আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুলুন্ঠিত মানবাধিকার

নাজমুল ইসলাম মকবুল ভুলুন্ঠিত মানবাধিকার নাজমুল ইসলাম মকবুল বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এতোই নাজুক পর্য্যায়ে এসে দাড়িয়েছে যে, কোন কোন েেত্র বিগত সামরিক সরকারগুলোর নির্মম আচরণকেও হার মানিয়েছে। মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির দরুন বর্তমান সরকারকে বুদ্ধিজীবি ও সুশীল সমাজের অনেকেই আধাসামরিক সরকার এবং মন্ত্রী পরিষদকে কচিকাচার মেলা বিশেষনে বিশেষিতও করেছেন। আলোচিত সমালোচিত বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর অবাক করা চমৎকার পারফরম্যান্সের জন্য খোদ সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা যখন জাতীয় সংসদে তাদের তুলোধুনো করেন তখন খোদ প্রধানমন্ত্রী তাদের পে সাফাই গাইতে গিয়ে বলেন, ছোটখাটো ভুলের জন্য শত্র“দের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া ঠিক নয়। এ বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝা যায় যারাই আওয়ামীলীগ বা তাদের বিতর্কিত কার্যকলাপ সমর্থন করেননা তারাই তাঁর ভাষায় শত্র“ বা দুশমন। মাননীয় মন্ত্রীদের খামখেয়ালীর বিরুদ্ধে বর্তমানে লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক তথা সুশীল সমাজও আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

এই আন্দোলনে মতাসীন মহাজোটেরও অনেকেই শরিক হয়েছেন। তারা ঈদের দিন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচী পালনও করেছেন। এই কর্মসূচীকে উপহাস করে যোগাযোগ মন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছিলেন তিনিও শহীদ মিনারে ঈদ করবেন। কিন্তু তাঁর কথা রাখেননি। প্রধানমন্ত্রী কর্মসূচীকে উপহাস করে বলেছিলেন, তারা (আন্দোলনকারীরা) বাড়িতেই যাননি, তাহলে কেমনে দেখবেন রাস্তার উন্নয়নের বাস্তব চিত্র।

এ কথার মাধ্যমে বুঝা গেল এসব সুশীল সমাজের কর্তাব্যক্তিরা তথা আন্দোলনকারীরা শুধু বাড়িতেই যাবার সময় রাস্তায় চলাচল করেন বাকী দিনগুলোতে রাস্তায় চলাচল না করে ঘরের কোনে শুয়ে বসে দিন গুজরান করেন। ঈদের পুর্বে যখন যোগাযোগমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছিলেন দেশের সড়কগুলোর সমস্যার সমাধান হয়েছে, রোডে আর খানা খন্দক নেই, ঠিক তার পরের দিন একটি জাতিয় দৈনিকে খোদ যোগাযোগমন্ত্রী গাড়ি নিয়ে সড়কপথে চলাচলের সময় তাঁর গাড়ির পাশেই রোডের মাঝখানে একটি বিশাল গর্তের ছবি ফলাও করে প্রকাশিত হলো। যোগাযোগমন্ত্রী আরেক বক্তব্যে বললেন, দেশের রাস্তাগুলো মেরামত করতে হলে বাজেটের পুরো টাকাই প্রয়োজন। তাহলে প্রমাণিত হয় বিগত জোট সরকার বাজেটের পুরো টাকা দিয়েই রাস্তাগুলিকে সচল রেখেছিলেন, আর অন্যান্য খাতে যে ব্যয় হয়েছিল তা তাদের পকেট বা পারিবারিক তহবিল থেকে ব্যয় করেছিলেন! এধরনের আরও কিছু মন্ত্রী আছেন যাদের কার্যকলাপে সরকার বারবার কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের পে সাফাই গেয়ে বরং তাদের এহেন কার্যকলাপে তিন চারগুন উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। বিরোধী দলসহ দেশের আপামর জনসাধারন এমনকি মতাসীন মহাজোটের সমর্থক ও সুশীল সমাজের ন্যায্য আন্দোলন ও মতামতের কোন তোয়াক্কা না করে উপহাস করাটাও এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্গন।

দেশে দ্রব্যমুল্যের চরম হাহাকারের সময় একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী যখন জনগনকে কম খেতে আবার আরেকজন একদিন বাজারে না যেতে পরামর্শ দেন তখন দেশে মানবাধিকার কতটুকু সুরতি আছে তা আর বলার অপো রাখেনা। হয়তো আগামীতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাস্তায় বেরোতে কিংবা গাড়িতে চড়তে বারণ করা হতে পারে এবং নিরাপদ পথ চলতে হেটে হেটে, তাড়া থাকলে ম্যারাথন দৌড়ে কিংবা আদিম যুগের বাহন গাধা, খচ্ছর, উট, ঘোড়া অথবা সওয়ারী-পালকীতে চড়ে চলাচলের মহামুল্যবান মহাডিজিটাল পরামর্শ আসতে পারে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ডাউস মন্ত্রীদের তরফ থেকে। শেয়ার মার্কেটে যারা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তাদের আর শেয়ার মার্কেটে না গিয়ে থালা হাতে বিভিন্ন মাজারে গিয়ে নজর নিয়াজ দান খয়রাত ছদকাহ মানতের টাকা তুলে কিংবা ঝাড় ফুক দিয়ে কিছুটা আয় রোজগার করে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনমতে জীবন গুজারেরও পরামর্শ আসতে পারে তাদের মুখনিসৃত অমীয় উপদেশমালা থেকে। বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচটিবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার আলোড়ন সৃষ্টিকরা রিপোর্ট প্রদানকারী ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশন্যাল গত কয়েকদিন পুর্বে তাদের রিপোর্টেও দেশে মানবাধিকারের চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। গত ২ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের মাসিক প্রতিবেদনে দেশে মানবাধিকারের চরম অবনতির আতকে উঠার মতো প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে।

তারা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, গত আগস্ট মাসে ৮জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। গণপিটুনিতে নিহত ৯ এবং ডিবি পুলিশ ধরে নেয়ার পর গুম হয়েছেন ৪ জন। ভারতের সঙ্গে চুড়ান্ত হওয়া সব চুক্তি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের আগেই জনগণের কাছে প্রকাশের দাবি জানায় অধিকার। সংস্থার মতে দ্বিপাকি চুক্তির বিষয়ে অস্বচ্ছতা দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ব্যাহত করবে। প্রতিবেদনে পুলিশের নির্যাতনে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এমইউ আহমেদ নিহত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, এ ঘটনা দেশে মানবাধিকারের চরম অবনতির প্রমাণ।

অধিকার এ ঘটনার নিরপে তদন্ত দাবি করেছে। অধিকার মনে করে গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনা ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক ব্যক্তি লাশ হয়ে উদ্ধারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অধিকার। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত মাসে সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ একজন বাংলাদেশীকে পাথর ছুড়ে হত্যা করেছে। অপর একজনকে গুলি করে আহত করেছে বিএসএফ।

আমার মনে হয় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ওয়াদা রা করেছেন। যেহেতু স¤প্রতি বাংলাদেশে এসে ঘোষনা দিয়েছিলেন আর কোন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করা হবে না, তাই তার ওয়াদা রার্থে গুলির পরিবর্তে পাথর ছুড়ে মাথা ফাটিয়ে শরির থেতলে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো একজন নীরিহ বাংলাদেশীকে। অধিকারের প্রতিবেদনে জানানো হয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী গত মাসে ৫১ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৮ জন নারী ও ৩৩ জন শিশু। ধর্ষনের শিকার ১৮ জন নারীর মধ্যে ৪ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

অধিকারের তথ্য অনুযায়ী আগস্ট মাসে ১৪ জন সাংবাদিক আহত, ২ জন হুমকির সম্মুখীন, ৫জন হামলার শিকার এবং ৩ জন লাঞ্চিত হয়েছেন। এছাড়া সাতীরার শ্যামনগর পোস্ট অফিসের জায়গায় আওয়ামীলীগ কর্মীদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়ার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা শ্যামনগর প্রেস কাবে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় তারা একজন সাংবাদিককে মারধর এবং প্রেসকাবের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে হুমকি দেয়। গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে অধিকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানায়। মুল কথা হচ্ছে, দেশের নির্যাতিত নিস্পেষিত অধিকারবঞ্চিত মানুষ আর গলাবাজি ধাপ্পাবাজি চাপাবাজি দেখতে চায়না।

চায় মানবাধিকারের উন্নয়ন। দেশের উন্নয়ন। জাতির উন্নয়ন। দেশবাসীর উন্নয়ন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।