আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগ থেকে বাস্তবেঃ টেস্টিং সল্ট মিটস নৈঋত

আমি নীল, আমি কালো, আমি মন্দ হয়েও ভালো "টেস্টিং সল্টের বন্ধু হবার যোগ্যতা আপনার মাথার স্ক্রুর ঢিলাত্বর সমানুপাতিক। ” শুরুটা হয়েছিলো বিশিষ্ট ভদ্রমহিলা এবং ভালো ছাত্রী মায়াবতী নীলকন্ঠীর ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে। আমাদের এই হাতুড়ে ডাক্তারটি অজায়গা কুজায়গায় তার ডাক্তারী বিদ্যা ফলায়, আমাদের বাচ্চা কাচ্চাদের সর্দি কাশি গলা চুলকানী যাই হোক না কেন, মায়াবতী ডাক্তারনীর মুইল্যবান উপদেশ আর ওষুধের লিস্টি রেডি (কেউ বলবেন না যেনো, আমরাও কিন্তু তার এই আদরের অত্যাচার বেশ ভালোবাসি)। একদিন ফেইসবুক স্ট্যাটাসে মায়াবতী ডাক্তারী বিদ্যা ফলাচ্ছিলো, সেখানে কমেন্টে নৈঋত নামের মেয়েটির সাথে আমার ধুন্ধুমার মারপিট লেগে গেলো । আমি দেখি এই জিনিশ তো আমার মতোই একটা জিনিশ আমি বন্ধু তালিকায় নতুন কাউকে নিই অনেক বেছে, কিন্তু এই মেয়েটি আমারই মতন দিলখোলা আর পাগলা ছিলো, তাই তাকে বন্ধু বানিয়ে নিলাম।

টুকটাক কথা চলতে লাগলো। কথা বলতে বলতে বুঝলাম “ইয়ে দুনিয়া গোল হ্যায় মেরে ভাই...”। কারণ আমার খুবই ভালো একটা ফ্রেন্ডের স্কুল ফ্রেন্ড সে, একসময় নৈঋত আর আমি পড়েছিও পাশাপাশি কলেজে। এমনকি তার সেকেন্ড হোম হচ্ছে আমার বাড়ির দরজাতেই। এরই মধ্যে আমার ব্লগেও নৈঋত নামের একটা আইডি থেকে কমেন্ট আসা শুরু হলো, দেখি এই তো সেই... আহ এ ব্লগেও আছে তাইলে।

বেশ বেশ... । আন্তরিকতা যখন দুই পক্ষে সমান থাকে, তখন বন্ধুত্বের কেমিস্ট্রি হয়ে যায় অসামান্য, আমাদেরও তাই হচ্ছিলো। আর তাছাড়া সে আর্কিটেক্ট, বন্ধুত্বের বাড়ানো হাত না ধরলে যদি আমার সাত তলা বাসভবন ধসাইয়া দেয়, এই ভয়ে...। প্ল্যান ছিলো মায়াবতী নীলকণ্ঠী ঢাকায় পদার্পণ করিবামাত্র আমরা তিনজন একসাথে হবো। কিন্তু কাজ করতে করতে বোরড আমি নৈঋতের ফোন পেয়ে আর না করলাম না, আসলে না করার কথা মাথায় আসেইনি, ওর আন্তরিকতাটুকু আমার চমৎকার লাগছিলো।

বেইলি রোড বিএফসির সামনে নৈঋতের দাঁড়াবার কথা ছিলো, আমি বিরাট ভাবের সাথে সেখানে উপস্থিত হলাম, কিন্তু দাঁড়িয়ে থেকেও কাউকে পাচ্ছি না। পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়াল করলাম, দেখি একটা ছিমছাম ভদ্র গোছের নিরীহ আলু আলু মেয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে হ্যালো বলছে। আমি বললাম – ফোনটা রাখ। মেয়েটা ফোন রাখলো... সোজা তাকালো... এর পর টারজান স্টাইলে ইয়াআআআ বলে আমার বুকে ঝাঁপ দিয়ে পড়লো। আহা কি পেম তার সাথে দুনিয়ার জিনিশ পত্র, সম্ভবত সে আমার বাসভবন ধসায়ে দেবার ফুল প্ল্যান প্রোগ্রাম করে ইক্যুইপড হয়ে এসেছিলো।

আমি বিশিষ্ট হন্টক, নৈঋতও দেখি আমার মতোই হন্টক। আর কি, আমি বললাম - চল দোস্ত হাঁটি এ রাস্তা সে রাস্তা করে যখন কোথাও বসার জায়গা পাচ্ছিলাম না, বললাম “পথের নৈঋতই নৈঋত রে মনা, পথের টেস্টিংই টেস্টিং... পথের মাঝেই ইফতারী করে ভাংমু আজকের ফাস্টিং...” দুই বন্ধু পানি টানি কিনে রাস্তায়ই বসে পড়লাম ইফতারীর জন্য। নৈঋতের ভাব খানা হচ্ছে ~ “আমি পাইছি!!! ~ কি পাইছেন?? ~ পীর ইয়ামেনী মার্কেট, থুক্কু, টেস্টিং সল্টরে পাইছি!!” । ওর গল্পও থামে না, আমার শোনার আগ্রহও শেষ হয় না। আমরা পথের পাশে বসেই রইলাম, সামনে দিয়ে সাঁই সাঁই করে যেতে থাকা গাড়ি গুলো একসময় অন্ধকারে হেড লাইট জ্বালিয়ে দিলো, সেই আলো প্রতিফলিত হচ্ছিলো আমার চশমায় আর নৈঋতের চোখে, তবু দুই বন্ধুর গল্প ফুরোতে চায় না।

কিন্তু ঘড়ির কাঁটা বোধহয় সহ্য করতে পারছিলো না আর, তাই কখন সাড়ে ন’টা বেজে গেছে টের পাই নি। নৈঋত নামাঃ অসম্ভব মিশুক, আন্তরিক, আবেগপ্রবণ একটা মানুষ। যেকোনো বিষয়ে সে অসম্ভব উৎসাহী। তার সারল্য মুগ্ধ করার মতো। নৈঋত নামের সাথে তার আচরণের কোনই মিল নেই, আস্ত পাগলী একটা।

দেখামাত্রই এতোটাই আপন করে নিয়েছে যে, আমার পক্ষ থেকেও একই পরিমাণ আপন করে নিতে একটুও কষ্ট হয় নি। নৈঋতের নির্জনতায় তাই এখন থেকে থাকবে টেস্টিং সল্টের রেসিপি পালটে দেয়া স্বাদ। ব্লগ থেকে আমরা দুজন এখন বাস্তবে। আমাদের প্রথম দেখা নিয়ে নৈঋতের ব্লগ পোস্টঃ টেস্টিং সল্টঃ প্রথম ব্লগার, যার সাথে দেখা হলো সেদিন  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.