কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
খুব শখ করে ব্লাকের নতুন এলবামটা কিনে নিয়ে আসলাম। “আবার” এর পর ব্লাকের কাছ থেকে প্রত্যাশা বেরে গিয়েছিল অনেক। ব্লাকের যারা ফ্যান ছিল আগে থেকেই তাদের মোটামুটি দুটা ক্যাটেগরি ছিল। আমি অনেককেই চিনি, তারা বেসিকালি তাহসানের ভক্ত হিসেবে ব্লাকের ভক্ত।
আরেকটা ক্যাটেগরি হল, যারা ট্রু ব্লাক সেলফের (black-self) ভক্ত। কে গায় কে বাজায় তার উপর না, এই স্টাইলটাই যাদের ভাল লাগে।
ত ব্লাকের তৃতীয় এলবামের পর থেকে ব্লাকের ভক্তরা ছাকনি দিয়ে ছাঁকা হয়ে গেছে। “আবার” এলবামটা কাদের ভাল্লাগলো না লাগলো তার উপরেই বুঝা যায় যে ট্রু ব্লাক সেলফের ভক্ত। ত, আমরা যারা ভক্ত হিসেবে টিকে গেলাম চতুর্থ এলবামে সেই লেগেসির আরও ম্যাচিউর রূপটার জন্য অপেক্ষা ত থাকবেই।
ব্লাক কতটুকু সফল?? একেবারেই ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে আমার কেমন লেগেছে বলতে চাই।
[****** গান গুলো শোনার আগেই সিডির কভারে লিরিকগুলো পড়ে ফেলা বিশাল একটা ভুল। এই কাজ করার দরকার নেই। লিরিকগুলা আগে থেকে জানলে গানের ট্রুসেলফ ধরা যায় না। যখন পড়বেন তখনই একটা ইমেজ চলে আসে, ব্যান্ড যেই ইমেজটা দিতে চায়, পড়ে সেটা আরে ভিতরে ফোটে না।
]
ট্র্যাক ১ —- হাত বাড়াও >> লিরিকটা মিষ্টি আর রোমান্টিক। তাহসান এখনও ব্লাকে থাকলে সম্ভবত এটা সেই-ই গাইত। যাক, জনের কণ্ঠেও খারাপ লাগে নি। একেবারে টিপিকাল ব্লাকের গান বলতে যা বোঝায় সেভাবেই গাওয়া, সেভাবেই কম্পোজিশন (মাঝের দিকের মিউজিকে একটু অন্যরকম এক্সপেরিমেন্ট মনে হল, সামান্য কিছু অংশ >> ৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ড পয়েন্টে)।
** সত্যি কথা বলতে, গানটা প্রথমে শুনে এত ভাল লাগে নি।
দ্বিতীয়বার শুনে বেশ ভাল লাগছে। প্রথমবার হেডফোনে শুনেছি, দ্বিতীয়বার স্পিকারে শুনছি।
ট্র্যাক ২ – পেপার রেডিও টিভি >> বুলেট ফর মাই ভ্যালেন্টাইনের মত ওয়াইল্ড রিদমিক মিউজিক গানটা। গানটা জন গেয়ে গেছে একেবারে টিপিকাল ব্ল্যাক স্টাইলে। মাঝে মাঝে এডিশনাল ভয়েসটা দারুণ লেগেছে।
প্রথমবার কোরাসে একটু অগোছালো মনে হল, কিন্তু একবার শুনে কানে মানিয়ে গেলে তখন বেশ লাগে।
লিরিক্সের কনসেপ্টটা সুন্দর। কিন্তু শব্দগুলো তেমন জমে নি। মনে হল গাওয়ার কিছু নাই তাই কিছু একটা গাচ্ছে। গানটা দারুণ এর কম্পোজিশন আর ব্যান্ড মেম্বারদের কারুকাজের জন্য।
ট্র্যাক ৩ — আমার পৃথিবী >> আমি জানি অনেকের ভাল লাগবে না। কারণ সেই সময় এই গানটা একেবারে বুকের ভিতরে মিশে গিয়েছিল। কিন্তু ঐ গানটা যে শোনে নি, তাকে এই গানটা শুনিয়ে দেখেন। আমি নিশ্চিত খারাপ লাগার প্রশ্নই ওঠে না। আমার কাছে আগের গানটা খুব আধ্যাত্বিক লাগত, রিমেকটা যেন অন্যরকম এক শূন্যতা তৈরি করছে।
এই এলবামে এই গানটাই এরপরে সবচেয়ে বেশি শুনব।
জন খুব সুন্দর করে গেয়েছে। তবে শুনলেই বুঝা যায়, গানের লাইনগুলো বার বার টাইম কাট করে বসানো। প্রত্যেক বেলাতেই আগের লাইন চলমান অবস্থায় নতুন লাইনের শুরু। এ কারণেই আগে দুজন সিঙ্গার লেগেছিল।
এখন সেটা মেশিন দিয়ে ওভারকাম করা গেছে বটে। ভালও লেগেছে। তবে, গানটা একজন গায়কের গাওয়ার উপযোগী করার জন্য সেভাবে পরিবর্তন হয় নি। আগেরটাই থাকলে আর হল টা কী !! মিউজিকের পরিবর্তন ত এসেছেই, গাওয়াটারও পরিবর্তন থাকলে আরও ভাল হত।
ইমন ভাইএর লিরিক্সের পাওয়ারটাও এখানে একেবারে পরিষ্কার।
এখনও এই এলবামে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী লিরিক।
(ছবিঃ নতুন এলবামের কভার)
ট্র্যাক ৪ — আত্মকেন্দ্রিক >> চমৎকার একটা গান। লিরিকটা যেমন সুন্দর, মিউজিকও, গাওয়াটাও। গাওয়ার মাঝে স্বর চিকন করে ফেলা, হঠাৎ মেলোডি নিয়ে আসা, হঠাৎ উঁচু স্বরে চেঁচিয়ে ওঠা, হঠাৎ সুরের বাইরে কণ্ঠের নির্লিপ্ততা – সব মিলিয়ে ভাল লেগেছে। ছোট লিরিকটা অনেকক্ষণ ধরে রাখতে পারবে।
মিউজিক একটু পপ রক ধাঁচের মনে হল। একতালে একক ভাবে ছিল না। মাঝের কিছু অংশ ডিফারেন্ট টাচে বেজেছে। বার বার শুনলে হয়ত বুঝা যাবে না। মুড রিলিফ করতে এটা ভাল টেকনিক।
ট্র্যাক ৫ — মুমূর্ষু রূপকথা >> মিউজিক এর কম্পোজিশনটা চোখে পড়ার মত। “আবার” এর ম্যাচিউরড লেগেসির চরম উদাহরণ। তবে, গায়কীটা ভাল লাগে নি। বেশ টিপিকাল।
পুরো গানটা শুনতে খারাপ লাগে না।
কম্পোজিশন আঠার মত টেনে রাখে। এ ধরণের কম্পোজিশনের সাথে পরিচিত আগেই হয়েছি “আর্বোভাইরাস” এর মাধ্যমে (সমস্যা হল, ওদের প্রায় সব গানই এই টাইপ)।
ট্র্যাক ৬ — আজও >> জন ভাল গেয়েছে। বেশ ভাল। গলাটা ধরে রেখেছে।
লিরিকটা গানের শুরুতে যত ভাল লাগছিল, শেষ পর্যন্ত অতটা ধরে রাখতে পারল না কেন যেন ! কিন্তু গানটা বন্ধ করে ওঠা যাবে না। কারণ অতক্ষণ শ্রোনা সুরের সাথে মিশে গেছে। জন একাই ধরে রেখেছে।
ট্র্যাক ৭ — নীলগিরি >> অন্যরকম কিছু করার চেষ্টা। কিন্তু সেভাবে ভাল লাগে নি।
ট্র্যাক ৮ — জীবনের বাঁ পাশে >> মোটামুটি।
ট্র্যাক ৯ — পুরোনো সেই দিনের কথা >> ভাল এক্সপেরিমেন্ট। ২য় মিনিটের সময় মুড রিলিফের জন্য গ্যাপটা ভাল লাগে নি।
তবে সব মিলিয়ে শুনতে বেশ লেগেছে। কিন্তু অরিজিনাল লিরিকটা যখন মনের ভিতর আসতে থাকে, তখন মনে হয় অল্টারনেটিভ রক এক্সপেরিমেন্টের জন্য অপজিট কনসেপ্টের গানটা চুজ করা হল যে ! পুরোনো দিনের গান হিসেবে অন্য কোন গান হয়ত নেয়া যেত।
যেখানে এঙ্গার বা উঁচু টিউন সত্যিই খুব দরকার এট লিস্ট সেই লিরিক অনুযায়ী (হয়ত সে সময় দেয়া যায় নি। পুরোনো দিনের বহু গানের বেলাতে এমনটা বহু সময় মনে হয়েছে। এখন মনে নেই, খুঁজলেই বেরুবে)। কারণ ইন্সট্রুমেন্টাল হিসেবে রিমেক হলেও মনের ভিতর পুরোনো সুর না হোক, লিরিকটা ভাসতে থাকে।
ট্র্যাক ১০ – উপসংহার >> মোটামুটি।
ট্র্যাক ১১ — একজন >> টিপিকালি জন যেভাবে গায় তার থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসেছে। প্রথম দিকে ত বটেই। তবে যেন আস্তে আস্তে আবার ফিরে গেছে। গানটা খারাপ না। তবে, টানা ২ বার শোনা যাবেনা।
একঘেয়েমি লাগতে পারে। লিরিকটা ভালো।
** একটা গানও ফেলে দেবার মত না। আবার একটাও একেবারে পার্ফেক্ট না। কোন গানে সুরের সাথে মিশে গেলাম, কোনটায় কম্পোজিশনের সাথে, কোনটায় গায়কের কণ্ঠের সাথে।
কম্পোজিশনের ভ্যারিয়েশন একটা ট্র্যাক থেকে আরেকটা ট্র্যাকে চমকে যাবার মত। এ ব্যাপারটা দারুণ লাগছে। ব্লাক আগের থেকে পরিবর্তিত হয়েছে বেশ। তাদের নতুন রূপের জন্ম যদি “আবার” এ হয়ে থাকে, তাহলে এই পরিবর্তনটা এক্সপেক্টেড।
*** এখন যারা ব্লাকের ভক্ত, তারা গানের এই স্টাইলটারই ভক্ত।
কিন্তু একেবারে সবখানে সেইম ধাঁচ ফলো করাটা বুদ্ধিমানের কিছু না। জনের গাওয়ার ধরণে আরও কিছু পরিবর্তন আসলে (গানের প্রয়োজন অনুযায়ী) এভুলুশনটা পরিপূর্ণ হত। গত তিনটা এলবামে মনে হয় উনার গাওয়ার ধরণে খুব একটা পরিবর্তন আসে নি। সেটা আমরা ভক্তরা চাইও না (ট্র্যাক ৬ এ খুব ভাল লেগেছে)। কিন্তু কিছু কিছু গানের বেলায় টিপিকাল স্টাইলের বাইরে জনকে দেখতে পারলে খুব ভাল লাগত।
ট্র্যাক ৭ আর ৮ বিশেষ করে। ট্র্যাক ১১ তে কিছুটা বের হয়ে এসেছে টিপিকাল থেকে (সময়ে সময়ে), তবে আরও একটু দরকার।
*** ওভারল এলবামের রেটিং দেয়া পসিবল না। এটা মুডের উপর নির্ভর করে।
আপনাদের মতামত জানতে চরম আগ্রহী।
আপনাদের সাথে মিলল কী না জানিয়ে যাবেন প্লিজ। আগের এলবাম গুলোর তুলনায় এবারের লিরিকগুলো আপনাদের ক্যামন লাগলো?? আমি এটা নিয়ে এখনও কনফিউজড।
পাবলিশ করা হলো
১) আমার ব্যাক্তিগত ব্লগ এ। http://wings.rizvanhasan.com
২) ফেসবুক ফ্যান পেইজে।
৩) সামহোয়্যের ইন এ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।