মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে মিথ্যার প্রতিষ্ঠা নয়
পৃথিবীতে এমন কতগুলো বিষয় আছে যা শত চেষ্টা করেও কাউকে সম্পূর্ণরূপে বোঝানো যায় না। যদি না সে নিজে উপলব্ধি করতে পারে বা তার জন্য চেষ্টা করে । মনসত্মাত্বিক নানা ধরনের দ্বনদ্বগুলো ঠিক এরকমেরই। কেউ হয়তো একটা জিনিসকে ভালো বলে গ্রহণ করলো আবার কেউ হয়তো মন্দ বলে মুখ ফিরিয়ে নিল। এর ফলে ভাল জিনিসের বোধ করি তেমন কোন ক্ষতি হয় না।
ক্ষতি হয় আমরা যারা সত্যকে বুঝতে পারি না তাদের।
এই বিষয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বপ্রথম যেটা প্রয়োজন তা হল মানসিক ঔদার্য। আমার কেন যেন মনে হয় বর্তমানে নৈতিকতা নিয়ে যে হাহাকার তার নেপথ্যে রয়েছে এক ধরণের মানসিক সাধুতার অভাব। বলতে গেলে বলা যায় মানসিক দারিদ্র। মানুষ, বিশেষ করে যারা নিজেদের সেরকম বলে দাবি করে তারা মনুষত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্যই আজ প্রায় হারাতে বসেছে।
প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন,‘‘ শিক্ষার কাজ জ্ঞান পরিবেশন নয় মূল্যোবোধ সৃষ্টি‘‘। কিন্তু আমরা আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্যকে শুধুমাত্র জ্ঞান পরিবেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছি। আমরা জ্ঞান অর্জন করে চিকিৎসক , প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী বা ভাল চাকুরে হচ্ছি। কিমত্ম আমাদের কোন নৈতিক উন্নতি হচ্ছে না। আমরাও এ ব্যাপারে কেন যেন খুবই উদাস।
ভাল কথাগুলো মানুষের কর্ণদ্বরে পৌঁছানো বেশ কঠিন। কঠিন বললে ভুল হবে। আসলে মানুষের মসিত্মষ্কের ভেতরে এই কথাগুলোর ক্রিয়াক্ষমতা কেন যেন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে । এর কারণ মূল্যবোধের অবক্ষয় বা আর যাই হোক না কেন অশুভ একটা ছায়া যে আমাদের উপর ভর করেছে তা বেশ জোর দিয়েই বলা যায়। ভাল জিনিস যেমন দুধ, তা মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে বিলি করে আসতে হয় কিন্তু খারাপ জিনিস যেমন, মদ, তা খাবার জন্য মানুষই শুড়িখানায় গিয়ে ভিড় জমায় ।
পাশ্চাত্য শক্তি তাদের সংস্কৃতিকে উন্ননশীল দেশগুলোর বিরম্নদ্ধে একপ্রকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা মারাত্মক কোন মরণাস্ত্রের চেয়েও অধিক মাত্রায় কার্যকর এবং ফলপ্রসু। জাতি হিসেবে পিছিয়ে রাখার জন্য এর চেয়ে ভাল কার্যকর পন্থা আর নেই। উন্ননশীল দেশগুলোর জন্য এই আক্রমণ হচ্ছে ঠান্ডা গস্নাসের মধ্যে সামান্য পরিমাণ গরম পানি ঢেলে দেওয়ার মত। যার ফলশ্রম্নতিতে সম্প্রসারণজনিত জটিলতায় গস্নাসের মত করে সমাজেও ফাটল ধরে।
অনেকেই হয়তো যুক্তি তুলবে আধুনিক কালের সাথে তাল মিলিয়ে তো আমাদের ‘আপডেটেড‘ হতে হবে আমরা ‘ব্যকডেটেড‘ থাকব কেন? তাদের এই যুক্তিটি যথেষ্ঠ যৌক্তিক। কিন্তু আমি তাদের বলব এই ‘আপডেটেড‘ আর ‘ব্যকডেটেড‘ শব্দ দুটির মধ্যেই আমরা আসলে গোল পাকিয়ে ফেলেছি । পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি আর তাদের নির্লজ্জ বস্ত্র সংকটকে যদি আমরা আপডেট বলে জ্ঞান করে থাকি তাহলে আমাদের পক্ষে সত্য বোঝা খুবই কঠিন হবে। এই প্রসঙ্গে আমেরিকার একজন টিভি সমালোচক জিমি সোয়াগার্ট-এর একাটি বক্তব্য উলেস্নখ করা যেতে পারে। তিনি তার নিজের দেশ সম্পর্কে আর্তনাদ করে বলেছেন, ‘‘ আমেরিকা, বিধাতা অবশ্যই তোমার বিচার করবেন, আর তিনি যদি তা না করেন তাহলে নৈতিক অপরাধ এবং লালসা চরিতার্থ করার অপরাধে সডোম ও ঘোমরার জনপদের ( আদ, সামুদ আর লুত সম্প্রদায় ) অধিবাসীদের কেন ধ্বংস করা হয়েছিল ; সেজন্য স্বয়ং বিধাতাকেই একদিন ক্ষমা চাইতে হবে।
‘‘
আমরা প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণকে আপডেটেড এবং আমাদের সমাজ ও ধর্মকে ব্যকডেটেড বলে মনে স্থান দিয়েছি। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তনের অবকাশ অবশ্যই আছে। আমরা অবশ্যই ব্যকডেটেড থাকব না আপডেটেড হব তবে তা হতে হবে অন্যকে অনুকরণ করার মধ্য দিয়ে নয় , ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রেখে।
আমাদের উচিত আমাদের সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে জানা। এখানকার নৈতিক মূল্যবোধ গুলোকে ধারণ করার চেষ্টা করা।
ধর্ম মূলত পৃথিবীতে আর্বিভূত হয়েছেই মানুষকে সত্য খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য। আমাদের উচিত ধর্মের সত্যকে খুঁজে বেড়ানো। আমরা প্রত্যেকে যে যে ধর্মেরই অনুসারী হই না কেন আমাদের এই কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে তাকে সত্য বলে জানার কারণেই আমরা তাকে অনুসরণ করি। আর আমরা আমাদের ধর্মের সত্য কথাগুলোকে যখন জেনেই ফেলেছি তখন পাশ্চাত্যের মিথ্যা মোহতে আর কেনইবা আস্থা রাখব?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।