জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, যুক্তি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব। সবকিছুরই পজিটিভ নেগেটিভ এ দুটো দিক থাকে। কখনো কখনো একটি দিক এতো বেশি প্রকাশিত হয় যে আরেকটিকে খুঁজে টেনে হিঁচড়ে বার করতে হয়। এই যেমন বিএনপির মহিলা সাংসদ পাপিয়া যখন কবি হেলাল হাফিজের কবিতা উদ্ধৃত করলো শুধু চোতমারানি গাল দেবার জন্য তখন পাপিয়ার এই বক্তব্যটির পজিটিভ দিকটি বের করার ব্যাপারটাও কিছুটা এরকম।
পজিটিভ ব্যাপারগুলো কি বুঝে উঠতে পারছেন না তো এখনো? অনেকগুলো আছে।
যেমন,
* গালটি দেবার জন্য পাপিয়া আস্ত একটা কবিতা মুখস্থ করেছিলেন। মওদুদের মতো জ্ঞানী কেউ হয়তো পাপিয়াকে এই কবিতার খোঁজ দিয়েছেন তথাপি নিশ্চিতভাবেই হেলাল হাফিজ নামের একজন কবি আছেন সেটি পাপিয়ার জানা হলো। যে তাকে পাল্টা গাল দিতে চান তাকে নিশ্চয় আরেকটি কবিতা খুঁজতে হবে যেটিতে এর চাইতেও শুনতে খারাপ শব্দ আছে। এ জন্য সে সাংসদকে প্রচুর লেখকের প্রচুর বই ঘাটতে হবে। তাতে করে সাহিত্য জগতে অন্তত একজন পাঠকের সংখ্যা বাড়বে।
এভাবে সংসদের সকল সদস্য ধীরে ধীরে সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করবেন গাল খোঁজার জন্য। তাদের খুশি করবার জন্য নতুন নতুন কবির উদ্ভব ঘটবে যারা শুধু গাল দেবার কবিতা সমগ্র ছাপাবেন। এবং দেশে গাল দেবার বইয়ের পাঠক, ক্রেতা, প্রকাশক ও লেখক অথবা কবিদের নতুন সঙ্ঘ তৈরী হবে। তাদের মধ্যে লীগ ও দল দুইটি ভাগ থাকবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি তা হলো, বইয়ের জগৎ তথা সংস্কৃতির জগতে পুরো রাজনৈতিক জগৎ অবগাহন করবে।
* গালটি দেবার জন্য পাপিয়া সংসদে এসেছিলেন এবং সামনে আরো দিতে হতে পারে ভেবে এখনো সংসদ ছেড়ে যাননি। সংসদে সরকার ও বিরোধী দলীয় সাংসদ ও মহিলা সাংসদদের গাল বিনিময়ে উত্তেজনার আবহ ধরে রাখছেন। যা হউক অন্তত সাংসদরা সংসদমুখীতো হয়েছেন। সুশীল সমাজ অনেকদিন ক্রন্দনরত যে, বিরোধী দল সংসদে যায় না তাই দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে, দেশের আর কোনো সমস্যা ছিলো না। তাদের সে আশাও পূরণ হয়েছে।
দেশের সকল সমস্যা দূর হবার বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে।
* পাপিয়ার গাল দেখেননি কিন্তু শুনেছেন এরকম জনগণের বিশাল একটি অংশ উৎসাহিত হয়ে মজা নেবার জন্য হলেও অন্তত সংসদ টিভি দেখা শুরু করলেন। বহুদিন যাবৎ সংসদের প্রতি মানুষের আগ্রহ শেষ হবার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো পাপিয়া অন্তত সেটিতে নতুন উদ্যম এনে দিতে পেরেছেন।
একইভাবে গতকাল সংসদে পাপিয়া যখন আহমদ শফির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তখন চারদিকে নিন্দার ঝড় বইলেও এখানেও কিছু পজিটিভ ব্যাপার লুক্কায়িত আছে। হেফাজত যদিও বলেছে শফির বক্তব্য এমনই, এটা নিয়ে এত হৈচৈ কেনো তারা বুঝতে পারছে না।
গ্রামে এভাবে না বললে মানুষ বুঝতে পারে না। কিন্তু পাপিয়ার দাবি শফি নারীদের তেঁতুল বলেনইনি। মিডিয়া ক্যু করে সরকার এসব মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে। এবং তিনি জোর গলায় বলেছেন খালেদা জিয়া ঈমানদার মুসলমান। তাই শফিকে সমর্থন দেয়া তাঁর নৈতিক দায়িত্ব।
আসুন দেখি এখানে পজিটিভ দিকগুলো কিরকম হতে পারেঃ
* মিডিয়া ক্যু শব্দটি উচ্চারণের মাধ্যমে তিনি জনগণকে এ শব্দযুগলের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছেন। এতে করে মিডিয়া ক্যু কি, কিভাবে করা হয়, কারা এতে উপকৃত হয় এ ধরনের জরুরী প্রশ্নের উত্তর খোঁজায় জনগণ প্রবৃত্ত হবে এবং জনগণের জ্ঞানে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। ক্যু শব্দটি যেহেতু আমাদের দেশে রাজনৈতিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু জনগণ বাংলাদেশে ক্যু এর ইতিহাস ঘাটতে যেয়ে পাপিয়ারও রাজনৈতিক পরিচয় পাবে। এবং কিভাবে ক্যু'এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় চলে যাওয়া যায় সে প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত হবে। দেশে ক্যু পাল্টা ক্যু'এর সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।
* পাপিয়া খালেদা জিয়ার মুসলমানিত্ব জাহির করতে যেয়ে পারতপক্ষে খালেদা জিয়ার ধর্ম নিয়ে সন্দেহকে স্বীকৃতি দিলেন। সন্দেহকে স্বীকৃতি দিয়ে পরবর্তীতে খালেদাকে ঈমানদার মুসলমানও দাবি করলেন। পাপিয়া হলেন খালেদার ঈমাণের সার্টিফিকেট দাতা। এ প্রক্রিয়ায় কিভাবে একজনের বিরুদ্ধে তৈরী হওয়া অমূলক সন্দেহকে প্রশ্রয় দেয়া যায় এবং কিভাবে আরেকজনের ধর্মের স্বীকৃতিদাতা হতে হয় সেটিও মানুষ শিখলো।
* শফি বলেছেন গার্মেন্টসের মেয়েরা দিন রাত জেনা করে।
তাই জেনা বন্ধে শফিকে পাপিয়া সমর্থন দিলেন। এতে মানুষ মেয়েদের গার্মেন্টসে পাঠানো বন্ধ করে দেবে এবং পুরুষের সামনে গার্মেন্টস জগতের বিশাল কর্মক্ষেত্রের দ্বার উন্মোচিত হলো। সামনে হয়তো পুরুষদেরকে আর কবি নজরুলের 'যা কিছু চির কল্যানকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর' এ চয়নের জ্বালায় জ্বলতে হবে না। এখন থেকে কল্যাণকরের পুরোটাই পুরুষদের হবার সুযোগ তৈরী হলো। কাজেই পাপিয়া পুরুষ্য দুনিয়া তৈরীর সৃষ্টিকর্তা হিসেবে পরবর্তিতে পুরুষ জাতির কাছে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হবেন।
বাংলাদেশে সকল কর্মক্ষেত্রে শুধু পুরুষরা থাকবেন। জেনা চিরজীবনের জন্য বন্ধ হবে। এমন পূণ্যের কাজের জন্য পাপিয়া নিশ্চিতভাবেই পুরস্কার স্বরুপ স্বর্গলাভ করবেন।
* শফি বলেছেন নারী দেখলে যাদের মুখে লালা ঝরে না তাদের পুরুষত্ব নাই। শফিকে পাপিয়ার সমর্থন তাই পুরুষদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক হয়েছে।
তাই পুরুষত্ব জাহিরে পুরুষেরা এখন থেকে রাস্তায় অফিসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথমে লালার বন্যা বইয়ে দেবে। সে বন্যা মোকাবিলায় সরকার বিপদে পড়বে। লালাঝড়া পুরুষ ও লালাকাংখী মহিলাদের কর্তৃক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। লালা থেকে রাসায়নিক শক্তি তৈরীর লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক লালা সংরক্ষণাগার থাকবে। এ লালাকে রপ্তানি উপযোগি করলে বাংলাদেশ লালা রপ্তানিকারক একমাত্র দেশ হিসেবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে এবং দেশের আমদানি রপ্তানি ঘাটতি সম্পূর্ণরুপে দূর হয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত রপ্তানিমুখী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
* আপনার কোনো আরাধ্য ব্যক্তি যদি বেফাঁস কোনো বাক্য বলে ফেলে তবে আপনি সে বাক্যের আপত্তিকর শব্দটির জায়গায় আরেকটি শব্দ দিয়ে বসিয়ে মনে করবেন সেটিই সত্য, বাকিটা ভুল। এবং মনের মধ্যে কয়েকবার রিপিট করবেন তাতে করে এরপরও যদি আপনাকে সেটি দেখানো হয় বা শোনানো হয় আপনি তারপরও মনের মধ্যে বাজতে থাকা শব্দটিই শুনবেন। বাস হয়ে গেলো। যেমন, শফির বক্তব্যের তেঁতুলের জায়গায় পাপিয়া হয়তো মা শব্দটিকে রিপ্লেস করেছেন। আর তাই মনের মধ্যে শব্দটি সেট হবার পর থেকে আহমদ শফির প্রতি তার একটা অন্যরকম শ্রদ্ধা তৈরী হয়েছে এবং সে তাই একাই সংসদে দাঁড়িয়ে ফাইট দিয়েছে।
এভাবে আপনিও ব্যক্তি জীবনে এ পদ্ধতি প্র্যাকটিস করতে পারেন। তাতে সবকিছুর উপর আপনার শ্রদ্ধা জন্মে যাবে। এবং পৃথিবীতে অপার সুখ নিঃসৃত হতে থাকবে।
এবার দেখি আপনারা কিছু কিছু চেষ্টা করুন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।