জন্মদিন,ঈদ,পহেলা বৈশাখ এসব নিয়ে আমার সবসময়ই একটা সুক্ষ কষ্ট থাকে। এই দিনগুলো যেভাবে চাই সেভাবে কখনই উদযাপন করতে পারি না। তবে এবারের ঈদটা ছিল ব্যতিক্রম। চাকরির পর প্রথম ঈদ। জীবনে প্রথমবারের মত সম্পূর্ন একা গাড়ী ছাড়াই বেরিয়ে পড়লাম আত্নীয়দের বাড়ি ।
কিঞ্ছিত ভয় নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে নিরবে সংহতি জানিয়ে এলাম আবুল মকসুদ স্যারকে,বাসায় কিছু না বলেই। অন দ্য স্পট আম্মু ফোন করে বসল। সব মিলিয়ে মোটামুটি যেমন চেয়েছিলাম তেমনই একটা ঈদ।
কিন্ত,জন্মদিনটা কেমন জানি যথারীতি ম্যাড়মেড়ে। ছোট একটা প্ল্যান ছিল বই কি কিন্ত,ঈদে দোকানপাট বন্ধ থাকার কারনে তা করা হয়নি।
যাহোক,এখনও আশা আছে নেক্সট টাইম ইনশাল্লাহ। কিন্ত,যদি তা-ও না থাকে।
মনে পড়ে ,বছর তিনেক আগে সোমালিয়ার রাজধানী দখল করে নেয় জঙ্গী দল আল-শারাব। পত্রিকায় খবরটির সাথে ছাপা হওয়া ছবিটা স্পষ্ট মনে আছে-একজন রেপিস্টকে প্রকাশ্যে এক’শ ঘা দোররা (তাও আবার শার্টের উপর দিয়ে) মারার পর তার দাঁত কেলানো হাসি। পত্রিকার ক্যাপশন আনুযায়ী একশ ঘা দোররাতেই শাস্তি শেষ দেখে সে হাসছিল।
দিনে দিনে আরও আসতে থাকল তার এই অমানুষের দলের তান্ডবলীলা যার মধে্য একটি ছিল-আট বছরের মেয়ে শিশুকে ব্যাভিচারের দায়ে পাথর মেরে হত্যা! পশ্চিমা মানবাধিকার কর্মীদের মতে শিশুটি আসলে রেপড হয়েছিল। ্বলাই বাহুল্য,আট বছরের একটা শিশুর সাথে যেভাবেই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হোক না কেন। হোক তা জোর খাটিয়ে কিংবা,’নতুন একটা খেলা’ শেখানোর লোভ দেখিয়ে ফুস্লিয়ে,সেটা অবশ্যই রেইপ। চোখের সামনে যেন আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম ফূটফূটে একটা শিশু,টেনে হিচড়ে তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে,আতংকে শিশুটি কাঁদছে-মা,মা আমাকে বাঁচাও মা। মা কাঁদছে,বাবা কাঁদছে,পেছনে নিরবে তাকিয়ে দেখছে পুতুলগূলো।
তারপর দেবশিশুটিকে দাড় করানো হলো রাস্তায়। পাথরে পাথরে ক্ষতবিক্ষত করা হল সেই নিস্পাপ শরীর যতক্ষন না তা থেকে বেরিয়ে যায় তার ছোট্ট তুলতুলে জীবনটা । মা আসলেন। পরম মমতায় বুকে আকড়ে ধরলেন পৃথীবিতে তার সবচেয়ে প্রিয় শরীরটা,যেটিকে তিলতিল করে নিজের ভেতরে রেখে বড় করেছিলেন তিনি দীর্ঘ নয় মাস। তারপর শরীরের বাইরে আরো আটটি বছর।
সেই হাসিমুখ,সেই আধোবোল,আজ শুধু একটই রক্তাক্ত মাংসপিন্ড। "আল্লাহ তুমি না সত্যিই আছো?থাকলে কেন এসে বাঁচালেনা সেই নিস্পাপ আত্নাটিকে এই বিভৎসতা থেকে?ক্যান দেখ এসব বসে বসে?উহ। ”বলাই বাহুল্য উত্তর পেলাম না । শেষমেষ আশার আলো দেখতে পেলাম একটু। আচ্ছা,এমনও তো হতে পারে সবই পশ্চিমা মিডিয়াসৃষ্ট গুজব?ওহ,তা-ই যেন হয়।
আমি ধরে নিলাম তা-ই। এরকম কিচ্ছুই হয়নি।
কিন্ত এই ভরসা টিকলনা বেশিদিন। ঘুমঘুম চোখে পেপার খুলেই আঁৎকে উঠি। রেপের বিচার চাইতে এসে দোররা খেয়ে মরা তের বছরের হতভাগ্য হেনার ছবি।
এবার ভেন্যু সোমালিয়া না। আমার অভিশপ্ত বাংলাদেশ। আমার শহর থেকে কয়েকশ গজ দুরেই। কল্পনায় আবার সেই আগের দৃশ্যগুলোর পূনরাবৃত্তি। এবারতো মিডিয়ার সৃষ্টি ভেবে ঝেড়ে ফেলারও উপায় নেই!
আচ্ছা,ঐ হেনারও তো একটা জন্মদিন ছিল তাই না?বছর ঘুরে সেই দিনটি বারবার আসবে,যে দিনে হয়তবা সেই দিনমজুর বাবার বাড়িতেও হয়তবা রান্নার চেষ্টা করা হত ভালো কোনো তরকারী।
কেমন লাগবে তার বাবা-মা’,ভাইবোনের?কিভাবে তারা ভুলবে তাদের পরিবারে ছোট্ট একটা মেয়ে ছিল,যে হাসতো,খেলতো,বই কাধে নিয়ে স্কুলে যেত?যে কিনা কোনো অসুখ হয়ে মরেনি,মরেছে কিছু উন্মাদ কিংবা উন্মাদের ভাব ধরা পশুর ষড়যন্ত্রে?”যখন দোররা মারা হচ্ছিল কেউ আমরা চোখের পানি আটকাতে পারিনি,কিন্ত,সালিসকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিচ্ছু বলতে পারিনি। “ বলেছিলেন ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী এক নারী। হায়রে হিজড়া পাবলিক!
উহু,পাবলিক হিজড়া না মোটেও। সমবেত জনতা অনেক কিছু পারে। পুলিশ ফুলিশ কিছুই না এদের কাছে।
তাইত সেদিন ফিল্মি কায়দায় দিনে দুপুরে পিটিয়ে মেরে ফেলল মিলন নামের সেই হতভাগ্য যুবককে। কেউ যদি সেদিন বেচারাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতো সম্ভবত তাকেও লাশ হতে হত। তবুও,যে বুদ্ধি করে এই বিভৎসতা ভিডিও করেছে মোবাইল দিয়ে তাকে স্যলুট। নাহলে তো প্রকৃ্ত ঘটনা অন্ধকারেই থেকে যেত।
আচ্ছা,মিলনের জন্মদিন কবে ছিল?ও কি করতো সেদিন?ওর মা কি ওকে কিনে দিত নতুন শার্ট –প্যান্ট,যেটা পরে পরিপাটি করে ও চুল আঁচড়াতো?এরপর যখন ওর জন্মদিন কিংবা ঈদ আসবে কোন ছবিটা মনে পড়বে হতভাগী মায়ের?নতুন জামা পরা মিলন নাকি আদরের ধনের থ্যাতলানো নিস্পাপ মুখ?
(মাঝে মাঝেই আজকাল মনে হয় আমি পাগল টাগল কিছু হয়ে যাব।
আর ভালো লাগেনা নিজের পঙ্গুত্ব। ভাবতাম বড় হলে এর জন্য হ্যান করব,ওর জন্য ত্যান করব,করতে পারলাম আন্ডা। জন্মদিনে যারা আমাকে উইশ করেছেন অনেক ধন্যবাদ তাদের। আপনাদের কারনে একদিনের জন্য হলেও নিজেকে বিশেষ কেউ মনে হয়। যদি আমাকে একটুও ভালোবেসে থাকেন আমার জন্য প্রান খুলে একটু দোয়া করুন আর বেশিদিন যেন শুধু দর্শক হয়ে বেঁচে থাকতে না হয়।
প্লিজ। সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেন আমাকে কয়েক ছটাক বুদ্ধি আর সাহস দেয় নিজের পথ নিজে খুঁজে নেবার। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।