শচীন টেন্ডুলকারকে পরামর্শ দেওয়ার লোকের অভাব নেই। ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সুযোগ পেলেই টেন্ডুলকারকে নিয়ে কথা বলায় মেতে ওঠেন। টেন্ডুলকারের এটা করা উচিত, ওটা করা উচিত নয়—এগুলো তো আছেই, সঙ্গে ক্রিকেট থেকে তাঁর অবসরে যাওয়ার দিনক্ষণও বেঁধে দিতে চান কেউ কেউ।
এত দিন টেন্ডুলকারকে নিয়ে একেবারেই মুখ বন্ধ রেখেছিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। সেই আজহার এবার টেন্ডুলকারকে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই দিয়েছেন কিছু পরামর্শ।
আজহারের পরামর্শের লক্ষ্য মূলত খারাপ ফর্মের টেন্ডুলকারকে একটু আশার আলো দেখানো।
ক্রিকেটজীবনের একেবারে প্রান্তসীমায় পৌঁছে টেন্ডুলকার বোল্ড হচ্ছেন বারবার। তাঁর মাপের একজন ব্যাটসম্যানের এমন বিচ্ছিরি ভঙ্গিতে বোল্ড হওয়াটা ঠিক মানায় না। সুনীল গাভাস্কারের মতো গ্রেটরা এটিকে টেন্ডুলকারের ‘টাইম শেষ’ হিসেবেই দেখতে চান। তবে আজহারউদ্দিন ব্যাপারটা ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে অভিহিত করে পুরো বিষয়টি কাটিয়ে উঠতে কিছু টিপস দিয়েছেন টেন্ডুলকারকে।
প্রথমেই আজহার টেন্ডুলকারের বারবার বোল্ড হওয়ার ব্যাপারটা দেখছেন বয়সের কারণে রিফ্লেক্স কমে যাওয়া হিসেবেই। রিফ্লেক্স কমে যাওয়ার কারণেই ভেতরে ঢুকে পড়া বলে টেন্ডুলকার বোল্ড হচ্ছেন বলে ধারণা আজহারের।
এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে টেন্ডুলকার নিজের স্ট্যান্স একটু এদিক-ওদিক করে দেখতে পারেন বলেই মতামত আজহারের, ‘খারাপ পরিস্থিতি, ফর্ম ইত্যাদি যে যাঁর মতো করেই মোকাবিলা করে সাধারণত। টেন্ডুলকারও নিশ্চয়ই ওর মতো করেই ভাবছে। তবে আমার মনে হয়, বারবার বোল্ড হওয়ার এই ব্যাপারটি থেকে বেরিয়ে আসতে সে নিজের স্ট্যান্সটি একটু পরিবর্তন করে দেখতে পারে।
“চেস্ট অন স্টান্স” নিয়ে খেললে তা টেন্ডুলকারকে উপকৃতই করত। টেকনিক্যালি টেন্ডুলকার অনেক উঁচু মানের ক্রিকেটার, এ বিষয়ে কারোরই কোনো সন্দেহ নেই। তাই আমি মনে করি, সে এ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম। ’
একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে পুরো বিষয়টির ব্যাখা দিয়েছেন আজহার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে, ‘চেস্ট অন স্ট্যান্সে ডেলিভারিটা দুই চোখেই দেখা যায়। তাই এতে পেসারদের খেলাটা সহজ।
বিশেষ করে ইনকামিং ডেলিভারিতে পা ব্যবহার করা যায় বলের মেধা অনুযায়ী। ’
ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়ক ও দেশের হয়ে ৯৯টি টেস্ট খেলা আজহার নিজেও ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময় খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছেন। ১৯৮৯ সালে পাকিস্তান সফরের সময় পাকিস্তানি কিংবদন্তি জহির অব্বাসের পরামর্শ নিয়ে উপকৃত হয়েছিলেন। টেন্ডুলকারকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অবতারণা করলেন সেই প্রসঙ্গও, ‘জহির আব্বাস আমাকে ব্যাটের গ্রিপ পরিবর্তন করতে বলেছিলেন। আমি তাঁর কথা শুনে প্রথম দিকে একটু সমস্যাতেই পড়েছিলাম।
বুড়ো আঙুলে খুব ব্যথা হতো, কিন্তু পরে ওটা কাজে লেগেছিল। ’
বয়সের হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যাওয়া আজহার এই মুহূর্তে ক্রিকেট থেকে অনেক দূরেই বিচরণ করছেন। রাজনীতির তপ্ত মাঠে নতুন ইনিংসটাও নেহাত মন্দ হচ্ছে না তাঁর। সাংসদ হিসেবে ব্যস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে ঠিকই সময় বের করে খোঁজ-খবর রাখেন ক্রিকেটের। আপাতত ভারতীয় ক্রিকেটে শিখর ধাওয়ানকে বেশ মনে ধরেছে আজহারের।
তাঁর হাই-অন হ্যান্ডেল স্ট্যান্স শিখরকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে আজহারের চোখে, ‘আমাদের প্রজন্মে অ্যালান ল্যাম্ব ছিল হাই অন-হ্যান্ডেল স্ট্যান্সের ব্যাটসম্যান। এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটে শিখর ধাওয়ান অমনই এক ব্যাটসম্যান। বেশ ভালো লাগে ওর খেলা। ’
ধাওয়ানের ব্যাটিং ভালো লাগলেও আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর যে তাঁর জন্য বিরাট পরীক্ষা, সেটি জানিয়ে দিতে ভোলেননি আজহার, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ধাওয়ানকে ওর ব্যাটিং স্টাইলের কারণেই বেশ পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। ডেল স্টেইন, মরকেলরা ওর জন্য চ্যালেঞ্জই।
’
ধাওয়ানের পাশাপাশি বিরাট কোহলি ও চেতেশ্বর পূজারাদের খেলা দারুণ লাগে আজহারের। সেই তুলনায় রোহিত শর্মাকে নিয়ে একটু হতাশাই ঝরেছে তাঁর কণ্ঠে। নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পরামর্শ দিয়েছেন রোহিত শর্মাকে, ‘আমি রোহিতকে নিয়ে একটু হতাশই। আমি জানি ও কতটা প্রতিভাবান। ওর মতো শট খেলতে আমি কাউকে দেখিনি।
আমি চাই, নিজের দুর্বলতাটুকু খুব দ্রুতই কাটিয়ে উঠুক সে। ’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।