বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...
১৯৮৭-৮৮ সালে মাইকেল জ্যাকসন বিরল একটি রেকর্ড করে দুনিয়াব্যাপী সংগীতপ্রেমীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। জানান দিয়েছিলেন বিশ্বসংগীতে তার শ্রেষ্ঠত্বের কথা। মাইকেলের ‘ব্যাড’ অ্যালবামের পাঁচ পাঁচটি গান জায়গা করে নিয়েছিলো ‘ইউএস বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড চার্টে’। প্রায় ২৫ বছর এই রেকর্ড ধরে রেখেছিলেন পপসম্রাট। কিন্তু সম্প্রতি একই রেকর্ডের ভাগ বসিয়েছেন আরেকজন।
তিনি হালের মিউজিক সেনশেসন কেটি পেরি। গত বছর আগস্টে মুক্তি পাওয়া পেরির ‘টিনেজ ড্রিম’ অ্যালবামের পাঁচটি গান ক্যালিফোর্নিয়া গার্ল, টিনেজ ড্রিম, ফায়ারওয়ার্ক, ই.টি আর লাস্ট ফ্রাইডে নাইট জায়গা করে নিয়েছে ‘ইউএস বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড চার্টে’। বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড এর ৫৩ বছরের ইতিহাসে কোন নারী সঙ্গীত শিল্পীর ক্ষেত্রে যা অবশ্যই প্রথম। তবে কী পপসম্রাজ্ঞীর হওয়ার পথেই হাঁটছেন কেটি পেরি?
গির্জায় গান করতে করতেই পেশাদার শিল্পী হিসেবে কেটি পেরি আত্মপ্রকাশ করেন। আসল নাম ক্যাথরিন এলিজাবেথ হাডসন।
জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায়, ১৯৮৪ সালে। ৯ বছর বয়সেই ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারার একটি গির্জায় গসপেল (যীশুর জীবন কাহিনী ও শিক্ষাসংবলিত সঙ্গীত) সঙ্গীত শেখা শুরু করেন। নাচের প্রতি আগ্রহ থাকায় তখন থেকেই গানের পাশাপাশি নাচটাও আয়ত্ত করেন । ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত সঙ্গীত চর্চা ও পরিবেশনার গন্ডি ছিলো শুধু গির্জা ,স্কুল আর ক্যাম্প। কিন্তু কেটি স্বপ্ন দেখতেন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে।
বড় বোনের ক্যাসেট প্লেয়ার চুরি করে পেরি নানা ধরনের গান শুনতেন আর গলা মিলাতেন। এভাবেই সঙ্গীত চর্চা চলতে চলতে একদিন বাবা-মা পেরির গান শুনে ফেললেন। সঙ্গীতের প্রতি মেয়ের প্রেম বুঝতে পেরে বাবা-মা তাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন সান্তা বারবারার ‘মিউজিক অ্যাকাডেমি অব দ্য ওয়েস্ট’-এ।
১৭ বছর বয়সে কেটির প্রথম অ্যালবাম বের হয়। অ্যালবামের নাম ‘কেটি হাডসন’।
গসপেল-রক ধারা এই অ্যালবামটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। তার উপর অভিনেত্রী কেট হাডসনের নামের সঙ্গে মিল থাকায় সৃষ্টি হয় বিড়ম্বনার। অগত্যা নিজের নিজের নাম পাল্টে রাখেন ‘কেটি পেরি’। প্রধম অ্যালবামটি সফল না হলেও পেরি হাল ছাড়েননি। তবে তাকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়।
দ্বিতীয় অ্যালবামটি প্রকাশের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সাত বছর। অবশেষে ২০০৮ সালে বাজারে আসে পেরির দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ওয়ান অব দ্য বয়েজ’। অ্যালবামটি বিলবোর্ড নবম স্থানে জায়গা করে নেয় এবং ‘রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ অ্যালবামটিকে প্লাটিনাম খেতাব লাভ করে। এই অ্যালবামেন ‘আই কিসড এ গার্ল’ গানটি শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেয়। ব্যবসায়িক সফলতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সবার নজরে আসেন মিষ্টি কন্ঠ আর অপূর্ব মুখশ্রীর কেটি পেরি।
ব্যস্ত হয়ে পড়েন সঙ্গীত সফরে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ‘হ্যালো কেটি পেরি’ শীর্ষক সঙ্গীত সফরের আওতায় তিনি দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান। আর ২০১০ সালের ‘টিনেজ ড্রিম’ অ্যালবাম তো এখন ইতিহাস। ম্যাডোনা, জেনিফার লোপেজ, লেডি গাগার মত শিল্পীরা যা করে দেখাতে পারেননি এক অ্যালবাম দিয়ে সেটাই বাজিমাত করে দেখিয়েছেন কেটি পেরি।
জীবনে দু’বার প্রেমে এসেছে পেরির।
প্রথম প্রেম ট্রেভিস ম্যাকোইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক টেকেনি বেশিদিন। আর ব্রিটিশ কমেডিয়ান রাসেল ব্রান্ডের সঙ্গে তো এখন ঘর করছেন। বহু পুরুষ ভক্তের হৃদয় ভেঙ্গে গত বছর অক্টোবরে এ জুটি বিয়ের পিড়িতে বসেছেন। আর বিয়ের পরেই যেনো কেটি পেরির ভাগ্য খুলে গেছে। উপহার দিচ্ছেন একের পর এক হিট।
এখন পর্যন্ত মিউজিকের সম্মানজনক সব আসরে মনোনয়ন পেলেও তেমন কোন পুরষ্কার জুটেনি পেরির কপালে। তবে সামনের বছরের সব বড় বড় পুরষ্কার যে তিনিই বগলদাবা করতে যাচ্ছেন এত কোন সন্দেহ নেই। এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ‘ক্যালিফোর্নিয়া গার্ল ড্রিম ট্যুর’ নিয়ে।
(২৫ আগস্ট ২০১১ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত)
মিউজিক নিয়ে আরো পোস্ট
বব মার্লে: নিপীড়ত মানুষের কণ্ঠস্বর
লেডি অ্যান্টিবেলাম : তিনিশির তিন গানপাগল
কান্ট্রি মিউজিকের নতুন সম্রাজ্ঞী অ্যাডেল
লেডি গাগা: যে জ্বরে বিশ্ব কাবু ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।