আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চায়নায় আমাদের খাওয়া দাওয়া।

চায়নায় পড়ার জন্য ০১৬৮৪৪৪৩০৮৬, ০০৮৬১৩৭১৯২৭৫০৪৬ www.xueonline.info চায়নায় আমার যখন প্রথম যাওয়া হয় তখন চায়নার খাবারের প্রথম অভিজ্ঞতা হয় উড়োজাহাজ এ করে বাংলাদেশ থেকে চায়নায় যাওয়ার পথে। প্লেনের ভিতরে যে খাবার দিল তাতে বোঝার কোনো উপায় ছিল না যে খাবারটা হালাল নাকি হারাম। আমার তো খাবার দেখে কেন যেন বমির উদ্রেক হচ্ছিল। আমি বাকিদের দেখলাম তারা কোনটা খাচ্ছে আর কোনটা খাচ্ছে না। একজন দাড়িওয়ালা ভদ্রলোককে দেখলাম যে উনি পুরোদমে সবগুলো খেয়ে যাচ্ছেন।

তখন ভাবলাম যে খাবারটা হালাল। আমরা অবশ্য দুইজন একসাথে ছিলাম, আমি আর ফয়সাল। আমাদের দুইজনের একসাথে চায়নার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। ওকে দেখলাম যে ও সব খাবারগুলো দেদারসে খেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওকে আমার একটু ভিন্ন মনে হয়েছিল যার কারনে খাবারের ব্যাপারে ওর উপর নির্ভরশীল হয়ে মনে সাহস হচ্ছিল না।

যাক তারপর ফল জাতীয টমেটোর মতো দেখতে ওগুলো খেলাম। প্রথমে যখন আমাকে ফ্লাইট এটেন্ডেন্ট খাবর গুলো দেয় তখন খুব ইতস্তত লাগছিল যে কোনটা খাব। তারপরও মুখের জড়তা ভেঙ্গে বললাম চিকেন দিতে। তারপর খাবারের প্যাকেট খুলে দেখি যে লাল লাল গোশত। মুখের কাছে নিয়ে দেখি কেমন যেন গন্ধ লাগছে।

আর চিকেনতো ছিলই। কিন্তু সাথের ঔ লাল গোশত খেতে গিয়ে কেমন লাগছিল, আমি তাই আর ঐ থাবার খেতে পারলাম না। যাই হোক পরবর্তীতে চায়নায় আসার পর জানতে পারলাম ঐ লাল গোশত হচ্ছে চুরু (শুকুর) এর গোশত। এই হল প্লেনের খাবারের অভিজ্ঞতা। যাইহোক ঢাকা থেকে কুনমিং গামী ঐ প্লেন কুনমিং এ অবতরন করার পর বাঙ্গালী এক গেস্ট হাউসে বাঙ্গালী খাবার পেয়ে মোটামুটি ঐ সময়ের জন্য ভালো লাগল।

এরপর আবার ট্রানসিট এর সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবার শুরু হল উড়োজাহাজ এ যাত্রা। এবার যাত্রা হচ্ছে কুনমিং থেকে নানচাং। এই যাত্রায় খাবার দেওয়া হয় নাই। তারপর আমরা ইউনিভার্সিটিতে আসলাম। ইউনিভার্সিটির সে এক বিশাল ক্যান্টিন।

ভিতরে সব ডিজাটাল সিস্টেমে টাকা দেওয়ার অবস্থা দেখে আশ্চর্যান্বিত হই। নিয়ম হলো প্রথমে একটা ইলেকট্রনিক কার্ড (ফুড কার্ড)বানাতে হবে তার জন্য লাগবে ১০ ইয়েন। তারপর সেই কার্ড রিচার্জ করে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন খাবারের সারিবদ্ধ উনডো আছে সেখানে যেতে হবে। প্রত্যেকটি উনডোতে একজন করে লোক আছে যারা কিনা খাবার সরবরাহ করবে। আর পেমেন্ট এর জন্য কার্ডকে একটি মেশিন আছে তার উপর ধরতে হবে।

আর অন্যদিক থেকে টাকার বা পেমেন্ট এর পরিমান নির্ধারণ করে দিবে ঐ লোকগুলো। এতকিছু দেখে মনটার ভিতরে ভালই লাগছিল। যদিও ক্যান্টিন এর ভিতরে ঢুকে খাবারের ঘ্রাণটা কেমন যেন লাগছিল। তারপর আমাদের সাখের একজন ক্লাসমেট নাম হচ্ছে নীরব আমাদের দেখিয়ে দিল যে কোখা থেকে আমাদের ট্রে নিতে হবে, কোথা থেকে আমাদের প্লেট নিতে হবে। কিভাবে কিনতে হবে খাবার ইত্যাদি।

তারপর থেকে শুরু হল ক্যান্টিনে খাবার খাওয়া যদিও খাবারের ঘ্রাণ আমার কাছে বেশি ভালো লাগছিল না। একদিন ক্যান্টিনে গেলাম ক্লাস শেষ করে। খাবার নিলাম শষার সালাতের মত একটা খাবার আছে ঐটা খাওয়ার জন্য। আর সাথে নিলাম মাছ। গোশত জাতীয় কোন খাবার খেতাম না কারন চায়নীজরা কুকুর, শুকুর এমনকি সাপ পর্যন্ত রান্না করে।

কোনটা যে কি তা বুঝতে পারতাম না এবং তখন চায়নীজ ভাষাটাও ওভাবে জানতাম না। শষার সাথে দেখলাম যে লাল গোশত দেওয়া। আমার ঐ দিন পর্যন্ত ধারনা ছিল না যে শুকুরের গোশত লাল হয়। মুখ পর্যন্ত নিতেই দেখি যে কেমন একটা ঘ্রাণ। তারপর আর খাওয়া হয় নাই।

এর মাঝে নীরব এসে বলছে যে কি খাও? আমি বললাম যে শষা নিলাম। আমি ওকে জিজ্ঞাস করলাম যে নীরব দেখ আজকে যেই শষা নিলাম এটার সাথে লাল গোশত দেওয়া আছে, এগুলো কি? নীরব দেখে বলল যে চুরো (শুকুর)। নীরব আমাকে বলা শুরু করল তুমি চুরো খাও। আমি বললাম আমি জানতাম না আর আমি মুখ পর্যন্ত নিয়ে আর খায়নি। ঐদিন খেকে চুরোকে চিনতে পারলাম এবং বুঝতে পারলাম যে ঐদিনের প্লেনের ঐ লাল গোশত ছিল শুকুরের গোশত।

তারপর চায়নিজদের খাবারের সিস্টম হচ্ছে তাদের সেই এতিহ্যভাহী খাবারের ধরন যাতে কিনা চপস্টিক (কাঠি)ব্যাবহার করতে হয়। সেই জিনিসটা প্রথমে এসে সাথে সাথে শিখতে পারিনি। একদিন একা খাচ্ছিলাম, এমন সময় একজন মেয়ে এবং একটা ছেলে আমার কাঠি দিয়ে খাবার খাওয়ার ধরন দেখছিল। ভাত তুলতে যাচ্ছি পারছিলাম না। আবার ভাত তুলে মুখে দিতে যাচ্ছি তাও পারছিলাম না।

কিন্তু আমার আশেপাশে সবাই কি দারুনভাবেই না কাঠি দিয়ে খেয়ে যাচ্ছিল। ওরা আমার এই অবস্থা দেখে হাসছিল। আসলে ঐদিন আমি চামচ ছাড়া চেষ্টা করে দেখছিলাম। তারপর কোনোভাবে পারছিলাম না খেতে। এরপর ঐ ছেলেটা এবং মেয়েটা আমাকে বলল তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ? আমি বললাম আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি।

তারপর তারা আমাকে কাঠি ধরার পদ্ধতি শিখিয়ে দিল। আমি মোটামুটি ভালোই শিখলাম কাঠি দিয়ে খাবার খাওয়া। এই শুরু হলো আমার কাঠি দিয়ে খাবার খাওয়ার যাত্রা। তারপর থেকে কাঠি ছাড়া চামচ দিয়ে খুব কম খেয়েছি। ক্যান্টিনের খাবার কেন যেন আর ভালো লাগছিল না।

তাই ভিন্ন খাবারের চিন্তা আসল। মাস খানেক আমি ক্যান্টিনে খাই। তারপর দেখলাম বাহিরে দোকান আছে, সেই খাবারের দোকানে যাওয়া শুরু হলো। সেখানে খাবার খেতাম দুইজন ক্লাসমেট অথবা ততোধিক মানুষজন নিয়ে। সেখান থেকে পেলাম আসল চায়নিজ খাবারের স্বাদ।

খেতে খেতে অভ্যাস হয়ে গেল এবং খাবার খাওয়ার জন্য মাঝে মধ্যে ঐখানে যাওয়া হতো। খাবারের দাম বাহিরের দোকানে তুলনামূলক বেশি তাই মাঝেমধ্যে যাওয়া হতো। কিছু খাবারের নাম যেমন সুচাই(শাক, তরকারি)এটা আমার খুবই ভালো লাগত। চিকেন ছিল আবার টমেটো এবং ডিম দিয়ে একটা খাবার করে নাম হচ্ছ শিহংশি চিতান অর্থাৎ টমেটো ডিম। এটা চায়নার বিখ্যাত এবং সুস্বাদু খাবারের মধ্যে একটা এবং আমার প্রিয় একটা খাবার।

তারপর খুজে পেলাম মুসলিম খাবারের হোটেল যা আগে জানতাম না। মুসলিম খাবারের হোটেলে সব খাবার হচ্ছে হালাল এবং তুলনামূলক সস্তা। আর মুসলিম হোটেলের নুডলস হচ্ছে বিখ্যাত একে চায়নিজে লামিয়ান বলা হয়। আমি সাধারণত নিউরো চাওফান (বীফ ফ্রাইড রাইচ)খেতাম। তারপর এক এক করে খুজে পেলাম কে এফ সি, ডাইকোস, যেখানে ফিস বার্গার পাওয়া যেত, তার জন্য আবার মূল সিটিতে যেত হতো।

সেখানেও মাঝেমধ্যে গিয়ে খেয়ে আসতাম। এভাবে ধীরে ধীরে আমার চায়নীজ খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম আর চায়নীজ খাবার পছন্দ করা শুরু করলাম। আর এখন আমি কাঠি দিয়ে চামচ থেকেও দ্রুত গতিতে খেতে পারি। চায়নার যেই অঞ্চলেই যাই না কেন আমার এখন আর কোনো সমস্যা হয় না খাবার নিয়ে। প্রথম হচ্ছে আমি এখন চায়নিজ ভাষা জানি।

দ্বিতীয় কথা হচ্ছে চায়নার খাবার পছন্দ হয়ে যাওয়া। এভাবেই চলছে আমাদের খাওয়া দাওয়া এই চায়নার বুকে। তারপরও মনে পড়ে বাংলাদেশের সেই ভাত আর মাছ আর তরকারির কথা, মনে পড়ে বিরানী এবং আরো অনেক সুস্বাদু খাবার এর কথা। মনে পড়ে মায়ের হাতের রান্নার কথা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।