1 2
মুখ নাকি মনের আয়না! মুখাবয়ব দেখে তাই হয়তো বোঝা যায় মানুষের মনের নিশানা। ফুর্তিতে থাকলে মানুষের মুখ হয়ে ওঠে হাস্যোজ্জ্বল। আবার উল্টোটা হয় মন খারাপ থাকলে। তবে মুখাবয়বের সঙ্গে আবেগের সম্পর্ক যা-ই হোক, মানুষের বানানো যন্ত্র কি তার মুখাবয়বকে বুঝতে পারবে? মুখের মাংসপেশির নড়াচড়া, ভ্রু কোঁচকানো বা একটু ঠোঁট চেপে ধরা থেকে কি মানুষটি হাসছে কি না, তা বোঝা যাবে? বিশ্বখ্যাত এমআইটির মিডিয়া ল্যাবে কাজ করতে করতে এমনটি ভাবেন দুজন তরুণ বিজ্ঞানী। তাঁদের হাত ধরে তৈরি হয়েছে মুখাবয়ব দেখে মেজাজ বোঝার যন্ত্র—এমআইটি মুড মিটার।
এরই মধ্যে সেটি নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। বিজ্ঞান প্রজন্মের পাঠকদের জন্য মুড মিটারের আদ্যোপান্ত নিয়ে জানাচ্ছেন সেই দলে থাকা বাংলাদেশীপ্রযুক্তিবিদ এহসান হক
এহসান হক
যাদের অটিজম বা এসপারগার সিনড্রম আছে, তাদের অনেকেই মানুষের সঙ্গে সহজভাবে কথা বলতে পারে না, বুঝতে পারে না অন্যের আবেগ। কথা বলা শুরু করলে কখন থামবে, তা বুঝতে পারেন না। তাদের কথায় অন্য কেউ বিরক্ত হচ্ছে, না আনন্দিত হচ্ছে, সেটাও বুঝতে পারে না। যদি এমন হতো, সেই মানুষটির সঙ্গে আছে এমন এক যন্ত্র, যা বলে দেবে শ্রোতার মনোভাব, তাহলে এ ধরনের মানুষের যোগাযোগক্ষমতা অনেক বেড়ে যেত।
এই ভাবনা থেকে ঢাকার ছেলে এহসান মুড মিটারের কাজটা শুরু করেন। এহসান হকের পড়াশোনা উদয়ন স্কুল এবং পরে ঢাকা কলেজে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য যান যুক্তরাষ্ট্রে। পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক, ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর। ২০০৮ সাল থেকে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) বিখ্যাত মিডিয়া ল্যাবে কাজ করছেন।
গবেষণার মূল বিষয় মানুষের মুখাবয়ব ও কণ্ঠ বিশ্লেষণ করে যন্ত্রকে মানুষের আবেগ শনাক্ত করতে সাহায্য করা। মুড মিটারের আগে ২০০৯ সালে ওয়াল্ট ডিজনির গবেষণাগারে প্রথম স্বয়ংক্রিয় রোবট—যা দেখতে, শুনতে ও নিজে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম—তৈরিতে সাহায্য করেছেন। ২০১০ সালে আইবিএম ওয়াটসন গবেষণাগারে তৈরি করেন বুদ্ধিমান বিজ্ঞাপন যন্ত্র, যা পথে চলতে থাকা মানুষের গতিবিধি, লিঙ্গ, বয়স, পরনের কাপড়ের রং ও ধরন বুঝে মানানসই বিজ্ঞাপন প্রচার করে!
এমআইটির মুড মিটারের পেছনে যে তরুণ বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন, তাঁদেরই একজন এহসান হক যিনি এনামুল হক ও প্রয়াত সৈয়দা লুৎফে লুতেফ সাবার সন্তান।
এমআইটির নিরাপত্তা ও সংকট ব্যবস্থাপনা অফিসের (সিমো) সামনে বসে ঘামছি আর অপেক্ষা করছি ডাকের। ঢুকলাম সিমোর প্রধান কার্যালয়ে।
এখানে আমি এই প্রথম। সিমোর টেবিলের এক প্রান্তে বসে আছেন সিমোপ্রধান। খুব গম্ভীর মুখ, একটু পর পর ঘড়ি দেখে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, উনি খুব ব্যস্ত মানুষ।
আমি একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলা শুরু করলাম, ‘আমাদের প্রকল্পের উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট। আমরা জানতে চাই, এমআইটি ক্যাম্পাস হিসেবে কতটা বন্ধুসুলভ, পরীক্ষার সময় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা এবং মেজাজ কতটুকু পরিবর্তন হয়, কোন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি হাসিখুশি ও বন্ধুসুলভ এবং কোন বিভাগের শিক্ষার্থীরা একটু রাশভারী ও গোমড়া।
আমরা আরও জানতে চাই, দুঃসহ ঠান্ডা থেকে আবহাওয়া যখন একটু সহনীয় হয়ে ওঠে, তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবালবৃদ্ধবনিতার মেজাজ কীভাবে পরিবর্তন হয়। ’
‘বটে! তা কী করে জানবে?’ সিমোপ্রধানের প্রশ্ন।
বুঝতে পারলাম, তিনি ক্যামেরার প্রসঙ্গ তুলতে চাইছেন।
এই ফাঁকে পাঠককে একটু জানিয়ে রাখি, সপ্তাহ খানেক আগে আমি ও আমার সহযোগী ফার্নান্দেজ হাভির আমাদের একটি প্রকল্পের প্রস্তাবে এমআইটির চারটি ব্যস্ততম জায়গায় ক্যামেরা স্থাপন করার অনুমতি চেয়েছি। এটি সিমোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যথেষ্ট ক্ষিপ্ত করেছে।
কারণ, তাঁদের মতে, ক্যামেরার মতো অনধিকারপ্রবেশকারী একটি যন্ত্র দুই মাস ধরে ব্যস্ততম এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করে গেলে মানুষের গোপনীয়তা ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হবে। ক্যাম্পাসের লোকজন ক্রোধান্বিত হয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানাবে, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হবে, ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ সিমোর অফিসে ফোন করে কারণ দর্শাও নোটিশ দেবে। স্বভাবতই এ ধরনের ঝুঁকিপ্রবণ প্রকল্প সিমোর পক্ষে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয় বলে আমাদের ই-মেইলে জানানো হয়েছে। ই-মেইল পেয়ে তো আমাদের মাথায় হাত। এখন কী করি! সিমোর প্রধানকে একটা প্রতিবাদ ই-মেইল করলাম।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমরা সিমোর অফিসে।
আমি আবার বলতে শুরু করলাম, ‘আমরা ক্যাম্পাসের সবচেয়ে ব্যস্ততম জায়গাগুলোতে ক্যামেরা লাগাতে চাই। প্রতিটি ক্যামেরার সঙ্গে থাকবে ল্যাপটপ। ক্যামেরা থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৩০টি ছবি সংগ্রহ করে ল্যাপটপে তা বিশ্লেষণ করা হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর গাণিতিক পরিভাষা ব্যবহার করে নির্মিত আমার সফটওয়্যার প্রতিটি ছবি বিশ্লেষণ করে আমাদের বলবে—ছবিতে এই মুহূর্তে কতজন লোক উপস্থিত এবং এই মুহূর্তে তারা কতখানি আনন্দিত।
তবে কোন ব্যক্তি আনন্দিত এবং কোন ব্যক্তি আনন্দিত নয়, তার কোনো রেকর্ড আমরা সংগ্রহ করব না এবং সেটা আমরা বলতে যাব না। ’
আমাকে আরও ব্যাখ্যা করতে হলো, ‘যেমন ধরুন, ছাত্রছাত্রীদের অবসরের জায়গা স্টুডেন্ট সেন্টারে এখন ১০ জন শিক্ষার্থী আর তাঁদের মধ্যে আটজনকে দেখে আনন্দিত মনে হচ্ছে। আমার সফটওয়্যার তখন শুধু “উপস্থিত লোকের সংখ্যা ১০ এবং তাদের আটজন আনন্দিত” পরিসংখ্যানটি ওয়েব সার্ভারে পাঠাবে। এর বাইরে আর কোনো তথ্য সংগ্রহ করা হবে না। প্রতিটি ক্যামেরার সঙ্গে থাকবে বড় পর্দার প্রজেক্টর, সরাসরি ছবি দেখানোর জন্য।
কেউ যদি হাসতে থাকে, তার মুখে সবুজ একটা বৃত্ত আঁকা হবে, অন্যথায় বৃত্তের রং হবে হলুদ। ’
ক্যামেরার সামনে কেউ দাঁড়ালেই তার মুখে একটি হলুদ বৃত্ত এঁকে দেওয়া হবে। আর যদি তার চেহারায় আনন্দের রেশ পাওয়া যায়, তাহলে তার বৃত্তের রং হয়ে যাবে সবুজ। এর মধ্যে কেউ যদি বেশি মাত্রায় আনন্দিত হয়, তাহলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে তার গলার কাছাকাছি একটি টাই এঁকে দেওয়া হবে। এভাবে আমরা একটি গুরুগম্ভীর গবেষণাকে সৃজনশীলতার মাধ্যমে সবার চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহে ব্যবহার করব।
আমি আরও ব্যাখ্যা করলাম, ‘সামনেই এমআইটির ১৫০ বছর পূর্তি উৎসব। উৎসব উপলক্ষে হাজার হাজার লোকের সমাগম হবে আমাদের ক্যাম্পাসে। এই উৎসবে আমাদের এই প্রকল্প ব্যবহার করে জানতে পারব আমাদের গবেষণার আরও কয়েকটি দিক। আমরা যদি এই প্রকল্প চালাতে পারি, তাহলে জানতে পারব, পুরো ক্যাম্পাসের কোথার মানুষ কত বেশি আনন্দিত। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেটা বুঝতে পারবে।
’
আমি আমাদের প্রকল্পের কার্যকারিতা সম্পর্কেও তাঁদের বোঝালাম।
এ রকম একটি প্রকল্পে লাভ কী?
একটি লাভ হলো, জনসাধারণকে এ ধরনের অনধিকার প্রবেশকারী প্রযুক্তির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত করা যাবে। তবে যেহেতু আনন্দের পাশাপাশি মানুষের গোপনীয়তা রক্ষা করাটাও আমাদের কাজ, তাই আমরা ক্যামেরায় কোনো ছবি সংগ্রহ করব না। ক্যামেরার পাশে অনেক বড় করে ব্যানারে লিখে দেব, ‘এই ভিডিওটি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। এর কোনো ছবি সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।
’
এমনকি ওয়েবসাইটে ফোরাম রাখার কথাও বলা হলো। জিজ্ঞেস করলে বললাম, আমরা মিডিয়া ল্যাবের ছাত্র। বাঁকা চোখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে স্মিত হেসে সিমোর প্রধান বললেন, ‘মিডিয়া ল্যাবের ছেলেগুলোর মাথা থেকেই এ ধরনের প্রথাবিরুদ্ধ উদ্ভট বুদ্ধি বের হয়ে আসে। মজার কথা হচ্ছে, তোমাদের এই প্রকল্প আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। আমরা তোমাদের সর্বাত্মক সাহায্য করতে রাজি।
বলো, কী করতে হবে?’
সেই ছিল আমাদের মুড মিটারের যাত্রা।
প্রস্তুতিপর্ব
এর পরের দিনগুলো প্রস্তুতির ঝামেলায় দ্রুত কেটে গেল। তারপর সেই ক্ষণ। প্রথমে এমআইটির সবচেয়ে ব্যস্ততম জায়গা ইনফিনিটি করিডর। এই লম্বা করিডরটি ক্যাম্পাসের প্রায় ৮০ শতাংশ ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত।
স্বভাবতই সব সময়ই জমজমাট। এ রকম প্রকাশ্য জায়গায় একটা ক্যামেরা বসিয়ে ৯০ ইঞ্চি বড় একটি পর্দায় ক্যামেরার ধারণকৃত দৃশ্যে মানুষের আবেগকে সবার সামনে শনাক্ত করলে অনেকেই আপত্তি জানাতে পারে—এই সংশয় তো ছিলই। তাই মুড মিটারটি সক্রিয় করার পর মুড মিটারের পাশে অলক্ষে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম মানুষের প্রতিক্রিয়া।
এমআইটিতে পড়াশোনার চাপ এত বেশি থাকে, তাই হয়তো হেঁটে যেতে থাকা সবার মুখে থাকে নির্লিপ্ততা ও ব্যস্ততা, যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। আমরা খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, সবচেয়ে গোমড়ামুখো মানুষটাও মুড মিটারের সামনে একটু দাঁড়াচ্ছে।
নিজেকে বড় পর্দায় দেখে এবং নিজের মুখের ওপর একটা হলুদ বৃত্ত দেখে বোঝার চেষ্টা করছে, কী হচ্ছে এখানে। যখনই বুঝতে পারছে যে হাসলে হলুদ বৃত্তটি সবুজ রঙে পরিবর্তিত হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে তারা মুখে একটু আনন্দের ভাব আনার চেষ্টা করছে। অনেক কথার ভিড়ে একটি কথা বারবার কানে আসছিল, ‘দিস ইজ সো কুল!’
প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ল্যাবে ফিরে ই-মেইল চেক করেই দেখি, নিউইয়র্ক টাইমস থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটা সংবাদমাধ্যম থেকে ইতিমধ্যে ই-মেইল এসেছে। তারা সবাই মুড মিটার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। খুব অবাক হলাম।
গুগলে অনুসন্ধান করে দেখলাম, টুইটারে এমআইটি মুড মিটার নিয়ে ইতিমধ্যে ১০০ জনেরও বেশি টুইট করেছেন। সবাই আমাদের এই প্রযুক্তি নিয়ে উৎসাহী এবং আশান্বিত। একজন টুইটারে হাস্যোচ্ছলে উপদেশও দিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে এত অমিল ও বিবাদ, মুড মিটারটি সেখানেই বসানো হোক। পার্লামেন্টের খবরের পাশাপাশি আমরা জানতে পারব, আজকে সিনেটারদের মনোভাব কেমন। ’
মানুষের মুখাবয়ব পর্যালোচনা করে মানুষের অভিব্যক্তি নির্ণয় করা নিয়ে অনেক বছর ধরে গবেষণা হচ্ছে।
বিশ্বের অনেক বিজ্ঞানী এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তবে অতীতে গবেষণা হয়েছে সীমিত আকারে ল্যাবের চারকোনা দেয়ালের মধ্যে। এভাবে এ ধরনের প্রযুক্তি একটি কলেজ ক্যাম্পাসের আপামর জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করার কথা আগে কেউ চিন্তা করেনি। তাই সবার মধ্যে এত আগ্রহ ও জিজ্ঞাসা। কারণ সবাই আন্দাজ করতে পারছে, এ ধরনের প্রযুক্তির দিকেই ধীরে ধীরে সভ্যতা এগিয়ে যাবে।
মানুষের গোপনীয়তার পাশাপাশি সবার অনেক কৌতূহলী প্রশ্ন, ‘আচ্ছা, তোমার এই সফটওয়্যারটি এত নিখুঁতভাবে—মানুষ হাসছে নাকি হাসছে না—বলে দেয় কী করে?’
আমাদের তখন অনেক ভারী ভারী কথা বলতে হয়, যদিও মূল কথাটি সোজা, উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা। যেমন—মানুষের মুখটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বলের মতো গোলাকার। তার পরও, একটা অস্পষ্ট ছবিতে একজন মানুষের মুখ আর ফুটবল পাশাপাশি রাখলে আমরা খুব সহজেই বলে দিতে পারি, কোনটা ফুটবল আর কোনটা মানুষের মুখ। মানুষের পক্ষে এই কাজটা খুব সহজেই করে ফেলা সম্ভব। কারণ আমরা ছোটবেলা থেকে মানুষের মুখ দেখে অভ্যস্ত।
আমরা জানি যে মানুষের মুখে দুটি চোখ আছে, চোখের নিচে আছে একটি নাক এবং নাকের নিচে আছে একটা মুখ। এই সামান্য জ্ঞান ও পূর্বাভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মানুষ খুব সহজেই অন্য মানুষের মুখমণ্ডল মনে রাখার পাশাপাশি খুব সহজেই চিহ্নিত করতে পারে। ঠিক তেমনিভাবে মেশিনকে অনেকগুলো মানুষের মুখের ছবি উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হলে, আধুনিক গাণিতিক পরিভাষা ব্যবহার করে মেশিনের পক্ষেও মানুষের চেহারা শনাক্ত করা সম্ভব। তবে কাজটি সোজা নয়। কারণ, একজন মানুষ অনেকভাবে হাসতে পারে—শুধু চোখের মাধ্যমে কিংবা ঠোঁটের মাধ্যমে কিংবা দুটির সমন্বয়ে।
তার ওপর একজন মানুষের হাসির সঙ্গে অন্যের হাসির অনেক পার্থক্য থাকতে পারে। মেশিনের পক্ষে কি এর সবকিছু শেখা সম্ভব? উত্তর হচ্ছে, যদি মেশিনকে এই সব ধরনের নমুনার উদাহরণ দেওয়া যায়, তাহলে সম্ভব। আমাদের এই কাজে হাজার হাজার মানুষের হাসির ছবি নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু ছবি ব্যবহার করেই কাজ শেষ নয়, ছবি থেকে মানুষের চেহারার কিছু জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্যও আমাদের নির্ণয় করতে হয়েছে। ভ্রুটা কতখানি কোঁচকানো, ঠোঁট দুটি কতটুকু প্রসারিত, চোখের নিচে কতটুকু ভাঁজ পড়েছে ইত্যাদি।
এ ধরনের বৈশিষ্ট্য এবং আগে দেখা নমুনা ব্যবহার করে কম্পিউটার মানুষের আবেগ সম্পর্কে ধারণা করার চেষ্টা করছে। লক্ষণীয়, এখন পর্যন্ত একটা মেশিনের পক্ষে মানুষের শুধু মুখাবয়ব বিশ্লেষণ করা সম্ভব, মনের কথা নয়। অনেকেই আমাদের বলেছেন, মন খারাপ থাকা সত্ত্বেও মুড মিটারের সামনে দিয়ে হাঁটার সময় অনেকেই হেসে দেখেছে তাদের মুখের ওপর আঁকা বৃত্তটির রং কত দ্রুত পরিবর্তন হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মেজাজ খানিকটা হলেও ভালো হয়েছে। এক অর্থে অনেকেই মুড মিটারকে আনন্দের প্রণোদক হিসেবে দেখেছে।
মুড মিটার প্রকল্পটি আমাদের ক্যাম্পাসের পাশাপাশি সংবাদপত্রে অনেক জনপ্রিয় একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কারণ, প্রযুক্তির একটি অংশকে আমরা সৃজনশীলতার মোড়কে সবার সামনে পরিবেশন করতে পেরেছি। শুধু তাই নয়, প্রথম থেকেই এ ধরনের অনধিকারপ্রবেশমূলক প্রকল্পে মানুষের গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে আমরা স্বচ্ছ ছিলাম বলেই খুব সহজে সবার বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
আমাদের প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ফেস্টিভ্যাল অব আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ফাস্ট) এবং কাউন্সিল ফর দি আর্টস অ্যাট এমআইটি।
সবাই বলে, অভাব-অনটন, জরা-দুঃখ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভুগলেও বাংলাদেশের মানুষ খুব সুখী।
এটা কি আমরা মুড মিটারের মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে পারি না?
[মুড মিটারের ছবি দেখা যাবে যেখানে: http://moodmeter.media.mit.edu
কৃতজ্ঞতা: সহযোগী হাভির হার্নান্দেজ। ] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।