যে মুখ নিয়ত পালায়......। । স্কুলে পড়াকালীন সময়েই একটা বাক্যের সাথে ভালমতই পরিচয় ছিল। ট্রান্সলেশনে প্রবাদ বাক্যে সবখানেই তার স্বগর্ভ অবস্থান। বাক্যটা হচ্ছে Nero Fiddles While Rome Burns! প্রবাদ বাক্যে বাংলা অর্থ দেয়া থাকত কারো সর্বনাশ কারো পৌষমাস।
তবে মোটামোটি বুঝতে পারতাম রুমে আগুন লাগা সময়ে নীরো নামের কেউ একজন বাশিঁ বাজাচ্ছিল! কিন্তু কে এই নীরো?কেন সে বাশিঁ বাজায়?রোমে আগুন ই বা লাগল কেন? ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘোরপাক খেত।
কলেজে উঠার পর আমার এক বন্ধুর নাম ছিল নির্ঝর। তাকে দেখলেই আমার মনে হত নীরো Fiddles হুয়াইল রোম বার্নস!এই নীরুর আবার রবী ঠকুরের উপর বেজায় ক্ষোভ! তার ধারনা রবী ঠাকুর নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ নামে একটি কবিতা লেখছেন এজন্য তার সব স্বপ্নই ভেঙ্গে যায়! ঈশ্বরে অবিশ্বাসী নীরুর কয়েকটি সিরিয়াস বিশ্বাসের মধ্যে একটা।
এখন বাশি বাজাঁনো নীরোর কথায় আসি আবার। বাশিঁ বাজানো নীরোর ইতিহাস জানি কয়েক মাস আগে।
১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত বিশ্ব পরিচয় নামে একটি বই পড়ে। বইয়ের কোনায় সিল মারা “পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ, বাংলা বই ও পত্রিক্,১৮৬ আন্ডারক্লিফ স্ট্রিট,ব্রাডফোড-৩,ইয়র্কশায়ার। ” বইয়ের দাম মাত্র ১৫ টাকা। বইয়ের যা সাইজ তা দেখে মনে হয় এখন হাজারের নীচে কোনমতেই হবে না!
এই বই আমার হাতে আসার ইতিহাস ও ভাল। বইটার প্রকৃত মালিক আমার এক খালু।
এতদিন নানাবাড়ি কোন এক চিপায় পড়েছিল। উপযুক্ত পাঠক না পাবার বেদনা যে তার মধ্যে কাজ করে নি তা নিশ্চিত করে বলা যায় না!কয়েক দশক পাঠকহীন থাকার পর আমার হাতে এসে পৌছায়। আমি তার যোগ্য সম্মান দিয়ে পড়া শুরু করি। এই বই পড়লে নিজেকে জ্ঞানী জ্ঞানী মনে হয়!তবে বিচিত্র ব্যাপার হল রোমান সভ্যতা পড়লে ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাস কিছু মনে থাকে না, ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাস পড়লে মস্তিষ্কে জমানো মিশরের ইতিহাসে টান পড়ে!
এই বইয়েই নীরো সম্পর্কে লেখা আছে, নীরো (৩৭-৬৮ খ্রি) ছিল একজন অত্যাচারী নৃশংস সম্রাট। সে প্রথমে সেনেকা নামক এক জ্ঞানী লোকের কাছে পড়াশোনা করে।
সেনেকার উপদেশ অনুসারে প্রথমে সে রাজ্য শাসন করত। তখন অবস্থা ভালই ছিল। কিন্তু হঠাত তার মনে হল, সে একজন বুদ্ধিমান লোক,জ্ঞানী লোক,নামকরা খেলোয়াড়! সে কেন আরেকজনের বুদ্ধিতে চলবে! নিজের বুদ্ধিতে ফকির ই ভাল!এই চিন্তা থেকেই শুরু করল খামখেয়ালী শাসন। সেনেকা প্রতিবাদ করাতে বৃদ্ধ এই শিক্ষককে মৃত্যুদন্ড দিল। তার মা বিরোধীতা করলে মা কে ঝুলিয়ে দিল ফাসি কাষ্ঠে!
তার রাজত্বের সময়ে একদিন আগুন লাগে রোমে।
আগুন মানে ভয়াবহ আগুন। সব জ্বলে চারখার হওয়ার মত অবস্থা। কিন্তু নীরোর সেদিকে লক্ষ্য নেই। সে মগ্ন ছিল রাজ প্রাসাদে। বাশি বাজিয়ে তার শিল্পী মনের পরিচয় দিচ্ছিল।
ইতিহাস তার এই শিল্পী মনের দাম রেখেছে। আমার ধারনা কৃষ্ণের বাশিঁ বাজানোর পর এই রোমের নীরোর বাঁশী বাজানোই ইতিহাসে বেশী স্মরিত হয়!কথিত আছে, রোমের এই আগুন সাত দিন স্থায়ী ছিল!
যাই হোক এত গেল নীরোর কথা। কিন্তু আমাদের যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল তো এ যুগের নীরো!তবে নীরোর নাম নিয়ে আমি তাকে খাটো করতে চাই না। তিনি আবুল ই। নীরো বাঁশি বাজাচ্ছিল আর তিনি হাসেন।
দেশের মানুষ যখন রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় তখন তিনি হাসেন। সামনের কয়েকটা দাত বের করে।
এখন নিশ্চয়ই প্রবাদ বাক্য হবে, আবুল স্মাইল, হুয়াইল পিপল ডাইজ ইন রোড এক্সিডেন্ট!
এক কপি এখানেও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।