জীবনধারার ছাপ চেতনাকে গড়ে, চেতনার ছাপ জীবনধারাকে নয়
তিনি টের পান তাঁর ভেতর নড়াচড়া করছে, বেড়ে উঠছে একটা প্রাণ, একটা সত্তা। পুলকিত তিনি? আপ্লুত? মাত্র গত বছরই তিনি উদ্বাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন আর সামাজিক রীতি মান্য করে এবং তাঁর ও স্বামীর উর্বরতা নিশ্চিত করে তিনি গর্ভধারণ করেছেন। কিন্তু আনন্দিত হওয়ার সুযোগ কোথায়? চারদিকে রক্তমত্ত পিশাচদের উলঙ্গনৃত্য। প্রাণ আর সম্মান বাঁচাতে নিরীহ বাঙালি হিসেবে এখন তাঁদের পালাতে হবে। নিরিবিলি গৃহবধূ হিসেবেও তিনি রেহাই পাবেন না জেনে বুক কাঁপে তাঁর দুরুদুরু করে।
ভবের দোকান তোলার আগে নিজেদের ঘরের চাল তো খুলতেই হবে।
আর, এরপর, পথে-নামা।
লাখো ভীত-উৎপীড়িত-আতঙ্কিত জনতার মতো জনপদ ছেড়ে তাঁরাও সীমান্তের দিকে ছুটে চলেছেন। পেছনে ফেলে যেতে চাইছেন দুঃসহ স্মৃতিগুলো যারা আসছে জলপাই রঙের ভিনদেশি অন্ধকারে চড়ে, যেন পালালেই বাঁচতে পারবেন তাঁরা। পালানোর এই বৃহত্তম অভিসারে সব কষ্ট, সব ক্লান্তি তুচ্ছ করবেন তাঁরা, ভাগ করে খাবেন অন্ন-পানীয়, পথশ্রমে, চিকিৎসাহীনতায়, সংক্রমণে মৃত্যু হবে তাঁদের লাখে লাখে পথে আর পার্শ্ববর্তী দেশের আশ্রয়শিবিরে, আবিশ্বজনগণ বিস্ময়ে, ক্ষোভে, অবিশ্বাসে সেই এক্সোডাস আর এক্সক্রুশিয়েটিং মৃত্যু অবলোকন করবে, তৈরি হবে কলেরার ভ্যাকসিন, বাঁচাবে লাখো মানুষকে, আশ্রয়দাতা রাজ্যটির মহানগর কেঁপে কেঁপে উঠবে মুক্তির দশকের খুন আর বদলার রক্তপিছল পথ আর বন্দুকের নলের সকল শক্তির উৎসের তাত্ত্বিক আর বাস্তব ধোঁয়া আর এনকাউন্টারের কার্তুজের কটু গন্ধে এবং কোটি বাস্তুহারার আর্থনীতিক চাপে।
আর এরই মধ্যে তিনি জন্ম দেবেন তাঁর প্রথম সন্তান। কন্যা সন্তান। বাংলাদেশের সমান বয়েস যার।
রিফিউজি ক্যাম্পজাতক আমার এই আত্মীয়াটির মৃত্যু হলো গতকাল, অকস্মাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে।
বাংলাদেশের মতোই আমার এই শ্যামবর্ণা বয়োজ্যেষ্ঠ তুতো বোনটি পিতৃহারা হয়েছে সত্তুরের দশকে, অবশ্য শেষভাগে, ভাগ্যবলে মাতৃকুলের কিছু অভিভাবক নিঃস্বার্থভাবে সহায়তা করায় ঘর-বর সবই জুটেছিলো অনেক কষ্টে, কিন্তু কাল সবই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেলো।
জানছি যে, তার স্বামীর সাথে তার খিটিমিটি চলতো বেশ, কারণ স্বামীটি কিছুটা অকর্মণ্য হওয়ায় অনেক কিছুই স্বামিত্ব ফলিয়ে মেনে নিতো না। এমনকি একাধিকবার তার গায়ে হাতও তোলা হয়েছে, কিন্তু সেসব সে জানাতে চায় নি কিছুতেই তার মাতুলালয়ে, আত্মসম্মান নামক বায়বীয় বস্তুটির বদান্যতায়। সন্তানেরা অতোটা বড় হয়ে ওঠে নি মায়ের স্বাবলম্বন হয়ে দাঁড়ানোর পক্ষে, দাঁড়াতো কিনা আদৌ, তাও অজানা। এককথায়, খুব সুখশান্তিময় ইস্টার্নকালারের সম্পূর্ণ রঙিন চলচ্চিত্র ছিলো না তার জীবন বাকি দশটা বাঙালি মেয়ের মতোই।
এই অকালমৃত্যুতে আমি যেন বাংলাদেশের ছায়া দেখি, দেখি তার নির্বাক, মূঢ়, ম্লান, মূক মুখে বেদনার ঘনীভবন, অসহায় আত্মসমর্পণ নিয়তির কাছে, কর্তাব্যক্তির জবরদস্তি, অন্যায় আর কুশাসন ঝেড়ে-ফেলার ব্যর্থতায় বাধ্যগত সহনশীলতার যন্ত্রণা গিলে-ফেলার অভ্যেস, আর শুধুই ক্লেদাক্ত ভবিষ্যৎ, অমাময় হতাশা।
স্বজনবিয়োগের এই ব্যথাও আমায় ততোটা ভোঁতা করে না, যতোটা করে রাষ্ট্রযন্ত্রের এক খুদে, খুনে নিপীড়কের প্রবল প্রতিচ্ছবি আর সরল স্বীকারোক্তি।
আমার এক ঊর্ধতন কর্মকর্তার কাছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর এক সদস্যের আগমন ঘটে। ভূমিসংক্রান্ত কোন একটা মামলায় কাউকে ফাঁসানোর ব্যাপারে দু'জনের উন্মুক্ত আলোচনা চলে। সদস্যটি বুদ্ধি দেয়, কিছু মহিলার শরীরের কিছু উন্মুক্ত অংশে শিমের ডগা কিংবা মিষ্টিকুমড়োর লতা দিয়ে আঘাত করে দাগ ফেলে নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করার, কিংবা উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটির ঘরে কিছু ধারালো অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে-রাখার, পরে সে গিয়ে উদ্ধার করবে সেসব মহান, শক্তিশালী রাষ্ট্রের তরফ থেকে, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে তো!
এসব সুবুদ্ধি দিয়ে-টিয়ে সে আমার সহকর্মীদের সাথে আলাপ করে। দিলখোলা মানুষ।
গলগল করে অবলীলাক্রমে সে বলে যেতে থাকে তার 'কাজ'-এর বারতা।
পদটা তার খুব বড় নয়, কিন্তু হাত তার অনেকখানি লম্বা। তার বিভাগের সর্বোচ্চ মাথার সাথে, যিনি রাজধানীতে বসে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিয়ে বাহিনীটি নিয়ন্ত্রণ করেন, তার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ আছে, অবশ্যই ভিত্তিমূলটা বাণিজ্যিক। ট্রান্সফার-পোস্টিং ইত্যাদি বাণিজ্যে সে মাহের, আমার ঊর্ধতন জানান। কোন এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে জল-জঙ্গল-জলাধ্যুষিত এলাকায়।
তিনি আবার ফিরে আসতে চান এখানটায়। সে মাত্র দশ লাখ রজতমূল্যে তাকে ফিরিয়ে আনার নিশ্চয়তা দেয়, খেয়াল করবেন সেই প্রত্যাবর্তনপিয়াসী কিন্তু তার অনেক ঊর্ধতন কর্মকর্তা। তিনি কাঁচুমাচু হয়ে প্রস্তাব দেন পাঁচ-ছয় লাখের। সে জানায়, ফিরে এলে এমন জায়গায় তাকে নিয়োগ করা হবে যাতে করে এক মাসেই সেই দশ লাখ উঠে আসবে। কোন খানকির বাচ্চা বলে বাঙালির পয়সা নেই আর বাজেট হয় গরিব মারার?
জবরদস্ত বাজখাঁই গলায় সে বলে চলে, আর আমি ভাবতে থাকি এরকম শারীরিক যোগ্যতা দেখেই বোধহয় তাদের ওই বিভাগে নেওয়া হয়, "আমার নামের পর একটা 'গাদ্দার' আছে।
" অবলীলায় সে তুচছ করে যায় ভদ্রতা, শালীনতা, সভ্যতা নামের সব মেকি পোশাকগুলো। বক্তা সে-ই, আর কেউই দাঁড়াতে পারবে না তার সামনে।
নিজস্ব সম্পত্তির একটা আবছা বিবরণ দেয় সে। শহরে বাড়ি আছে তার পাঁচতলা, এছাড়া একাধিক ভবন আছে শহর ফেলে সামান্য একটু দূরেই। এছাড়া, গাড়িও আছে তার, কারণ সে-নিয়েও একটা কথা শোনালো সে।
ক্রমশ প্রকাশ্য। স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা। দুই সন্তান তার। একজনকে প্রভূত অর্থব্যয়ে চাকরি যোগাড় করে দিয়েছে ভূমি তহশিল অফিসে, আশা করা যায় টাকাটা অগৌণেই উঠে আসবে।
"আজকে সকালে পনেরো হাজার টাকা ইনভেস্ট করে আসলাম।
আমার সোর্সদের টাকা দিতে হয়। কাউকে এক হাজার, কাউকে দুই, কাউকে পাঁচ-এভাবে দিলাম। সন্ধ্যার মধ্যেই ধরেন...দেড় লাখ টাকা উঠে আসবে। "
আমার এক সহকর্মী শ্রোতা অবিশ্বাসে প্রশ্ন করেন, "দেড় লাখ?"
"হ্যাঁ, হবে। আমার বউ আবার আমার এইসব টাকায় কিছু নিতে চায় না।
একবার ....-এ, (একটা ব্যবসাকেন্দ্রের নাম করে সে) একটা মশলার দোকান সিজ করলাম। বার্মা থেকে এলাচি, লবঙ্গ-এসব আনাতো বেআইনিভাবে। দিলাম দোকান বন্ধ করে। পরে বাইরে বসে পঞ্চাশ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করলো। ভাগ দিলাম উপরে।
ওকে বললাম, ইদের সময় মশলাপাতি পাঠায়ে দিস। বউ নিতে চায় না। বলে, এগুলো তোমার ওই টাকার জিনিস। নিবো না। আরে, তুমি যে ভাত খাও, সেটাও তো একই টাকা।
এখন কিছুটা কমসে। আগে আরো বেশি ছিলো। এখন কিছুটা বুঝে। "
তার স্ত্রীর প্রশংসা করবো কি-না, কিংবা তার স্ত্রীর আসলে কী করার ছিলো সেটা নিয়ে গভীর নৈতিক সমস্যায় নিপতিত হয়েছি, ভাবনা ভাঙে তার কণ্ঠস্বরে।
"...-কে (এক প্রাক্তন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য) রাস্তায় পিটাইলাম ক্ষমতা ছাড়ার পরে।
ক্ষমতায় থাকতে তো আর পারি নাই। এখন ....-এর (বর্তমান এক মন্ত্রী) ভাইকে দেখে রাখসি, ক্ষমতা থেকে সরে গেলে ওরেও পিটাবো।
একবার এক দারোগা আমার কাছে এসে কান্নাকাটি। কী ব্যাপার? ওর মেয়েকে এক মাস্তান টাইপের ছেলে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলসে। যাহোক, বিয়ের পর মেয়েটার গায়ে হাত তুলসে, অত্যাচার করে।
বাপ রিটায়ার করসে আগেই। ছেলেটারে নিয়ে গেলাম নিরিবিলি জায়গায়, ওখানেই খরচ করে দিসি। পরে ক্রসফায়ারের নাম দিয়ে দিলাম। এরপর মেডিক্যাল রিপোর্টটা নিয়ে মেয়ের বাপের কাছে গেলাম নিজে।
এই যে রেলের, তারপর ভূমি অফিসের নানা নিয়োগ নিয়ে আমার কাছে কিছু মেয়ে আসছে।
ওরা একেকজন আট লাখ টাকা করে দিসে, কিন্তু কাজ হয় নাই। আমি ফোন করলাম মন্ত্রীর পিএসকে। বললাম, এই টাকা ফেরত দাও। পিএস বলে, মন্ত্রীর ব্যাপার, আমি জানি না। আমি বললাম, টাকা ফেরত না-দিলে আমি কিন্তু ফোন করবো না আর।
তখন মামলা যাবে কোর্টে। ওরা যেন আমাকে আর বিরক্ত না করে। "
মন্ত্রমুগ্ধ এক সহকারী বলেন, "টাকা ফেরত পেয়েছে ওরা?"
"পায় নি। পেয়ে যাবে। এই যে রেলের নিয়োগ চলছে, ২৭০ কোটি টাকা আয় হয়েছে।
এরমধ্যে ৭০ কোটি টাকা ধরা পড়লো। যে-ড্রাইভার গাড়ি বিডিআরে ঢুকায়ে দিলো, তার সাথে কন্ট্রাক্ট ছিলো ২৫ জনের। জনপ্রতি ২০,০০০ টাকা করে দেওয়ার কথা ছিলো। সে ভাবসে, পুলিশের কাছে গেলে আর কী হবে! তাই গাড়ি ঢুকায়ে দিলো বিডিআরের অফিসে, কিন্তু বিডিআরের ভিতরে যে কী সেটা তো সে জানে না। বোকামি করসে, পুলিশে যাওয়াই উচিত ছিলো।
তো বাকি ২০০ কোটি টাকা কই? ওগুলোর ভাগ প্রাইম মিনিস্টার পর্যন্ত চলে গেছে। সেই টাকা নেওয়ার ডকুমেন্টও জায়গামতো চলে আসছে। এখন কিছু হবে না, তবে এরপর যদি বিএনপি আসে, কেউ বাঁচবে না। এই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও না, শেখ হাসিনাও না। "
নিশ্বাস নেওয়ার জন্যে আমরা একটু বড় করে দম টানি।
চ্যাঁভ্যাঁ করে মাথায় হয়তো গোলমালও পাকাতে পারতো জর্জ হ্যারিসন "ব্যাংলাড্যাশ, ব্যাংলাড্যাশ" বলে। তবে, নীরবতাটা হিরন্ময় আর খুবই ভেদনক্ষমতাসম্পন্ন।
"সব সময় ধরেন কাজও করি না। একবার রাগ করে তিন মাস টানা কাজ করি নাই। পরে দেখি আমার কমিশনার সাহেবও শুকায়ে যাইতেছেন।
আমারে ডাকলেন, কী ব্যাপার...সাব, কাজ-টাজ কিছু করেন না কেন? আমি বললাম, স্যার, কিছু পারিবারিক সমস্যা আছে। উনি বললেন, কী, বৌয়ের সাথে ঝামেলা? আমি বললাম, না স্যার, বৌয়ের সাথে কিছু না, এমনিই পারিবারিক ঝামেলা। তিন মাস কাজ করি নাই। "
তিন মাস কেন, তিন বছর কাজ না-করলেও সমস্যা কিসের, এসব ভাবছি, এমন সময় দেখি আবার কথা বলে উঠেছে সেই মন্দ্রস্বর।
"আমি? আমি তো ওদের সাংবাদিক বলি না, বলি সাংঘাতিক।
সাংঘাতিকদের কাছে আমি কোনোদিন কথা বলি না। আমার অফিসে বলা আছে, আমার টেবিলের বিশ হাতের মধ্যে যেন ওরা না আসে। এলে আমি ক্যামরা-ট্যামরা সব ফেলে দিই। ওরাও আসে না, জানে আসলে আমি ক্যামরা-ট্যামরা সব ফেলে দিবো। আমাকে নিয়ে যা খুশি লেখ, কিন্তু আমার কাছে আসবি না।
....ব্যাংক ডাকাতির মামলায় দুইজন আসামি ধরলাম। মিডিয়ার সামনে আমি একবারের জন্যও আসি নাই। কথা বলতে হলে আসামির সাথে বলেন, আমার কাজ আসামি ধরার, ধরে দিসি। আমারে আপনার কিছু দেওয়া লাগবে না। আমার কাজ সরকারের, আসামি ধরসি, সরকার যা দেওয়ার দিবে।
আমার কথা নিয়ে আপনি বাজারে বিক্রি করবেন, ব্যবসা করবেন, সেইটা আমি হতে দিবো না।
একবার এক পত্রিকায় আমার নামে একটা রিপোর্ট আসছে। আমার গাড়িতে এএফআর প্লেট লাগানো, আমি বেপরোয়া ড্রাইভিং করি, এইসব। আমার এক বন্ধু আমারে ফোন করে বলে, দোস্ত তোমার নামে তো পত্রিকায় এইসব এইসব আসছে। আমি গেলাম প্রেসক্লাবে।
সেখানে ....(প্রেস ক্লাবের সভাপতি) বলে, দোস্ত তুমি কেন আসছো? আমি বললাম, এই রিপোর্ট কে করসে? সে বলে, ....(রিপোর্টারের নাম)। বললাম, ডাকো। সে আসছে। আমি তারে বললাম, তোর বাপের গাড়ি ছিলো কোনদিন? ঠিক এইভাবে বললাম। আমি কিভাবে গাড়ি চালাই না চালাই তোর বাপের কী? আমার গাড়ি আমি যেভাবে খুশি চালাবো।
তুই এক সপ্তার মধ্যে ....(এই শহর) ছাড়বি। এই তোর প্রেসিডেন্টের সামনে বলছি, নইলে তোরে আমি মার্ডার কেসের আসামি বানাবো। তুই নিজের বৌরে খুন করছস। তোর বৌরে মার্ডার করে তোরে আসামি বানাবো। পালাইসে ...(এই শহর) ছেড়ে।
"
তৃপ্তির হাসি হাসে জীবটা। খুব স্বাভাবিকভাবে, অবলীলায় সে বয়ান করে তার কৃতিত্বের, সাফল্যের উজ্জ্বলতম ঘটনাগুলো। ময়ূরের মতো পেখম ছড়ায় বাক্যবন্ধে, গর্বভরে নয়, নিতান্তই হেলায়-ফেলায়, অত্যন্ত অপরিচিতদের সামনে। একবার ভাবি ভিডিও করে রাখি তার এই মোহন মণিমুক্তোগুলো, কিন্তু একে তো আমার মোবাইল ক্যামেরাটা যাচ্ছেতাই, ভিজিএ প্রযুক্তির, দোকানে যাওয়ার আগে আমার আসলে জানাই ছিলো না যে এই প্রযুক্তি এখনো বাজারে আছে। এছাড়া, একটা সিস্টেমিক রিস্ক তো আছেই।
জমে-যাওয়া ঘাড় ফিরিয়ে আমি লক্ষ্য করতে থাকি, অনুভব করতে থাকি, কাপড়ের বাইরে আমার উন্মুক্ত শরীরটায় কেমন যেন পুরু, অনুভূতিহীন, মসৃণ একটা খোলস জন্ম নিয়েছে ত্বকের ওপরে। আমার কোথাও কোনো নির্বাণ নেই, কোনো পরিত্রাণ নেই, কোনো সার্থকতা নেই। ওই জীবটার স্ত্রী তার নিচে শোয়, বাচ্চার জন্ম দেয়, লালন করে, আবার প্রতিবাদও করার ক্ষীণ চেষ্টা করে। কিন্তু, আমি ওর কাছে স্রেফ একটা মাদারচোদ পিঁপড়ে। কাল যদি আমি দংশনের সূক্ষ্মতম চেষ্টাও করি, তাহলে সিগারেটটায় আগুন ধরানোর আগেই সে আমায় নির্বিকারভাবে পিষে মারবে।
আমার করোটির ভেতর মগজটা শুকিয়ে যেতে থাকে, স্নায়ুগুলো কবিদের মতো চুপচাপ একা একা মারা যায়, অনুভূতি নামের কোথাও-যেন-শোনা একটা শব্দ ছেঁড়া পাঞ্জাবি পরে বোকচোদের মতো দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়ে আলপথে, অচিন রাজপথে। আহা, এমন নয় যে কথা কোনোটা আমার শুনতে বা জানতে আগে তেমন একটা বাকি ছিলো, থ্যাংকস টু ফ্রিডম অব প্রেস এন্ড হেইল ডেমোক্রেসি। কিন্তু, প্রত্যক্ষদর্শীর দাম তো এমনকি শীতলতম আদালতের কাঠগড়ায়ও অনন্য, নয়? খুন হয়, দুর্ঘটনা ঘটে, পুলিশ পেটায়, পড়ি, দেখি, স্থির বা চলচ্ছবি। কিন্তু, নিজের চোখের সামনে দেখলে হয়তো মরার আগেই হাজারবার মৃত কি কি সব বালের আবেগ-টাবেগ আবারো একটু নড়ে চড়ে বসতে পারে।
ফেসবুকে একই বাহিনীর, নিশ্চয় তারা চিমসেপোঁদা জনতার পুটকির নিরাপত্তা বিধান করে আর সতীসাধ্বী লজ্জাবতী আইন-শৃঙ্খলার যোনির সুরক্ষা, এক মাঝারি মানের কর্মকর্তার সাথে আলাপ হয়।
আমার বহু বছরের এই সহপাঠী রীতিমত ঠেলাঠেলি করে, হাজারো ব্যাজার মুখের সামনে থেকে চাকরিটি বাগিয়ে নিয়েছে, প্রশিক্ষণকালে দেখিয়েছে পারদর্শিতা, ঘুরে এসেছে বৈদেশ থেকে, উপার্জন করে এনেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও দেশের জন্যে সম্মান, অন্তত এইরকমই আমাদের শোনানো হয়ে থাকে। সেও আমার ভোদাইমানসচরিত দেখে সান্ত্বনার ভঙ্গিতে বললো, এরকমই তো হয়ে থাকে।
আর আমি বাসায় ফিরি আমার নবলব্ধ অনুভূতিশুষ্ক ত্বক নিয়ে, রাষ্ট্রীয় অনিরাপত্তার সম্যকপ্রায় উপলব্ধি নিয়ে, কোথায় পালাতে পারি, কোথায় লুকোতে পারি সপরিবার-এই অভীপ্সা নিয়ে। মাথায় শুধু ধ্রুবপদের মতো ঘুরপাক খায় মহাশ্বেতা দেবীর যোগ্যপ্রতিভাময় সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্যের কবিতা সংকলনের শিরোনাম, শুধু আমার চেতনা কুরে কুরে খায় ঘুণপোকার মতো, শুধু ডুবসাঁতার দিয়ে দিয়ে ভেসে উঠতে থাকে:
"পুলিশ করে মানুষ শিকার। "
নাহে ব্লগবন্ধুরা, আর কিছু জানতে চেয়ে বিব্রতবোধ করবেন না আমায়।
আমাকেও তো অন্তত কাদায়-জলে দম আটকে মরার আগমুহূর্ত পর্যন্ত বাঁচতে হবে! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।