যে মুখ নিয়ত পালায়......। । আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে সরকারী লোক, পুলিশ বিভাগে চাকরী কোরেও
পুলিশী মেজাজ কেন ছিলনা ওনার বলুন চলায় ও বলায়?
চেয়ার থেকে ঘরোয়া ধূলো, হারিকেনের চিমনীগুলো মুছে ফেলার মতোন তিনি
আস্তে কেন চাকর বাকর এই আমাদের প্রভু নফর সম্পর্কটা সরিয়ে দিতেন?
থানার যত পেশাধারী, পুলিশ সেপাই অধীনস্ত কনস্টেবল
সবার তিনি একবয়সী এমনভাবে তাস দাবাতেন সারা বিকেল।
মায়ের সঙ্গে ব্যবহারটা ছিল যেমন ব্যর্থ প্রেমিক
কৃপা ভিক্ষা নিতে এসেছে নারীর কাছে!
আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে দেশে যখন তাঁর ভাইয়েরা জমিজমার হিশেব কষছে লাভ অলাভের
ব্যক্তিগত স্বার্থ সবার আদায় কোরে নিচ্ছে সবাই
বাবা তখন উপার্জিত সবুজ ছিপের সুতো পেঁচিয়ে মাকে বোলছেন, এই দ্যাখোতো
জলের রঙ এর সাথে এবার এই সুতোটা খাপ খাবে না?
কোথায় কাদের ঐতিহাসিক পুকুর বাড়ি, পুরনো সিঁড়ি
অনেক মাইল হেঁটে যেতেন মাছ ধরতে!
আমি যখন মায়ের কাছে লজ্জাব্রীড়া, ঘুমের ক্রীড়া
ইত্যাদিতে মিশেছিলুম, বাবা তখন কাব্যি কোরতে কম করেননি মাকে নিয়ে
শুনেছি শাদা চামেলী নাকি চাপা এনে পরিয়ে দিতেন রাত্রিবেলা মায়ের খোপায়!
মা বোলতেন বাবাকে তুমি এই সমস্ত লোক দ্যাখোনা?
ঘুস খাচ্ছে, জমি কিনছে,শনৈঃ শনৈঃ উপরে উঠছে
কত রকম ফন্দি আটছে কত রকম সুখে থাকছে
তুমি এসব লোক দ্যাখোনা?
বাবা তখোন হাতের বোনা চাঁদর গায়ে বেরিয়ে কোথায়
কবি গানের আসরে যেতেন মাঝরাত্তিরে
লোকের ভীরে সামান্য লোক, শিশিরগুলি চোখে মাখতেন!
এখন তিনি পরাজিত, কেউ দ্যাখেনা একলা মানুষ
চিলেকোটার মতোন তিনি আকাশ দ্যাখেন, বাতাস দ্যাখেন
জীর্ণ শীর্ণ ব্যর্থ চিবুক বিষন্ন লাল রক্তে ভাবুক রোদন আসে
হঠাৎ বাবা কিসের ত্রাসে দুচোখ ভাসান তিনি ই জানেন!
একটি ছেলে ঘুড়ে বেড়ায় কবির মতো কুখ্যাত সব পাড়ায় পাড়ায়
আর ছেলেরা সবাই যে যার স্বার্থ নিয়ে সরে দাঁড়ায়
বাবা একলা শিরঃদাঁড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন, কী যে ভাবেন
প্রায়ই তিনি রাত্রি জাগেন, বসে থাকেন চেয়ার নিয়ে
চামেলী হাতে ব্যর্থ মানুষ, নিম্নমানের মানুষ!
চামেলী হাতে নিম্নমানের মানুষ//আবুল হাসান
এটা আমার অতিপ্রিয় একটা কবিতা। ভেবেছিলাম নেটে পাওয়া যাবে না।
পুরো কবিতা লেখার পর পোস্ট করার আগে নাম দিয়ে সার্চ দিয়ে দেখি ২০০৬ এ একজন পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু লিখে ফেলেছি যখন তখন দিয়েই ফেললাম। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত আবুল হাসান রচনাসমগ্র কিনে দেখতে পারেন। অসাধারন সব কবিতার সমগ্র বলা যায়। দাম ২৫০ র মত হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।