নিঝুম রাতে, একটি টিনের ঘরে একা, বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে , বৃষ্টির শব্দ আমাকে জাগিয়ে রাখে অনেকক্ষন রুদ্র জটিল চিন্তার মধ্যে আছে । সাধারনত চিন্তা করানোর সময় রুদ্রর হাতে বেনসন সিগারেট থাকে । সে মনের সুখে সিগারেটে টান দেয় আর চিন্তা করে। কিন্তু এখন সে সিগারেট জ্বালাতে পারছে না। কারন তার সামনে তার বাবা ভীষন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ।
আর একটু পর পর একগ্লাস করে পানি খাচ্ছে।
শুধু তার বাবা একা নয় ওর চাচা জনাব ছগির সাহেব এসেছেন । ওদের বংশে কারও তেমন কোন ভালো নাম নেই । যেমন ওর বাবার নাম মোতালেব হোসেন । এই নাম নিয়ে যে ছোট বেলায় ওকে কত বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে ।
তবে কিভাবে যেন ওর কপালে ভালো একটা নাম জুটে গেছে ।
রুদ্র হোসেন।
ইতিমধ্যে ওর বাবা পানি খাওয়ার পরিমান বেড়ে গেছে । এর মানে অবস্তা খারাপ এখন যে কোন মুহুর্তে তিনি চিৎকার করে উঠবেন । সাধারনত বাবা এত অল্পতে ক্ষেপে উঠেন না ।
কিন্তু আজকের ব্যাপার অত্যান্ত গুরুতর ।
বিষয়টি আগে থেকে জানা থাকলে রুদ্র হয়ত ম্যানেজ করে ফেলতে পারত । কিন্তু ঘটনার আগা মাথা কিছু ই বুঝতে পারছে না। বাসয় ঢোকার সাথে মা বললেন কোন কথা বলবি না । শুধু চুপ চাপ বসে থাকবি যা বলে মেনে নিবি।
কি মেনে নেবে সে বিষয়ে কিছু বলার আগেই ওর বাবা গর্জন করে উঠে ।
কই বদমাশটা এসেছেন । ওকে ধরে আমার সামনে নিয়ে এসো । ওর চাচা ছগির সাহেবের কন্ঠ শোনা যায়। আহ ভাইজান তুমি চেচামেচি করো না আমি দেখছি।
গত কয়েক মাস ধরেই বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য। কিন্তু রুদ্রর এক কথা বিয়ে করব না । এই নিয়ে তেমন কোন সমস্যা হবার কথা নয়। এই পরিস্থিতি তে মাথা কাজ করছে না ।
এখন শ্যামাকে ফোন দিতে পারলে ভাল হত।
ও নিশ্চয় একটা ওয়ে বের করে ফেলত সমস্যা সমাধানের । শ্যামার সাথে ওর পরিচয় শুরু হয় ঝগড়া দিয়ে । এখন ওরা খুব ভালো ফেন্ড্র । কিন্তু ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । ছেলে আর্কিটেক্ট ।
বিদেশে থাকে । বিয়ের পর শ্যামাকে নিয়ে বিদেশ চলে যাবে ।
ও ঠিক করেছে শ্যামার বিয়েতে ওকে একটা কালো শাড়ি গিফট করবে । ওর গায়ের রং শ্যামলা । কালো শাড়িটা ও কখনই পড়তে পারবে না ।
আমাদের দেশের কালো মেয়েরা কখনও কালো শাড়ি পরে না ।
তা বিয়েটা আমাগো জানায়া করলেই পারতা। ওর চাচার কন্ঠ শুনে খাম্বতি হওয়ার মত অবস্থা হয় ওর।
বিয়ে !!! আসমান থেকে পরে রুদ্র । কার বিয়ে কে আবার বিয়ে করল ?
ছগির সাহেব পান মুখের মধ্যে চাবাতে চাবাতে বললো ।
বাহ এখন দেখছি ছেলে আমার ভান ধরছে ।
ওনি কথা বলছে আর পানের ছিটার রুদ্রর চেহারায় এসে লাগছে। এরকম একটা ছবি দেখেছিল ও ছবিটার টিচার কথা বলার সময় তার মুখ থেকে বন্ধুকের গুলির মত থুতু ছোটে । কি যেন নাম ছবি টার । মনে পরছে না।
তা বড় হয়েছে। চাকরি বাকরী করছো। বিয়েতে করবেই সেটা তো কোন সমস্যা না । কিন্তু আমাগোরে জানায়া করলেই কোন দোষ ছিল না।
রুদ্র খুব ক্লান্ত স্বরে বলল চাচা আমি এখন বিয়ে করিনি ।
আর কখন বিয়ে করবনা বলে স্বিদান্ত নিয়েছি । আপনারা তো জানেনই আমি হিমু হবার চেষ্টা করছি।
এবার রুদ্রর বাবা গর্জে উঠেন তো বিয়ে করনি মেয়েটা কি আসমান থেকে টুপ করে পরল । নাকি বেহেস্ত থেকে আল্লাহ তোমার ভালো কাজ থেকে হুর পরী পাটিয়েছে ।
রুদ্র এবার একটু থতমত খেয়ে বলল কোন মেয়ে ?
এবার রুদ্রর ছোটভাই এতক্ষন ধরে কথা বলতে না পেরে হাসফাস করে বলে উঠল
ভাবী তোমার ঘরে এসে বসে আছে ।
দুপুরে এসেছে ।
এতক্ষনে রুদ্র পরিষ্কার হল । নিশ্চয় কোথাও কোন ভুল বোঝাবোঝি হচ্ছে । তেমন কোন মেয়ের সাথে ওর কোনকালেও কোন সখ্যাতা ছিলনা । তা কথাবার্তা যা বলত তা শুধু ওই শ্যামার সাথে ।
আর শ্যামাও কখন ওর প্রতি আগ্রহ দেখায় ন। ও র তেমন কোন ইচ্ছা ছিল না। তবে হ্যা ও জানত ভার্সিটরি একটা মেয়ে ওকে খুব পছন্দ করে কি যেন নাম ।
যা শালা এখন নামটাও মনে পরছে না । ও খুব শান্ত কন্ঠে বলল বাবা হয়ত কোথাও কোন ভুল বোঝাবোঝি হচ্ছে ।
আমি ..........
ভূল ওর বাবা গর্জে উঠলেন। কিসের ভুল মেয়েটা তোর নাম, তোর ঠিকানা, মোবা্লি নম্বর থেকে শুরু তোর চোদ্দ পুরুষের সব কিছু জানে কিভাবে ।
ও এবার ক্ষেপে উঠল কই সেই মেয় চল আমি ওকে দেখি । কথা বলি ও আমার কেমন বউ ।
ওর মা বলল ।
হ্যা ছেলে মানুষ একটা ভূল না হয় করেছে । তা এখন তোমরা মেনে নিলেই হয় । কেনরে ছগির তুই তো বিয়ের আগে যে সুমাকে নিয়ে পালিয়েছিলি । সে কথা কি ভুলে গিয়েছিস এখণ ।
ছগির চাচা একটু আমতা আমতা করে ।
ইয়ে মানে ভাবী থাকনা ওসব কথা। রুদ্র বিয়ে করেছে তাতে তো আমদের দ্বিমত নেই । কিন্তু আমরে চেয়েছিরাম ধুমধাম করে ওর বিয়ে দেব তা আর হলোনা । এই আর কি ।
রুদ্রর বাবা গর্জে উঠলেন হলোনা মানে ।
এখ্ষই এই মুহুর্তে হবে ।
মানে । মানে কি । চেচিয়ে উঠে রুদ্র ।
রুদ্রর বাবা বলে কাজী সাহেবকে আনতে পাঠিয়িছি ।
আর মেয়ের বাবাকে ও খবর পাঠিয়েছি । এক্ষনই এই মুহুর্তে ওদের বিয়ে দেব আমি নতুন করে ।
রুদ্র কিছূ বলার আগে ওর বাবা ওর দিকে তাকিয়ে আর যদি তোমার মাথায় অন্য কোন চিন্তা থাকে বের করো নইলে আমি ...................। বাবার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে রইল । কয়েখ ঘন্টার মর্ধে ওদের বাড়ীতে বেশি কিছু লোক জনের আনাগোনা হল ।
এদের মধ্যে কাউকেই ও চিনতে পারল না । কিছুক্ষনের মর্ধ্যে কাজী সাহেব চলে আসল মেয়েকেও নিয়ে আসা হল । বিয়ে হয়ে গেল সবই হল ঘোরের মধ্যে ।
সবাই ওকে টেলে ঘরে ডুকানো আগ পর্যণ্ত ও বুঝতে পারল না যে কি হয়েছে । এর পর মেয়েটার দিকে তাকাল ও ইয়া লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে ।
রুদ্র মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে । যা থাকে কপালে মেয়েটাকে ও এখনই বের হয়ে যেতে বলবে । এবং আগামী কাল ওর বন্ধু সোহেলকে দিয়ে উকিল নোটিশ পাঠিয়ৈ ডিভোসের্ কাগজ রেডি করাবে । সোহেল নতুন ওকালতি শিখছে ওর কাজটা আনন্দ মনেই করবে ।
ও কিছু বলার আগে মেয়েটা কথা বলে উঠল ।
সারারাত কি ওখানে দাড়িয়ে চিন্তা করবে নাকি অন্য কোন প্লান আছে । মেয়েটার কন্ঠ টা ওর পরিচিথ মনে হল । ও শিওর আর একবার শুনলে ও বলতে পারবে । মেয়েটা কে ?
ও গলা খাকাড়ি দিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলো । কিনউত গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হল না।
এবারও মেয়েটা ঘোমটা সড়িয়ে বলল তুমি আসবে না আমি নামব ।
বলুন তো মেয়েটা কে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।