বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] তাওহীদ (توحيد) ইসলামে একত্ববাদের ধারণাকে বোঝায়। তাওহীদের বিপরীত ধারণা হল শির্ক, বা বহু-ঈশ্বরবাদ। ইসলাম এই শিক্ষা দেয় যে, স্রষ্টা একজনই, তিনিই আল্লাহ।
তিনি বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালনকারী। ইসলামে বিশ্বাসের অন্যতম প্রধান বিষয় হলো তাওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস। তাওহীদে বিশ্বাস মানুষকে মানুষের দাসত্ব হতে মুক্ত ও স্বাধীন করে। কারণ তাওহীদ বা একত্ববাদ-এর অর্থ একমাত্র আল্লাহ তাআলার বশ্যতা, অধীনতা ও দীনতা স্বীকার করা, তার সৃষ্টি জীবের আনুগত্য ও পূজ্যতা পরিহার করা, তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার না করা।
ইসলাম ( الإسلام) শব্দের অর্থ "আত্মসমর্পণ", বা একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পন।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তার একাত্ববাদ বা তাওহীদের ঘোষনা করেছেন বহুবার। যেমন, তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে 'উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। [১৭ নং সূরা আল ইসরা : আয়াত নং ২৩ পবিত্র কুরআন]
পবিত্র কুরআনে আরো উল্লেখ আছে, তারা কি মৃত্তিকা দ্বারা তৈরী উপাস্য গ্রহণ করেছে, যে তারা তাদেরকে জীবিত করবে? যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।
[২১ নং সূরা আল আন্বিয়া : আয়াত নং ২১-২২ পবিত্র কুরআন]
অন্য আরেক সূরায় আল্লাহ্ আরো বলেন, তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ইহকাল ও পরকালে তাঁরই প্রশংসা। বিধান তাঁরই ক্ষমতাধীন এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না? বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি দিনকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে যে, তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে ? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না ? তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যেদিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে, তারা কোথায়? প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে আমি একজন সাক্ষী আলাদা করব; অতঃপর বলব, তোমাদের প্রমাণ আন।
তখন তারা জানতে পারবে যে, সত্য আল্লাহর এবং তারা যা গড়ত, তা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে যাবে। [২৮ নং সূরা আল কাসাস : আয়াত নং ৭০-৭৫ পবিত্র কুরআন]
পবিত্র কুরআনের সূরা আয যুমারে আল্লাহ্ উদাহরণ দিয়েছেন এভাবে,
আল্লাহ এক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেনঃ একটি লোকের উপর পরস্পর বিরোধী কয়েকজন মালিক রয়েছে, আরেক ব্যক্তির প্রভু মাত্র একজন-তাদের উভয়ের অবস্থা কি সমান? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না। [৩৯ নং সূরা আয যুমার : আয়াত নং ২৯ পবিত্র কুরআন]
আর যারা স্রষ্টার অস্তিত্ত্বই স্বীকারই করে না তাদের ব্যাপারে কুরআন বলে,
তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই তো শেষ; আমরা মরি ও বাঁচি মহাকালই আমাদেরকে ধ্বংস করে। তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই।
তারা কেবল অনুমান করে কথা বলে। [৪৫ নং সূরা আল জাসিয়াহ : আয়াত নং ২৪ পবিত্র কুরআন]
আর যখন কেউ প্রশ্ন করে আল্লাহ্ কে? অথবা স্রষ্টা কে? এ প্রশ্নের উত্তর পবিত্র কুরআন দেয় অত্যন্ত চমৎকার ভাবে, বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। [১১২ নং সূরা আল ইখলাস : আয়াত নং ১-৪ পবিত্র কুরআন]
আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে যখন বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য খ্রীস্টীয় ত্রিত্ববাদের অনুসরণ করছিল, পারস্য যখন ভালো মন্দ দুই ঈশ্বরের ধারণাকে নিজেদের আদর্শ হিসেবে মেনে নিয়েছিল, যখন আরব ও প্রাচ্যদেশের মানুষ মূর্তিপূজা, প্রকৃতিপূজা ও বহু-ঈশ্বরবাদের আদর্শে বিশ্বাসী ছিল, যখন একত্ববাদ বিলীন হতে চলেছিল এ পৃথিবীর বুক থেকে, ঠিক তখনই আরবের বুকে আবির্ভূত হোন মুহাম্মাদ (সাঃ), পৃথিবীর বুকে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করেন তাওহীদ (একত্ববাদ)।
এ শেষ নবী ও রাসূলের আবির্ভাবের সময়কে সৈয়দ আমীর আলী বলেছেন এভাবে, "পৃথিবীর ইতিহাসে পরিত্রাণকারীর আবির্ভাবের এত বেশী প্রয়োজন এবং উপযুক্ত সময় অন্যত্র কখনও অনুভূত হয় নাই" আর এ সম্বন্ধে ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেছেন,"মহান ধর্মীয় ও জাতীয় নেতার আবির্ভাবের জন্য মঞ্চ প্রস্ত্তত হয়েছিল এবং সময়ও ছিল মনস্তাত্ত্বিকতাপূর্ণ"।
তথ্যসূত্রঃ
quran.com
ইসলামের ইতিহাস - কে. আলী
http://bangla.irib.ir/islam/index.php/2011-04-17-07-13-18/2011-05-03-10-48-36/157-2011-04-18-17-02-20.html ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।