আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিউশন ম্যারেজ: ছাত্রী থেকে জি.এফ,তারপরে বউ!

আমি তোমার পথ চেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পায়ে শিকড় গজাবে, আমার শাখা-প্রশাখা গজাবে, আমি বৃক্ষমানব হয়ে যাবো তবুও আমি অধৈর্য্য হবো না... ... ... অতীতে মেয়ে টিউশনীর তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য মেয়ে টিউশনী না করার সংকল্প করেছিলাম। ধানমণ্ডি-২৭ এ দুইটা ছেলেকে পড়ানোর দায়ীত্ব নিলাম। প্রথম দিনেই আমি হতাশ, দেখি আন্টি আরেকটি মেয়েকে(রিয়া) নিয়ে বসিয়ে দিল পড়ার টেবিলে। সে না’কি তার ছেলের কাজিন। বেশ ভাল কথা।

পড়াইতে লাগলাম। কিন্তু পরেরদিন আরেক রমনী(অর্ণী) যোগ দিল। সে রিয়ার ফ্রেণ্ড। কি মহাবিপদ! চেহারা-সুরত মাশাল্লা মাথা গরম করা। পড়ানোর সময় লক্ষ করলাম পড়ার চেয়ে আমার দিকেই বেশি কনসেন্ট্রেশন অর্ণীর।

কিছুটা বিপদের আভাশবার্তা অনুধাবন করলাম। পড়ানো শেষ করে হলে ফিরলাম। বাসায় যাওয়ার পর মুঠোফোনে পর্দায় একটা বার্তা দেখতে পেলাম। বার্তায় লেখা ছিল, “স্যার আমি অর্ণী, প্লীজ সেভ মাই নাম্বর। “ আমি জাষ্ট “ওকে” লিখে রিপ্লাই দিলাম।

তার মানে এখন অর্ণীর মুঠোফোনের নাম্বার আমার কাছে রইল। একদিন যেতে পারব না বলে শুধু অর্ণীকেই একটা মেসেজ দিলাম যে, আমি আজকে আসতে পারব না, নেক্সট সোমবারে আসবো, প্লীজ অন্যদের জানিয়ে দাও। (কারণ আমার কাছে অন্যদের নাম্বার ছিল না)। পরে সে অন্যদের জানিয়ে দিল। এবার রিয়াও আমাকে টেক্সট পাঠালো যে, “আমি রিয়া, প্লীজ সেভ দ্য নাম্বার”।

ছেলে দুইটা কোন টেক্সট পাঠালো না, ব্যাটারা বদের হাড্ডি। ব্যস, এভাবেই চলতে লাগলো টিউশনী। একদিন(রাত ৯টার দিকে) অর্ণীর নাম্বার থেকে আরেকটা টেক্সট পেলাম। লেখা ছিল, “স্যার আজকে আমার ফুপির বিয়ে হয়ে গেল। আমি খুব একা হয়ে গেলাম।

মা আমাকে ছেড়ে চলে গেল সেই ছোটবেলায় আর আজ চলে গেল ফুপিও। দুনিয়ায় আমার আপন বলে কেউ রইল না। “ উত্তর দিলাম,”যার কেউ নাই তারতো আল্লাহ্ আছে, আল্লাহর উপর ভরসা কর” টেক্সট,”আজ আমি বড় একা। এখন মৃত্যু ছাড়া আমার আর কোন ভরসা নাই” রিপ্লাই, “মৃত্যু সেতো চুড়ান্ত পথ, যখন মানুষের সব অপশন বন্ধ হয়ে যায় তখন তার জন্য মৃত্যুর অপশন এসে যায়। ফুফির বাসায় যেয়ে ঘুরে আস ভাল লাগবে।

” এভাবে বার্তা আদান প্রদান চলতে লাগলো। আরেকটা টেক্সট আসলো। টেক্সট,”আই ওয়ান্ট টু বি শ্যাডো অব উ, ইফ উ ওয়ান্ট টু ক্রাই আই জিভ উ শোল্ডার” চিন্তায় পড়ে গেলাম টেক্সটা পেয়ে। অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম। কোন রিপ্লাই দেই না।

তবে আবারো বলি মেয়েটার চেহারা মারাত্নক সুন্দর! অনেকক্ষণ ভেবে কয়টা অপশন সিলেক্ট করলাম- অপশন-১:সম্ভব না অপশন-২:হতে পারে অপশন-৩:ভেবে দেখি আমি অনার্স ৪র্থ বর্ষে আর মেয়ে ইন্টার সেকেণ্ড ইয়ার। তার সাথে আমার এইজ ডিফরেন্স ৫ বছর। দ্যাটস এ পা(র)ফেক্ট এইজ ডিফরেন্স। সো অপশন ১ বাদ। আবার মেয়ের চেহারা সৌন্দর্যও ভালো।

আবার ফ্যামিলি স্ট্যাটাস মোটামুট ম্যাচ করে। সো ভেবে দেখা যায়। ঐদিনই রাত ৪ টায় আরেকটা মেসেজ আসলো,”আম ওয়েটিং ফর ইওর রিসপন্স” রিপ্লাই দিলাম,”আই অলসো উইল ইউর শ্যাডো” ব্যাস কাম শেষ। ফযরের আযান পরলো। এতক্ষণতো পাপকাজ করলাম।

এবার না’হয় একটু পাপমোচন করার জন্য মসজিদে যাওয়া যায়! পরে যখন পড়াইতে যাই দেখি আমারও প্রবলেম হয়, মেয়েরও প্রবলেম হয়। বিশেষ করে যখন আই কন্টাক্ট হয়। ইতিমধ্যেই দুইটা ছেলের মধ্যে একজন(হাসান) অর্ণীকে প্রপোজ করে বসে। অর্ণীতো রেগে পুড়ে তেলে-বেগুনে জ্বলে সরসরি গালি আর অপমানসহকারে প্রত্যাখ্যান। ঐ ছেলে রিয়াকে দিয়েও ওকালতি করাইছে।

এমনকি ওর মাকে দিয়েও বলাইছে। কাম হয় নাই। কারণ কামতো আগেই শেষ হয়ে আছে। অবশেষে হাসান আমাকে ধরলো, -”স্যার আপনি ওকে(অর্ণীকে) একটু বলে দেন, আপনি বললেই হবে স্যার, আমি ওকে ছাড়া বাচবো না….ইত্যাদি”। -“কষ্টে মদ খাইছো?” -“হ্যা স্যার কয়েকবার খাইছি” -“গাজা খাইছো?” -“স্যার, মাঝে মাঝে খাই” -“শোন, আমি তোমারে চাইনিজ খাওয়াবো আগামীকাল দুপুরে জিনজিয়ানে চলে আসবা” -“ঠিক আছে স্যার, স্যার আমার এক ফ্রেণ্ডকেও নিয়ে আসি?” -“ও.কে. নিয়ে আসো সমস্যা নাই” পরদিন অর্ণীকে নিয়ে অপেক্ষা করছি জিনজিয়ানে ওদের জন্য।

ওরা এসে অর্ণীকে দেখতে পে যা পর নাই খুশি। মনে করছে আজ অবশ্যই স্যার আমার জন্য কিছু একটা করবে। একদফা খাওয়ার পরে আমি অর্ণীকে বলে ফেললাম,”অর্ণী শোন তোমার কাছে আমার একটা জরুরী কথা আছে”। হাসান এই কথা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলো। হয়তো ভাবছে ওর জন্য প্রস্তাব করবো।

কিন্তু আমি বলে ফেললাম,”অর্ণী তোমাকে অনেকদিন ধরেই আমি দেখে আসছি। আমি তোমাকে পছন্দ করি। সিম্পলি আই লাভ উ”। অর্ণী উত্তর দিল,”আমি একটু ভেবে দেখি”। অর্ণী বের হয়ে দড়জা পর্যন্ত যেতেই একটা টেক্স আসলো।

আমি হাসানকে বললাম, “দেখতো কি লিখছে? মনে হয় রিজেক্ট করছে”। হাসানকে দিয়েই ম্যাসেজটা ফার্স্ট পড়ালাম। লেখা ছিল,”আই লাভ উ টু”। হাসানের মুখটা কালো বর্ণ ধারণ করলো। আর হাসানের ফ্রেণ্ড সাথে সাথে আমাকে বস মানলো।

বললো,”প্রেমে এত দ্রুত সফলতা আমি জীবনে দেখিণি স্যার, ইউ আর গ্রেট স্যার”। হাসান যেহেতু বেশি আপসেট তাই ওকে একটু বেশি করে খাইয়ে বিদায় করলাম। ব্যস প্রেমের পথে একটা কাটা উপ্রে ফেললাম। অর্ণী ও আমি কিছুটা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম। এবার বাধলো আরেক ঝামেলা।

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির একটা ছেলে(কামাল) অর্ণীকে প্রপোজ করলো। বলে রাখি অর্ণী সিটি কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী। ঐ ছেলেও সিটি কলেজের ছাত্র ছিল। ওই সুবাদে অর্ণীকে চেনে। আনফরচুনেটলি দেখে যে, ঐ ছেলেও আমার ছাত্র ছিল।

একদিন কামাল আমার কাছে এসে শিখে নিয়েছিল যে, কিভাবে মেয়েটাকে প্রপোজ করবে। আমি জানতাম না যে ইতরটা অর্ণীকেই প্রপোজ করার জন্য তরিকা শিখার জন্য আসছে! যাক ঠিক কাম হৈছে প্রপোজ যেমন করছে তেমন অপমানিতও হৈছে বেশ। অর্ণী ওকে বলেছিল,”আমি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির কোন গাধার সাথে রিলেশনে জড়াতে পারবো না, যারা টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কিনে। আর কোন দিন আমাকে ফোন দিবেন না”। এরপর থেকে কামাল অর্ণীকে ফোন করে মিস কল দিয়ে প্রায়ই ডিস্টার্ব করতো।

অর্ণী আমার কাছে অভিযোগ করলো। চিন্তা করলাম ব্যাটাকে টেকনিক্যালি সাইজ করতে হবে। পহেলা বৈশাখে ধানমন্ডি খেলার মাঠে মেলা বসে। ঐদিনটাকেই বেছে নিলাম কামালকে সাইজ করার জন্য। একটা দোস্তকে ঠিক করলাম অর্ণীর সাথে বয়ফ্রেণ্ড এর ভূমিকায় অভিনয় করতে।

আর কামালকে দাওয়াত দিলাম। কামাল আসলো। কামালকে পরিচয় করিয়ে দিলাম যে, এই হচ্ছে আমার ফ্রেণ্ড সাথে ওর গার্লফ্রেণ্ড। কামাল পুরাই টাস্কি খাইলো। আমাকে একটু ফাকে ডেকে নিয়ে বলল, -”দেখেন স্যার, ওই টাকলুর সাথে ওকে(অর্ণীকে) কোনভাবেই মানায় না।

তার চেয়ে আমি কত হ্যান্ডসাম, স্যার এটা মেনে নেয়া যায় না”। -“ঠিক আছে তাইলে এখন আমার সামনেই তুমি অর্ণীকে ফোন করে প্রপোজ কর”। আমার কথামত ফোনে প্রপোজ করে আবার ঝাড়ি খাইলো সাথে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজও শুনলো। কামালের মাথায় রক্ত উঠে যায় রাগে। সেও অর্ণীকে ইচ্ছামত গালাগাল করে ফোন কেটে দিল।

বললো- -“স্যার কাম হৈলো না, আমি এই মেয়েকে দেখে নেবো। ” -“তুমি এক কাজ কর, লাষ্ট এটেম্প। ” -“কি এটেম্প? বলেন স্যার” -“তুমি আবার ওকে ফোনকরে বলো যে, হয়তো আমার সাথে রিলেশন করো নয়তো স্যারের সাথে কর তবুও ঐ টাকলুকে ছাড়ো, টাকলুর সাথে তোমাকে মানায় না” আমার কথামত ও তাই বলল। ফোন লাউড দেয়া ছিল। শুনলাম যে অর্ণী বলল, “ঠিক আছে স্যারের সাথেই করবো তাহলে”।

কামালের মুখে হতাশার ছাপ। কামালকে বললাম- -“শোন কামাল, অর্ণীতো আমাকে সিলেক্ট করলো। আমি যদি ওকে বিয়ে করি তোর ভাবী হয়ে না?” -“হ্যা হবে!” -“কিন্ত তুই যে ওর সাথে গালিগালাজ করলি বিয়ের পর যদি তুই আমাদের বাসায় যাস তাইলে তোরে যদি অর্ণী ঝাটু দিয়ে দাবড়ানি দেয়!” -“এখন কি করবো স্যার?” -“মাফ চা, পায়ে ধরে মাফ চাইতে বললে তাও করবি। ” -“ঠিক আছে স্যার” -“আবার ফোন কর, ফোন করে কি বলবি?” -“কি বলবো স্যার” -“বলবি, অর্ণী ভাবী স্যার যদি আপনাকে বিয়ে করে তবে আপনি আমার ভাবীই হবেন। ভাবী আমাকে মাফ করে দেন।

” কামাল ফোন করে মাফ চাইলো। আর চিরজীবনের জন্য সোজা হয়ে গেল। কোনদিন আর অর্ণীকে ফোন বা মিসকল দিয়ে ডিস্টার্ব করে নাই। অত:পর আমরা সুখে শান্তিতে প্রেম করতে লাগলাম। আমার মনে একটা অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো যে, আমি কেন ছাত্রীর সাথে প্রেম করছি।

অনেক সংশয় আর হতাশা-চিন্তা নিয়ে একদিন অর্ণীকে ফোন করে বলল,”অর্ণী তোমার সাথে আমি আর রিলেশন রাখতে পারবো না, আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না। ” এই কথা শোনার পর অর্ণী রাগে-দু:খে আগুন-সাগর। সে বলল,”তুমি, ধানমন্ডি লেকে একটু আস,আল্লাহর কসম লাগে”। ধানমন্ডি লেকে গেলাম। অনেক কথাবার্তার পর বলল,”দেখ, তুমি যদি মারা যাও তবে আমি শান্তনা পাবো যে, আমি যাকে ভালবাসতাম সে এই দুনিয়াতে আর নেই, কিন্ত তুমি যদি বেচে থাক তবে আমার হতেই হবে”।

মেয়ের কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলাম। তাছাড়া আমিওতো ওর প্রতি চড়মভাবে দুর্বল। কোন উত্তর না করলে বলল,”চলো তোমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসি”। সে বললো,”তুমি যদি আমার সাথে রিলেশনই রাখবা না তবে বাসায় পৌছে দেয়ার আর দরকার নাই। ” এমন সময় ডিপার্টমেন্ট-এর এক স্যারের ফোন আসলো যার সাথে আমি একটা প্রজেক্টের কাজ করি।

রিলেশন করার কারণে প্রজেক্টের কাজের ব্যাপক হ্যাম্পার হচ্ছে। তাই হয়তো স্যার ফোন দিসে, স্যার আমাকে ওনার বাসায় যেতে বললো। কি মনে করে যেন অর্ণীকে সাথে করেই গেলাম স্যারের বাসায়। স্যারকে পুরো ঘটনা শেয়ার করলাম। স্যার বিয়ে করে ফেলতে বললো।

স্যার আবার এই লাইনেও ওস্তাদ। ওনার ওয়াইফকেও রিলেশন করে বিয়ে করছে। কিছুক্ষণ চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম যে, অর্ণীকে বিয়েই করে ফেলব। স্যারকে বললাম। স্যারই দুই পক্ষের সাথে কথাবার্তা বলে বিয়ে ফাইনাল করে ফেলল।

অর্ণীর বাবা এবং আমার বাবা খুব সহজেই রাজি হয়ে গেল। কিন্ত আম্মু প্রথমে অমত করলেও আমার সুখের কথা ভেবে পরক্ষনেই রাজি হয়ে গেল। বিয়ে হয়ে গেল। খুবই সুখে আছি দুই জনই। তবে শর্ত জুড়ে দিলাম যে স্বামী-স্ত্রীর মত ঘরসংসার করবো মাস্টার্স-পি.এইচ.ডি শেষ করার পর।

অর্ণী শর্ত মেনে নিয়েই বিয়ে করেছে। অর্ণীর বাবা ওনার ফ্ল্যাটে উঠে যেতে বলছিল আমাকে। আমার কাছে ঘড়জামাই থাকা খুবই জঘন্য মনে হয়। তাই ওনার কথা রাখতে পারলাম না। আমাদের রিলেশন মাত্র ৪ মাসের।

তারপরই বিয়ে। এখন ফোনে কথা বলি সেই গার্লফ্রেণ্ড-বয়ফ্রেণ্ড এর মতই। তবে কোন পাপবোধ মনে হয় না তাতে। অনেক শান্তিতে আছি। মনে হয় জান্নাত পাইছি।

[ঘটনাটি ঢা:বি র ৪র্থ বর্ষের ইংলিশ বিভাগের ছাত্র শাহিদের] ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.