ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও আশপাশের এলাকায় প্রকাশ্যেই মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা, গাঁজা, মদ, ফেনসিডিল এমনকি হেরোইনের সঙ্গে। ছাত্রীরাও দিনদিন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বিষয়টি স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই মাদক ব্যবসায়ীরা ক্যাম্পাসে অবাধে চলাফেরা করছে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
অবস্থা এমনি হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, টিএসসি, কলাভবন, সায়েন্স এনেক্স ও কার্জন হলে অহরহই মিলছে ফেনসিডিলের বোতল। সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে টেনকনাফসহ অন্যান্য এলাকায় মাদকদ্রব্য আসে। প্রথমে পুরান ঢাকার লালবাগ, চানখাঁরপুল এবং নীলক্ষেত এলাকায় এসব মজুত হয়। সেখান থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এছাড়া, জগন্নাথ হল, মুহসীন হল ও এসএম হলেও মাদক কেনা-বেচা হয়।
মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাসেলকে র্যাব-১ ১৩ই আগস্ট রাতে সাভারের আশুলিয়ায় ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ আটক করে। এরপরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি মুহসীন হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে থাকেন। রাসেল র্যাবকে জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসের মাদক সেবনের সবচেয়ে বড় স্থান হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ক্যাম্পাসের মাদকসেবীদের কাছে সেটি ‘পার্কের গেট’ নামে পরিচিত।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে লেক, ভাস্কর্য ও বাংলা একাডেমীর বিপরীত দিকের স্থানটি ইয়াবা সেবনের নিরাপদ জোনে পরিণত হয়েছে। তিনি মাদকের সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের নামও বলেছেন র্যাবকে। মাদক সেবনের দ্বিতীয় স্থান হচ্ছে চারুকলার বিপরীত দিকের ছবির হাট। ছবিরহাট থেকে শিখা চিরন্তন এলাকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় মাদক সেবন ও বিক্রি হয়। এছাড়া ক্যাম্পাসের হাকিম চত্বর, মলচত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মুহসিন হলের মাঠ, ফুলার রোড ও ভাস্কর্য এলাকা, জগন্নাথ হলের মাঠ, শহীদ মিনার এলাকায় মাদক কেনাবেচা ও সেবন হয়।
পুলিশ জানায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ফোনে কথা হয়। এরপর তা হাত বদল হয়। সূত্র জানায়, পুরাতন ঢাকা, লালবাগ, চানখাঁরপুল, মগবাজার ও গুলিস্তান এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য ক্যাম্পাসে আসে। ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ক্যাম্পাসের একটি চক্রের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশি সূত্রমতে, লালবাগের কেল্লা এলাকার ইকবাল হোসেন, চানখাঁরপুল ও নীলক্ষেত এলাকার আরও কয়েকজন নেতাকর্মীদের প্রশ্রয়ে ক্যাম্পাসে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের ব্যবসা করে থাকেন।
তারা নিরাপদে ব্যবসা করার বিনিময়ে ছাত্র নেতাকর্মীদেরও ভাগ দিয়ে থাকেন। ওই চক্রটি ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রনেতাদের গ্রুপও বদল করে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইকবালের বিরুদ্ধে কেল্লার মোড়ে মাদক ব্যবসা, নিজের বাড়ির ছাদে দেশী-বিদেশী মদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। সমপ্রতি র্যাব সদস্যরা তার বাড়ি তল্লাশি করে প্রচুর পরিমাণে মদ উদ্ধার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমরা জোরদার করতে পারিনি এটা সত্য।
বিভিন্নজন বিভিন্ন নামে অপকর্ম করছে। তিনি বলেন, এর সঙ্গে কিছু ছাত্রও জড়িত। সমপ্রতি ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ র্যাব-১ রাসেল নামের এক ছাত্রকে আটক করে। তাকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় একটি মামলাও করেছে র্যাব। তদন্ত করে এ কাজে আরও যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রক্টর বলেন, আশপাশের এলাকার কিছু লোক ক্যাম্পাসে স্থায়ীভাবে মাদকের ব্যবসা করে। যার ফলে আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েও তেমন কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারি না। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসকে মাদক মুক্ত করতে ছাত্র-শিক্ষক সবারই সহযোগিতা প্রয়োজন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।