আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতীয় ঋণের ফাঁদে বাংলাদেশ

ভালবাসি ট্রানজিট অবকাঠামোর সড়ক, নৌ ও রেল উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার ঋণের প্রাপ্যতা নিশ্চিত না করেই ভারত আরো ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চাইছে। ইতোমধ্যে নতুন ১০০ কোটি ডলার বা ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রাপ্তি নিয়ে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৬ জুন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাওয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় নতুন ঋণের বিষয়টি সামনে আসে। ওই সময় তিনি বাংলাদেশকে আরো ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করেন। এরপর ৬ জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণা এসে একই প্রস্তাব দেন এবং বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আলোচনা করেন।

এরপর থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিষয়টি মনিটরিং করছেন বলে জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, আগামী ৬-৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরের সময় নতুন ১০০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবেন। এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান যায়যায়দিনকে জানান, ভারত নতুন করে আরো ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এখনো তারা লিখিত কোনো প্রস্তাব দেয়নি। লিখিত প্রস্তাব পাওয়া গেলেই বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এ সম্পর্কে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান জানান, ভারত বেশি বেশি ঋণ দিতে চায় তার রপ্তানি বাড়ানোর জন্য। তবে বাংলাদেশের দরকার নিজ স্বার্থ দেখা। ভারত যেভাবে রপ্তানি নির্ভর ঋণ দিচ্ছে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সহায়ক কিনা, তা যাচাই করা দরকার। বিশ্বের অন্য দেশও এ ধরনের ঋণ সন্দেহের চোখে দেখে।

ভারতও এ ধরনের ঋণ নেয় না। আকবর আলি খান আরো জানান, যে কোনো পণ্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কিনলে প্রতিযোগিতা হয়। এতে ক্রেতা যাচাই-বাছাই করে ভালো পণ্য কম দামে কিনতে পারে। আর ভারত যেভাবে ঋণ দিচ্ছে, তাতে প্রতিযোগিতার সুযোগ নেই। তারা যে দামে পণ্য দেবে বাংলাদেশকে, সেই দামেই পণ্য কিনতে হবে।

এর ফলে ৭০-৮০ টাকার পণ্য ১০০ টাকা বা তার ওপরে পড়বে। এতে সুদের চেয়েও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে। জানা গেছে, ভারত প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশের যে ১০০ কোটি ডলার বা ৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয়, সেই টাকা সরাসরি বাংলাদেশে আসবে না। ওই টাকার বিনিময়ে ভারতের পণ্য বাংলাদেশে আসবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১৪টি আইটেমের অর্ডার দেয়া হয়েছে।

বাকি অর্ডারও দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেয়া হবে। প্রসঙ্গত, ঋণের অর্থ দিয়ে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, তা হচ্ছে পানিসম্পদ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬টি ড্রেজার ক্রয়, আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নৌবন্দর স্থাপন, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ, ১২৫টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ, জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য ৬০টি ট্যাংক ওয়াগন ও দুটি ব্রেকভ্যান সংগ্রহ এবং কনটেইনার পরিবহনের জন্য ৫০টি মিটারগেজ ফ্ল্যাট ওয়াগন ও ৫টি ব্রেকভ্যান সংগ্রহ, রেলওয়ে অ্যাপ্রোচসহ দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ, বিআরটিসির জন্য ৩০০টি ডাবল ডেকার এসি/নন-এসি বাস ও ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস সংগ্রহ, সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সুলতানপুর-চিনাইর-আখাউড়া-সেনারবাড়ী স্থলবন্দর সড়ক জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্প, জুরাইন রেলক্রসিংয়ের ওভারপাস ও মালিবাগ রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প, রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশের ভেড়ামারা ও ভারতের বহরমপুরের মধ্যে ৪০০ কেভি গ্রিড আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠা এবং বিএসটিআইর ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে বিআরটিসির জন্য বাস এবং রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস ও ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং বিএসটিআইর মানোন্নয়ন ছাড়া বাকি প্রকল্পগুলোর প্রায় সবই বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের করিডোর সুবিধা ব্যবহারের জন্যই করা হচ্ছে। জানা গেছে, ভারত থেকে নেয়া ঋণের ওপর বাংলাদেশকে প্রতি বছর চক্রবৃদ্ধি হারে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রথম বছরেই ভারতকে সুদ বাবদ দিতে হবে ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।

এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী ২৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আর ঋণ পরিশোধ করতে দেরি হলে বাংলাদেশকে জরিমানাও গুনতে হবে। এ ধরনের শর্ত দাতা সংস্থা থেকে নেয়া ঋণে না থাকলেও ভারতের সরকারি এক্সিম ব্যাংক তা দিয়েছে। এছাড়া ঋণের কমিটমেন্ট ফি (সুদের পাশাপাশি ঋণের জন্য দেয়া বাড়তি অর্থ) ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ (অর্থাৎ ২৫ লাখ ডলার)। ঋণের আওতায় প্রকল্পের চুক্তি অনুমোদনের এক বছর পর থেকে অব্যবহূত ঋণের জন্য এই হার ধরা হবে।

১০০ কোটি ডলারের ওপর বাংলাদেশকে যে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে, তা সার্ভিস চার্জসহ প্রায় ৪০-৪৫ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে। Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.