এ প্রবন্ধে সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কিত মাসআলার জটিল দিকসমূহ সহজ ভাষায় দলিলসহ আলোচনা করা হয়েছে।
প্রবন্ধের শেষে আছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীলদের প্রতি একটি জরুরি পরামর্শ। সুখের বিষয় এই যে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন গত ২১ জুন ২০১১ ঈ., মঙ্গলবার উলামা-মাশায়েখের সাথে এ বিষয়ে দ্বিতীয়বার মতবিনিময় করেছে এবং এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এটি একটি পুরানো বিষয়। এতে নতুন ইজতিহাদের প্রয়োজন নেই। তাই পূর্বের ন্যায় হাদীস ও ফিকহে বিদ্যমান সাদকাতুল ফিতরের দুটি পরিমাপের কথাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হবে।
অর্থাৎ খেজুর, কিসমিস, পনির এবং যবের ক্ষেত্রে কোনো একটির এক সা অথবা তার মূল্য এবং গমের ক্ষেত্রে আধা সা বা তার মূল্য। দুটির যে কোনো একটিকে পরিমাপ ধরে আদায় করলে ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য যিনি সামর্থ্য অনুযায়ী যত বেশি আদায় করবেন তিনি তত বেশি ছওয়াবের অধিকারী হবেন।
এই সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য আমরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশলীদের মুবারকবাদ জানাই। আশা করি, প্রবন্ধটি পাঠকদের এ বিষয়ে ইলমী (তথ্য ও জ্ঞানগত) প্রশান্তি দান করবে।
والتوفيق بيد الله تعالى
প্রবন্ধটিতে বারবার হাদীস ও ফিকহে বর্ণিত কিছু পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রচলিত পরিমাপ অনুযায়ী সে পরিমাণগুলোর হিসাব বুঝে নেওয়া দরকার। এতে প্রবন্ধটির পাঠোদ্ধার সহজ হবে।
সাদাকাতুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা রমযানুল মুবারকের শেষে ঈদুল ফিতরের দিন আদায় করতে হয়। এটি যাকাতেরই একটি প্রকার, যার দিকে সূরাতুল আ’লায় (৪-১৫) ইশারা করা হয়েছে-
قد افلح من تزكى وذكر اسم ربه فصلى
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস ও সুন্নাহয় তা আদায়ের তাকীদ করেছেন এবং এর নিয়ম-নীতি শিক্ষা দিয়েছেন।
এ কারণেই নবী যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ ইসলামের পাঁচ রোকন ও দ্বীনের অন্যান্য মৌলিক আমল ও ইবাদতের মতো ছদাকাতুল ফিতরও নিয়মিত আদায় করে আসছে। আমাদের এ অঞ্চলে তা পরিচিত ‘ফিতরা’ নামে।
একটি যয়ীফ হাদীসে এই ইবাদতের দুটি হিকমত ও তাৎপর্য স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোযার যে ক্ষতি তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য।
(সুনানে আবু দাউদ ১/২২৭)
তাই সকলের কর্তব্য, খুশিমনে এই ইবাদতটি আদায় করা, যাতে আল্লাহর গরীব বান্দাদের খেদমত হয় এবং নিজের রোযার ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ হয়। সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি ইবাদত আদায়ের সৌভাগ্য অর্জিত হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সুন্নাহর আলোকে এই ইবাদতের বিস্তারিত আহকাম ও বিধান ফিকহের কিতাবে সংকলিত হয়েছে। সাদাকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব হয়, কাদের পক্ষ থেকে আদায় করতে হয়-এইসব বিবরণ হাদীস ও ফিকহের কিতাবে বিস্তারিতভাবে আছে।
এই সাদাকার পরিমাণ সম্পর্কে হাদীস ও সুন্নাহয় দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে : তা হচ্ছে, صاع (‘সা’) ও نصف صاع (নিসফে সা’)।
যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা আদায় করলে এক ‘সা’ এবং গম দ্বারা আদায় করলে ‘নিসফে সা’ প্রযোজ্য হবে।
শরীয়তের দলীলে একথাও প্রমাণিত যে, উপরোক্ত খাদ্যবস্ত্তর পরিবর্তে সেগুলোর মূল্য আদায় করারও অবকাশ আছে। সেক্ষেত্রে উল্লেখিত খাদ্যবস্ত্তগুলোর মধ্য থেকে কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে। অর্থাৎ ঐ খাদ্যবস্ত্তর জন্য শরীয়তে যে পরিমাণটি নির্ধারিত-‘সা’ বা ‘নিসফে সা’ সে পরিমাণের বাজারমূল্য আদায় করলেও সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখা উচিত যে, মূল্যের দিক থেকে ঐ খাদ্যবস্ত্তগুলোর মধ্যে তফাৎ আছে, কোনোটির দাম বেশি, কোনোটির কম।
তো সবচেয়ে কমদামের বস্ত্তকে মাপকাঠি ধরে কেউ যদি সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে তাহলেও আদায় হায়ে যাবে। তবে উত্তম হল, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের খাদ্যবস্ত্তকে মাপকাঠি ধরে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা।
যেহেতু সহীহ হাদীসে গমকেও একটি মাপকাঠি সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আধা সা’ তাই আধা সা গম বা তার মূল্য আদায় করলে নিঃসন্দেহে সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে।
বর্তমান বাজার দর হিসাবে যেহেতু গমের দামই সবচেয়ে কম, তাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতি বছর আধা সা গমকে মাপকাঠি ধরে ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ ঘোষণা করা হয়। টাকায় অংকটি নির্ধারিত হয় আধা সা গমের ঐ সময়ের বাজার-দর হিসাবে।
গত বছর অর্থাৎ ১৪৩১ হিজরী রমযানে হঠাৎ করেই একটি নতুন ঘোষণা এল। ফাউন্ডেশনের এতদিনের নিয়ম ও তাদের প্রকাশিত ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখিত মাসআলার বিপরীত দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রচার করা হল যে, এবারের ফিতরা একশ টাকা। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেল যে, ফিতরা কমিটি চালকে মাপকাঠি ধরেছে এবং খেজুর ইত্যাদির জন্য নির্ধারিত পরিমাণ-‘সা’ কে এর উপর প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এক ‘সা’ চাল ফিতরা হিসেবে আদায় করতে হবে। আর মধ্যম মানের এক ‘সা’ চালের বাজার-দর যেহেতু একশ টাকা তাই ফিতরা একশ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছর এবং এ বছরও যেহেতু আধা সা গমের বাজার-মূল্য থেকে চালের বাজার-মূল্য বেশি তাই কেউ ঐ হিসাবে ফিতরা আদায় করে থাকলে অবশ্যই তার ফিতরা আদায় হয়েছে; বরং যাদের সামর্থ্য আছে তারা যদি খেজুর, পনির ও কিসমিসের হিসাবে ফিতরা আদায় করেন তাহলে তো খুবই ভালো।
কিন্তু এর কোনোটিকে সর্বনিম্ন ফিতরা বা একমাত্র ফিতরা সাব্যস্ত করার অবকাশ কোথায়?
ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ তো সেটিই, যা সুন্নাহয় উল্লেখিত খাদ্যবস্ত্তগুলোর মধ্যে পরিমাণ ও বাজার-দরের বিচারে সর্বনিম্ন। টাকার অংকে সর্বনিম্ন ফিতরা ঘোষণা করতে হলে এই মানদন্ডের ভিত্তিতেই করতে হবে। অন্যথায় সুন্নাহ কর্তৃক নির্ধারিত কোনো একটি পরিমাণকে অকার্যকর সাব্যস্ত করা হবে, যার অধিকার কারো নেই।
ফলে ঐ সময়, ফাউন্ডেশনের ঐ ঘোষণার উপর আপত্তি উঠেছিল। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার পক্ষ থেতে এবং ব্যক্তিগত ও সম্মিলিতভাবে আরো অনেকে তখন আপত্তি করেছিলেন।
সুখের কথা, ইসলামিক ফাউন্ডেশ উলামা-মাশায়েখের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে পুনরায় চিন্তা-ভাবনা করেছিল এবং আগের মতোই আধা সা গমের মূল্য হিসাবে ফিতরা ঘোষণা করেছিল। সাথে সাথে এ বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে, ঘোষিত পরিমাণটি ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ। যার সামর্থ্য আছে, তিনি এক সা পরিমাণের খাদ্যবস্ত্তগুলোর কোনো একটিকে মানদন্ড ধরেও ফিতরা আদায় করতে পারবেন এবং এটিই তার জন্য উত্তম।
এই পুনঃঘোষণার ফলে আলহামদুলিল্লাহ ঐ বিভ্রান্তির নিরসন হয়ে যায়। কিন্তু তখন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু নিবন্ধ এবং কারো কারো মৌখিক কিছু প্রশ্ন থেকে অনুমান করেছি যে, এ প্রসঙ্গে তাদের কিছু অমূলক ধারণা রয়েছে, সম্ভবত পুনরায় চিন্তা-ভাবনা করলে তা আর থাকবে না।
তাদের ধারণাগুলো নিম্নরূপ :
1. হাদীস শরীফে ফিতরার নির্ধারিত পরিমাণ একটিই। তা হল এক সা। আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায় হওয়ার বিধান কোনো সহীহ হাদীসে নেই।
2. হাদীস শরীফে; বরং যে কোনো খাদ্যবস্ত্ত থেকে এক সা দেওয়ার কথা আছে, যার মাঝে গমও অন্তর্ভুক্ত।
3. আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায়ের কথা সর্বপ্রথম বলেন হযরত মুআবিয়া রা.।
অথবা সর্বোচ্চ হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এ কথা বলেছেন। আর এটি তাঁরা নিজেদের ইজতিহাদ থেকেই করেছেন। এজন্য একে ফিতরা আদায়ের মাপকাঠি ধরা যায় না। তবে কখনো যদি আধা সা গমের মূল্য এক সা খেজুর ইত্যাদির সমান হয়ে যায় তখন হয়তো এর দ্বারা ফিতরা আদায় হতে পারে!
4. হাদীস শরীফে যে চারটি খাদ্যবস্ত্তর কথা বলা হয়েছে তা এজন্য বলা হয়েছে যে, ঐ সময় এগুলোই ছিল মদীনা শরীফে সাধারণ খাদ্যবস্ত্ত। এজন্য অন্য দেশের মানুষ, যাদের সাধারণ খাবার অন্য কিছু, তারা তাদের খাদ্যবস্ত্ত অনুযায়ী ফিতরা আদায় করতে পারবে; বরং এটিই করণীয়।
মোটামুটিভাবে সদকাতুল ফিতরকে এক সা ধরার ক্ষেত্রে এই চারটি ধারণা বা যুক্তি তারা পোষণ করেন। কিন্তু ঐ সব বন্ধুদের জেনে রাখা উচিত যে, আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায়ের বিধান একাধিক সহীহ হাদীসে রয়েছে। এটি খোলাফায়ে রাশেদীন রা.-এর সুন্নাহ দ্বারাও প্রমাণিত। যদি কোনো সাহাবী ইজতিহাদ দ্বারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে থাকেন তবে তার সিদ্ধান্ত হাদীস ও সুন্নাহয় বর্ণিত বিধানের সাথে মিলে গিয়েছে এবং অন্যান্য সাহাবীও তার সাথে একমত হয়েছেন। এটি কোনো সাহাবীর একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, যাকে ইজতিহাদ; বলে খাটো করার চেষ্টা করা যায়।
অথচ সাহাবীর ব্যক্তিগত ইজতিহাদও (যদি সেটি স্পষ্ট মারফূ হাদীসের পরিপন্থী না হয়) শরীয়তের দলীল।
ঐ সকল বন্ধুদের আরো জানা দরকার যে, কুরআন-হাদীসে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত কোনো শরঈ পরিমাপের কোনো একটি তাৎপর্য নিজে থেকে নির্ধারণ করে সেই তাৎপর্যটিকেই মানদন্ড বানিয়ে নেওয়া এবং কুরআন-হাদীসে বর্ণিত পরিমাপকে অকার্যকর করে দেওয়া প্রকৃতপক্ষে কুরআন-সুন্নাহর তাহরীফ ও বিকৃতি সাধন এবং গোটা উম্মতের ইজমা ও অবিচ্ছিন্ন কর্মধারার বিরুদ্ধাচরণ।
বর্তমান নিবন্ধে বিষয়গুলোর উপর কিছুটা বিশদ ও বিশ্লেষমূলক আলোচনা করার ইচ্ছা আছে।
আধা সা সম্পর্কে হাদীস, সুন্নাহ ও আছার
1. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন সে যেন মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা করে যে-জেনে রেখো! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর সদকায়ে ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্ত্ত।
أن النبي صلى الله عليه وسلم بعث مناديا ينادي في فجاج مكة : ألا إن صدقة الفطر واجب على كل مسلم، ذكر أو أنثى، حر أو عبد، صغير أو كبير، مدان من قمح، أو صاع مما سواه من الطعام.
(জামে তিরমিযী ১/৮৫)। ইমাম তিরমিযী রাহ. বলেন, হাদীসটি হাসান।
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রমযানের শেষ দিকে বসরার মিম্বারের উপর খুতবা দানকালে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন এক সা খেজুর বা যব কিংবা আধা সা গম; গোলাম-স্বাধীন, নারী-পুরুষ ও ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর।
فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه الصدقة صاعا من تمر أو شعير، أو نصف صاع من قمح على كل حر أو مملوك، ذكر أو أنثى، صغير أو كبير.
(সুনানে আবু দাউদ ১/২২৯। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ইবনে আবদুল হাদী আল হাম্বলী রাহ. বলেন, হাদীসটির সকল রাবী প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য।
আল্লামা যাহাবী রাহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ শক্তিশালী। )
৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ছালাবা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের একদিন বা দুদিন আগে সাহাবীদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়েছেন। সে খুতবায় তিনি বলেছেন, তোমরা প্রতি দু’জনের পক্ষ থেকে এক সা গম অথবা ছোট-বড় প্রত্যেকের মাথাপিছু এক সা খেজুর বা এক সা যব প্রদান করো।
أدوا صاعا من بر أو قمح بين اثنين، أو صاعا من تمر، أو صاعا من شعير على كل أحد صغير أو كبير.
(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৮। আল্লামা যাইলাঈ রাহ. বলেন, এই হাদীসটির সদন সহীহ ও শক্তিশালী।
)
৪. হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, যে মুদ (পাত্র) দ্বারা তোমরা খাদ্যবস্ত্ত গ্রহণ করে থাক এমন দুই মুদ (আধা সা) গম আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।
كنا نؤدي زكاة الفطر على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم مدين من قمح، بالمد الذي تقتاتون به.
(মুসনাদে আহমদ ৬/৩৪৬। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, হাদীসটি সহীহ এবং এ সনদটি হাসান। শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহ. বলেছেন, এই হাদীসের সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে উত্তীর্ণ, সহীহ। )
ইমাম তহাবী রাহ. এ হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন-
فهذه أسماء تخبر أنهم كانوا يؤدون في عهد النبي صلى الله عليه وسلم زكاة الفطر مدين من قمح، ومحال أن يكونوا يفعلون هذا إلا بأمر رسول الله صلى الله عليه وسلم، لأن هذا لا يؤخذ حينئذٍ إلا من جهة توقيفه إياهم على ما يجب عليهم من ذلك.
হযরত আসমা রা. জানিয়েছেন যে, নবী-যুগে সাহাবায়ে কেরাম সদকাতুল ফিতর দিতেন আধা সা গম।
এ তো সম্পূর্ণ অসম্ভব যে, রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ ছাড়া তাঁরা এই কাজ করতেন। কারণ দ্বীনের বিষয়ে তাঁদের কর্তব্য কী তা জানার একমাত্র সূত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষা ও নির্দেশনা।
৫. হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করেছেন দুই মুদ (আধা সা) গম।
فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم زكاة الفطر مدين من حنطة.
(মারাসীলে আবু দাউদ পৃ. ১৬। আল্লামা ইবনে আবদুল হাদী আলহাম্বলী রাহ. বলেন, এ হাদীসের সনদ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট, সহীহ।
তবে তা মুরসাল। আর সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-এর মুরসাল রেওয়ায়েতও দলিলযোগ্য হয়। )
৬. ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন, তিনি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান ও উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবাহ রা. প্রমুখকে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর আদায়ের আদেশ করেছেন এক সা খেজুর বা দুই মুদ (আধা সা) গম।
أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم بزكاة الفطر بصاع من تمر، أو بمدين من حنطة.
(শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, হাদীসটি সহীহ।
নুখাবুল আফকার ৫/২২৫)
৭. সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবাহ, কাসেম ও সালেম রাহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন সদকাতুল ফিতরে এক সা যব বা দুই মুদ (আধা সা) গম আদায় করার।
أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم في صدقة الفطر بصاع من شعير أو مدين من قمح.
(শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, হাদীসটি সহীহ। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, এটি সহীহ ও মুরসাল। )
৮. সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এবং আবু বকর সিদ্দীক ও উমর ফারূক রা.-এর শাসনামলে সদকাতুল ফিতর দেওয়া হত আধা সা গম।
كان الصدقة تعطى على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم وأبي بكر وعمر نصف صاع من حنطة.
(শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০। আল্লামা ইবনে আবদুল বার রাহ. বলেছেন, এটি সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ. থেকে ছিকা রাবীগণ বর্ণনা করেছেন। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, হাদীসটির সকল রাবী ছিকা ও নির্ভরযোগ্য। আল্লামা আইনী রা. বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। )
৯. হযরত আবু উবাইদ কাসেম ইবনে সাল্লাম রাহ. বর্ণনা করেন, আবদুল খালেক ইবনে সালামা আশশাইবানী রাহ. বলেন, আমি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.কে সদকাতুল ফিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি।
তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে তা ছিল মাথাপিছু এক সা খেজুর বা আধা সা গম।
حدثنا إسماعيل بن إبراهيم عن عبد الخالق بن سلمة الشيباني قال : سألت سعيد بن المسيب عن الصدقة. فقال : كانت على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم صاع تمر، أو نصف صاع حنطة عن كل رأس.
(কিতাবুল আমওয়াল পৃ. ৫৬৪)
ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শাইবা রাহ.ও বর্ণনা করেছেন যে, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.কে সদকাতুল ফিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ছোট-বড়, গোলাম-স্বাধীন প্রত্যেকের মাথাপিছু আধা সা গম বা এক সা খেজুর বা যব।
هشيم عن سفيان بن حسين، عن الزهري عن سعيد بن هشيم عن سفيان بن حسين، عن الزهري عن سعيد بن المسيب يرفعه أنه سأل عن صدقة الفطر. فقال : عن الصغير والكبير، والحر والمملوك نصف صاع من بر، أو صاع من تمر أو شعير.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১। শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা মুসান্নাফের টীকায় বলেন, এটি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-এর মুরসাল হাদীস, যা মুহাদ্দিসগণের নিকট বিশুদ্ধতম মুরসালের অন্তর্ভুক্ত।
খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ
১০. আবু কিলাবা রাহ. বলেন, স্বয়ং ঐ ব্যক্তি আমাকে বলেছেন, যিনি হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর নিকট এক সা গম দ্বারা দুই ব্যক্তির সদকাতুল ফিতর আদায় করেছেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০০; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৬)
অন্য বর্ণনায় আছে, মামার রাহ. বলেন, আমার কাছে তথ্য পৌঁছেছে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. দুই মুদ (আধা সা দ্বারা) ফিতরা আদায় করেছেন।
بلغني أن أبا بكر أخرج زكاة الفطر مدين.
(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৬)
১১. নাফে রাহ বলেন, তিনি হযরত উমর রা.কে জিজ্ঞাসা করেছেন, আমি একজন ক্রীতদাস। আমার সম্পদের কি কোনো যাকাত আছে? উমর রা. বলেছেন, তোমার যাকাত তো তোমার মনিবের উপর। সে তোমার পক্ষ থেকে প্রতি ঈদুল ফিতরে এক সা যব বা খেজুর কিংবা আধা সা গম প্রদান করবে।
إنما زكاتك على سيدك أن يؤدي عنك عند كل فطر صاعا من شعير أو تمر أو نصف صاع من بر.
(শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০; শরহু মুশকিলুল আছার ৯/৩৮)
হযরত ছালাবা ইবনে আবু সুআইব রা. বলেন, আমরা উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর খেলাফত আমলে সদকাতুল ফিতর দিতাম আধা সা গম।
كنا نخرج زكاة الفطر على عهد عمر بن الخطاب نصف صاع.
(শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০; শরহু মুশকিলুল আছার ৯/৩৯)
১২. আবুল আশআছ রাহ. বলেন, খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান রা. আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। ঐ খুতবায় তিনি বলেছেন, তোমরা যাকাতুল ফিতর আদায় কর দুই মুদ (আধা সা) গম।
أدوا زكاة الفطر مدين من حنطة.
(শরহু মুশকিলিল আছার ৯/৩৯। আল্লামা আইনী রাহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ ও শক্তিশালী।
শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, এ হাদীসের সনদ ইমাম মুসলিমের শর্তে উত্তীর্ণ। )
১৩. হযরত আলী রা. বলেন, সদকাতুল ফিতর (এর পরিমাণ) হল, এক সা খেজুর বা এক সা যব কিংবা আদা সা গম। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৩; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৫; সুনানে দারা কুতনী ২/১৫২; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনাহ ১/৩৩৬)
অন্য সাহাবীদের অভিমত
১৪. আলকামা ও আসওয়াদ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, (সদকাতুল ফিতর হচ্ছে) দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা খেজুর বা যব।
مدان من قمح أو صاع من تمر أو شعير.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০২; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৪; সুনানে দারা কুতনী ২/১৫২)
১৫. হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, প্রত্যেক গোলাম-স্বাধীন, নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, ধনী-গরীবের উপর সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য। মাথাপিছু এক সা খেজুর বা আধা সা গম।
زكاة الفطر على كل حر أو عبد، ذكر أو أنثى، صغير أو كبير، غني و فقير صاع من تمر أو نصف صاع من قمح. قال معمر : وبلغني أن الزهري كان يرفعه إلى النبي صلى الله عليه وسلم.
(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১১। আল্লামা হাইসামী রাহ. এবং আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, হাদীসটি সহীহ এবং মাওকূফ। )
১৬. আমর ইবনে দীনার রাহ. বলেন, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.কে মিম্বারের খুতবায় বলতে শুনেছেন, সদকাতুল ফিতর হল দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা খেজুর বা যব। গোলাম-স্বাধীন এই বিধানে সমান।
زكاة الفطر مدان من قمح، أو صاع من تمر زكاة الفطر مدان من قمح، أو صاع من تمر أو شعير، الحر والعبد سواء.
(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৩; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০২।
আল্লামা আলাউদ্দীন ইবনুত তুরকুমানী রাহ. বলেন, এটি একটি মর্যাদাপুর্ণ সহীহ সনদ س। هذا سند صحيح جليل جليل)
১৭. ইমাম আবদুর রাযযাক রাহ. আমর ইবনে দীনার থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, সদকাতুল ফিতর হল দুই মুদ (আধা সা) গম অথবা এক সা খেজুর বা যব। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৩। )
১৮. হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন, মারওয়ান ইবনুল হাকাম হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর নিকট দূত পাঠান যে, আপনার গোলামের সদকায়ে ফিতর আমার কাছে পাঠান। আবু সাঈদ খুদরী রা. দূতকে বললেন, মারওয়ানের তো (বিধান) জানা নেই।
প্রতি ঈদুল ফিতরে আমাদের প্রদেয় হচ্ছে, মাথাপিছু এক সা খেজুর বা আধা সা গম।
إن مروان بعث إلى أبي سعيد : أن ابعث إلي بزكاة رقيقك، فقال أبو سعيد للرسول : إن مروان لا يعلم، إنما علينا أن نعطي لكل رأس عند كل فطر صاعا من تمر أو نصف صاع من بر.
(শরহু মাআনিল আছার ১/৩৪৯; শরহু মুশকিলুল আছার ৯/২৬। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, এ সনদটি সহীহ। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, এই হাদীসের সকল রাবী ছিকা ও বিশ্বস্ত। )
১৯. আবু যুবাইর রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা.কে বলতে শুনেছেন, ছোট-বড়, গোলাম-স্বাধীন সকলের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা অপরিহার্য, দুই মুদ (আধা সা) গম অথবা এক সা খেজুর বা যব।
صدقة الفطر على كل مسلم صغير وكبير، عبد أو حر، مدان من قمح، أو صاع من تمر أو شعير.
(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৫; মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০২; সুনানে দারা কুতনী ২/১৫১)
বিশিষ্ট তাবেয়ীদের অভিমত
২০. সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ. বলেন, রোযাদারের অবশ্য কর্তব্য সদকাতুল ফিতর আদায় করা; দুই মুদ (আধা সা) গম অথবা এক সা খেজুর।
زكاة الفطر على من صام مدان من حنطة أو صاع من تمر.
(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৮; শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫১। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, এ সনদটি সহীহ। )
২১. ইসমাঈল ইবনে সালেম রাহ. ইমাম শাবী রাহ.-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যে, (সদকাতুল ফিতর হল) আধা সা গম অথবা এক সা খেজুর বা যব।
نصف صاع من بر، أو صاع من تمر أو شعير.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১)
২২. মুজাহিদ রাহ. বলেন, প্রত্যেকের প্রদেয় হচ্ছে গমের ক্ষেত্রে আধা সা।
আর গম ছাড়া অন্যান্য খাদ্য যেমন খেজুর, কিসমিস, পনির, যব ইত্যাদিতে পুরা এক সা।
عن كل إنسان نصف صاع من قمح، وما خالف القمح من تمر أو زبيب أو أقط أو شعير أو غيره فصاع تام.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৫। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, রেওয়ায়েতটি সহীহ। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, এ রেওয়ায়েতের সকল রাবী ছিকাহ ও নির্ভরযোগ্য এবং বুখারী-মুসলিমের রাবী। )
২৩. হাসান বসরী রাহ. থেকেও অনুরূপ বক্তব্য বর্ণিত আছে।
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১। আল্লামা ইবনুত তুরকুমানী রাহ. বলেন, এটি সহীহ সনদ, এতে কোনো আপত্তি নেই। )
২৪. হযরত তাউস রাহ. বলেন, আধা সা গম অথবা এক সা খেজুর।
نصف صاع من قمح نصف صاع من قمح أو صاع من تمر.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৩; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৪)
২৫. আতা রাহ.বলেন, দুই মুদ গম অথবা এক সা খেজুর বা যব।
مدان من قمح أو صاع من تمر أو شعير.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০২; সুনানে দারা কুতনী ২/১৪২)
২৬. ইমাম শুবা রাহ. হাকাম ও হাম্মাদ রাহ. কে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
উত্তরে তাঁরা বলেছেন, نصف صاع حنطة আধা সা গম। শুবা রাহ. বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনুল কাসেম এবং সাআদ ইবনে ইবরাহীমকেও এ প্রশ্ন করেছি, , فقالا مثل ذلك তারাও একই কথা বলেছেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৩; শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫১। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, এটি একটি সহীহ সনদ। )
২৭. ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. বলেন, ছোট-বড়, গোলাম-স্বাধীন প্রত্যেকের পক্ষ থেকে প্রদেয় হচ্ছে আধা সা গম।
عن الصغير والكبير، والحر والعبد، عن كل إنسان نصف صاع من قمح.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১। শায়খ শুআইব আরনাউত এর সকল রাবীকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। )
২৮. আবু হাবীব রাহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ রাহ.কে সদকাতুল ফিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উত্তরে তিনি বলেছেন,نصف صاع من حنطة أو دقيق ن. আধা সা গম বা আটা। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৩)
২৯. আউফ রাহ.বলেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. উমর ইবনে আরতাত রাহ.-এর নিকট পত্র লেখেন, যা বসরার মিম্বারে পঠিত হয়েছে, যাতে তাঁর প্রতি নির্দেশ ছিল-তুমি তোমার অধীনস্থ মুসলমানদেরকে এক সা খেজুর বা আধা সা গম সদকাতুল ফিতর আদায়ের আদেশ কর।
أما أما بعد، فمر من قبلك من المسلمين أن يخرجوا صدقة الفطر صاعا من تمر، أو نصف صاع من بر.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৩। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, হাদীসটির সকল রাবী নির্ভরযোগ্য ও সহীহ-এর রাবী। ’
অপর একটি বর্ণনায় আছে, কুবরা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট সদকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ.-এর পত্র পৌঁছেছে, যাতে একথা ছিল যে, প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষ থেকে আধা সা বা তার মূল্য আধা দিরহাম ফিতরা (আদায় করতে হবে)।
جاءنا كتاب عمر بن عبد العزيز في صدقة الفطر : نصف صاع عن كل إنسان أو قيمته : نصف درهم.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৮)
৩০. আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি সকলকে ঈদগাহে যাওয়ার আগেই এক সা খেজুর বা আধা সা গম ফিতরা দেওয়ার আদেশ করতেন।
كان يأمر أن يلقي الرجل قبل أن يخرج صاعا من تمر، أو نصف صاع من قمح.
(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৭)
বিশিষ্ট তাবে তাবেয়ীগণের অভিমত
৩১. ইমাম আওযাঈ রাহ. বলেন,
يؤدي كل إنسان مدين من قمح بمد أهل بلده. প্রত্যেকে প্রদান করবে নিজ দেশের মুদ (পাত্র) দ্বারা দুই মুদ।
(আততামহীদ, ইবনে আবদুল বার ৪/১৩৯)
৩২. ইমাম লাইস রাহ. বলেন, গমের ক্ষেত্রে হিশামের মুদে (পাত্র) দুই মুদ আর খেজুর, যব ও পনিরের ক্ষেত্রে চার মুদ (বা এক সা)।
بمد هشام، وأربعة أمداد من التمر والشعير والأقط. مدين من قمح
(আততামহীদ ৪/১৩৯)
বিশুদ্ধতা ও প্রসিদ্ধির ক্ষেত্রে আধা সা বিষয়ক হাদীসসমূহের অবস্থান
এ পর্যন্ত উল্লেখিত আধা সা সম্পর্কিত হাদীস ও আছারের উপর চিন্তা করলে যে বিষয়গুলো পরিষ্কার বোঝা যায় তাই এই-
১. আধা সা সম্পর্কে একাধিক মারফূ হাদীস রয়েছে, যেগুলোর সনদ সহীহ বা হাসান।
এ প্রবন্ধে যে হাদীসগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর সাথে হাদীস বিশারদগণের মন্তব্যও উল্লেখ করা হয়েছে।
২. আধা সা সম্পর্কে সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-এর মুরসাল হাদীসটি দলীল হিসেবে যথেষ্ট ছিল। অথচ সেই মুরসাল হাদীসের সাথে শুধু এই প্রবন্ধেই উল্লেখ করা হয়েছে নয়টি মারফূ হাদীস, যার চারটি মুত্তাসিল এবং পাঁচটি মুরসাল; আরো উল্লেখ করা হয়েছে এগারটি আছারে সাহাবা এবং তেরজন তাবেয়ীর ফতোয়া।
এই সকল হাদীস ও আছারের কারণে মূল বিষয়টিকে মাশহুর-মুস্তাফীয তো বটেই, মুতাওয়াতির বলা হলেও অতিশয়োক্তি হবে না। মুহাদ্দিস আহমদ আল গুমারী রাহ., যিনি বিগত শতাব্দীর হাতে গোনা কয়েকজন হাফেযে হাদীসের অন্যতম ছিলেন, তিনি এমন মন্তব্যই করেছেন।
উল্লেখ্য, এ প্রবন্ধে উল্লেখিত বেশ কিছু হাদীস ও আছার একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে। সনদের ভিন্নতার কারণে প্রত্যেকটি আলাদা হাদীস বলে গণ্য হবে।
৩. উপরোক্ত হাদীস ও আছারে বর্ণিত বিধানটির (অর্থাৎ খেজুর, যব ইত্যাদির এক সা আর গমের আধা সা) একটি বিশেষত্ব এই যে, তা ঘোষণা করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষক পাঠিয়েছিলেন, যা একাধিক রেওয়ায়েতে আছে।
এ থেকে বোঝা যায়, বিধানটি ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি তা ব্যাপকভাবে অবগত করতে চেয়েছেন। এ থেকে আরো বোঝা যায়, এক সা ও আধা সা শরীয়তের দৃষ্টিতে দুটি স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। এজন্য উপরোক্ত হাদীসগুলোতে بعث بعث مناديا (ঘোষক পাঠিয়েছেন) أمر أمر مناديا مناديا (ঘোষককে আদেশ করেছেন) ইত্যাদি শব্দগুলো বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
৪. এ বিধানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, তা বর্ণনা করার জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর একাধিক খলীফায়ে রাশেদ এবং কয়েকজন সাহাবী ঈদুল ফিতরের আগে আলাদাভাবে ভাষণ দিয়েছেন। পূর্বোক্ত হাদীস ও আছারে বর্ণিত خطب (ভাষণ দিয়েছেন) শব্দটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রকৃত উত্তরসূরী আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ.-এ বিষয়ের বিধান সম্বলিত লিখিত ফরমান জারি করেছিলেন। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, তাঁর একটি ফরমানে শুধু আধা সা গম বা তার মূল্যের কথাই বলা হয়েছিল।
৫. খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল ও ফতোয়াও এই ছিল যে, গম দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করলে আধা সা দিবে। আর হাদীসে বর্ণিত বিধানের অনুকূলে যখন খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল ও সুন্নাহ পাওয়া যায় তখন তার অর্থ হয়, বিধানটি অটল ও মোহকাম, তা
মানসূখ বা রহিত নয়; এবং তাতে ভিন্ন ব্যাখ্যারও অবকাশ নেই। তা নবী-নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত-عليكمعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدينا (তোমাদের জন্য অপরিহার্য, আমার সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাদেশীনের সুন্নাহকে অনুসরণ করা)।
৬. খোলাফায়ে রাশেদীন ছাড়া অন্যান্য ফকীহ সাহাবীও এই ফতোয়া দিয়েছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. এবং হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাহ.-এর ব্যক্তিগত আমল ভিন্ন হলেও তাঁরা কেউ এ কথা বলেননি, আধা সা গম আদায় করলে ফিতরা আদায় হবে না। তাঁরা আগ্রহী ছিলেন হাদীসে বর্ণিত খাদ্যবস্ত্ত দ্বারাই ফিতরা আদায় করতে। আর ঘটনাক্রমে আধা সা সংক্রান্ত মারফূ হাদীস জানা না থাকায় তাঁরা সেটি দ্বারা ফিতরা আদায় করতে চাইতেন না। কিন্তু কখনোই তাঁরা এই ফতোয়া দেননি যে, আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায় হবে না; বরং ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আবু সায়ীদ খুদরী মারওয়ান ইবনুল হাকামকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-
إن مروان لا يعلم، إنما علينا أن نعطي لكل رأس عند كل فطر صاعا من تمر أو نصف صاع من بر.
মারওয়ানের তো জানা নেই।
প্রতি ঈদুল ফিতরে আমাদের প্রদেয় হচ্ছে মাথাপিছু এক সা খেজুর অথবা আধা সা গম। (শরহু মাআনিল আছার ১/৩৪৯)
তেমনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকেও বর্ণিত আছে যে, আবু মিজলায রাহ. তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন-
إن إن الله قد أوسع، والبر أفضل من التمر؟
আল্লাহ তাআলা স্বচ্ছলতা দিয়েছেন আর গম খেজুরের চেয়ে শ্রেয়। (অতএব আপনি গম দিয়ে ফিতরা আদায় করছেন না কেন?) উত্তরে ইবনে উমর রা. বলেছেন-
إن أصحابي سلكوا طريقا، وأنا أحب أن أسلكه
আমার সঙ্গীরা যে পথে চলেছেন আমিও সে পথে চলতেই পছন্দ করি। অর্থাৎ তাঁদের মতো খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করাই আমার কাছে পছন্দনীয়। তো প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিজের পছন্দের কথা বলেছেন।
প্রশ্নকারীর কথাকে খন্ডন করেননি কিংবা এ কথাও বলেননি যে, তা দ্বারা ফিতরা আদায় হবে না।
সারকথা এই যে, আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায় হয়- এ বিষয়ে সকল সাহাবীর ইজমা ছিল। তো যে হাদীসের অনুকূলে ফকীহ সাহাবীগণ আমল করেছেন ও ফতোয়া দিয়েছেন, এরপর শীর্ষস্থানীয় মনীষী তাবেয়ীগণ আমল করেছেন ও ফতোয়া দিয়েছেন, যাদের মধ্যে মদীনা শরীফের সাত ফকীহ ও মুসলিম জাহানের বড় বড় ফকীহ তাবেয়ীও অন্তর্ভুক্ত, সে হাদীস যে متلقى بالقبول তথা সর্বজনগৃহীত সে বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ থাকতে পারে? আর এতো জানা কথা যে, ‘খবরে ওয়াহিদ’ শ্রেণীর কোনো হাদীসও যখন متلقى متلقى بالقبول (সর্বজনগৃহীত) হয়ে যায় তখন জুমহুর ফকীহ, মুহাদ্দিস ও উসূলবিদদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এই যে, তা মুতাওয়াতিরের মতো قطعي قطعي ও সন্দেহাতীত বলে গণ্য হয়। তাহলে যে হাদীস সনদের বিচারেও মাশহুর ও মুস্তাফীয তা যদি খাইরুল কুরূনের ফকীহদের নিকট تقلى بالقبول ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে তার বিশুদ্ধতার বিষয়ে কি কারো প্রশ্ন তোলারও অবকাশ থাকে?
এজন্য কেউ যদি আধা সা বিষয়ক হাদীসসমূহের উপর আপত্তি করে তবে সেটা হবে তার বিচ্যুতি, যদি না তার আপত্তি বিশেষ কোনো সনদের ক্ষেত্রে হয়। বলাবাহুল্য, কোনো বিষয়ে যদি বহু সংখ্যক হাদীস বিদ্যমান থাকলে আর সেগুলোর কোনো একটি হাদীস যয়ীফ হলে ঐ বিষয়টি প্রামাণ্য হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সংশয় প্রকাশ করা যায় না।
তেমনি কোনো হাদীসের যদি অনেকগুলো সহীহ সনদ থাকে আর তা কোনো যয়ীফ রাবীও রেওয়ায়েত করে তাহলে তার রেওয়ায়েতের কারণে মূল হাদীসটিকে যয়ীফ বলা যায় না।
চলবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।