আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থনৈতিক অঞ্চল আইনে থাকছে না শ্রমিক অধিকার × এটি কালো আইন, এতে শ্রমিকের মৌলিক অধিকার খর্ব হবে : ট্রেড ইউনিয়ন

একজন খেটে খাওয়া-শ্রমজীবী মানুষ। নিজের অধিকারের কথা বলতে চাই ও অন্যের শুনতে চাই। তাই বলে দেশ, দেশের মাটি, আলো-বাতাশ ও মানুষকে বাদ দিয়ে নয়। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে শ্রমআইন নিষিদ্ধ করে আইন করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলেছেন, কোন শিল্পাঞ্চলে এ আইন কার্যকর হলে শ্রমিকদের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হবে।

বাংলাদেশের ভূখ-ে কোন শিল্পকারখানা ও ব্যাংক-বীমা হলে তা দেশের প্রচলিত আইনানুয়ায়ী হওয়া উচিত বলে তারা সংবাদকে জানিয়েছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০-এর ১৩ নম্বর ধারার (১) এর 'ড' উপধারাতে বলা হয়েছে 'সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কোন অঞ্চল বা অঞ্চলের কোন প্রতিষ্ঠানকে নিম্নবর্ণিত সব বা যেকোন বিধান হতে অব্যাহতি দিতে পারবে, অথবা এ মর্মে নির্দেশ দিতে পারবে যে, উক্ত সব বা যেকোন আইনের বিধানাবলী, উক্ত প্রজ্ঞাপনে বিধৃত পরিবর্তন বা সংশোধনসাপেক্ষে, কোন অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, যথা- ......(ড) বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ (২০০৬ সালের ৪২ নম্বর আইন)...'এ নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে সেখানে কোন শ্রমআইন কার্যকর থাকবে না। । শ্রমিকরা আইনত কোন কার্যক্রম চালাতে পারবে না। ফলে সেখানে শ্রমিকদের প্রাপ্যসহ শ্রমিক অধিকারের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা যেভাবে পরিচালনা করবে শ্রমিকরা সেভাবে চলতে বাধ্য থাকবে।

কোন বঞ্চনা বা অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে এ আইন অনুযায়ী কোন প্রতিকার পাবে না। নতুন এ আইনকে কালোআইন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী। প্রবীণ এ শ্রমিক নেতা বলেন, এটা কোনভাবেই গ্রহণ যোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, এমনিতেই কলকারখানাগুলোতে শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম চালাতে পারে না। বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতে শ্রমআইন কার্যক্রম চালানোর আইনি বিধান থাকলেও সেখানে কোন রকম ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম চালাতে দেয়া হয় না।

তারপর যদি কোন বিশেষ শিল্প অঞ্চলে অন্য কোন আইন দিয়ে শ্রম আইনকে অকার্যকর করে দেয়া হয় তাহলে সেখানে শ্রমিকরা অধিকারের কোন কথা বলতে পারবে না। এ আইনকে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক শ্রমিক নেতা হাবিবুর রহমান সিরাজ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যেখানেই এবং যে অঞ্চলেই হোক না কেন দেশের ভূখ-ের মধ্যে কোন প্রতিষ্ঠান হলে তাকে প্রচলিত আইন মানতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক-বীমা বা যেকোন শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হলেই তা শিল্পনীতির আলোকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। প্রচলিত আইনে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

এটা না হলে তা হবে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী। ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমকে অন্য আইন দিয়ে রহিত করা হলে তা হবে মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। এটা হবে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা-বিরুদ্ধ কাজ। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদের সমন্বয়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান বিষয়টিকে সে ভাবেই দেখেন। তিনি বলেন, কোন শিল্প এলাকায় উদ্যোক্তাদের শ্রমআইন থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে-এটা হতে পারে না।

এটা একই সঙ্গে মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। একদিকে আইন করা হবে আর অন্যদিকে আর একটি আইন দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হলে তা হবে সরকারের দ্বিমুখী নীতিরই প্রতিফলন। তিনি বলেন, সরকার যদি মনে করে শ্রমিকদের অধিকার হরণ করে শিল্পায়ন করা যাবে_ তবে ভুল করবে। শ্রমিকদের অধিকার স্তব্ধ করে শিল্পায়ন হয়েছে-এমন নজির কোথাও নেই। বরং তা শিল্পের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

শ্রমআইন সংবিধান স্বীকৃত আইন। তাই শ্রমআইনকে অস্বীকার করা মানে একই সঙ্গে সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারকে হরণ করার সামিল। তিনি বলেন, এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন বা ইপিজেডে দেখেছি শ্রমআইনকে অন্য আইন দিয়ে অকার্যকর করে উদ্যোক্তাদের সুবিধা করে দেয়া হয়েছে। সেখানে মালিকরা শ্রমিকদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করেছে। শ্রমিকদের নির্যাতন করেছে।

তিনি বলেন, শ্রমআইন নিষিদ্ধ করে সেখানেও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়নি। মাঝে মধ্যেই শোনা গেছে শ্রমিক অসন্তোষ-বিক্ষোভ। নতুন অর্থনৈতিক জোন করে শ্রমআইন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলে সেখানেও শ্রমিকরা তাদের দাবি-দাওয়া তুলবে না-এ নিশ্চয়তা কে দেবে? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।