আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘর ছেড়ে রাজকান্দি - হাম হাম ঝরনার খোঁজে (১ম পর্ব)

ফটোগ্রাফি, ভ্রমন, সিনেমা, ওয়ার্ডপ্রেস, এবং সব এলোমেলো ভাবনা মনের ভেতরে সব সময় একটা ট্রাভেলার বাস করে। কিন্তু সেরকম ভ্রমনে কখনো যাওয়া হয়নি কোথাও। সেই কোন আমলে একবার সুন্দরবনে গিয়েছিলাম একটা ব্যর্থ ট্যুরে। বন সবসময়ই খুব টানে। গভীর বনে ট্র্যাকিং করব, তাবু টানিয়ে রাতে থাকব, ভাবতেই শরীর-মন রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে।

মনটা খুব খারাপ ছিলো। তাই ভাবলাম, এটাকে একটু ফ্রেশ করতে বনে ঘুরে আসি। দুঃখী মানবের ব্লগ পড়ে রাজকান্দি বনটা মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিলাম সেখানেই যাব। রাজকান্দি সংক্রান্ত সব পোষ্ট পড়ে একটা রাফ আইডিয়া নিয়ে নিলাম।

কিন্তু বন্ধুদের কাউকেই রাজি করাতে পারলাম না। সবারই নাকি পাহাড় সমান কাজ। ভাবলাম, আমেরিকার প্রেসিডেন্টও সপ্তাহে দুই দিন ছুটি কাটাতে পারে, আর এরা একদিনের জন্য বাইরে যাওয়ার সময় ম্যানেজ করতে পারবে না! আসলে এদের খোলস ছেড়ে বাইরে বের হওয়ার কোন ইচ্ছেই নেই। এদের ছাড়াই যেতে হবে। এলাকার বন্ধু লিটন ভাইকে ফোন করে বললাম, চলেন দুইজনে বনে গিয়ে ঘুরে আসি।

তারও মন খারাপ, এক কথায় রাজি হয়ে গেল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। থ্রি-কোয়ার্টার প‌্যান্ট, টিশার্ট, প্লাস্টিকের স্যান্ডেল, আরো কিছু টুকিটাকি কিনে প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার রাতে দুজনে বেরিয়ে পড়লাম সায়দাবাদের উদ্দেশ্যে। আমাদের বের হতে দেরী হয়ে গিয়েছিল অনেক। সাড়ে এগারটায় কাউন্টারে এসে দেখি হানিফ-শ্যামলী কারো কোন সিট খালি নাই।

এত আশা করে বেরিয়ে এ্যাডভেঞ্চারের এইখানেই সমাপ্তি করে ফিরে যেতে হবে যখন ভাবছি, তখন হানিফ কাউন্টারে আরেকজনকে গিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলাম টিকিটের কথা। এই ভদ্রলোক অলৌকিকভাবে বলল, সামনের দিকে ২ টা টিকেট আছে একেবারে রাজকীয় জায়গায়। চলবে কি না? আবার জিগায়! এই বাসটা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল রাত সাড়ে এগারটায়। কিন্তু কি কারনে যেনো এদের দেরি হয়ে যাওয়ায় স্ট্যাণ্ডে এসেছে বারোটায়, তাই ভাগ্যগুনে এটি আমরা পেয়ে গেছি। রাত সাড়ে বারোটায় বাস ছাড়লো শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে।

ব্লগ থেকে গাইড শুভর নাম্বার পেয়েছিলাম। ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম আমাদের কাল হাম হাম নিয়ে যেতে পারবে কি না। ও বলল, কাল অন্য একটা টিম নিয়ে যাচ্ছে, ওদের সাথে আমাদেরও নিয়ে যাবে। পরিচিত একটা সিএনজি ঠিক করে দিচ্ছে, ১২০০ টাকা ভাড়ায়। ভোর চারটায় এসে নেমে পড়লাম শ্রীমঙ্গর শহরে।

শুভ এসে আমাদের রিসিভ করলো, এবং দুঃসংবাদ দিল। যেই সিএনজি ঠিক করা ছিল, সেটা নষ্ট, তাই আসবে না। আর এই সময়ে অন্য কোন গাড়িও যোগাড় করা যাবে না। বললাম, অন্য যে গ্রুপটা যাচ্ছে, দেখ ওদের সাথে কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা। আধা ঘণ্টা পরে এসে জানালো, সেই গাড়ির ড্রাইভারের সাথে কথা হয়েছে।

সে পিক-আপের সামনের দুটো সিট আমাদের ছেড়ে দিবে। ভাড়া সেই বারোশ'-ই দিতে হবে। ওর সাথে আটশ' টাকায় রফা করলাম। শহরে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে নাস্তা সেরে দুপুরের জন্য খাবার নিয়ে নিলাম। গাড়ি যখন আসল দেখি সেটাতে তিল ধারনের ঠাঁই নাই।

কি করব যখন ভাবছি, হঠাৎ দেখলাম দুটো সিএনজি আসলো। ওদের সাথে কথা বলে একজনকে এক হাজার টাকায় ভাড়া করে কলাপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কুরমা পর্যন্ত পাকা রাস্তায় এক টানে চলে এলাম। এর পর কাঁচা রাস্তা। ড্রাইভার সুজন বলল, এখন বৃষ্টি নেই, তাই এই রাস্তায় সিএনজি চলছে।

বৃষ্টি হলে জিপ ছাড়া যাওয়ার আর কোন উপায় নেই। প্রচণ্ড কাঁদা থাকে রাস্তায়। এবড়ো-থেবড়ো রাস্তায় ঝাঁকুনি খেতে খেতে চাম্পারাই চা বাগান পেড়িয়ে কলাপাড়ায় এসে পৌঁছলাম আট টার দিকে। এখান থেকে হাঁটা শুরু করতে হবে। কথা ছিল শুভ আমাদের সাথে এখানে এসে যোগ দিবে, এবং অন্য গ্রুপটার সাথে আমাদের নিয়ে যাবে।

কিন্তু প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বসে থেকেও ওর কোন হদিস পাওয়া গেল না। মোবাইলেও নেটোয়ার্ক নেই। শেষে স্থানীয় লোকদের থেকে একজনকে গাইড হিসেবে নিয়ে নিলাম। নাম মংড়া। একেবারেই সহজ-সরল মনে হলো দেখে।

পৌনে নয়টার দিকে মংড়ার পিছু পিছু আমরা ঢুকে পড়লাম রাজকান্দি বনে। (ক্রমশ) ঘর ছেড়ে রাজকান্দি - হাম হাম ঝরনার খোঁজে (২য় পর্ব) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।