সাংবাদিকতাটা নেশার মতো আমাকে গ্রাস করেছিল একটা সময়। সেই নেশার ঘোরে জীবনের অনেক মূল্যবান সময় হারিয়েছি, যা পেয়েছি সেটি নিদারুন বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর শেষ বঞ্চনার অভিজ্ঞতাটা মোটেও কাম্য ছিলনা আমার যেটি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সামপ্রতিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় করা হলো আমার সঙ্গে, আমি এটাকে বঞ্চনা না বলে প্রতারণা বলতে চাই। একটি জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসাবে ২০০২ সালে আমার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। আশা ছিল পাশ করার পর ওই দৈনিকেই কাজ করবো, সুযোগ না পেয়ে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে অন্য একটি দৈনিকে সহ-সম্পাদক পদে যোগদান করি।
কিন্তু সেখানেও আমাকে দেয়া ওয়াদা শেষ পর্যন্ত রাখেননি কর্তৃপক্ষ। ২০০৬ সালের মার্চ মাসে নতুন একটি দৈনিকে একই পদে যোগ দেই। সেখানে প্রায় ১৬ মাস কাজ করার পরও কোন ইনক্রিমেন্ট বা পদন্নোতির খবর নাই উপরুন্ত মাসের শেষে বেতনটাও বিলম্বে দিতে শুরু করলো। এত বঞ্চনার পরও ভিন্নতা আনতে চাইলাম পেশায় ২০০৮ সালের জুলাই মাসে সেই পত্রিকা ছেড়ে যোগ দিলাম জনসংযোগ ফার্মে এই আশায় যে, সাংবাদিকতার সঙ্গে না হোক অন্ততঃ সাংবাদিকদের সাথে থাকতে পারবো। কিন্তু ২০১০ সালের শেষের দিকে পত্রিকায় দেশের একমাত্র সরকারী বার্তা সংস্থা বাসস এ সহ-সম্পাদক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে নিরাপদ সাংবাদিকতার স্থান ভেবে আবেদন করলাম।
যথারীতি লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহনের ডাক পেলাম। পিআইবিতে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আমন্ত্রন পেলাম। মনে মনে খুশি হলাম এই ভেবে যে, এই সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের দু’জন সদস্যের (সম্পাদক) আওতায় আমি পূর্বে কাজ করেছিলাম। তাছাড়া একই সংস্থায় আমার পুরনো কয়েকজন সহকর্মী সিনিয়র সাংবাদিকও আছেন। মৌখিক পরীক্ষার একদিন আগে ফোনে জানিয়ে দেয়া হলো অনিবার্য কারণ বশতঃ ওই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
আমার উৎসাহে ভাটা পড়লো যখন পুরনো সহকর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেনি এমন কিছু প্রার্থীকে অন্তভূক্ত করার জন্য ইউনিয়ন এবং রাজনৈতিক চাপ আছে তাই তাদের জন্য আবার বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। এই সিন্ধান্তের পর আমাদের পূনরায় মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। নির্ধারিত দিনে মৌখিক পরীক্ষায় হাজির হয়ে জানতে পারলাম আমার পদে মেধায় ১ম ও ২য় স্থানে থাকা দুই প্রতিযোগী অনুপস্থিত। মেধাস্থানে ৩য় হওয়ায় উপস্থিত প্রার্থীদের মধ্যে প্রথম ডাকা হলো আমাকে। সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিলাম।
উপস্থিত প্রার্থীদের মধ্যে প্রথম, মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করা, শিক্ষা জীবনে চারটি প্রথম শ্রেনী/বিভাগ এবং প্রায় ৫ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম এবার বোধহয় আমাকে আর বঞ্চিত করা হবেনা। কিন্তু বাসসের পরিচিত সাংবাদিকরা বললেন এখানে তদ্বির ছাড়া চাকুরী হয়না তা সত্ত্বেও আশা ছাড়লাম না। সব দিকে এগিয়ে থাকার পরও আমার পরিচিত পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য (সম্পাদক) এর সাথে দেখা করে অনুরোধ করলাম যেন তদ্বির এর চাপে আমার প্রতি অবিচার করা না হয়। তিনি আমার কথা বিবেচনা করবেন বলে আশা দিলেন। ইতিমধ্যে তদ্বির করা প্রার্থীদের জন্য ইউনিয়ন এবং রাজনৈতিক চাপে আগের ফলাফল প্রকাশ না করে একই পদের বিপরীতে আবার বিজ্ঞাপন দিয়ে অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে দুই বিজ্ঞপ্তির প্রার্থীদের মধ্য থেকে সংস্থার কর্তাব্যক্তির পছন্দসই ইউনিয়ন এবং রাজনৈতিক তদ্বির আছে এমন প্রার্থীদের নামে নিয়োগপত্র ইস্যু করা হলো যে তালিকায় আমার স্থান হলো না।
আবারো বঞ্চনার আগুনে পুড়লো আমার সাংবাদিক হওয়ার প্রত্যাশা। বাসসের পরিচালনা পর্ষদের সেইসব সদস্য (সম্পাদকগণ) যারা নিজেদের অসংকোচ প্রকাশের সাহসী (!) সৈনিক দাবী করেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন এই আপনাদের সাহস আর সততার নমুনা? আমি কি জানতে পারি কি আমার অপরাধ, কোথায় আমার অযোগ্যতা? জানি আমার Sopno পদদলিত করা বাসস কর্তৃপক্ষ এবং ওইসব প্রতিথযশা নির্ভীক (!) সাংবাদিকদের কাছে এই প্রশ্ন করা গুড়ে বালি। সুশীল সমাজের কাছে আমার প্রশ্ন জাতির বিবেক সাংবাদিকরাও যদি এমন রাজনৈতিক লেজুড়ভিত্তি আর দালালি করেন তাহলে আমরা সাধারণ প্রার্র্থীরা কার কাছে ন্যায়, নিষ্ঠা আর সততা আশা করবো।
এম. আব্দুল মোমিন
ফোনঃ ০১৭১৬-৫৪০৩৮০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।