আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে লাভের পাল্লা ভারি ভারতের তবে সড়কপথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশি যানবাহন ব্যবহারের সুযোগ রেখে চুক্তি করলে লাভবান হবে দে

ভালবাসি মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি হলে নৌপরিবহনে বাংলাদেশের তেমন একটা লাভ হবে না। এ ক্ষেত্রে ভারতের লাভের পাল্লাই ভারি হবে। কারণ বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির নিয়ন্ত্রণ ৯০ শতাংশই তখন বিদেশিদের হাতে চলে যাবে। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ থাকবে মাত্র ১০ শতাংশ। তবে ভারতসহ অন্যান্য দেশের পণ্য বাংলাদেশ হয়ে উত্তর পূর্ব ভারতে পৌঁছতে এ দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেই লাভবান হবে বাংলাদেশ।

বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের দুটি বন্দর ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যবহারকারী দেশগুলো থেকে কিছু চার্জ পাবে। যেহেতু আমদানির ৯০ শতাংশই ভারত নিয়ন্ত্রণ করবে তাই লাভের পাল্লাটা ভারতের দিকেই থাকবে। কারণ তাদের পণ্য পরিবহন ব্যয় কমবে, বাঁচবে সময়। তবে নৌপরিবহনে কোনো লাভ না হলেও সড়ক পরিবহনে সে ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। সূত্র জানায়, ভারত যদি বাংলাদেশের মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পায় তাহলে ভারতীয় নিজস্ব পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি বাংলাদেশের মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে।

সেখানে জাহাজ থেকে পণ্য বন্দরে খালাস করা হবে। পরে তা সড়ক পথে অথবা বার্জে (ছোট জাহাজ) করে উত্তর-পূর্ব ভারতে নেয়া হবে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত নৌ প্রটোকলের আওতায় প্রায় ৩০০টি নৌযান নিয়োজিত আছে। এছাড়া বার্মা-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকলের আওতায় আরো ১০০টি নৌযান চলাচল করছে। এসব নৌযান দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানিকৃত ফ্লাইএস (সিমেন্টের কাঁচামাল) আমদানি করা হয়।

ভারত থেকে আমদানিকৃত ফ্লাইএস বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ভৈরব, আখাউড়াসহ যে সব এলাকায় সিমেন্ট কারখানা রয়েছে সেসব এলাকা পর্যন্ত জাহাজগুলো নেয়া হয়। অপরদিকে বার্মা থেকে মাছ, চাল, গম, পিঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়। এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ২ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আসে। আর ছোট ছোট জাহাজ টেকনাফের বার্মা অংশ পর্যন্ত আসে। পরে তা সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া হয়।

সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ফ্লাগ জাহাজের অংশগ্রহণ মাত্র ১০ ভাগ আর বিদেশি জাহাজের অংশগ্রহণ ৯০ ভাগ। এর মূল কারণ দেশি জাহাজের স্বল্পতা। তাই পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিদেশি জাহাজের ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে ফ্লাগ জাহাজের সংখ্যা মাত্র ৫৭টি। পণ্য পরিবহন ও জাহাজ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশের মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেয়ার আগে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশকে স্বনির্ভর হতে হবে।

এ জন্য ফ্লাগ জাহাজের সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে জাহাজ নির্মাণ ও সংগ্রহ করতে হবে বলেও তারা মত দেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে ঘোষিত যৌথ ইশতেহারে ৬৫টি দফার ৪১ নাম্বার দফায় মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ভারতকে ব্যবহারের বিষয়ে বলা হয়েছে। জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশের মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়ার পর থেকেই ভারত তার জাহাজ সংখ্যা বাড়াতে শুরু করেছে। ভারত জাহাজ নির্মাণের জন্য বিনিয়োগকারীদের ৩০ শতাংশ ইনসেনটিভ দিয়ে থাকে।

এতে ভারতের জাহাজ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিপরীতে বাংলাদেশের জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে না বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কমে যাচ্ছে। কারণ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর জাহাজগুলো পণ্য পরিবহনে অযোগ্য হয়ে যায়। এদিকে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বর্তমান সক্ষমতার ৪০ এবং মংলা সমুদ্র বন্দরের ৮০ শতাংশ বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে ব্যবস্থাপনারও উন্নয়ন ঘটানো দরকার বলে মনে করেন তারা।

ইতোমধ্যে কিছু বেসরকারি উদ্যোগে এ দু'টি বন্দরের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি নৌরুট উন্মুক্ত রয়েছে। তারপরও ট্রানজিট প্রশ্নে গঠিত কোর কমিটি আরো কয়েকটি নৌরুট চালু করার পরামর্শ দিয়েছে। প্রস্তাবিত রুটের মধ্যে রয়েছে রুট-১ : ভারতের ত্রিপুরা-মিজোরামের মধ্যে নৌ যোগোযোগের উন্নয়নে কলকাতা-নামখাতা-শেখবাড়িয়া-মংলা-কাউখালি-বরিশাল-চন্দপুর-ভৈরববাজার-আশুগঞ্জ-শেরপুর-জাকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ পর্যন্ত নৌ যোগাযোগ বিস্তৃত করা। রুট-২ : বাংলাদেশের সঙ্গে আসামের গোহাটি পর্যন্ত নৌ-পথ বিস্তৃত করতে কলকাতা-নামখাতা-শেখবাড়িয়া-মংলা-কাউখালি-বরিশাল-চন্দপুর-মাওয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট-সিরাজগঞ্জ-চিলমারি-দইখাওয়া-ডুবুরি-পান্ডু-সিলেট এবং রুট-৩ এ ত্রিপুরা-মিজোরামের মধ্যকার প্রস্তাবিত কলকাতা-নামখাতা-শেখবাড়িয়া-মংলা-কাউখালি-বরিশাল-চন্দপুর থেকে নদীপথে আশুগঞ্জ এবং আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে আখাউড়া পর্যন্ত মাল্টিমডাল রুট।

তবে ভারতকে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের (করিডোর) অনুমতি দিলে এসব রুট ব্যবহার করার তেমন একটা প্রয়োজন হবে না ভারতের। কারণ তখন সমুদ্র পথে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের বন্দর দু'টি পর্যন্ত আনা হবে। বাকি পথের জন্য সড়ক পথ ব্যবহার করা হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা। এসব বিষয়ে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের ক্যাপ্টেন হাবিব যায়যায়দিনকে বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে যে অবকাঠামো আছে তাতে বাড়তি চাপ নেয়া সম্ভব নয়। যদি অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় তাহলে কিছুটা চাপ নেয়া যাবে।

বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে ভারত যে পরিমাণ লাভ করবে তার তুলনায় বাংলাদেশের লাভ অনেক কমই হবে। তিনি বলেন, দেশের ফ্লাগ জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। জাহাজ সংখ্যা বাড়লে এ খাতেও বাংলাদেশের আয় বাড়বে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্লাগ জাহাজের সংখ্যা ৫৭ থেকে ৬৫টিতে উন্নীত হবে বলেও তিনি জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক সহাপরিচালক ম. ইনামুল হক বলেন, ভারতকে বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার আগে ভাবতে হবে আর্থিকভাবে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে।

সেই সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের ব্যাপারেও ভাবতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ফ্লাগ জাহাজ কম থাকায় এ খাতে আমাদের কোনো লাভ হবে না। তবে সরকার যদি সড়ক পথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের যান ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা বা সুযোগ রেখে চুক্তি করে তাহলে আমরা লাভবান হব নিঃসন্দেহে। কারণ ভারতের পণ্য বন্দরে নামলেই হবে না, উত্তর পূর্ব ভারতে সে সব পণ্য নিতে হলে সড়ক ব্যবহার করতেই হবে তাদের। তাই সড়ক পথে দেশীয় পরিবহনের সুযোগ রেখে চুক্তি করা দরকার।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.