মানিকগনজের দুর্ঘটনায় আমাদের অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে। নির্মিতব্য কাগজের ফুল সিনেমার লোকেশন দেখে ফেরার পথে তারেক মাসুদ সহ তাঁর দলের পাঁচজন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। লিখতে বসে দেখলাম বাকি চারজনের মধ্যে আমি শুধু মিশুক মুনীরের নাম জানি। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। বাংলাদেশে ঘন্টা দুই আগে মাত্র মানুষ জন সেহরী খেয়ে ঘুমিয়েছে।
ভয়ে ভয়ে দু'এক জন পরিচিত লোক যারা খোঁজ খবর রাখেন তাদের ঘুম ভাঙালাম। ফলাফল একই। তারাও জানেন না। হায় আমাদের হিপোক্রেসি। মিশুক মুনীর এবং তারেক মাসুদ বিখ্যাত, মিডিয়ায় অবদান রেখেছেন তাদের নিয়ে আহাজারী শুনতে পাচ্ছি প্রতি নিয়ত, অথচ যে তিন জন অপেক্ষা কৃত অপরিচিত ( অপেক্ষাকৃত বলাটা তুলনামূলক, ভব্যতা বর্জিত এবং যোগাযোগমন্ত্রী বা বিএনপি আমলের আল্লারমাল জাতীয়ও বটে।
তবু বলছি কারন বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের মধ্যে শতকরা কতভাগ মানুষ মিশুক মুনীর এবং তারেক মাসুদের পরিচিতি ছিল বলা মুসকিল। তবে একথা অনস্বীকার্য যে তাদের কীর্তির জন্যে বোদ্ধা মহলে তাঁরা ছিলেন ব্যপক ভাবে পরিচিতি এবং কর্মক্ষেত্রে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দী। ) তাঁদের নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হচ্ছে না। তারা মৃত্যুর সময় পরিবারের জন্যে কি রেখে গিয়েছেন আমরা জানি না। তাদের পরিবারে আদৌ উপার্জন করার মত কেউ আছে কি না জানি না।
বোদ্ধাদের অনেককেই টেলিভিসনের পর্দায় কাঁদতে দেখেছি। মাত্র পাঁচ মাস আগে এটিএন নিউজের দায়িত্ব নেওয়া মিশুক মুনীরের জন্যে তার সহকর্মীদের কান্না দেখে মেনে হয়েছে মানুষকে আপন করে নেবার অসীম ক্ষমতা ছিল মানুষটির, নাহলে পাঁচ মাসের পরিচিতের জন্যে মানুষ এভাবে কাঁদে না। অন্য অনেকে শোকে আবেগে ঘটনার জন্যে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াকেও দায়ী করে ফেলেছেন। কয়েকদিন যাবৎ দেদার লেখা লেখি হচ্ছে। ফকির ইলিয়াস প্রায় নিরপেক্ষ একটি লেখা লিখেছেন।
অনকেরে লেখাতে আবেগ হয়ে উঠেছে মূল প্রতি পাদ্য। তবে তাঁরাও আমার মত বাকি তিনজনের কথা লেখেন নি।
বাংলাদেশে এধরণের দুর্ঘটনা নতুন নয়। এর আগে পরিচালক আহীর আলম এবং আলমগীর কবির সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান, স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠক আব্দুল হান্নান সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণকরেছিলেন।
কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবাদে একমাত্র চিত্র নায়ক ইলিয়াস কান্চন ছাড়া কোন মহলকেই উচ্চ কন্ঠ হতে দেখা যায়নি এমন কি চট্টগামে মাত্র কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয় দুর্ঘটনায় অত গুলি শিশুর মৃত্যুর পরও না। অথচ এই শিশুদের কেউ হয়তো ছিল ভবিষ্যতের তারেক মাসুদ কিম্বা মিশুক মুনীর । সড়ক দুর্ঘটনা কে দুর্ঘটনা হিসাবে দেখেই এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। তার আগে প্রতিটি নাগরিক কে বিবেকবান হতে হবে।
আমরা জানি মানিকগন্জ দুর্ঘটনার অনুঘটক বাস চালক ধরা পড়েছে।
তবে চালক কে ধরাই শেষ কথা নয়। আমি ওই বাসের যাত্রীদের কথা ভেবে বিষ্মিত হই। বাসের যাত্রীরি এত বড় একটি দুর্ঘটনার পর চালককে বাস থামারত বাধ্য করতে পারত। এক বাস যাত্রীর সহযোগিতায় উদ্ধার কাজ টি দ্রুত সম্পন্ন হত। যাত্রীরা সেটি না করে দ্রুত ঘটনা স্থল থেকে সটকে পড়তে চালককে সাহায্য করেছে।
জানি অনেকেই আমার কথা গুলি পছন্দ করবেন না । তার পর ও আমাদের হিপোক্রেসির কথা আমাকে লিখতে হল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।