আমি বেশ চুপচাপ!! বরগুনা (বাংলাটাইমস টুয়েন্টিফোর ডটকম): নিজেকে পরিচয় দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে। মাঝে সার্জন হিসেবে পরিচয় দিতেও গর্ববোধ করেন। প্যান্ট-শার্ট টাই পরে ফিটফাট হয়ে ক্লিনিকের চেয়ারে বসে ভাব-গাম্ভীর্য নিয়ে রোগীর চিকিৎসা করা হচ্ছে তার কাজ। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি মাত্র ক্লাস থ্রি পাশ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয়দানকারী এ আইউব আলীর বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। যার তিনবেলা খাবার জুটতো না। নিরূপায় হয়ে তিনি খুলনার সার্জিক্যাল ক্লিনিকে সু-বয় হিসেবে চাকরী নিয়েছিলেন। চিকিৎসকরা যখন অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতেন, তখন তাদের পায়ের জুতা খুলে দিতেন। পরে তাকে দারোয়ান হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়।
চিকিৎসকদের সাথে কাজ করতে গিয়ে একটা কাজ শিখে বনে যান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পরে খুলনার গল্লামারি এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে নিজেই রাইছা ক্লিনিক নামে একটি ক্লিনিক চালু করেন। ওয়ান ইলেভেনের সময়ে যৌথ বাহিনীর হাতে ধরা পরে কিছুদিন হাজতবাসও করেছেন। জামিনে ছাড়া পেয়ে চলে আসেন পাথরঘাটায়। রুস্তুম আলীর প্রতিষ্ঠিত সার্জিক্যাল ক্লিনিকে শুণ্য ভাগে কাজ শুরু করেন।
তিনি সাত মাসেই ৩ রোগীকে মেরে ফেলেছেন। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছেন। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছেন।
ভূয়া এ চিকিৎসকের অপ-চিকিৎসায় সর্বশেষ প্রাণ হারিয়েছেন নবজাতকসহ প্রসূতি মা। প্রাণ হারানো প্রসূতি মায়ের নাম তাজেনূর বেগম।
স্বামীর নাম ইকবাল হোসেন। বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের কালিবাড়ি গ্রামে। লাশ নিয়ে কেরাতপুর গ্রামে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নবজাতকসহ প্রসূতি মায়ের মর্মান্তিক এ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে। সোমবার রাত নয়টার দিকে তাজেনুরকে অপারেশন কক্ষে নিয়ে যৌনাঙ্গ কেটে হাত ঢুকিয়ে নবজাতককে টেনে-হেচরে বের করা হয়।
ভূয়া চিকিৎসকের টানাটানিতে নবজাতক মারা যায়। প্রসূতি মা তাজেনূর বেগমের শুরু হয় রক্তক্ষরণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাজেনূর বেগমও মারা যান। অবস্থা বেগতিক দেখে ভূয়া চিকিৎসক পালিয়ে যান। তাজেনূরের স্বামী ইকবাল হোসেন জানান, সোমবার বিকেলে আমার স্ত্রীকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়েছিল।
রাত নয়টার দিকে আইউব আলী নামের একজন ভূয়া চিকিৎসক তাজেনূরকে অপারেশন কক্ষে নিয়ে অপচিকিৎসার মাধ্যমে মেরে ফেলে। তিনি আরো জানান, ভূয়া চিকিৎসক পালিয়ে যাবার পরে ক্লিনিকের সেবিকা আলো বেগম রোগীকে বরিশাল নিয়ে যাবার পরামর্শ দেন। এসময় তারা এম্বুলেন্স’র খোঁজে বের হলে মৃত নবজাতককে আবার প্রসূতির পেটের ভিতরে ভরে রাখা হয়। ঔ অবস্থায় তাজেনূরকে পাথরঘাটা থেকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি না করে ৯ ঘন্টা আগে তারা মারা গেছেন বলে জানিয়ে দেন। লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরলে মঙ্গলবার কাঠালতলী ইউনিয়নের কেরামতপুর বাজারের কাছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ লাশের গাড়িটি আটক করে তাদেরকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।
এসময় লাশের স্বজন ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে বাকতিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষরা লাশ দুটিকে টানা হেচড়া করে বাড়িতে নিয়ে দাফন করার চেষ্টা চালায়। দুপুরে পাথরঘাটা থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল কুমার দে জানান, বিষয়টির তদন্ত করা হচ্ছে। মামলা করারও প্রক্রিয়া চলছে।
ছোট পাথরঘাটা গ্রামের লাইলী বেগম জানান, এর আগে আমারও অপারেশন করে নবজাতককে মেরে ফেলা হয়েছে। আমিও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের চাপে মামলা করতে পারিনি। ঘটনার পর থেকেই ক্লিনিকের চিকিৎসক ও সেবিকারা গা ঢাকা দিয়েছে। ক্লিনিকের পরিচালক মোঃ রুস্তুম আলীকে মুঠোফোনে পাওয়া গেলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এপ্রসঙ্গে বরগুনার সিভিল সার্জন ডাঃ এএইচএম জহিরুল ইসলাম জানান, তিনি মাস দুয়েক আগে ঔ ক্লিনিক পরিদর্শন করে কোন পাশ করা চিকিৎসকে পাননি।
তিনি আরো জানান, ক্লিনিকের কোন রেজিষ্ট্রেশন নেই। সেখানে পাশ করা কোন চিকিৎসক বা সেবিকা নেই। সবাই হাতুড়ে। তিনি অনেক আগেই ক্লিনিক বন্ধ করতে বলেছেন। তারমতে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা না নেয়ায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
বরগুনা-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গোলাম সবুর টুলু জানান, দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
//বরগুনা, ৭ সেপ্টেম্বর (বাংলাটাইমস টুয়েন্টিফোর ডটকম)//একেএ//
মৃত প্রসূতির ছবিটা কেউ দেখতে চাইলে মেইল এড্রেস দিয়েন...পাঠিয়ে দেবো।
সূত্র - http://www.banglatimes24.com/?p=33838 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।