আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শরতের আকাশটা চোখে নিয়ে....মাসুম বিল্লাহ

একজন নির্বোধের বয়ান রবি দাদা (মানে রবি ঠাকুর, কবিকে আমি দাদা বলি কারণ আমার যে দাদা নেই, তাই উনাকে আমার নিজের দাদা বলেই মনে হয়। কেউ কিছু মনে করলে আমার কিছু করার থাকে না)। তো আমার দাদা বলেছেন-‘পরীর দেশের বন্ধ দুয়ার দেই হানা মনে মনে..। ’ তাঁর কী একটা পরীর ছিল মনের কোণে, খুব গোপনে? কী জানি, জানি না তো? এত ভুমিকার কী হল, ভাবছেন বুঝি? শরতের জ্যোস্নাস্নাত রাত একা আমি হেঁটে গেছি পরীর গৃহ কোণে। এখন কী বুঝতে পারছেন কেন আমি রবি ঠাকুরকে টেনে এনেছিলাম? হুমম্ আমারও একটা পরী আছে মনের গহীনে আজন্ম যার বসবাস।

কিন্তু কেমন করে যেন সারাদেশ জেনে গেল। যেমন জেনে যায় শরতের আকাশটার কথা। সাদা মেঘের দল সমস্ত আকাশটায় লুটোপুটি খেলে কী সুখে! পুরো নীল আকাশটায় তুলোর মত মেঘের দল ভেসে বেড়ায়। তেমনি আমার মনে আকাশেও পরী নামের মেয়েটা ভেসে বেড়ায়। দোল খায় দিনভর।

আবার একটু পেছনে ফিরে যাইঃ বলেছিলাম না যে, পরীর গৃহকোণে হেঁটে গিয়েছি শরতের জোছনায় ভেসে যাওয়া আকাশটা সাথে নিয়ে। নির্জন রাত জোছনার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে বন, সকল চোখকে ফাঁকি দিয়ে, রাতের নির্জনতা মাড়িয়ে, শুকনো পাতার মর্মর ধবনি বাঁচিয়ে। আহ! শেষ পর্যন্ত এলে তবে। ভেবেছিলাম আজ কোন অজুহাত তুলবে। সাদা জোছনার মত আমিও খুশিতে ভেসে গিয়েছি পরীকে কাছে পেয়ে, স্বপ্নভেলায় ভেসে গিয়েছি দু’জন মিলে।

আহা! সেইসব শরতের জোছনায় ভেজা রাতগুলো কোথায় হারালো? আজ অনেকদিন পরে আবারও বাংলার প্রকৃতিতে শরতের বাঁধভাঙ্গা জোছনা নেমেছে আকাশের বুকে। কিন্তু পরী আজ কোথায় হারালো? আজও আমি খুব গোপনে গিয়ে দাঁড়াই পরীর ঘরের দক্ষিনের জানালায়। আহ্ মরন জানালা বন্ধ। যে মেয়েটা কখনো জানালা বন্ধ করে না সে কেন জানালা বন্ধ করে রেখেছে? কোন দৈত্যদানব কী পরীর ঘরে হানা দিয়েছে? নাকি দৈত্যটা শেষ পর্যন্ত পরীর হৃদয় রাজ্য দখল করে নিয়েছে? বর্ষাকন্যা বিদায় নিয়েছে কিন্তু আমার চোখে জলকণা। রাতের রূপালী আকাশে নক্ষত্রে মিলন মেলায় আমি কই? বয়ে চলে লিলুয়া বাতাস, সে বাতাস আমার গায়ে লাগে কই? সকালের সোনাঝরা রোদের দাপটে সারা বাংলা হেসে উঠে।

এক বুক আশা নিয়ে আমার মনও জেগে উঠে। কিন্তু সুরের বীনার তার কেটে যায়। নীল আকাশের মাঝে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ যখন ভেসে বেড়ায় হিংসায় জ্বলে-পুড়ে মরি আমি। মেঘের ভেলাকে মনে হয় একদলা কষ্ট। চোখে লাগে নীকষ কালো মেঘের দল।

কারণ আমার বুকের ভেতরটার সাথে যে নীল আকাশের কোন মিল নেই। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেঘের ছোটাছুটিও বেড়ে যায়। ভেসে যেতে থাকে মেঘেরা শরতের আকাশে। মাটির পৃথিবীতে বাড়তে থাকে মানুষ নামের যন্ত্রটার মেকি ব্যস্ততা। সেই ভীড়ে আমিও যে মিলিয়ে যায়।

যেমন ভেসে চলা মেঘকে কেউ আর খুঁজে পায় না। কড়া রোদের দাপট শেষে মিহি বিকেলটার জন্য এক বুক কামনা নিয়ে অপেক্ষা করি। সব কাজ শেষে ফিরে যাব ঘরে। তারপর এক সাথে তাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ব আমার ঘরের কোল ঘেষে বয়ে চলার নদীটার পাড়ে। ওর সাথে হাত রেখে আমি বিশালতা কী তা বুঝতে শিখবো।

নদীর বিশালতাও হেরে যাবে পরীর মনের বিশালতার কাছে। পরীর চোখে চোখ রেখে আমি শরতের নীল আকাশটা খুঁজে নেব। তারপর বলবÑ‘শরতের আকাশটা চোখে নিয়ে বলছি, ভালোবাসি তোমায়। ’ যেতে চাইবে না তবুও আমার ভালোবাসার দাবীর কাছে মেয়েটা হেরে যাবে। ‘বাবা যে বকবে’ভুলে যাবে সে কথা।

ওকে নিয়ে হাজির হব প্রকৃতির অপার সম্পদ কাঁশবনে। যে বনে আমি আমার স্বপ্নের প্রসাদ গড়তে রাজি, যদি মেয়েটা আমার রাণী হয়। তবে আমি হব কাঁশবনের একচ্ছত্র অধিপতি। ওকে পড়াবো কাঁশফুলের মুকুট। সে মুকুট পড়ে পরীটা আমাকে ভালোবাসার আদরে শাসন করবে।

আমাদের মাথার উপর দিয়ে সে সময় উড়ে যাবে সাদা বকের সারি। ক্ষণিকের তরে ওরা থমকে দাঁড়াবে। এই বক এই তোমরা নেমে এসো আমাদের ভালোবাসার কাঁশবনের নীড়ে। আমাদের ডাক ওদের কাছে পৌছায় না। এখন আমরা ভালোবাসার দোলায় দুলছি, যেমন দুলছে শরতের হাওয়ায় কাঁশবন।

হায় কী অলীক স্বপ্ন আমার! যা বিকেলটা মাটি করে দেয়। ধুসর হয়ে যায় শরত। কী করে বলি, ‘শরত আমি আজও একা। একা দাঁড়িয়ে আছি নির্জন গৃহকোণে। ’ তাইতো আমার শরতের বিকেলটা বিষন্নতায় কেটে যায়।

সন্ধ্যাবেলাটাতো আরো জঘন্য, কাটতেই চায়না। বন্ধুদের ঘোরলাগা নেশার জগতে টেনে নিয়ে যায় শরতের ফকফকা আলো। মাথার উপর হেঁটে চলে মেঘের ফালি থেকে বেরিয়ে আসা আধখানা চাঁদ। মুচকি হেসে বিদ্রুপ করল কী আমায়? হায় তাতে কী এসে যায় আমার? আমি কার? কে আমার? তবুও কোন একদিন আমি নদীর কূলে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি। এলোমেলো চুলের এলোমেলা আমাকে শরতের মিষ্টি হাওয়া ছুঁয়ে গিয়েছে।

দু’নয়ন ভরে কাঁশবনের দোল খাওয়া দেখেছি। মিথ্যে রঙে আমিও আমার মনকে দুলিয়েছি। গাঁয়ের বালিকারা নদীতে কলসী ভরে জল নিতে এসে আমার দিকে আড়চোখে তাঁকাতে ভুল করেনি। কী ভাবছে, কে জানে? এরপর শিউলি মালা নিয়ে ছুটে গিয়েছে কোন এক অজানা কিশোরী। আমার ডাকে পিছন ফিরে তাকায়।

নিজের করে শিউলি মালা চেয়েছি। জীবনে এত অবাক কোনদিন বুঝি মেয়েটা আর হয়নি। মুচকি হেসে দিয়ে ছুটে পালায়। অনেকদিন আমিও ভেবেছি খুব ভোরে উঠে আমিও শিউলি ফুল কুড়াতে যাব। তারপর মাথা গাঁথব।

কিন্তু হয়ে উঠেনি। মানুষের পৃথিবীতে আজ বড়ই অনিয়ম চারপাশে। বাংলার প্রকৃতির আগের সেই রূপ আর নেই। সারা বছর একই আমেজ পরিলক্ষিত হয়। তবুও স্মৃতিকাতর হয়ে খুঁজে নিই বাংলার রূপ।

জানি না কতদিন এমনি করে টিকবে। মনে শংকা শরত একদিন সাদা না হয়ে কালোও হয়েযেতে পারে। ও খোদা সেদিন যেন আমি না থাকি। শুধু শরত বেঁচে থাক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।