একমাত্র মামা ৭১ সালে শহীদ (বীর প্রতীক) হবার কারনেই হয়তো, মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় বেড়ে উঠেছি। জেলার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতে প্রধান অতিথির আসন নানী (নানা মারা যাবার পর) যখন অলংকৃত করতেন, তখন সামনের চেয়ারে বসে আনন্দে আমার চোখে জল এসে যেত। এই দেশকে স্বাধীনতা এনে দেবার জন্য এই বঙ্গমাতার সন্তান বুকের রক্ত বিসর্জন দিয়েছে।
জীবনে কাও কে মামা ডাকতে পারিনি তো কি হয়েছে, যারা জীবিত মুক্তি যোদ্ধা তারাই তো আমার মামা। তারাই তো আমার নানীর সন্তান, তারাই তো আমার মায়ের ভাই।
এই ধরনের অনুষ্ঠানে যেসব পঙ্গু যুদ্ধাহত মুক্তি যোদ্ধা বক্তৃতা দিতে আসতেন তাদের কণ্ঠে বারেবার কয়েকটি কথায় ঘুরে ফিরে আসতোঃ আমাকে তিন বেলা খাবারের জন্য মানুষের দারে দারে ভিক্ষা করতে হয়! আমি স্বাধীন দেশের ফকির! কিন্তু এই দেশের জন্য তো সেদিন মুক্তি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি নাই!
কেও হয়তো মুক্তি যোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আর্জি জানিয়ে চোখের পানি ফেলছেনঃ আমাকে যে মাসিক ভাতা দেয়া হয় তা দিয়ে আমি নিজেই তিন বেলা খেতে পারি না আর সংসার চালাবো কিভাবে? তাই আমার ভাতাটা যদি আর দুই হাজার টাকা বাড়ানো হয় তাহলে সংসারটা কোন রকমে বাচে!
কেও একজন তার ছেলের একটা নাইট গার্ডের চাকুরীর জন্য কেঁদে চলেছেনঃ শুনেছি সরকার সরকারী প্রতিটা প্রাইমারী স্কুলে নাইট গার্ড নিয়োগ করছেন। আমার ছেলেটার যদি একটু গতি হয় তাহলে আমার সংসারটা কোন মতে দুই বেলা খেতে পারবে।
এইভাবে সকলের কণ্ঠে দুই বেলা মোটা চাউলের ভাত খাবার নিশ্চয়তা পাবার আহাজারিতে অনুষ্ঠানস্থল ভারি হয়ে যেত।
কিন্তু আজ পত্রিকা মারফৎ বাংলাদেশ সরকার হতে গোলাম আযমের জন্য সরবরাহকৃত খাবার মেন্যু দেখে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারছি না।
কিভাবে সম্ভব? কিভাবে?
আল্লাহ্র বিচার অনেক সূক্ষ্ম! তিনি আসমান-জমিনের সকল খবরই রাখেন।
চলেন দেখা যাক কয়েদি গোলাম আযমের মেন্যু কি কিঃ
গোলাম আযমের খাওয়া-দাওয়া: গোলাম আযমকে প্রথম দিকে বাসা থেকে খাবার পাঠানো হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেল কর্তৃপক্ষ একপর্যায়ে পরিবারকে জানায়, বাসা থেকে সরবরাহ করা খাবারে শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
এরপর পরিবার থেকে আর খাবার পাঠানো হচ্ছে না। তবে গোলাম আযমের স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে গত বছরের ৪ মার্চ তাঁর খাবারের তালিকা ঠিক করে পাঠান। সে অনুযায়ী সরকারি খরচে অন্যান্য রোগীর চেয়ে আলাদা ও উন্নত মানের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে তাঁকে।
গোলাম আযমের স্ত্রী তাঁর স্বামীকে সকালের নাশতায় লাল আটার চার-পাঁচটি রুটি, সঙ্গে ডিম ভাজি, আলু ছাড়া সবজি ভাজি, মুরগির মাংস (কারি/ভুন), মিষ্টি, এনসিওর দুধ ও কলা দেওয়ার অনুরোধ জানান।
সৈয়দা আফিফার দেওয়া তালিকায় গোলাম আযমের জন্য দুপুরের খাবারে রয়েছে চিকন চালের ভাত, করলা ভাজি, টাকি বা চিংড়ি মাছ ভর্তা, বেগুন ভাজি বা ভর্তা, ছোট মাছ বা চিংড়ি মাছ ভুনা, সালাদ ও লেবু, মাল্টা বা বরই বা নাশপাতি। সন্ধ্যার খাবারের তালিকায় রয়েছে লাড্ডু, নিমকি-বিস্কুট ও হরলিকস বা স্যুপ।
রাতের খাবারের তালিকায় রয়েছে চিকন চালের ভাত, করলা ভাজি, বেগুন ভাজি বা ভর্তা, ঢ্যাঁড়শ বা মিষ্টিকুমড়া বা পেঁপে ভাজি, গরু বা খাসির মাংস ভুনা, সালাদ ও লেবু এবং কমলা, মাল্টা, নাশপাতি, আঙুর বা বরই।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গোলাম আযমের স্ত্রীর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁকে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ নতুন তালিকায় খাবার সরবরাহ করতে শুরু করে।
এ তালিকায় রয়েছে সকাল নয়টায় এক চামচ মধু, এক চামচ অলিভ অয়েল, দুটি বিস্কুট, চিড়া ভাজা বা মুড়ির মোয়া, দুধ, হরলিকস ও দুটি ডিম। বেলা ১১টায় দেওয়া হয় খিচুড়ি, সবজি, স্যুপ, আচার ও ফল। বেলা দুইটায় দেওয়া হয় দুই টুকরা মাছ, সবজি, ডাল ও আচার। বিকেলে নাশতায় তাঁকে সরবরাহ করা হচ্ছে স্যুপ ও ফল।
রাত আটটায় দেওয়া হয় ভাত, মুরগির মাংস, সবজি, ডাল, আচার ও ফল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।