রফিকুল ইসলাম ঃঃঃ--
বাংলাদেশের দাবি করা ৬১টি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এখন থেকে এসব পণ্য ভারতের বাজারে বিনা শুল্কে রফতানি করা যাবে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এ ঘোষণা দেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে দুই প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যে ভারতের এ সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমাদের আলোচনায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন ভারত তার স্পর্শকাতর পণ্য তালিকায় থাকা ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেবে।
' মনমোহন সিং বলেন, 'আমি এ ঘোষণা দিতে পেরে আনন্দিত যে, বাংলাদেশের অনুরোধ অনুযায়ী এখন থেকে ভারতের বাজারে বিনা শুল্কে ৪৬টি পণ্য প্রবেশ করতে পারবে। ' তিনি বলেন, 'ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির সমস্যার ব্যাপারে ভারত সক্রিয়। '
এর আগে গতকাল দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারতের চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান প্রথমে ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। এ ছাড়া ভারত যদি নানা অশুল্ক বাধা দূর করে তাহলে সেদেশে কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি দ্বিগুণ হবে।
এদিকে তৈরি পোশাক খাতের ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার ঘোষণাকে এ খাতের রফতানিকারকরা স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তের ফলে সেদেশে তৈরি পোশাক রফতানি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তবে এর সঙ্গে নানা অশুল্ক বাধা দূর করা জরুরি।
বিজিএমইএ সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন এ প্রসঙ্গে গতকাল রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সমকালকে বলেন, 'বাংলাদেশের ৪৬ ধরনের পোশাক আইটেম ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা আমাদের পোশাক খাতের জন্য একটা অনেক বড় খবর। এ খাতের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি খুব খুশি।
এখন যদি আর কোনো বাধা না আসে তাহলে এ সুবিধায় ভারতের বাজারে আমাদের পোশাক রফতানি বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। '
রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইএবির সভাপতি সালাম মুর্শেদী সমকালকে জানান, 'পোশাক খাতের কোন কোন আইটেমকে ৪৬টি পণ্যের তালিকায় রাখা হয়েছে আমরা এখনও সে তালিকা পাইনি। তবে বাংলাদেশ যেসব আইটেম বেশি রফতানি করে সেগুলো তালিকায় থাকলে ভারতে আমাদের রফতানি বাড়বে। এগুলো না থাকলে শুল্কমুক্ত এ সুবিধা বাংলাদেশের তেমন কোনো কাজে আসবে না। '
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতে স্পর্শকাতর পণ্যের তালিকায় বাংলাদেশের ৪৮০টি পণ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের কাছে এর মধ্য থেকে ৬১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এসব পণ্যের মধ্যে ৪৭টি পোশাক ও বস্ত্র খাতের পণ্য। বাকিগুলো জাতীয় ফল, কিছু সবজি, টিস্যু, লোহা, ভোজ্য ও জ্বালানি তেল। জানা গেছে, বাংলাদেশ ভারতের বাজারে যেসব পণ্যের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা দাবি করেছিল সেগুলো হলো_ সুতি ওভেন কাপড়ের তৈরি পুরুষ ও বালকদের ট্রাউজার, প্যান্ট ও শর্টস, পুরুষ ও বালকদের সুতি কাপড়ের তৈরি জামা, টি-শার্ট, সিংলেট, সুতি কাপড়ের তৈরি মহিলা ও বালিকাদের সব ধরনের ট্রাউজার, সুতি নিট কাপড়ে তৈরি পুরুষ ও বালকদের জামা, নিট কাপড়ে তৈরি পুরুষ ও বালকদের স্নানের পোশাক, পুরুষ ও বালকদের জন্য সুতি কাপড়ে তৈরি নৈশ পোশাক ও পাজামা, পুরুষ ও বালকদের ওভেন ও সিনথেটিক কাপড়ের জ্যাকেট এবং ব্লেজার, নিট কাপড়ে তৈরি জার্সি, পুলওভার, কার্ডিগান, ওয়াইজকো-সমজাতীয় পোশাক, মহিলা ও বালিকাদের ওভেন কাপড়ের স্কার্ট ও বিভাজিত স্কার্ট, সুতি ওভেন কাপড়ের পুরুষ ও বালকদের জ্যাকেট এবং ব্লেজার, একইভাবে সুতি নিট কাপড়ে তৈরি নারী-পুরুষ ও ছোট ছেলেমেয়েদের সব ধরনের ট্রাউজার, মহিলা ও বালিকাদের সুতি নিট কাপড়ের ব্লাউজ, শার্ট ও ব্লাউজ শার্ট, হাত মোজা, ওভেন কাপড়ে তৈরি মেয়েদের বক্ষবন্ধনী, বাচ্চাদের ওভেন ও নিট কাপড়ের পোশাক, মেয়েদের পেন্টি, সুতি ওভেন কাপড়ের ব্লাউজ, শার্ট ও ব্লাউজ শার্ট, মহিলা ও বালিকাদের সিনথেটিক ওভেন কাপড়ের স্যুট, ওভেন কাপড়ের সরঞ্জাম, নিট কাপড়ে তৈরি পুরুষ ও বালকদের নৈশ পোশাক ও পাজামা, মহিলা ও বালিকাদের নৈশ পোশাক ও পাজামা, মহিলা ও বালিকাদের সিনথেটিক নিট কাপড়ে তৈরি সব ধরনের ট্রাউজার, সুতি নিট কাপড়ের তৈরি বাচ্চাদের পোশাক ও পোশাকের সরঞ্জাম, ওভেন কাপড়ে তৈরি বাচ্চাদের পোশাক ও সরঞ্জাম, হাতে তৈরি সুতি নিট কাপড়ের পুরুষ ও বালকদের শার্ট, সুতি নিট কাপড়ের ছেলেদের অন্তর্বাস, ৮৫ শতাংশ সিল্কের তৈরি ওভেন কাপড়, নারী ও বালিকাদের নিট ও সিনথেটিক জাতীয় কাপড়ের সাঁতারের পোশাক এবং পুরুষ ও বালকদের ওভেন কাপড়ের সাঁতারের পোশাক।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক বাদে আরও কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছিল।
এগুলো হলো_ কাঁঠাল, সতেজ আলু, ধনিয়ার বীজ, সুপারি ও বাদাম, তুষের তেল, পরিশোধিত নারিকেল তেল, প্রাকৃতিক রাবার, টয়লেট ও ফেসিয়াল টিস্যু জাতীয় পণ্য, লোহা জাতীয় পণ্য, মুদ্রিত পেপার ও পেপার বোর্ড, লুব্রিকেটিং অয়েল, ৫ মিলিমিটারের কম পুরুত্ববিশিষ্ট কোল্ড রোল কয়েল এবং প্রক্রিয়াজাত হাড়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।