অনেকেই হয়তো আজকের আমার দেশের প্রতিবেদনটি পড়েননি। শেয়ার না করে থাকতে পারলাম না। আমাদের দেশের নেতারা কবে যে মানুষ হবে আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন।
শেখ হাসিনার কূটনৈতিক বিপর্যয়
বিশেষ প্রতিনিধি, নিউইয়র্ক
ভারতের কাছ থেকে তিস্তার চুক্তি না পাওয়ার দুঃখ যখন কাঁচা ক্ষতের মতো, সে সময় আরও একটি বড়মাপের কূটনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ল বাংলাদেশ।
সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভাঙা মন নিয়ে আন্দোলনে সরগরম স্বদেশে ফিরতে হচ্ছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৬তম অধিবেশনে যোগদানের নিমিত্তে দেড় সপ্তাহ ধরে নিউইয়র্কে বসে তিনি মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ভেস্তে যাওয়া আস্থা মেরামতির লক্ষ্যেই মূলত সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে স্রেফ ‘হাই, হ্যালো’ ছাড়া আর কিছুই হয়নি। মার্কিনিরা তাকে এড়িয়ে চলেছেন। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন তাকে এক ধরনের বয়কটও করেছেন।
কতগুলো রুটিন ও বানানো প্রোগ্রাম ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও তার বিশাল অনুগামী দল ঘুরে বেড়িয়ে, কেনাকাটায় ও ছবি তোলায় সময় দিয়েছে বেশি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির হতাশা ছিল আরও ব্যাপক। কেননা, তার দেয়া দাওয়াতে বিদেশি মেহমানরা আসেনি। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীরা তাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিল। এতে তিনি ক্ষেপে গিয়ে কর্মকর্তাদের শুধু বকুনিই দেননি, জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট ওবামার ভাষণের সময় উপস্থিত থাকেননি।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত ও যাচাইকৃত তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনার আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী-উপদেষ্টারা হন্যে হয়ে চেষ্টা করছিলেন যেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ওবামার বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে নিদেনপক্ষে একটা ফটোসেশন বা ৫ মিনিটের বৈঠক করা যায়।
কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কোনো না কোনোভাবে দেখা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও কয়েকজন সফরসঙ্গীর জন্য সবচেয়ে দামি হোটেল ‘ওয়ালডর্ফ এস্টোরিয়া’য় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে বরাবরের মতো উঠেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু বিধিবাম—একই ভবনের বাসিন্দাদের সেখানে চোখাচোখি পর্যন্ত হয়নি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের বলা হচ্ছিল যে, সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত বৈঠকের এক মঞ্চে হিলারি ক্লিনটন ও শেখ হাসিনা বসবেন।
শেখ হাসিনা প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে। কিন্তু দেখা গেল হিলারি সেখানে যাওয়ার কর্মসূচি শেষ মুহূর্তে বাতিল করে দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মত হচ্ছে, হিলারি ইচ্ছা করেই সেখানে যাননি। কেননা, শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত্ বা ফটোসেশনের কোনো সুযোগ তিনি দিতে চান না।
উল্লেখ্য, নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নাজেহাল না করার জন্য হিলারি ক্লিনটনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন শেখ হাসিনা।
হিলারি সেটা ভোলেননি। তাছাড়া বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি, দুঃশাসন ও দুর্নীতির জন্য মার্কিনিরা অনেকখানি বিরক্তও এখন। প্রসঙ্গত, ড. ইউনূস তখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন। ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’ নামের এক বৈঠকে ড. ইউনূস সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের পরপরই ড. ইউনূসকে সেখানে থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
সে বৈঠকে মি. ক্লিনটন শেখ হাসিনাসহ ৫ জন সরকারপ্রধানকে স্রেফ পরিচয় করিয়ে দেন। শেখ হাসিনা যেন যুগল ফটোবন্দি না হতে পারেন, সেজন্য ক্লিনটন সচেষ্ট ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাপ্তাহিক ‘বাংলা পত্রিকা’ মাসখানেক আগে ক্লিনটন ও ইউনূসের সাক্ষাতের একটি খবর ছাপিয়ে বলেছিল, বিল ক্লিনটন ওই পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহেরকে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ, দেশকে পেছনের দিকে ঠেলছে। চলতি সফরের সময় নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে ডা. দীপু মনি স্বীকার করেন, বিল ক্লিনটনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো কথা হয়নি।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের জন্য সব সময় ভোজের আয়োজন করেন।
মেজবান হিসেবে প্রেসিডেন্ট দরজায় দাঁড়িয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান। এবারও হয়েছে শুধু শুভেচ্ছা বিনিময়। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি বা সমর্থক মিডিয়ায় এটা ফলাও করে প্রচার চালানো হয়। এর আগে একটি মধ্যাহ্নভোজে প্রেসিডেন্ট ওবামাসহ সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান যোগ দিয়েছিলেন। স্থানীয় পত্রিকার খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পরে তার সহকর্মীদের কাছে ভোজের গল্পটি এভাবে বলেছিলেন যে, ওবামার সঙ্গে দু’দণ্ড কথা বলার নিয়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করেননি।
সালাদের বাটি থেকে শসা নিয়ে মুখে নাড়াচাড়া করছিলেন। এক ফাঁকে ওবামাকে একা পেয়ে তিনি প্রায় দৌড়ে সেখানে যান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আশ্চর্য হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘কী ব্যাপার, আপনি কিছু খাচ্ছেন না?’ জবাবে উত্ফুল্ল প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তেমন কিছু খাই না, শুধু সালাদ খাই’। এই ক্ষণিকের সাক্ষােক খবর আকারে বানিয়ে এমনও প্রচার করা হয়েছে যে, ওবামা নাকি বাংলাদেশে যেতে আগ্রহী। অবশ্য মার্কিনিদের বরাত দিয়ে স্থানীয় একাধিক ওয়েবসাইটে এমন খবরও বেরিয়েছে যে, আমেরিকান কর্মকর্তারা আগামী বছর বাংলাদেশের নতুন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন নিউইয়র্কে অনেক সরকারপ্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের তরফ থেকে সাক্ষাতের অনুরোধ নাকচ করে দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর এহেন মানসিক অবস্থার মধ্যে ঢাকার রাজপথে বিরোধী দলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবরটি ছিল আরও বিব্রতকর। তিনি ঘনিষ্ঠজনদের এমনও বলেছেন, কোনো না কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বিরোধী দলকে এ কাজে সহায়তা করেছে। এটা তদন্ত করে দেখা হবে।
মার্কিন প্রশাসনের উপর্যুপরি ‘না’-এর দরুন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির মানসিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তিনি জাতিসংঘে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তৃতার সময় সেখানে উপস্থিত থাকেননি। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেদিন নিউইয়র্কে এসে ওয়ালডর্ফ এস্টোরিয়া হোটেলে ওঠেন, সেদিন সেখানে ছিল স্বাভাবিক কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ডা. দীপু মনিকে মেটাল ডিটেক্টরের ভেতর দিয়ে হোটেলে ঢোকার অনুরোধ করা হলে তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, আমি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মীদের জবাব ছিল, প্রত্যেককে এ গেট দিয়ে যেতে হবে। এ নিয়ে বাদানুবাদের পর তিনি সিকিউরিটি গেট দিয়ে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ডিটেক্টর পরীক্ষার সঙ্কেত দেয়।
তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিবিড় তল্লাশির জন্য নিরাপত্তা কর্মীরা অনুরোধ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের অন্য হোটেল দেখার জন্য নির্দেশ দেন। যা হোক, পরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির মধ্যস্থতায় বিষয়টির সুরাহা হয়। কিন্তু তাকে বেদম বকুনি খেতে হয় দু’তরফে।
সর্বশেষ সোমবারে ঘটে কূটনৈতিক বিপর্যয়ের সর্বশেষ ঘটনা।
ডা. দীপু মনি আগামী মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য একটি জলবায়ু সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে সামনে রেখে সেদিন ৭০টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে জাতিসংঘের ক্যাফেটেরিয়ায় ভোজের দাওয়াত দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত হন মাত্র ২ জন স্থায়ী প্রতিনিধি ও ৭টি দেশের ডেস্ক অফিসার পদমর্যাদার লোকজন। এই স্বল্প উপস্থিতিতে আরেক দফা বকুনির শিকার হন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বেঁচে যাওয়া বিপুল পরিমাণ খাবার কর্মকর্তারা নিয়েও শেষ করতে পারেননি। সর্বসাকুল্যে খাওয়ার বিল দিতে হয় ৮ হাজার ২শ’ ডলার।
এসব ব্যতীত, প্রায় সব অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছেলে ও মেয়ের উপস্থিতি অনেকের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীদের ধারণা, কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে আস্থার ক্ষেত্রে যে ফাটল দেখা দিয়েছে তাতে করে মহাজোট সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা আন্তর্জাতিকভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও নিউইয়র্কে এসেছিলেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়নি তার।
সূত্র: আমার দেশ; ২৯-০৯-২০১১
লিংক: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।