i am a simple man.
গত কয়েকটা দিন রুদ্র তার পৃথিবী থেকে বলতে গেলে একরকম বিচ্ছিন্নই ছিল। ক্লাস মিস, সেল ফোন অফ। কারো সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না। এমনকি কাছের বন্ধুদের সাথেও না। সারাদিন রুম থেকে একদমই বের হতো না।
আজ অনেকদিন পর সন্ধায় সে রুম থেকে বের হল। তার সহপাঠী বন্ধুদের কয়েকজনকে ফোন দিল। সবাই নির্ভেজাল ব্যস্ত। হাটতে হাটতে সে তার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে গেল। মাঝে মাঝে খুব পরিচিত কিছু ব্যাপার মানুষের কাছে কিঞ্চিৎ অপরিচিত, ঈষৎ পরিবর্তিত লাগে।
আজকের চিরচেনা ক্যাম্পাসটা যেন সেরকমই লাগছে তার চোখে। চোখের মোটা কাছের চশমাটা খুলে, গ্লাস মুছে আবার চোখে দিল সে। আসলেই আজকের ক্যাম্পাসটা খুব বেশি অন্যরকম লাগছে। টঙ দোকানে চা পানের সময় ক্যাম্পাসের এক বড়ভাই জানাল অডিটেরিয়ামে এখন প্রোগ্রাম আছে। তাড়াতাড়ি চা শেষ করে অডিটোরিয়ামে চলে আসল সে।
অডিটেরিয়ামে ঢুকতে গিয়েই ধূঁপ মোহিত ধোয়া তার নাকে এসে লাগল। অন্যরকম অনুভূতি চলে আসল তার মধ্যে। যেন একটা ধাক্কা দিয়ে ভেতরটা নাড়িয়ে দিল। পেছনের সারির এক কোণে বসে পড়ল রুদ্র। ধূঁপের ধোয়া আরো বাড়তে লাগল।
মাথা ঝিম ধরে গেল তার। চোখ বুজে মাথা নিচু করে বসে থাকল। কিছুক্ষন পর রুদ্র ধীরে ধীরে চোখ খুলল।
অডিটোরিয়ামে তখন একটি শ্র“তি নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছিল। হিন্দু পৌরানিক কাহিণী।
সে যখন চোখ খুলল, মঞ্চ তখন ‘দেবপূরী’। দেবতারা তাদের আসন অলংকৃত করে রেখেছে। দেবপূরীতে ক্ষুদ্ধ ‘দেবী’ অগ্নি মূর্তি ধারন করে মানব জাতির প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করছে। দেবী চায় পৃথিবীতে দেবীর পূঁজা প্রতিষ্ঠিত হোক। সবাই দেবীর পূজাঁ করুক।
পূজাঁ না করলে দেবী সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে....।
অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে অনুষ্ঠান শেষে রুদ্র বাসায় ফিরে আসল। সে রাতে খুব তাড়াতাড়িই ঘুম আকড়ে ধরল তাকে। ঘুমের মধ্যে সে দেবীকে স্বপ্নে দেখল। দেবী চায় রুদ্র তার পূঁজা করুক।
রুদ্র যদি দেবীর পূঁজা না করে তাহলে দেবী তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে...।
ঘুম থেকে ধর মর করে জেগে উঠল রুদ্র। টেবিলে পানি ভর্তি বোতল যেন তার হাত ফসকে গেল। রুদ্রকে ভয় জাপটে ধরল। এমনিতেই রুদ্র অনেক ভীতু।
সে রাত্রে আর ঘুম হলো না রুদ্রর। কোনরকমে বাকী রাতটা কাটল। পরদিন সন্ধ্যা থেকেই তীব্র জ্বর শুরু হল। হাড় কাপাঁনো জ্বর। টানা চার দিন পর সেই জ্বর থামল।
কিছুদিন পর সে আবার এক রাতে স্বপ্নে দেবীকে দেখল। এবার স্বপ্নে দেবী আরো ভয়ংকর রুপ ধারন করল। পূজাঁ না করলে সে রুদ্রকে মেরেই ফেলবে...।
পরের রাতে তার আর ঘুম আসে না। সারারাত ঠাঁয় বসে থাকে রুদ্র।
সারাক্ষন দেবী তাকে তাড়া করে। কি করবে সে বুঝে পায় না। লাজ লজ্জা ভেঙ্গে মুখ ফুটে খুব কাছের এক বন্ধুকে সে বিষয়টি জানায়। বন্ধুটি তাকে অভয় দেয়, এটা কিছু না। ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু ঠিক আর হয় না। রাতে আর সে ঘুমাতে পারে না। সে রাতে রুদ্র নামাজ পড়ে। নামাজ শেষে হুজুরের কাছে বিষয়টি খুলে বলে। হুজুর তাকে ঈমান আমল শক্ত করতে বলে।
একটি দোয়া শিখিয়ে দেয়। সেই দোয়া পড়ে একটু সাহস পায় সে। তার মনে বিশ্বাস আসে। দুদিন খুব ভালো ঘুম হয়। তারপর এক রাতে সে আবার দেবীকে স্বপ্ন দেখে।
এবার দেবী সময় বেধে দেয়। দেবীর পূঁজা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে। যে দেবীর পূঁজা করবে না, দেবী তাকে কঠিন শাস্তি দিবে।
এক জ্ঞানী বন্ধুর পরামর্শে রুদ্র একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাথে দেখা করে। সাইকিয়াট্রিস্ট শ্র“তি নাটকে ‘দেবী’ চরিত্রে অভিনয় করা মেয়েটির সম্পর্কে রুদ্রকে অনেক প্রশ্ন করেন।
মেয়েটি রুদ্রর পরিচিত কিনা, কোনদিন তার সাথে কথা হয়েছে কিনা, কোন কারনে তাকে সে ভয় পায় কিনা...! এরকম অনেক প্রশ্নই রুদ্রর কাছে উদ্ভট প্রশ্ন মনে হয়েছে। কোন কারনে সেই প্রশ্নগুলো রুদ্রর ভালো লাগে নি। সাইকিয়াট্রিস্টের যে প্রশ্নটি সবচেয়ে উদ্ভট মনে হয়েছিল তা হচ্ছে, ‘মেয়েটিকে রুদ্রর ভালো লাগে কিনা, ভালোবসে কিনা। ’
সেখান থেকে ফিরে রুদ্র গেল এক বাহ্মণের কাছে। পুরো ঘটনা শুনে বাহ্মণও তাকে উল্টাপাল্টা কিছু কথা বলল বলে মনে হল রুদ্রর।
চলে আসল রুদ্র।
ক্লান্ত দেহে একটু পরই বিছানায় গা এলিয়ে দিল সে, সাথে সাথেই ঘুম। এবার স্বপ্নে দেখল, দেবী অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। দেবী বলছে, ‘কোন লাভ হবে না। কেউ এটার সমাধান দিতে পারবে না।
একমাত্র সমাধান, পূঁজা করতে হবে, আমার পূঁজা করতে হবে। ’ আবার অট্টহাসি।
সে রাতে ঘুম ভাঙ্গার পর সে সিদ্ধান্ত নিল সে দেবীর পূঁজা করবে। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই সে ধূপ, সুগন্ধী আগর বাতি, মোমবাতি, মাটির প্রদীপ কিনে আনল। প্রোগ্রামের দেবীর একটি ছবিও সে সংগ্রহ করে প্রিন্ট করল।
গভীর রাতে, যখন বাসার অন্য সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, তখন রুদ্র ছবিটি সামনে রেখে মোমবাতি, আগরবাতি, ধূপ সবকিছু জ্বালিয়ে পিসিতে ‘ওম’ মিউজিক দিয়ে হাত করজোড় করে চোখ বন্ধ করে বসে রইল অনেকক্ষন। সে রাতে অনেক ভালো ঘুম হলো তার। এবার আর দেবীকে স্বপ্ন দেখল না সে।
এখন মাঝেমাঝে সময় পেলেই সে তার রুমে ধূঁপ, আগঁরবাতি জ্বালিয়ে রাখে। মিউজিক ছেড়ে কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা রুমের এক কোণে পূঁজার আসনে বসে।
ধূঁপমোহিতধোয়া তাকে মোতিত করে। অদ্ভুত এক শিহরণ ছড়িয়ে পড়ে তার চোখে মুখে। কিন্তু দেবী স্বপ্নে আর আসে না। আসে না, আসেই না...।
(এই গল্পটা গত বই মলোয় 'প্রকাশ' নামক এক লটিল ম্যাগ' এ ছাপা হয়ছেলি) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।