আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবের ৫০ বছর পার করেছে গত ১৮ আগসট

ইতিহাসের পাতা থেকে জাতীয় শিক্ষা কমিশন, খাদ্য ও কৃষি কমিশন এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দেশে উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট 'পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ' বলে প্রতিষ্ঠিত হয় 'পূর্ব পাকিসত্মান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়'। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম বিগত ১৯৬১-৬২ শিক্ষাবর্ষে ময়মনসিংহের এ্যানিমেল হাজব্যান্ড্রি ও ভেটেরিনারি কলেজ প্রাঙ্গণকে কেন্দ্র করে শুরু হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে 'এডাপটেশন অব ইউনিভার্সিটি ল'জ' অধ্যাদেশ বলে এর নামকরণ হয় 'বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়'। সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন 'খাদ্যেই শক্তি, কৃষিতেই মুক্তি' এ সেস্নাগানকে সামনে রেখে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গত ১৮ আগস্ট পালিত হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সুবর্ণজয়নত্মি উৎসব। উৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও ময়মনসিংহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।

সুবর্ণজয়নত্মি উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণস্থান প্রদক্ষিণ করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। পরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে '৫০ বছরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ও প্রত্যাশা' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে অধ্যাপক ড. একেএম জাকির হোসেনের পরিচালনায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোঃ মোসত্মাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।

প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ নজিবুর রহমান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোঃ মঞ্জুরল আলম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন। এরপর বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত সাংবাদিক সমিতি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সংবাদ সম্মিলিত ফিচার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার উপস্থাপনায় ও সভাপতি শাহীন আলমের সভাপতিত্বে ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান (এমপি) ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল । গবেষণা ও উদ্ভাবন কৃষি ক্ষেত্রে বহু উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের দাবিদার এ বিশ্ববিদ্যালয়। এসবের মধ্যে বাউকুল, বাউ-৬৩ ও বাউধান-২, সম্পদ ও সম্বল নামে দুটি উফশী সরিষা জাত, রাইজোবিয়াল জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, মাগুর, শিং ও তারাবাইন মাছের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল, সুষম পোলট্রি খাদ্য, কৃত্রিম পশুপ্রজনন, ইউরিয়া-মোলাসেস বস্নক, বাউ জিয়া সার ও বীজ ছিটানোর যন্ত্র, সৌর ড্রায়ার, বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট উদ্ভাবন, সবজি শোধনযন্ত্র, ভাইরাস শনাক্তকরণের যন্ত্র, পাতা দেখে রোগ নির্ণয়ের কৌশল, পাতা দেখে উৎপাদনের পরিমাণ নির্ণনের যন্ত্র প্রভৃতি অন্যতম। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময়ে জাতীয় কৃষি পুরস্কার হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদকসহ অন্যান্য পদক লাভের গৌরব অর্জন করেছে। ডিজিটাল বাকৃবি প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

বিনামূল্যে তারহীন উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা ওয়াইফাইয়ের সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। ডিজিটাল বাকৃবি গড়ার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ম্যাথমেটিঙ্ বিভাগ ভবনে ওয়াইফাই টাওটার স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে এ যন্ত্রের মাধ্যমে ওই ভবনের আশপাশে প্রায় ২০০ মিটার দূরত্ব পর্যনত্ম শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে। সমৃদ্ধ লাইব্রেরী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে রয়েছে সমৃদ্ধ লাইব্রেরী। বর্তমানে লাইব্রেরীতে রয়েছে ৩৬ হাজার ৮৩৪ ভলিউম বাঁধাইকৃত বই।

সাময়িকীর সংখ্যা প্রায় ১৫৭। ৬১৫টি শিরোনামে পাঠ্যপুসত্মকের সংখ্যা ২০ হাজার ৮৩২ ভলিউম এবং থিসিসের সংখ্যা ৮ হাজার ২৫। এছাড়া গ্রন্থাগারটিতে শ্রাব্য দর্শন সার্ভিসও চালু রয়েছে। শ্রাব্য দর্শন শাখা হতে প্রতিদিন ক্যাসেট পেস্নয়ার, ফিল্ম স্ট্রিপ ইত্যাদি সার্ভিস দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল ১০.৩০ মিনিটে শ্রাব্য দর্শন প্রজেকশন রম্নমে শিক্ষামূলক বিষয়ের ওপর চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

গ্রন্থাগারে ফটোকপি সার্ভিসও চালু রয়েছে। সিলেবাসের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের আওতায় গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এসবের মধ্যে রয়েছে ব্যান্ড দল দ্য ভি ভয়েস ও ওয়েসিস রকল্যান্ড। এছাড়াও ত্রিভুজ, বিনোদন সংঘ, সাহিত্য সংঘ, নাট্য সংঘ, সংগীত সংঘ, বিজ্ঞান সংঘ, ডিবেটিং ক্লাব ইত্যাদি। এ ছাড়াও প্রতিভা বিকাশের জন্য শিক্ষার্থীবৃন্দ স্কাউটিং, বিএনসিসি ও বাঁধনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

সেশন জটমুক্ত ৫০ বছরে সবচেয়ে বড় অর্জন সেশনজটমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সেশনজটের কবলে সেখানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) যথাসময়ে সেমিস্টার শেষ করে নির্দিষ্ট সময়ে ফল প্রকাশ করছে। বর্তমানে বাকৃবিতে 'জিরো সেশনজট' বিরাজ করছে। শেষ কথা দীর্ঘ ৫০ বছরে অনেক সাফল্যের সঙ্গে রয়েছে কিছু অপূর্ণতাও। এর মধ্যেও এগিয়ে যেতে হবে এটাই বাসত্মবতা।

Chick here ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.