আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বইয়ের পোকা

স্বপ্নবাজ। একটা রাতের রংধনুর স্বপ্ন দেখি...। -কিঙ্কর আহ্সান বইয়ের পোকা - কিঙ্কর আহ্সান ‘ভাইয়া, জীবনে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ নামের একটাই উপন্যাস পড়েছি। আর পাঞ্জেরী নোটের কারনে ‘হাজার বছর ধরে’ টাও পড়তে হয়নি পুরোটা । ’ এই কথা মেয়েটা আমাকে গর্ব করে বলে।

টের পাই তার মাঝে যন্ত্রনা থেকে মুক্তির আনন্দ। পাঠ্যপুস্তকে ছিলো বলেই দুটো উপন্যাসের সাথে পরিচয় মেয়েটার। অবাক লাগে। আউট বই পড়ার কারনে কম মার খাইনি বাবার কাছে। বাড়ির পাশেই ছিলো ফাঁকা জমি।

চারপাশটা দেয়াল দিয়ে ঘেরা। সে দেয়ালের ওপর বসে প্রতি বিকেলে কয়েক বন্ধু মিলে পড়তাম চাচা চৈাধুরী, বিল্লু, পিঙ্কি আর অগ্নিপুত্রের কমিকস্রে বই। পাঠ্যপুস্তকের ভেতর লুকিয়ে গল্পের বই পড়ি জানতে পেরে বাবা একদিন রেগে পুড়িয়ে দিয়েছিলো বুকসেলফে থাকা সবগুলো বই। ছোট্ট বয়সে সে কি কষ্ট ! কি কান্না ! অভিমানে বাবার সাথে কথা বলিনি অনেকদিন। ত্রিশ টাকায় সদস্য হবার পরে দু’টাকা করে দিলে ‘তিন গোয়েন্দার বই’ পড়তে দিত এক দোকানে।

আমি আর বন্ধু সন্দীপ মিলে টাকা জমাতাম। ভাগাভাগি করে পড়তাম বই। মাসুদ রানার বই পড়তে নিষেধ করে দিয়েছিলো বড়রা। রাত এগারটায় সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর যখন শুধু ডিমলাইট জ্বলত তখন লুকোনো জায়গা থেকে মাসুদ রানার বই বের করে অই অল্প আলোতেই পড়তাম আমি। চোখে চশমা ঝুলছে এই বইয়ের কারনেই।

যে বইগুলো আমি পড়লে বখে যেতে পারি সেগুলো বাবা এনে লুকিয়ে রাখত। তার ধারনা ছিলো এগুলো পড়লে নষ্ট হব। নষ্ট হয়েছে কিনা জানিনা তবে আলমারির কাপড়ের ভীড় থেকে নারী, পাক সার জমিন সাদ বাদ এসব বইগুলো খুজে ঠিকই পড়া হয়েছে আমার। পড়াশোনা ভালো করে করলে মা বই কিনে দিত। নারায়নের টেনিদা, শিবরামের হাসির গল্প, অর্জুন, কাকাবাবু এসবের সাথে পরিচয় পড়াশোনায় ভালো করার কারনেই।

এই বইগুলো পাওয়ার লোভেই প্রচন্ড অনিচ্ছা,যন্ত্রনা নিয়েও দিনের পর দিন ‘এ প্লাস বি হোল স্কোয়ার’ এর সূত্র মুখস্ত করেছি। লোটাকম্বল, সেই সময়, কালপুরুষ বইগুলো ডেস্ক এর নিচে রেখে পড়তে গিয়ে ক্লাসে ধরা পড়ে স্যারদের গালি খেয়েছি অনেকবার। বই নেশার মতন। নীলক্ষেতে যে কোন কাজে গেলেই বই দেখতে হয় আমার। ঘন্টার পর ঘন্টা সময় গেলেও টের পাওয়া যায়না।

আমি, তমাল, বরুন তিন বন্ধু বহুদিন নীলক্ষেতের গলিতে গলিতে ঘুরেছি নিজের পছন্দের একটা বই কম দামে কেনার জন্যে। বইয়ের জন্যে এমন পাগলামি শুধু মানসিক শান্তির জন্যে। আনন্দের জন্যে। জ্ঞান অর্জন হবে এমনটা ভেবে কখনও বই পড়তে বসেছি বলে মনে পড়েনা। শুধু গল্প, উপন্যাসই নয় যে কোন বই পাঠই আনন্দদায়ক।

বই পড়লে শৈশব ফিরে পাওয়া যায়। এই এত্তটা বড় হলেও বই পেলে খুশি হয়ে যাই। বুকের ভেতর বই রেখে, বালিশের নিচে বই রেখে ঘুম দেই। বইয়ের পাতায়,অক্ষরে, মলাটে নির্দ্ধিধায় নিজেকে রেখে বোহেমিয়ান হবার নিছক বিলাসি কল্পনায় মেতে উঠতে পারি। বই প্রেয়সীর মতন।

আমাকে পোড়ায়, শান্তি দেয়, নিশ্চিন্ত করে। নতুন বইয়ের ঘ্রান মাতাল করার জন্যে যথেষ্ট। মন উচাটন করার জন্যে যথেষ্ট। ভেবে আফসোস হয় সময়ে, অসময়ে বারেবার শিশু হওয়ার, শৈশব ফিরে পাওয়ার মন্ত্রটা এই প্রজন্মের অনেক, অনেকেরই জানা নেই। প্রার্থনা করি বই ফিরে আসুক।

হাটে, ঘাটে, মাঠে, প্রেমে- অপ্রেমে, যুদ্ধে, শান্তিতে বই থাকুক পাশে। বাতাসে প্রান ভরে নি:শ্বাস নেবার জন্যে বই আমার হোক। হোক আমাদের...। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।