Up the Irons
রকস্ট্রাটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। যারা বাংলা হেভি মেটাল গানের প্রকৃত শ্রোতা তাদের কাছে রকস্ট্রাটা এক অসাধারণ ব্যান্ডের নাম যাদের গান ছিল সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। রকস্ট্রাটার একমাত্র সেলফটাইটেলড এ্যলবাম বের হয় ১৯৯১ সালে। এ্যলবামে গান ছিল ১১ টি। সবগুলো গান আজও শুনলেও রক্ত গরম হয়ে ওঠে।
১। রক্তে ভেজা মাটি
যেখানে আকাশ আর পৃথিবী
একসাথে মিশে গেছে হাতে হাত ধরে
সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে
দু নয়নে জ্বালাভরা দৃষ্টি নিয়ে।
ফেলে আসা অতীতের স্মৃতিরা
ছুয়ে যায় হৃদয়ের দ্বারগুলো,
হারিয়ে যাওয়া সব মানুষের
পায়ের শব্দ যেন আসছে ভেসে।
এখন সময় শুধু প্রার্থনার
এছাড়া দেবার মতো কি বা আছে?
নিশ্চুপ আকাশের অন্তরালে
আছে কি লুকিয়ে কোন শান্তির দেশ?
বয়ে যাওয়া এতগুলো বছরের
হিসেব কে দেবে আজ ঐ মেয়েটিকে?
শেষে কি নিয়তি তুমি লুকিয়ে গেলে?
এখনো কি তোমার খেলা হয়নি কি শেষ?
কোন এক সময়ে হৃদয়ে যে ছিল প্রেম
জীবনের প্রতি ছিল দৃঢ় এক বিশ্বাস
কোন এক সময়ে আকাশে তারারা ছিল
জীবন নদীর মত বহমান হয়ে ছিল।
সূর্যের তরে ছিল অধীর প্রতীক্ষা
ছিল রাত্রির মাঝে কোমল আলিংগন
স্বপ্নের মাঝে ছিলনাকো চিৎকার
ছিলনা আগুন আর দস্যুর হুংকার।
পৃথিবীর মাটি ভেদ করে সেই দিন ফুরে
এসেছিল আগুন এই মর্তে,
মৃত্যুর নিঃশ্বাস আগুনের ফোয়ারা
ঝাপিয়ে উঠেছিল যোদ্ধার রক্তে।
দাবানল নিভে গেছে সব আজ শান্ত
রনাঙ্গনে আজ রাত নিস্তব্ধঃ
সব শেষে এ টুকুই রয়ে গেছে মেয়েটির
প্রেমিকের রক্তে ভেজা এই মাটি।
২। আর্তনাদ
জীবনের এই পথে চলেছি আমি একা,
সকল বাধা ভেঙ্গে ছুটে চলেছি আজ।
জানি না কবে আমি পাব ঠিকানা
জয়ী হব কি না তাও জানি না।
আমিও ত তোমাদেরই একজন
চেয়েছিলাম তোমাদের মাঝে থাকতে
আমারও ছিল কিছু স্বপ্ন
দাওনি কেন কোন সুখ নিয়ে বাঁচতে।
চিৎকার হাহাকার চারিদিকে কান্না
কিভাবে এসব হলো কেঊ যে জানে না
সবাই কে দেখে মনে হয় যেন অপরাধী
এ জীবন কখনো চাইনি আমি।
আমি আজ তাই বেড়িয়েছি নতুন আশা নিয়ে
যদি কোন দিন এ পথে আশ্রয়ের ছায়া মিলে।
৩। নির্বাসন
পাখির কাকলী আর সূর্যের আগমনে
স্বপ্নটা ছেড়ে যায় মোর চোখ দুটি তখন
সকল কল্পনা মুছে ফেলে দিয়ে
ফিরে যাই ধোয়া ঘেরা নির্বাসনে।
আঁধারের মাঝে তবু স্নেহের স্পর্শ নেই
ফেলে আসা দিনগুলো কিছু মনে নেই,
আমি নাকি ভবঘুরে বলে
লোকে দেখে ঢিল ছোড়ে,
সাথীহীন প্রতিদিন অবাক বিভরে আমি চলেছি।
ঘর নেই দোর নেই ফেলে আসা ঠিকানা
হারিয়ে গেছে, মিলিয়ে গেছে।
অজানা অশেষ তবে আমি হারাব
নাকি চিরতরে স্থায়ী হব নির্বাসনে
স্মৃতি নাই প্রীতি নাই
সুখ করে থাকা চাই,
ক্ষিদে পেলে হাত পেলে দুটি চাই
তারপর ফিরে যাই বঞ্চিত নির্বাসনে।
মুখের কথা কান দেই না
লোকে বলে সবুজে বাংলা ঘেরা
মন কাঁদে এই বলে হলো না যে দেখা
এসেছি যে মাটিতে ফিরে যাব মাটিতে
তবু কেন হবে না দেখা?
৪। নিউক্লিয়ার স্বাধীনতা
এই কি আমাদের সমাজের সভ্য মানুষের চির উন্নত পরিমাপ
নিউক্লিয়ার স্বাধীনতা?
এই কি যুগ যুগান্তরের সাধনা
অস্ত্র ভীত সন্ত্রস্থ মানুষের
নিউক্লিয়ার স্বাধীনতা?
আমি মানবউত্তীর্ণ
শীর্ষস্থানীয় এক বিকৃত টেকনলজি
আমি শীঙ্গায় ফুক নই তবে
রেডিও এক্টিভ আমার সর্বাধুনিক মিলিটারি ট্যাক্টিস,
করা হলে সুপারিশ
শেষ হবে নিরলস
সভ্যতার এই চির উন্নত রুপটি।
এই দিন আর সেই দিন নেই
ছেলের হাতের মোয়া ফুরিয়ে গেছে
এই দিন আর সেই দিন নেই
নিরীহ জগতের পীড়িত মানুষ,
আমি হৃদয়হীন
প্রেম প্রীতি নেই
মিলিটারি সিভিলিয়ান শেষ করে দেই নির্ভয়ে।
৫। সামান্য দুঃস্বপ্ন
জানালার বাইরে কোটি কোটি জনতা
ক্রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ, উন্মত্ত
চারিদিকে কোলাহল, হিংসা হিংস্রতা
চারিদিকে ভাঙ্গনের শব্দ।
আমি দশ কোটি অভাগা
বাতাস গর্জে বলে আমার প্রাপ্য নিতে এসেছি
আমি শিশুর চোখের জল
বৃষ্টি ছাপিয়ে উঠে
এতকাল নিশ্চুপ থেকেছি।
মুষ্টীবদ্ধ হাতে আগুন ঝরানো চোখে শত শত বছরের অভিযোগ
পায়ের আঘাতে মাটি কেঁপে কেঁপে উঠে আজ
মিশে যাক এই সাম্রাজ্য।
আমার সন্তানের অন্ন নিয়েছ কেড়ে
চিৎকার করে ফসলের মাঠ,
পৃথিবী চলে যাক, হাতে তুলে দিয়েছিলে,
প্রতিদান দিতে হবে তাকে আজ।
জানালার বাইরে কোটি কোটি জনতা
ক্রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ, উন্মত্ত
চারিদিকে কোলাহল, হিংসা হিংস্রতা
চারিদিকে ভাঙ্গনের শব্দ।
আমি দশ কোটি অভাগা
বাতাস গর্জে বলে আমার প্রাপ্য নিতে এসেছি
আমি শিশুর চোখের জল
বৃষ্টি ছাপিয়ে উঠে
এতকাল নিশ্চুপ থেকেছি।
সকলই কল্পনা ওরা বড় শান্ত
মূর্খ, বাধ্য বড় অসহায়,
বিশ কোটি হাতে আজ শিকল ছেড়ার কথা
এখনো ওদের কাছে জানা নেই।
এখনো স্তব্ধ ওরা আজও বড় শান্ত
মূর্খ, বাধ্য বড় অসহায়,
এখনো স্তব্ধ ওরা আজও বড় শান্ত
শুধু দুঃস্বপ্ন দেখায়।
৬। মুক্তি দাও
ভাবতে ইচ্ছা করে
এখনো জীবন চলেছে বয়ে
কোন অজানায়।
ভাবতে ইচ্ছে করে
প্রতিটি নিঃশ্বাসে নিয়েছি বাঁচার পথ
মৃত্যু নয়।
আমার রাত্রি শুধু,
মৃত্যুর অভিশাপ স্বপ্ন কিংবা
প্রেমের মুখোশে।
প্রভাতের রক্তে রাঙ্গা
নবজাত সূর্য
মৃত বিস্মৃত
নিদ নিয়ে আসে।
আঁধারে ঢাকা এই উৎসবে
কত রক্তের ধারা
কত অজানা অশ্রু
কত হাসি কত গান
কত অচেনা জীবন
হারিয়ে গেছে।
অপবিত্র এই উল্লাস
জীবন নামের চার দেয়ালে ঘেরা
এই বন্দীশালায়
কত অগ্নিশীখা
হারিয়ে গেছে।
মিথ্যের ভারে অবনত
শত অশালীন মুখ
কত ভ্রান্ত প্রেমের কাছে
রক্তের আস্বাদে
মত্ত পশুর মাঝে
হারিয়ে গেছে।
মুক্তি দাও
আশ্রয় নয়
মুক্তি দাও
আশ্বাস নয়
মুক্তি দাও
ভালবাসা নয়
মুক্তি দাও
স্বাধীনতা নয়।
নতুন জীবন নয়
নতুন কবিতা নয়
সাজানো বাগান নয়
নিস্পাপ শিশু নয়
দ্বিধাহীন রাত নয়
কোমল স্পর্শ নয়
শান্তির নীড় নয়
ভোরের শিশির নয়।
মুক্তি দাও।
৭। শেষ রাত্রি
আমি মুক্তির পূজারী,
আমি সত্যের শিকারী,
অভিশপ্ত জীবনে আশার আলো আমি পাইনি,
যে দিকে তাকাই
দেখি চারিপাশ ঘেরা
আমার ঐ ভুবনে হবে না কি কখনো যাওয়া?
শান্তির জীবন
কভু পাব কি আমি?
মুক্তি দাও হে সমাজের প্রহরী।
কষ্টের শেষ নাই
তবু পথ খুঁজে যাই
দিন আনি দিন খাই,
সময় হলে চলে যাই।
শেষ রাত্রি এগিয়ে আসছে
সময়ের সীমানা পেরিয়ে চলছি একাকী
শেষ রাত্রি এগিয়ে আসছে
জীবনের আসামী হয়ে আমি ছুটে চলেছি।
৮। সত্যলোক
সোনালী সকাল মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে রবি
মনের দুয়ার খুলে দিয়ে চোখ মেলে দিয়েছি ভাল লাগছে সবই।
কত যে সকাল কেটেছে আমার এ রুপ দৃশ্য দেখে দেখে
স্বপ্নদৃষ্টি ঢেলে দেখছি স্বপনলোক যাব সত্যলোকে।
এখানে বাতাস বহে সীমাহীন পথে
তারি সাথে সবুজেরা খেলে দোলাতে।
যে দিকে তাকাই শুধু দু'নয়ন মেলে
এখানে নিজের মত প্রকৃতি খেলে।
রোদের ঝলকানি গাঙ্গের পানিতে
হীরা বলে ভুল হয় মনের অজানাতে,
বিকেলের শেষ রোদ পশ্চিম আকাশে রবি
বিদায়ী নিরবে সে হাসে।
৯। পাগলটা
দিনের পর দিন
পাহাড়ের সে চূঁড়ায়
দাঁড়িয়ে রয়েছে
পাগলটা ঠিকই।
কেউ যে তাকে আর জানতে চায় না
বুঝতে পারে না তার ব্যাথাটা যে কি।
ওরা দেখে সে চূঁড়ায়
মেঘ ভাসে হেলায়
ওরা জানে যে ও
দেখছে সবই।
শুধু ও জানে নিজের ব্যাথা
কারো সাথে ও বলে না কথা।
দিনের পর দিন
পাহাড়ের সে চূঁড়ায়
দাঁড়িয়ে রয়েছে
পাগলটা ঠিকই।
কেউ যে তাকে আর জানতে চায় না
বুঝতে পারে না তার ব্যাথাটা যে কি।
সব শেষের কথা আজ
পাগল ভেবে
ওরা সবাই হাসে শুধু ও ই বাকি
কেউ যে কোন কথা শুনে না
পাগল ভেবে আজ
কাছে ডাকে না।
১০।
শান্তির স্বপ্ন
শান্তির স্বপ্ন কি পূর্ণ হবে?
যুদ্ধ - ধ্বংসের শেষ নাই
হিংসা, হত্যা , মাদকতা
শান্তির স্বপ্ন তা নয়।
মানুষের প্রতি ভালবাসা
ফিরে কি পাওয়া যাবেনা?
চারিদিকে কি নিসংশতা
দেখি শুধু ধ্বংসলীলা।
সময়ের হাতে গড়া সভ্যতা
নিমিষেই শেষ হয়ে যায়
চারিদিকে কি নিসংশতা
দেখি শুধু ধ্বংসলীলা
মানুষের প্রতি ভালবাসা
ফিরে কি পাওয়া যাবেনা?
অস্ত্র নিয়ে নেতাদের ছেলেখেলা
যার তরে ভয়ের স্রোত বয়ে যায়।
শান্তির স্বপ্ন কি সত্য হবে?
যুদ্ধ - ধ্বংসের শেষ নাই..
অস্ত্র আর শত্রুতা দু'জনে পাশাপাশি রয়
এই কি জীবন যাতে শান্তির কিছু নাই?
১১। কালো রাত
এসেছিল কালো রাত দুঃস্বপ্ন নিয়ে
চলে গেল সেই রাত বিভীষিকা দিয়ে
মা কে হাঁরায় শিশু 'মা' 'মা' করে
পেলনা কোন সাড়া গভীর আঁধারে।
কেন তুমি এসেছিলে বিভীষিকা নিয়ে
চলে গেলে আমাদের হাহাকার দিয়ে।
তুমি সাইক্লোন, তুমি ঝড়
তুমি ভাঙ্গলে সুখের ঘর
তোমারই কারনে আজ প্রতি ঘরে
লাখো বাঙ্গালী ক্রন্দন করে।
রাতের আঁধারে সে ঝড় এল ঘরে
মানুষ আর পশু রয় পাশাপাশি মরে।
প্রভু তুমি দেখেও দেখলেনা
রাক্ষসী ঝড় এসে কি করে গেল
একি অভিশাপ না ভাঙা গড়া খেলা
কালো রাত এসে ওদের সব নিয়ে গেল
নিয়ে গেল.............
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।