আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশের সমস্যায় বিব্রত নন শেখ হাসিনা: নিউইয়র্ক টাইমস

বার্তা২৪ ডেস্ক ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর: গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘গ্র্যান্ডমাদারলি বাংলাদেশ লিডার আনফেজড বাই প্রবলেমস অ্যাট হোম’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেছেন তখন তার দেশে শেয়ারবাজারের দ্রুত দরপতনে বিনিয়োগকারীরা হাঙ্গামায় মেতে ওঠেন। কয়েকশ’ ইসলামী বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার তিনি যখন জাতিসংঘের বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ দেন সেদিন প্রধান বিরোধীদল হুমকি দেয় হরতালের। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে বিচলিত দেখায়নি।

অনমনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই নেত্রীর বয়স এই মাসে ৬৪ বছর হলো। তার কণ্ঠ শান্ত, এবং দৃষ্টি স্থির। বাংলাদেশে রাজনৈতিক জীবনে অনেক কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছেন তিনি। এ দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি। পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এদেশের ইতিহাসে জড়িয়ে রয়েছে রাজনৈতিক বিবাদ ও সামরিক হস্তক্ষেপ।

তার পিতা ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ১৯৭৫ সালে অস্ত্রধারীরা তাকে, তার স্ত্রীকে ও তিন ছেলেকে তাদের বাড়িতে হত্যা করে। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বেশ কয়েকবার টার্গেট করা হয়েছে। ২০০৪ সালে তাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এর বিস্ফোরণের তীব্রতায় তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গৃহবন্দি, জেলজীবন ও ষড়যন্ত্র পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি অপরিচিত নন। ২০০৯ সালে তার প্রধানমন্ত্রীত্বের মাত্র দুই মাসের মাথায় তাকে সীমান্তরক্ষীদের রক্তাক্ত বিদ্রোহ মোকাবিলা করতে হয়। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৫ কোটি মানুষের দেশ-অধিক স্থিতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র সমর্থন করে। হোটেল স্যুটে বাঙালি শাড়িতে ঘোমটা দেয়া শেখ হাসিনার সাক্ষাত মেলে। স্যুটের দেয়ালে তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি।

সেখানে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দেশের জন্য আমরা কাজ করছি। ” ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীর জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার হওয়ার পর শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পরাজিত করে ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বিশাল জয় পেয়েছি। ” পুলিশ ও সেনা, বিশেষ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের নির্যাতন কমাতে ব্যর্থতার জন্য তার সরকারের সমালোচনা হয়েছে। গত মে মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ওই সব বাহিনী প্রায় ২০০ মানুষকে হত্যা করেছে।

সরকারের পক্ষে যায় না এমন সংবাদ লেখায় বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্যও তার সরকারের সমালোচনা হয়েছে। সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর ঢাকায় এক এডিটরকে এই গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-এর এশিয়া প্রোগ্রামিং সমন্বয়কারী বব ডিয়েটজ বলেছিলেন- মিডিয়ার সমালোচনা সহ্য না করার রেকর্ড রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের। একই সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারীদের একটি দেশের গৌবর অর্জন করেছে। এই প্রবৃদ্ধি বার্ষিক শতকরা ৬ ভাগ।

তিনি পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এই দু’টি দেশ পরস্পরকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে মনে করে। শেখ হাসিনা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে উৎসাহিত করেছেন। সহিংস ধর্মীয় কট্টর পন্থার বিষয়ে তিনি জিরো-টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, “বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা এ বিষয়টিকে অনুমোদন দিয়েছে।

” শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের অবস্থান একেবারে পরিষ্কার। দেশে আমরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে অনুমোদন দেবো না। আমাদের জনগণ এর বিরুদ্ধে। এজন্যই তারা আমাদের ভোট দিয়েছে। ” বাংলাদেশের উপস্থিত প্রতিনিধিদের মতে, বুধবার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন সাধারণ অধিবেশনে অভ্যর্থনাকালে সম্ভাষণ জানান তখন তিনি বলেছিলেন- ‘আপনার এবং আমাদের সরকার নারীদের ক্ষমতায়ন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে চমৎকার একটি কাজ করছে।

’ ওই সময় শেখ হাসিনার বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন বারাক ওবামা। এই সপ্তাহের শুরুর দিকে নিউ ইয়র্কে এশিয়া সোসাইটিতে এক বক্তব্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধাগুলো তুলে ধরেন। বলেন, “সিটিগ্রুপ, গোল্ডম্যান বাক এবং জেপি মরগান বাংলাদেশকে তারকা মর্যাদা এনে দিচ্ছে। ” শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশকে বিনিয়োগবান্ধব করে তুলে ধরার যে চেষ্টা আমরা করছি ধীরে ধীরে তা স্বীকৃতি পাচ্ছে। এতে আমরা খুশি।

” সাক্ষাৎকারের সময় তিনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শেয়ারবাজারের সহিংসতার বিষয়ে খুব কমই উদ্বেগ দেখালেন। সেখানে কয়েকদিন আগেও অসন্তুষ্ট বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ দরপতনের জন্য গাড়ি ভেঙেছেন, স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে টায়ারে আগুন দিয়েছেন। বিএনপির সর্বশেষ হরতালের হুমকিতে বা সিনিয়র নেতাদের বিচারে ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশি দমনপীড়নের বিষয়ে তিনি কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করলেন না। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৃসংসতার দায়ে জামায়াতে ইসলামীর ওইসব নেতার বিচার হচ্ছে। শেখ হাসিনা চিন্তা করার সময় না নিয়েই বললেন, “পুলিশকে অ্যাকশনে যেতে হয়েছিল।

” যখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, ক্ষুদ্রঋণের প্রবর্তক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সম্পকের্র বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো তখন শেখ হাসিনার চেহারা, অভিব্যক্তি কিছুটা কঠিন হয়ে ওঠে। ওই ব্যাংকটি দরিদ্রদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে থাকে। শেখ হাসিনা ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ২০১০ সালে নরওয়ে একটি নেতিবাচক ডকুমেন্টারি প্রচারের পরে তাতে ফাটল ধরে। ওই ডকুমেন্টারিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অবৈধ উপায়ে নরওয়ের ১০ কোটি ডলারের দান অন্য একটি খাতে সরিয়ে নিয়েছেন।

কিন্তু ওই অর্থ পরে সরিয়ে আগের অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কখনও কোনো অন্যায়ের দায়ে অভিযুক্ত হননি। কিন্তু এর ফল হিসেবে তাকে ও গ্রামীণ ব্যাংককে বাংলাদেশের মিডিয়া তীব্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। শেখ হাসিনা বলেছেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যাংকের অন্যান্য আইন ভঙ্গ করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের অনেক ঋণগ্রহীতা তাদের ঋণ শোধ করতে পারছিলেন না।

” তিনি ড. ইউনূসকে দারিদ্র্য দূরীকরণের নামে গরিবের ‘রক্তশোষক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু ড. ইউনূস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত এপ্রিলে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ আঁকড়ে থাকার এক আইনি লড়াইয়ে বাংলাদেশের এক আদালতে হেরে যান তিনি। শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের অন্য রাজনীতিবিদদেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। শেখ হাসিনা ছিলেন অনমনীয়।

তিনি বলেছেন, “আইন তার নিজের গতিতে চলেছে। আদালত ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গিয়েছে। তিনি কেন আমাকে দোষ দিচ্ছেন, আমি জানি না। ” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.