"কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরিয়া গেছে.। "
পিতৃহীন সোনাবরুর ১৩ বছর বয়সী ভাই ফেরদৌস অভাবের তাড়নায় ঢাকায় চলে গিয়েছিল মাস দুয়েক আগে। কচুক্ষেত এলাকার একটি স্টুডিওতে ফাই ফরমাস খাটার কাজ করে ৫০০ টাকা বেতন পেয়েছিল সে। একটি স্কুল ব্যাগ কিনে আনতে ভাই সোনাবরুর আবদার রক্ষায় গত ঈদে বাড়ি ফেরার সময় সে বেতনের ২০০ টাকা খরচ করে ফেলে। ভাইয়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে সোনাবরু বলেছিল, 'দেখিস দাদা, যদি বেঁচে থাকি তবে কোনোদিনই পরীক্ষায় দ্বিতীয় হব না।
প্রতিটি পরিক্ষায় প্রথম হওয়ার স্বপ্ন দেখা বরগুনার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের জাকিরতবক গ্রামের ১০ বছর বয়সী সোনাবরু এখন আর বেঁচে নেই। নিজের জন্মদিনে ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে আত্মহনন (?) করেছি মেয়েটি...।
এভাবে চলে গেল কেন সোনাবরু? ভাতের কষ্ট অনেক বড় কষ্ট তাইনা??
কার উপর তার এই অভিমান ? তার দরিদ্র মা নাকি এদেশ আর এদেশের সরকারের উপর?
সোনাবরুর জন্য দুঁফোটা নীরব অশ্রু ফেলা কিংবা দুলাইন লিখা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নাই। হয়ত রাজপথে দাঁড়িয়ে তার এই মৃত্যর জন্য সরকারের কাছে জবাব চাইতে পারতাম। কিন্তু আপসোস সে স্বাধীনতাও আমার নেই।
জবাব চাইতে গিয়ে নিজেকেই না চলে যেতে হয় বুটের তলায় !
সোনাবরুর এমন মৃত্যার দায়ভার কার?
কারো না কারোতো সোনাবরুদের কথা ভাবার কথা ছিল কিংবা সোনাবরুদের জন্য কিছু করার ক্ষমতা ছিল।
কিন্তু উনারা ভাবেনি সোনাবরুদের কথা। আমার কথা সোনাবরুদের কথা ভাবার ইচ্ছা আর সময় কোনটাই উনাদের নাই। উনারা এখন বিশ্বের কথা ভাবেন....!!
যেদিন জাকিরতবক গ্রামের মানুষ মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ উপেক্ষা করে আর নিজেদের কষ্ট কে বুকে চেপে সোনাবরুর নিথর দেহটাকে গোরস্থানে নিয়ে গিয়েছিল ঠিক তার দুদিন পরে সুদুর আমেরিকার কোন এক আলো জলমল হল রুমে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছেন শান্তির ললিত বানী (?) ক্ষুধা আর দারিদ্রমূক্ত গনতান্ত্রিক বিশ্বের মডেল ঘোষনা করেছেন তিনি (??)
কত মহান আমাদের সরকার প্রধান। ৫৫ হাজার বর্গমাইলে শান্তি আনার মুরদ নেই যার তিনি ভাবেন বিশ্ব শান্তির কথা ! কিন্তু সরকার প্রধানের এই কৃতিত্বে আমি গর্বে উল্লসিত হতে পারিনি।
কারন আমার চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে ভাতের অভাবে আমার ১০ বছর বয়সী বোন সোনাবরুর আত্মহননের (?) করুন দৃশ্য
যে দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যায়,যে দেশে গনতন্ত্র পিষ্ট হয় বুটের তলায়, যে দেশে মানবাধিকার ঝুলে থাকে র্যাবের গুলিতে পঙ্গু লিমনের স্ক্র্যচে, যেদেশে দুমুঠো ভাতের জন্য মানুষ বেঁচে দেয় নিজের কিডনী লিভার কিংবা বুকের সন্তান সেদেশের প্রধানমন্ত্রী কি করে বিশ্ব শান্তির মডেল ঘোষনা করে !!
উনারা সবই পারেন...
ওনারা যেমন সোনাবরুর মাকে দেওয়া ১০ টাকা দর চালের প্রতিশ্রুতি ভূলে যেতে পারেন তেমনি পারেন সোনাবরুর লাশের উপর দাঁড়িয়ে বিশ্ব শান্তির মডেল নামক প্রহসনের জন্ম দিতে।
উনার চোখে এখন একটা নোবেল প্রাইজের স্বপ্ন। কোথাকার কোন ইউনুস নোবেল নিয়ে নিয়েছেন উনার আগে। এই উদ্যত্বের জবাব না দিলে যে নয়। কাজেই প্রয়োজন বিশ্বশান্তির মডেলের মত হাস্যকর কিছু সাথে লবিং আর গুরু দক্ষিনা।
সোনাবরুদের দিকে নজর দেওয়ার সময় কই?
বহুদিন আগে ক্ষুধার কষ্টের কথা বলতে কোন এক কবি লিখেছিলেন " ভাত দে নইলে মানচিত্র খাব"
সোনাবরুদের মানচিত্র খাওয়ার ক্ষমতাও নাই। সেতো খেয়ে নিচ্ছে চারপাশ ঘিরে থাকা হাঙ্গর।
তাই বুঝি নিজের জীবন দিয়ে সোনাবরু জানিয়ে গেলে ক্ষুধার যন্ত্রনা আর তার স্বাধীনতার মূল্য ।
আচ্ছা কেন লিখছি এসব? এসব লিখেই বা কি হয়?
শুনতে পাচ্ছি জোর আোয়োজন চলছে বিবেকের কন্ঠ রোধ করার।
কাজেই ভয়টা থেকেই যায়।
কবে না দরজায় এসে কড়া নাড়ে উর্দি পরা হারুনেরা।
কিছু আর নাই বা লিখলাম। তবে আসুন সবাই মিলে দোয়া করি "সোনাবরু
এই অভাবের দেশ ছেড়ে যেখানে চলে গিয়েছ তুমি সেখানে ভাল থেকো। "
আর হ্যাঁ আত্ম হনন মহাপাপ। কাজেই ১০ বছরের নিস্পাপ মেয়েটিকে কেউ আত্ম হননের অপবাদ দিবেন না।
সোনাবরু আত্ন হনন করেনি ...তাকে হত্যা করা হয়েছে।
হ্যাঁ সোনাবরু কে হত্যা করা হয়েছে......
সোনাবরুর করুন মৃত্যুর দায় এ সমাজের, এই রাষ্ট্রের !!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।