একটি অনিয়মিত লিটল ম্যাগাজিন সবুজ আহম্মেদ, মিঠাপুকুর (রংপুর)। । “হামরা বাঁশ-বেত শিল্পী, হামার কথা ক্যায়ো ভাবেনা। নদীত বাড়ী-ঘর ভাঙ্গী গেইছে। খায়া না খায়া থাকি, তার পরেও বাপ-দাদার পেশা ধরি থুঁইচি।
আগের মত আর হামার কামের দাম নাই। তার পরেও পেশাটা ধরি থোয়া নাগছে। কি কোরমো, কামতো করা নাগে। যা কামাই হয় সেটা নিয়াই থাকি। ক্যায়ো হামার দিকি নজর দেয় না।
” দুঃখের সাথে কথাগুলো বললেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের পাটনি পাড়া গ্রামের ঝিলি বালা তরনি দাশ। উপজেলার প্রায় দশ হাজার বাঁশ-বেত শিল্পীর একই দশা। তারা অনেক কষ্টে ধরে রেখেছে বাপ-দাদার পেশা। পুর্বের ন্যায় কাজের কদরও পাচ্ছেনা তারা । এর ফলে, অনেকে ওই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।
জানা যায়, হিন্দু ধর্মালম্বী ওই গোষ্ঠিটি আদিকাল থেকে বাঁশ-বেতের নানা আসবাবপত্র তৈরি করে আসছিল। দেশে বাজারজাত করার পাশাপাশি তারা ওই আসবাবপত্র বিদেশেও রপ্তানি করতো। বর্তমানে দেশে ওই শিল্পের কদর কমে যাওয়ায় পুঁজির অভাবে আর বিদেশে রপ্তানি করতে পারছেনা। মিঠাপুকুরে দুর্গাপুর, কাঠালী, সদুরপাড়া, বলদীপুকুর, জীবনপুর, হযরতপুর, মিঠাপুকুর, পাটনীপাড়া, বিনদপুর, ধাপ শ্যামপুর, বালুয়াসহ প্রায় ২০টিরও বেশি গ্রামে প্রায় ১০ হাজার বাঁশ-বেত শিল্পী রয়েছে।
সরেজমিনে পাঁটনি পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বাঁশ-বেত শিল্পীদের করুণ চিত্র।
অনেকে দিন-রাত পরিশ্রম করেও পরিবারের খাবারের জন্য সামান্য অন্ন টুকু জোগাড় করতে পারেনা। তার পরেও, অনেক কষ্টে তারা ধরে রেখেছে তাদের পূর্ব পুরুষের পেশা। ওই গ্রামের বাচ্চা তরনি দাশ বলেন, আমাদের এক সময় আসবাবপত্রের খুবই কদর ছিলো। বর্তমানে আমাদের কাজের তেমন কদর লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উৎপাদন মুল্যের চাইতেও বাজার মূল্য অনেক কম।
দিন-রাত পরিশ্রম করেও পরিবার চালানো কষ্টকর ব্যাপার। ওই গ্রামের প্রমিলা তরনি দাশ বলেন, বাঁশ-বেতের কাজ করে আগের মত আয় করা সম্ভব হয় না। পরিবারের সকলে মিলে কাজ করলেও খাবার জোটানো কঠিন হয়ে পরে। বালুয়া মাসিমপুরের স্থানীয় বাসিন্দা ডাঃ এরশাদুল হক বুলবুল বলেন, বাঁশ-বেত শিল্পীরা বর্তমানে খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তাদের সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা দরকার।
বালুয়া মাসিমপুর ইউপি নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, বাঁশ বেত শিল্পীরা বর্তমানে খুবই কষ্টে দিন যাপন করছে। তার পরেও ধরে রেখেছে তাদের পূর্ব পুরুষের পেশা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।