যা লিখি তাই অখাদ্য হয়। তবুও চেষ্টায় আছি....
আমি তখন একটি বিলাসবহুল যাত্রীবাহি ক্রজশীপে বার টেন্ডার হিসেবে কাজ করি। নানান দেশে ঘুরে বেড়াই। বহু রকমের মানুষের সাথে মিশি। দারুন কালারফুল লাইফ।
ভালই চলছিলো। কিন্ত বাদ সাধলো একদিন ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা। আমাদের শীপটি এক পড়ন্ত বিকেলে নোন্গর ফেললো আফ্রিকার ছোট দেশ জ্যামাইকাতে। সাতদিন থাকবে এখানে। ক্যাপ্টেন বললো,যাও যে যার মতো ঘুরে বেড়াও আনন্দ ফুর্তি করো।
আমরা বেড়িয়ে পড়লাম। ছোট শহর। ডিসকো,পাব আর ছোট ছোট রেষ্টুরেন্টে ঠাসা। দারুন আন্তরিক জ্যামাইকান অধিবাসী মানুষগুলো। ভালো লাগলো তাদের আন্তরিকতায়।
ধনী আর দরিদ্রের ব্যাবধান এখানে প্রবল। প্রতিদিন সকালে বেরুতাম আর ফিরতাম অনেক রাত করে। এরমাঝে একদিন এক ডান্স বারে পরিচয় হলো জ্যামাইকান মেয়ে জেসিকার সাথে। বাবা হীরের খনির মালিক। জেসিকা ২০ বছরের এক পরিপুর্ন তরুনী।
এ কয়দিনে জেসিকা ছিলো আমার সার্বক্ষনিক সংগী কাম গাইড। কিভাবে যে ছয়টি দিন কেটে গেলো টেরই পাইনি। যেদিন জ্যামাইকা ছেড়ে আসবো তার আগের রাতে জেসিকা আমার শীপের কম্পাউন্ডে এলো। ছোট কম্পাউন্ড। কথা বলার একপর্যায় সে আমাকে জানায়,আমাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে এবং আমাকে সে বিয়ে করতে চায়।
আমাকে ওর সাথে থেকে যেতে বলে। আমি তখন ওকে আমার অপারগতার কথা জানাই। কারন ছিলো আমি সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো মানুষ। আমার লাইফ ছিলো যাযাবরের মতো। ঐ মুহুর্তে আমার কোন পিছুটান তৈরি হোক আমি তা চাইনি।
আমার অমতের কথা শুনে জেসিকা আরো বেপরোয়া হয়ে গেলো। আমি তাকে খুব শান্তভাবে বোঝাতে চেষ্টা করি। কিন্ত সে কিছুই মানতে চায়না। জেদাজিদির একপর্যায়ে সে আমাকে শেষবারের মতো বলে,তুমি আমাকে বিয়ে করবে কিনা বলো?আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আমি কোন গরীব রাস্তার মেয়ে না। জীবনে প্রথম কাউকে এতো ভালোবাসলাম।
আমি ব্যর্থ হতে চাই না। কি চাই তোমার বলো?তুমি চাইলে আস্ত একটা শীপ কিনে দিতে পারি। আমি আবারো না সুচক উত্তর দিতেই জেসিকা দৌড়ে টেবিলের সামনে গিয়ে ফল কাটার ছুরি নিয়ে কালবিলম্ব না করে তার গলায় চালিয়ে দিলো। মুহুর্তের মধ্যে রক্ত বেড়িয়ে মেঝে ভেসে যেতে লাগলো। জেসিকা ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।
ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি হতবিহব্বল হয়ে পরলাম। মরে যাওয়ার আগে জেসিকা শুধু বললো,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি এবং পরকালে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
আমি হত্যা মামলার আসামী হলাম। দুর্ভাগ্যের শুরু হলো সেই থেকে। মামলা হলো,আমার জন্য আমদের শীপটিকে ১৮ দিন যাত্রীসহ অপেক্ষা করতে হয়েছিলো জ্যামাইকা ছেড়ে আসার অনুমতির জন্য।
কোম্পানী আমকে চাকরিচ্যুত করলো। অবশষে আমি সেই মামলা থেকে রেহাই পাই জেসিকার বাবা মার বদান্যতায়। তারা কোর্টে বলেছিলো,সেদিন জেসিকা তাদেরকে বলে এসেছিলো যদি আমি বিয়ে করত রাজী না হই তাহলে সে আত্বহত্যা করবে এবং সেটাই সে করেছে।
তাছাড়া আরেকটা ব্যপারও প্রমান করেছিলো যে জেসিকার খুনী আমি নই। যদি কোন মানুষ নিজে থেকে তার গলায় ছুড়ি চালায় তাহলে সেটার কাটার ধরন হবে কেউ যদি বাইরে থেকে কাটে তার থেকে আলাদা।
মানে কেটে যাওয়ার ধরনই আলাদা।
সেই থেকে আমি প্রতি বৎসর মার্চের ২ তারিখে জ্যামাইকা যাই। জেসিকার কবরে ফুল দেই। ওর বাবা মার সাথে দেখা করি। ওর বাবা মা আমাকে খুব ভালোবাসে।
জেসিকার ছোট বোনকে আমার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো। কিন্ত আমি রাজি হইনি। আমি জেসিকার ভালোবাসার সম্মানস্বরুপ প্রতিগ্ঘা করেছি যে জীবনে কখনো বিয়ে করবো না। জেসিকাকে আমি আমার স্ত্রীরুপে স্বীকৃতি দিয়েছি।
সেই থেকে আমার কালারফুল লাইফ টার্ন ইনটু ব্লাক এন্ড হোয়াইট।
(উত্তম পুরুষে লিখিত)
সর্বস্বত তাসমান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।