাসায় চলে যান। জব্দকৃত হার্ডডিস্ক নিজ হেফাজতে না রেখে অভিযোগকারীর হাতে তুলে দেয়ায় গুলশান থানার সাব-ইন্সপেক্টর মেহেদী মাসুদের বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ আনা হয় এবং তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। এ ঘটনায় রোববার রাতে গুলশান জোনের এডিসি নিজামুল হক মোল্লাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অনন্য সদস্যরা হলেন, সহকারী কমিশনার (প্রশাসন) মিজানুর রহমান ও সহকারী কমিশনার (পেট্রোল) নুরুল আলম। এই কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এদিকে গোপন ক্যামেরায় মহিলাদের ভিডিও চিত্র ধারণ করায় কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না জানতে চেয়ে পার্লারটির স্বত্বাধিকারী কানিজ আলমাস খানকে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশটি তিনি হাতে পেয়েছেন। নোটিশে বলা হয়েছে, কানিজ আলমাস খান বিউটি পার্লারে রূপচর্চার আড়ালে রূপচর্চার কক্ষগুলোতে গোপনে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মহিলাদের আপত্তিকর ভিডিও চিত্র ধারণ করে আসছেন- যা জনজীবনে ভীতিকর প্রভাব সৃষ্টি, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। কানিজ আলমাস শিগগিরই তার আইনজীবীর মাধ্যমে এর জবাব দেবেন বলে জানা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.