............................................ আমার এক কাজিন আছে, যার সাথে ছোটবেলায় আমার মতের অমিল হলে বা আমি তার কোনো কথা না শুনলে আমাকে কাতুকুতু দিতো। আমার খুবই অসহ্য লাগতো। মাঝেমাঝে কেঁদেও ফেলতাম সেই যন্ত্রণা সইতে না পেরে। আমি ছোটবেলায় অনেক রাগী ছিলাম। প্রায় গাল ফুলিয়ে বসে থাকতাম।
ঐ কাজিন আমার উপর এই অত্যাচার করে খুবই মজা পেত। হয়তো বললো, ঐ চানা এইটা কর!
আমি হয়তো বলতাম, পারবো না!!
তখন সে বলতো, পারবি না মানে? তোকে কি ওষুধ (কাতুকুতু) দিতে হবে?
আমি তখন সেটার ভয়ে কাজটা করতে বসে যেতাম।
তার কাতুকুতুর যন্ত্রণায় আমি বহুতবার কেঁদে কেঁদে গাল ফুলিয়ে বসে থেকেছি। আমাকে সে অবস্থায় বসে থাকতে দেখে সবাই জিজ্ঞেস করতো, কি হয়েছে?
তখন আমি চিৎকার দিয়ে হাত পা ছুঁড়ে বলতাম, আমাকে কাতুকুতু দেওয়া হয়েছে!!
সবাই হাসতো। কেউই ব্যাপারটা পাত্তা দিতো না।
এজন্য সেই আমলে এটা নিয়ে আমার মনে অনেক দু:খ ছিল।
একদিন আমি নানীবাড়ির ছাদে বসে পুতুল খেলছিলাম। আমার পুতুলগুলোর বিশাল সংসার ছিল। ওখানে আমি সাজিয়েছিলাম সব। ঐ সময় আমার ঐ কাজিন আর আমার মেজ বোন গেল নানীবাড়ির ছাদে গল্প করতে গেল।
বড়রা যখন আলাপ আলোচনা করবে, তখন সেখানে বসা আমার নিষেধ ছিল। এজন্য তারা আমাকে বললো, চানা এখন তুমি এখান থেকে যাও!
আমি বললাম, আমি তো এখানে আগে এসেছি। তোমরা যাও! আমি কেন যাবো!
তখন আমার কাজিন আমাকে কাতুকুতু দিয়ে নিচতলায় পাঠিয়ে দিলো।
এদিকে বড় বোনেরা কি আলাপ আলোচনা করে সেটা নিয়ে আমার ভীষণ কৌতুহল ছিল। সেই আমলে আমার শুধু মনে হতো, আমি কেন সবার চেয়ে ছোট হলাম আর আমি কবে বড় হবো।
কিছুক্ষণ পর আমি নিচতলায় বসে খেলতে লাগলাম। আমি ঐ সময় একটা খেলা খেলছিলাম, সেটা হলো নাম বানানোর খেলা। খেলাটা হলো এরকম, অমুকের নামের শেষের অক্ষর, অমুকের নামের প্রথম অক্ষর, কিংবা সবার নামের মাঝের অক্ষর এক সাথে বসালে কি কি নাম বানানো যায়
নাম বানানোর এই খেলায় আমার মেজ বোনের নামের শেষে ‘লি’ আর কাজিনের নামের শুরুর ‘টু’ দিয়ে নাম বানালাম ‘লিটু’। আপনমনেই ‘লিটু’ করতে লাগলাম ওখানে বসে।
এদিকে কিছুক্ষণ পর মাগরিবের আযান দেওয়ায় সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় ওরা নিচে নেমে এলো।
এসেই দেখলো আমি নিচে বসে ‘লিটু লিটু’ বলছি। কাজিন প্রচন্ড রেগে গিয়ে কাতুকুতু না দিয়ে, আমাকে সরাসরি মারতে গেল। আর রাগ করে বলতে লাগলো, ফাজিল কোথাকার! তুই আড়ি পেতে আমাদের কথা শুনছিলি! তোর বয়স কতটুকু তোর মনে থাকে না!
আচানক এমন অত্যাচারে আমি অভিমান করতে গিয়েও করতে পারলাম না। বুঝতে পারলাম ওদের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো ‘লিটু’ নামের একজন। এটা ভেবেই আমি আনন্দিত হয়ে দূরে সরে কয়েকবার ‘লিটু লিটু’ করে বাড়ির দিকে দৌড় মারলাম।
ওরাও এসে পড়লো। আর ওরা ঠিক করলো আমার নামে নালিশ দিবে। তখন ছিল ঈদের সময়। বাড়ি ভর্তি ছিল লোকজন। অনেক বড় বড় তিন কাজিন-ও ছিল খুলনায়।
বড় বড় ঐ তিন কাজিনের সাথে আবার আমার ভীষণ খাতির ছিল। ওরা খুলনায় আসলে আমি অধিকাংশ সময় মামার বাড়িতে ওদের সাথেই থাকতাম। আমি ওদের কাছে গিয়ে বললাম কিভাবে আমি ‘লিটু’ নামটা বানিয়েছি আর সেটা শুনে ওরা রেগে যাচ্ছে।
এদিকে বারবার আমি ঐ কাজিনকে দেখে ‘লিটু লিটু’ বলে দৌড় মারি। আর সে আমাকে ধরে ধরে মারতে যায়।
একটা সময় সে আমাকে ধরেও ফেলে। তারপর আমাকে নানীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। নানী অনেক বকাঝকা করে আমাকে।
বড় এক কাজিন আবার ওর দিকে খুবই সন্দেহজনক দৃষ্টি দিয়ে বলে বসলো, ‘লিটু’ বলছে... তাতে কি এমন হয়েছে? তুমি কেন ওর সাথে এমন করছো! বলো তো!
ও বললো, ও আড়ি পেতে আমাদের কথা শুনছিল!
আমি বললাম, আমি মোটেও আড়ি পাতিনি। আমি নিচতলায় বসেই খেলছিলাম।
তারপর আমি বর্ণনা করলাম নাম বানানোর খেলা। কিন্তু সে কোনোভাবেই মানতে নারাজ। আমাকে আমার আম্মুর কাছে ধরে নিয়ে গেল বকা খাওয়াতে। এটা করে সে বড় বড় কাজিনদের মনে সন্দেহ বাড়িয়ে দিলো। তারপর বড়রা তাকে ধরে মিটিং-এ বসলো।
সেখান থেকে জানা গেল ‘রিটু’ নামের এক ছেলে তাকে প্রেমের প্রোপোজাল দিয়েছে। আর সে তার ব্যাপারে পজেটিভ কিছু ভাবছে। এটাই সে আমার বোনকে বলতে গিয়েও বলতে পারেনি। শুধু রিটুর বণর্না দিয়েছিল। আর আমি আড়ি পেতে ওদের কথা শুনে ঐটাই বলছিলাম।
কিন্তু আমি মোটেও আড়ি পাতিনি। যাই হোক, তারপর কাজিন এমন চাটকানা খেলো যে জীবনে প্রেম-ভালোবাসাই ভুলে গেল। পরবর্তীতে সে প্রেম-ভালবাসার কথা শুনলেই ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে উঠতো। আমার ওকে দেখে শুধু মনে হতো, আমাকে সেদিন কাতুকুতু দেওয়ার ফলেই আজ ও এমন!! তবে ঐ ঘটনার পর আমাকে তার কাতুকুতু দেওয়া কিন্তু মোটেও কমে যায়নি। সুযোগ পেলেই কাতুকুতু দিতো।
আর আমিও মাঝেমাঝে ‘লিটু লিটু’ বলে দিতাম দৌড়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।