“হালকা হাসি চোখে জল”...এইতো জীবন ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, আফ্রিকার এই দেশটির আয়তন বাংলাদেশের প্রায় ১৬ গুন। কিন্তু জনসঙ্খ্যা মাত্র ছয় কোটির কিছু বেশি। এই ছয় কোটি লোকের মধ্যে আবার আছে চার শো’রও বেশি গোত্র। একেক গোত্রের লোকজনের সাথে অন্যদের ভাষা, সংস্কৃতি, আচার ব্যাবহারের অনেক পার্থক্য। কিন্তু যে গোত্রটির সাথে আর কারোরই কোন বিষয়েই কোন ধরনের মিল পাওয়া যাবেনা তারা হল পিগমি।
কঙ্গোর এই বিচিত্র প্রজাতির মানুষদের সম্পর্কে আমরা অনেকেই খুব একটা বেশি কিছু জানিনা।
তাই প্রথমেই পিগমিদের সম্পর্কে কিছু সাধারন ধারনা দিয়ে নেই।
পিগমি শব্দটার অর্থই হচ্ছে “যা সাইজে ছোট”। ইন্টারনেটে দেখলাম লেখা আছে পিগ্মিদের সাইজ হয় সাধারনত পাচ ফুটের কিছু কম। কিন্তু আমি বাস্তবে যতগুলো পিগমি দেখেছি একজনের উচ্চতাও চার ফুটের বেশি হবেনা।
এরা সাধারনত জঙ্গলের ভিতরেই থাকে, বিভিন্ন ধরনের বন্য পশু যেমন এন্টেলোপ(এক প্রজাতির হরিন),বন্য শুকর, ওকাপি (জেব্রার মত দেখতে,যা শুধু কঙ্গোতেই পাওয়া যায়),বানর এগুলো শিকার করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। সভ্য জগতের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ না থাকলেও বিভিন্ন প্রয়োজনে পিগমিদের মাঝে মাঝেই গ্রামের রাস্তাঘাটে বা বাজারে আসতে হয়। তাই বলতে গেলে জীবন ধারনের তাগিদে কোন না কোনভাবে তারা আশেপাশের গ্রামের লোকজনের উপর নির্ভরশীল।
কঙ্গোতে আসার পর পিগমিদের স্বচক্ষে দেখে আর স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে তাদের সম্পর্কে বেশ কিছু বিচিত্র তথ্য জানতে পারলাম। ভাবলাম সেগুলো শেয়ার করি।
# কঙ্গোতে অনেক গোত্রের লোক আছে যারা পিগমিদের এখনও মানুষ বলে মনে করেনা,আজ থেকে দশ বছর আগেও এখানে পিগমিদের শিকার করে তাদের মাংস খাওয়া হত।
# পিগমি কালচারকে বলা হয় কঙ্গোর সবচেয়ে প্রাচীন কালচার। এখন তাদের মানুষ মনে না করা হলেও কঙ্গোর অন্যান্য সব গোত্রের জন্ম হয়েছে কিন্তু পিগমিদের থেকেই।
# পিগমিদের মধ্যেও আবার বেশ কয়েকটি গোত্র আছে। এদের মধ্যে কিছু আছে যাদের বলা হয় ‘পিগমি স্লেভ’।
এরা ‘বান্টু’ গোত্রের পিগমিদের দাস হিসেবে কাজ করে। বিনিময়ে মাঝে মাঝে কিছু খাবার দাবার পায়। বেশীর ভাগ সময়ই কিছু পায়না। কিন্তু জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তারা ‘বান্টু’দের দাস হিসেবেই কাজ করে।
# উনিশ শ’ সালের শুরুর দিকেও কঙ্গো থেকে পিগমিদের এক্সপোর্ট করা হত আমেরিকা আর ইউরোপ এর অনেক দেশে, সেখানে চিড়িয়াখানায় রাখা হত তাদের!!
# “আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে” কথাটা মনে হয় শুধুমাত্র পিগমিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
কারন ‘পিগমি স্লেভ’ ছাড়া অন্যান্য পিগমিদের মধ্যে কোন নেতা বা দলপতি নাই। কিন্তু তবুও তাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ বা মারামারি কখনোই হয়না।
# হয়তবা প্রকৃতিগত ভাবেই পিগমিরা খর্বাকৃতির। কিন্তু ধারনা করা হয় যে সূর্যের আলোতে না আসার কারনে ভিটামিন ডি এর অভাবে তাদের শরীরের বৃদ্ধি হয়না।
# সাইজে ছোট হলে কি হবে, একটা হাতি শিকার করার জন্য নাকি দুইজন পিগমিই যথেষ্ট।
যেকোন সাধারন মানুষের চেয়ে কয়েকগুন বেশি ভারী বোঝা বহন করতে পারে তারা।
# পিগমিদের দেখে তাদের বয়স সম্পর্কে কোন আইডিয়া করা একেবারেই সম্ভব না। দুইজন পিগমিকে পাশাপাশি দাড় করালে তাদের মুখ দেখে আপনি কখনোই আলাদা করতে পারবেন না কার বয়স বিশ বছর আর কার বয়স পঞ্চাশ বছর!!
# রোগ বালাই হলে পিগমিরা কখনোই ওষুধ খায়না। অনেক সময় তাদের জন্য চিকিৎসা বা ওষুধ সরবরাহের ব্যাবস্থা করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের ধারনা ওষুধ খেলে তার পরেরদিনই সে মারা যাবে। কোন ভাবেই তাদেরকে ঔষধ খাওয়ানো সম্ভব হয়নি।
# পিগমিরা যে জঙ্গলে বাস করে সেই জঙ্গলকেই তারা তাদের দেবতা মনে করে। তাদের বিশ্বাস জঙ্গলে যা শিকার পাওয়া যায় সেটার উপর নির্ভর করাটাই তাদের জন্য মঙ্গল। এজন্য তারা কখনই চাষাবাদ করেনা।
# জঙ্গলে থাকে তাতে কি, বিয়ার টা কিন্তু ভালই চেনে পিগমিরা। সপ্তাহে একদিন জঙ্গল থেকে কাঠ নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করে আর কিনে নিয়ে যায় প্রচুর বিয়ার আর hamp (এক ধরনের তামাক)।
# জামাকাপড় তো দুরের কথা, কোন ধরনের আবরণ ছাড়াই এখনো অনেক পিগমিকে দেখা যায় রাস্তাঘাটে বা বাজারে!!
# কঙ্গোতে পিগমির সংখ্যা প্রায় পাচ লক্ষ। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে এদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থাতেই এখন পর্যন্ত তাদের একজন প্রতিনিধিও নাই।
ইদানিং বনজঙ্গল কেটে ফেলা আর তাদের আবাসস্থলকে ‘ন্যাশনাল পার্কে’ পরিনত করায় পিগমিরা এখন খুবই বিপর্যয়ের সম্মুখীন। তাই অনেকে তাদের আদি নিবাস ছেড়ে এখন গ্রামের দিকে এসে বসবাস করা শুরু করেছে। কেউ কেউ নাকি এখন চাষবাস আর ব্যবসা বানিজ্যও করে।
কিছুদিন আগে শুনলাম একটা গ্রামে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে পিগমিদের মধ্যে ফুটবল প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছিল। ইচ্ছা ছিল দেখতে যাওয়ার কিন্তু যাওয়ার সুযোগ পাইনি। শুনেছি কঙ্গোর ফুটবল টিমটা নাকি বেশ ভাল। তাই আশা করছি ভবিষ্যতে বিশ্বকাপে এরা চান্স পেলে সেখানে দুই একজন পিগমি ফুটবলারও হয়ত দেখা যাবে!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।