আমি চির-বিদ্রোহী বীর........ বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির! স্বদেশী পন্য কিনে হোন ধন্য”
অথবা “মানসম্মত বাংলাদেশী পন্য শিল্প বিকাশে সহায়ক”
একথা গুলো আমরা কি জানি? আর জানলেও কয়জনে তা মানি? আমাদের দেশের মানুষের সবসময় একটা অভ্যাস লক্ষ করা যায় আর সেটা হলো বিদেশি জিনিস কিনার প্রবণতা এবং সেটা আমি আপুনি আমরা সবার। যেই জিনিস আমাদের দেশে তৈরি হয়না সেটা কিনার প্রতি করও দুর্বলতা থাকলে সেটা একটা ব্যাপার, কিন্তু যেই জিনিস আমাদের দেশে বিদেশের থেকে আরও উন্নত মানের তৈরি হয় সেই বিদেশি পন্যও কিনার ব্যাপক প্রবণতা আমাদের মাঝে লক্ষ করা যায়
আমরা সব সময় গর্বের সহিত বিদেশী জিনিস ব্যাবহার করে থাকি। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় সব পন্যই দেখবেন বিদেশী কারণ আমাদের অবাধ বিশ্বাস বাংলাদেশে ভাল কোন জিনিসই তৈরি হয় না।
বাংলাদেশের বাজারে যে কয়টি পন্য এখন সবছেয়ে বেশি জনপ্রিয়, সেটি হলো ভারতের Lay's crisps (লেইস চিপস)। আমাদের দেশের স্মাট ছেলে মেয়েরা এই চিপস সবছেয়ে বেশি খেয়ে থাকেন এবং তারা এই চিপস্ খুব পচন্দ করেন।
ঢাকা সহ সারা দেশের সব দোকানে এই চিপস এখন পাওয়া যায় সব সময়, তবে দাম একটু বেশি। এই একটু বেশিটা কত বেশি? ১০ রুপির একটা চিপস ৪৫ টাকা আর ২০ রুপির একটা চিপস ৭৫ টাকা। কথা হলো ১০ রুপির সমান বাংলাদেশের টাকায় হয় ১৬ টাকা ও বিশ রুপির সমান ৩২ টাকা, তাহলে ১০ রুপির চিপস কেন ৪৫ টাকায় ও ২০ রুপির চিপস কেন ৭৫ টাকায় আমরা কিনি?
গত বছরের শুরুর দিকে আমি ভারতের দার্জিলিংয়ে গিয়েছিলাম, পথে এক ছেলের সাথে পরিচয় হয় আমার, ছেলেটি দার্জিলিংযের একটা স্কুলে পড়ে। একটা পরিক্ষা দেওয়ার জন্য সে দার্জিলিংযে যাচ্ছিলো এবং সে একা ছিলো, যেহেতু আমিও একা ছিলাম এবং প্রথম যাচ্ছি তাই তার সাথে আমি কথা বলি এবং দুইজন রওনা দেই একসাথে। পথে লক্ষ করলাম সে এক মহা পন্ডিত এবং বাংলাদেশের কোন জিনিসই পচন্দ করে না, এবং সে পুরোপুরি বিদেশী (ইন্ডিয়ান) জিনিসের ভক্ত।
তার মুখে সারা সময় ভরতের জিনিসের প্রশংসা, সে যে স্কুলের ছাত্র সে স্কুলের প্রশংসা ! দার্জিলিংয়ে গিয়ে দেখলাম সেখানে অনেক গুলো স্কুল আছে এবং সেখানে অনেক বিদেশী ছাত্র ছাত্রী পড়ালেখা করে, তাই মনের কৌতুহলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আমি আমার ভাগীনাকে এইখানে লেখাপড়া করাতে ছাই কোন স্কুল ভালো হবে? সে তার স্কুল সম্মন্ধে একটা বড় সড় ভাষন দিল এবং বুঝাইতে চাইলো ঐই স্কুলের মত এত ভাল স্কুল আর এশিয়াতে তো কি সারা দুনিয়ায় নাই। অথচ পরে জানতে পারি সে যে পরিক্ষাটা দিতে সেখানে গিয়েছে সে পরিক্ষায় সে আগে ফেল করেছে তাই আবার সে পরিক্ষাটা দিচ্ছে। হোটেলের রুম থেকে সে তার স্যারকে ফোন করে বলেছে যদি স্যার তাকে পরিক্ষায় পাশের জন্য সহযোগীতা করে তাহলে সে তার স্যারকে একটা বড় গিফট দিবে, আর স্যারও রাজী হয়ে গেছে। কথা অনুযায়ী তার স্যার তাকে বই সহ একটা রুমে একা পরিক্ষা দেওয়ার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে বিনিময়ে সে তার স্যারকে একটা রেমন্ডসের স্যুটের কাপড় গিফট করেছে, আর সেটা সে আমাকে নিয়ে কিনেছে দার্জিলিংয়ের বিগ বাজার থেকে। পরিক্ষা শেষে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম পরিক্ষা কেমন হয়েছে? সে আমাকে উত্তর দিলো ৫৫ মার্কের উত্তর দিতে পেরেছি।
আমি অবাক হলাম! সে আমাকে তখন বলে এখানে পরিক্ষা বাংলাদেশের মত না। তবে কেমন? সে বলে এখানে প্রশ্নের উত্তর পাঠ্য বই থেকে বের করতে হয় এটা আপুনি বুঝবেন না। তখন আমি তাকে বললাম আমাদের দেশে কি প্রশ্নের উত্তর বাইবেল বা গীতা থেকে বের করে নাকি? আমাদের দেশেও পাঠ্য বই থেকেই বরে করতে হয়।
তাহলে এবার বুঝেন এই বিদেশ প্রেমিকের অবস্থা! যে কিনা একা এক রুমে পাঠ্য বই নিয়ে পরিক্ষা দিয়ে মাত্র ৫৫ মার্কের উত্তর দেয় না জানি তার ঐ স্কুল কেমন আর তার স্কুলের শিক্ষার মানই বা কেমন? আর তাই সাথে সাথে আমি আমার ভাগিনাকে তার সেই বিশ্ব বিখ্যাত স্কুলে পড়ানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে পেলে দিয়েছি চিরতরে।
পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ পৃথিবীতে শীর্ষে অবস্থান করছে, বাংলাদেশের মেলামাইন, সিমেন্ট, ইলেকট্রনিক্স পন্য সহ অনেক পন্যই বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে এবং বাংলাদেশী পন্যের গুনগত মানের জন্য বিদেশে ব্যাপক সুনাম আছে, যা আমাদের অনেকেরই কম বেশি জানা।
বাংলাদেশি পন্য সম্পর্কে আমার সবচেয়ে বড় যে অবিজ্ঞতা সেটা হলো- গত বছরের সেপ্টেম্বরে আমি গিয়েছিলাম মালেয়েশিয়াতে। মালেয়েশিয়া কুয়ালালাম পুরের সবচেয়ে ব্যাস্ততম পর্যটক এলাকার নাম বুকিত বিন্তাং, আর সেখানেই সবচেয়ে বেশি শপিং মল আছে। এই ব্যাস্তর ও ব্যাস্ততম জায়গার একদম পয়েন্টে একটা বিশাল কাপড়ের শো-রুম আছে যেখানে কোন কাপড়ের মূল্য বাংলাদেশী টাকায় ১০,০০০ টাকার নিছে নাই। শো-রুমটির নাম Yes। ভিতরে ঢুকেই আমি সবছেয়ে বেশি অবাক হয়েছি! কারণ ঐ শো-রুমের সব কাপড়ই ছিলো Made in Bangladesh।
তাহলে এবার বুঝুন বাংলাদেশের পন্যের গুনগত মান কোথায়। মালেয়েশিয়াতে আমার শপিং করার ইচ্ছা ছিলো ঐ শপিং মল থেকে বের হওয়ার পরই আমার সেই দেশে শপিং করার ইচ্ছা মন থেকে মুছে ফেলেছি চিরতরে।
মালেয়েশিয়াতে বাঙ্গালীদেও তীর্থস্থান হলো কোতরায়া, সেখানেই সারা মালেয়েশিয়া থেকে সকল বাঙ্গালীরা শপিং করতে আসে। সেখানে গেলেই আপুনি বুঝতে পারবেন আপুনি বাংলাদেশের গুলিস্তানে অবস্থান করছেন। আর সেখানের দোকান গুলোতে যে পন্য গুলো বিক্রি করা হয় সেটা এতই নিন্মমানের যে আমি সেখান থেকে ২টাকার একটা পন্যও কিনার ইচ্ছা পোষন করি নাই।
পন্য গুলো চাইনিজ ও ইন্ডিয়ান (কোয়ালিটি গ্রেড সি)। অথচ ঐ দোকান গুলো প্রতিদিনের পন্য বিক্রির অবস্থা দেখে আমি অবাকই হয়েছি। আর এই দোকান গুলো বেশির ভাগ ক্রেতা-ই বাংলাদেশি। মালেয়েশিয়া থেকে আমি ফিরে আসার সময় আমার কাছে অনেকেই তাদের বাড়িতে সেখান থেকে কিছু পন্য পাঠিয়েছিলো যার বেশির ভাগ পন্যই কোতরায়া থেকে কিনা। তাদের অনেককেই আমি বলেছি এই পন্যের ছেয়ে অনেক ভাল পন্য বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায় এবং মূল্য এখানকার থেকেও অনেক কম, আর এই কথার যে উত্তর যেটা শুনেছি সেটা হলো তাদের ফ্যামিলি থেকে বলা হয়েছে বিদেশ থেকে পাঠানোর জন্য, কারন তাদের ফ্যামিলির লোক জনের মতামত হচ্ছে বিদেশি ঐ পন্যই নাকি ভালো।
আমিতো কিংকত্যব্য বিমোড়! যারা এই দেশে আসে নাই তারা কি করে বুঝলো কোন পন্য ভালো আর কোনটা খারাপ?
যা হোক যারা এই ব্লগ পড়ছেন তাদের কাছে আামর আবেদন আপনার মানসম্মত বাংলাদেশি পন্য কিনে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।