রমযানের সময়টা অন্য সব সময় থেকে আলাদা। এর পুরো মাস জুড়েই রয়েছে সংযমের শিক্ষা এবং তা হল শুধুমাত্র স্রষ্টার নৈকট্য লাভের জন্য। তবে একটা দীর্ঘ সময় সংযমে থাকতে হবে সেটা ভেবে সেহেরি ও ইফতারের সময় বেশ জম্পেশ খাবারের আয়োজন রাখা হয়। সারাদিনে যা খাওয়া হয়নি একবারেই তা খাওয়ার চেষ্টায় রত হয়ে যান অনেকেই। কেউ কেউ আবার রকমারি খাবার তৈরি ও খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত হয়ে পরেন।
তাই অন্য সময়ের চাইতে এ সময়ে খাবার খরচও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। রমজানে খাবারের অভ্যাসটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই জেনে নিন রমযানে আপনার সেহেরি ও ইফতারি কেমন হওয়া উচিত।
সেহেরিতে যা খাবেনঃ
বেশ অনেকক্ষণ খাওয়া হবে না তাই সেহেরিতে বেশি বেশি করে খেয়ে স্টক করে রাখতে হবে এমনটা ভাবতে যাবেন না। আপনার ক্ষুধা নিবারনের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুনই খাবেন।
মাত্রাতিরিক্ত খেলে রোযার পুরো সময়টাতেই আপনি হয়ত স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবেন না।
তাই সেহেরির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন সেগুলো হলঃ
• চেষ্টা করুন সেহেরিতে প্রোটিন জাতীয় খাবার না খেতে। কারণ, এসব খাবার পরিপাকে বেশি পানির দরকার হয়। তাই সেহেরীতে যদি আপনি মাছ মাংস অর্থাৎ প্রোটিন বেশি পরিমাণে খান তবে সারাদিন আপনার পানির পিপাসা বেশি লাগবে।
• রোযার দিনে সবজি ভাত দিয়ে সেহেরী করুন।
সাথে ছোট মাছও রাখা যায়। এতে সারাদিনে আপনার অতটা পানির পিপাসা লাগবে না। শরীরের কেমিকেল ব্যালেন্সটাও ঠিক থাকবে। সারাদিন আপনি থাকবেন সতেজ।
• সেহেরিতে ভাত অথবা রুটি খেতে পারেন।
• খাবারে তেলের পরিমাণ যেন কম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
• খাবারের স্বাদের চাইতে এর খাদ্যগুণকে বেশি গুরুত্ব দিন।
ইফতারিতে যা খাবেনঃ
সারাদিন রোযা রাখার পর যখন ইফতারের সময় হয় তখন স্বভাবতই গপাগপ করে সমস্ত খাবার পেটের সিন্দুকে চালিয়ে দিয়ে ইচ্ছা হয়। তাই এই সময়টাতে সচেতন থাকুন। কারণ, রমযানের সংযম শুধুমাত্র রোযা ভাঙ্গার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত নয়, বরং পুরো রমযান মাস জুড়েই।
রমযানের খাবার নিয়ে বহু বিজ্ঞাপনই প্রচার হয়। তবে রোজার সময় যত হালকা ইফতার করা যায় তত ভালো।
আমাদের রাসূলুল্লাহ (সা) তিনটি খেজুর এবং পানি দিয়ে রোযা ভাঙতেন, এবং মাগরিবের নামাযের পর মাঝারি খাবার খেতেন।
ইফতারিতে যে বিষয়গুলোর অনুসরণ করতে পারেন, সেগুলো হলঃ
• রোযা ভাঙ্গুন খেজুর ও পানি দিয়ে। কোনোরকম শরবতের চাইতে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভাল।
পুষ্টি বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন, খেজুরে স্লেক্রাজের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। খেজুর যখন পানির সাথে সরাসরি যায় তখন তা ইন্সট্যান্ট সুক্র্লোজ হয়ে যায়। সুক্র্লোজ হচ্ছে গ্লুকোজ এর চেয়েও বেশি এনার্জেটিক। খেজুর খেয়ে পানি খেলে সেটা সুক্লোজ হয়ে যায়। তাই খেজুর পানি আদর্শ শরবত।
আলাদা করে খেজুরের সাথে সরবত খাওয়াটা অপ্রয়োজনীয়।
• খেজুর পানি খাবার পরেই নামায আদায় করে ফেলুন। এ সময়টাতে আপনার পাকস্থলী পরবর্তী খাবারের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে।
• মাগরেবের নামাযের পরই রাতের খাবার খেয়ে নিতে চেষ্টা করুন। এ সময়টা রাতের খাবার গ্রহনের জন্য খুব ভালো।
• রাতের খাবারের পর কিছুক্ষণ বজ্রাসনে বসে পড়ুন। দেখবেন আপনি বেশ এনার্জেটিক ও তরতাজা অনুভব করছেন।
• একবারেই খুব বেশি পরিমানে পানি পান না করে কিছুক্ষন পর পর বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
• ভাজাপোরা খাবার যতটা সম্ভব বর্জন করুন। অনেকে মনে করেন ইফতারে ভাজা পোড়া না থাকলে ইফতার ই হবে না | সারাদিন রোজা রাখার পর পাকস্হলি খুব ক্ষুধার্ত ও দুর্বল থাকে | তখন যদি এ ধরণের গুরুপাক খাবার একসাথে খাওয়া হয় তাহলে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
যেমন- পেটের সমস্যা,মাথা ব্যাথা , কোষ্ঠকাঠিন্য , দুর্বলতা, অবসাদ , হজমের সমস্যা ইত্যাদি । ওজনও বেড়ে যেতে পারে।
• ঋতু অনুযায়ী বাজারে যে ফল ও সবজি পাওয়া যাচ্ছে তা খান এবং খাদ্য তালিকা সুষম হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
• রাতে ঘুমানোর আগে হালকা কিছু খেয়ে নিতে পারেন।
• কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিঙ্কস পান করা এবং ধূমপান করা থেকে সচেতনভাবে নিজেকে বিরত রাখুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।