http://rmpalash.blogspot.com/ রিমিরা কোনদিনই আমাদের হয়না। -প্রথম পর্ব।
রিমিকে নিয়ে একসময় অনেক স্বপ্ন দেখতাম। যখন ফার্ষ্ট-ইয়ার,সেকেন্ড ইয়ারে ছিলাম। তখন।
আমার সারাভুবন জুড়ে তখন রিমি নামের এই মেয়েটার অস্তিত্ব ছিল। ক্লাস করতে ভাল লাগতো না। পড়তে ভাল লাগতোনা। খেতে ভাল লাগতোনা। সারাক্ষন কেমন উদাস উদাস ভাব।
সবাই যখন মনোযোগ দিয়ে ক্লাস্ করতো কতদিন আমি সেই সময়ে শহীদ মিনারের সামনে বসে থেকেছি। বসে বসে দেখেছি ক্যাম্পাসে মানুষের আনাগোনা। শহীদ মিনারের লাল ইটের উপরে বসে বসে রঙ্গীন স্বপ্নে বিভোর হয়েছি। নানা রুপ-ব্যঞ্জনায় সাজিয়েছি রিমিকে। প্রতিদিন নতুন রুপে।
একদিন ক্লাসটাইমে শহীদ মিনারের সামনে বসেছিলাম। ধরা পড়ে গেলাম হলের এক সিনিয়র ভাইয়ের হাতে। জিজ্ঞেস করলেন ক্লাস নাই। বললাম আছে,করতে ভাল লাগছেনা। খুবই বকাঝকা করেছিলেন সেইদিন ভাইয়া।
মনে মনে ভাইয়ার উপরে রাগও হয়েছিল। ভাইয়া রাতে অবশ্য হলের দোকানে চা খাইয়ে খাতির করেছিলেন। ভাল ভাল কথা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু যাদের অন্তরে রিমিদের বসবাস তারা কবে ভাল কথা শুনে মানুষ হয়েছে?আমি ও হই নাই। তাই আমার লালইটের আসন বন্ধ হয়নি আরো অনেকদিন পর্যন্ত।
দিনগুলো আসলেই কেমনজানি ছিল!ডাইনিং এ খেতে গেলাম। ডাল নিব। ডালের বলের দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে ডাল নেই,রিমি তাকিয়ে আছে। আমিও রিমির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কতক্ষন পরে গুতা খেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি পাশের চেয়ারে বসে রিমি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতেছে।
আশেপাশে তাকাই। সব চেয়ারে রিমিরা বসে আছে। আমার সামনে-পেছনে,ডানে-বামে এত এত রিমি!আমার ঘোর কাটে। হলের পাতলা ডালের স্বাধ আর নিতে ইচ্ছে হয় না। বন্ধুদের অবাক দৃষ্টি পেছনে রেখে চলে আসি না খেয়েই।
বাঙ্গালাদেশ ইংল্যান্ডের খেলা হচ্ছে। তামিম ধুন্দুমার মারছে। প্রবল হৈচৈ। চিল্লাচিল্লি করে ছেলেপেলে হল মাথায় করে ফেলেছে। কিন্তু কোথায় তামিম?আমি তো তামিমকে দেখিনা।
হলের ৪২ ইঞ্চি টিভিতে তখন আমার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে রিমি নামের মেয়েটা।
টার্মফাইনালের প্রশ্নে রিমির ছবি দেখেছি। খাতায় একে রেখেছি রিমির ছবি। প্রতিদান পেয়েছি খুবই দ্রুত। দয়াময় স্যার ল্যাগ দিতে দেরি করেন নি।
টার্মের ৫ সাবজেক্টের ৪ টায় ল্যাগ খেয়েছিলাম। পাস করেছিলাম শুধু ফিজিক্সে। তাও ইন্টারের জ্ঞান দিয়ে। মাথার ভেতরে যার রিমি তার আর কিসের রেজাল্ট। রিমি ৪ পেয়েছে তাতে আমার খুশি।
আমি পাইনি তো কি হয়েছে রিমিতো পেয়েছে!কিন্তু না সেই খুশি অনেক দিন থাকেনি। একসময় খুশিতে ভাটা পড়েছে।
রাজু ছিল আমার একমাত্র বন্ধু। সেই কলেজ থেকে আমরা একসাথে। ফার্মগেটে বাসা নিয়ে একসাথে থেকেছি।
বুয়েটে আমরা একি হলের বাসিন্দা,পড়ি একই ডিপার্ট্মেন্টে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে একজন বন্ধু থাকে যার কাছে সব শেয়ার করা যায়। মনের কথা যাকে বলে হালকা হওয়া যায়। রাজু আমার সেই রকম বন্ধু। রিমির ব্যাপারটা শুধু রাজুই জানতো।
আমার এই অবস্থা দেখে রাজু একদিন নিজেই রিমির সাথে কথা বলেছিল। আমি মানা করেছিলাম। সে যখন ফিরে এসেছিল তার মুখে ছিল অমাবশ্যার অন্ধকার। আমাকে সে বলেছিল ‘রিমিকে ভুলে যা রাসেল। ’
আমি রিমিকে ভুলিনি।
মনের কোনে লালন করেছি। আমার জোয়ারের মত ভালবাসা ভাটার টানে চলে গেছে। হারিয়ে যায়নি। ভালবাসার তীব্রতা কমেছে। নষ্ট হয়নি।
রিমি আমি তোমাকে ভালবাসতাম কোন কারন ছাড়াই। তোমাকে আমার ভাল লেগেছিল প্রথম দেখায়। তুমি শান্ত-শিষ্ট। তোমার সরল মুখ আমাকে অন্যজীবনের গান শুনিয়েছিল। সেই গান তুমি থামিয়ে দিলেন নির্মম ভাবে।
রাজুকে তুমি অপমান করেছ। আমার মত বখাটে এলোমেলো ছেলে তোমাকে ভালবাসার সাহসের উৎস জানতে চেয়েছ। আরো অনেক কিছু বলেছ যা রাজু আমাকে বলেনি। আমাকে যাই বল। আমি কষ্ট পাইনি।
রাজুকে অপমান করা তোমার ঠিক হয়নি।
মারফিস’ল বলে মানুষের জীবনে বিপদ একসাথে অনেকগুলো আসে। একটার পর একটা আসে। এবং প্রতিটি তার পরেরটির পথ প্রসস্ত করে দেয়। সম্ভাব্য সব রকম প্রিকশন নিয়ে ও বিপদ এড়ানো যায় না।
সবার শেষে ম্যাক্সিমামটার মাধ্যমে বিপদ কাহিনীর সমাপ্তি ঘটে।
একাধিক ল্যাগ খেলাম। বুয়েটের প্রথম পরীক্ষায়। একটা টিউশনি করতাম। অনিয়মিত ভাবে যাওয়ার কারনে ছাত্ররেজাল্ট খারাপ করে।
টিউশনিটা চলে যায়। শরীরের প্রতি অযত্ন আর অবহেলায় জ্বরে পড়ি। সেখান থেকে টাইফয়েড। দেড় মাস বিছানায় থাকা অবস্থায় বাসা থেকে খবর আসে আবার বাবার মৃত্যু সংবাদ নিয়ে।
এই অবস্থায় অনেকে হতাশায় ভেংগে পড়ে।
আমি ভাংগিনি। বিপদ মেনে নিয়েছি। ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করেছি। দুইটা টিউশনি করে বাড়িতে টাকা দিয়ে,নিজের পড়ালেখা করে রিমির কথা ভাবার সময় আমার ছিলনা। প্রবল বিপদে পরে আমার বোধ হয়েছিল রিমিরা আমাদের জীবনের একটা পার্ট।
প্রয়োজনীয় কিন্তু অপরিহার্য্য নয়। রিমিরা আমাদের আনন্দ দিতে পারে,কিন্তু সেটা মুল্যবান হয় বেসিক প্রয়োজন মিটবার পর। রিমিদের কথা ভাবা ছাড়াও জীবনে কত কিছু করার আছে। আমার মত ফাদের পড়া মানুষের সময় কোথায় রিমির কথা ভেবে সময় নষ্ট করার।
তারপরেও ভেবেছি।
উদাস করা দুপুরে হঠাৎ যখন দমকা হাওয়া শান্তির পরশ দিয়েছিল তখন কোকিলের কুহু ডাকে হয়ত রুমি আমার মনের ঘরে হানা দিত,কিংবা ঝুম বরষার একটানা বর্ষনের সাথেও রুমি আসত। হলের ছাদে যখন গানের আড্ডা হত তখনও আমার সাথে না থেকেও থাকত রুমি। এই রিমি আমার নিজস্ব। একান্ত আপন এবং অনুগত। মাঝে মাঝে গভীর রাতে ঘুম ভেংগে গেলে মনে হত রিমি আমার সাথেই আছে।
তখন রিমির সাথে কত গল্প করেছি। এই রিমি শুধুই আমার। সে অহংকারী,টিচার ফাইটার না। জলজ্যান্ত মানবী। রক্তমাংসের নারী।
যাকে নিয়ে পুরুষেরা গল্প,কবিতা-গান লেখে,ভালবাসার নৈবেদ্য সাজায়। এই রিমি আপাদমস্তক আমার ভালবাসা।
কাহিনী এখানেই শেষ হতে পারত। হয়নি। কেউ একজন আমাদের উপরে বসে পাশা খেলেন।
সময়ে সময়ে তিন পাশার দান উলটে দেন। আমরা ভাবি এক হয় এক। সেই উলটানো পাশা খেলার বলি হই আমরা। হয়েছি আমি,রিমি আর তানজীব।
“শুরুতে সামান্য মোডিফিকেশন শেষের রেজাল্ট কে ভয়ানক ভাবে বদলে দিতে পারে।
”
এটা হল দ্যা বাটার ফ্লাই ইফেক্ট যা একটা মুভি আছে। এই ইফেক্টের স্বীকার হয়েছিলাম আমরা তিনজন মানব-মানবী। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।