আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষাজীবনে আমার দেয়া কিছু আজব থিয়োরী....আর শিক্ষকদের সাথে কিছু মজার ঘটনা..

শিক্ষকদের আমি বরাবরই অনেক সম্মান করি বা করার চেস্টা করি। কিন্তু দীর্ঘ ছাএ জীবনে কিছু না কিছু মজার কান্ড শিক্ষকদের সাথে ঘটেই যায়। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া তেমনি কিছু মজার ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। সামুতে যারা শিক্ষক আছেন তারা আবার আমাকে বেয়াদপ বলে এই বুড়া বয়েসে কান ধরে বেন্চ এর উপর দাড়াতে বলবেন না প্লীজ। ## জোনাক পোকার আলো : সবার আগে মনে পড়ছে কলেজ জীবনের একটা ঘটনা, ফিজিক্স এর ক্লাসে স্যার ফিলামেন্ট জাতীয় কিছু একটা পড়াচ্ছিলেন।

যতদূর মনে পড়ে ফিলামেন্ট হল এমন এক আজিব চীজ যা দিয়ে দূরবর্তী নক্ষএ যেমন সূর্য ও অনান্য তারাদের তাপ মাপা হয়। তো স্যার যখন ব্যাপারটা পড়াচ্ছিলেন তার কিছুদিন আগে আমি একটা বইয়ে পড়েছিলাম কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া করে ঠান্ডা আগুন তৈরি করা যায়। তো স্যর এর টপিক শুনে আমি স্যারকে হাসিমুখে প্রশ্ন করলাম এইটা দিয়ে কি ঠান্ডা আগুনের তাপ মাপা যাবে ? প্রশ্ন শুনে স্যার কিন্চিত বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ঠান্ডা আগুন আবার কি জিনিস ? উদাহরন দাও। আমি তখনও জানতাম না আমার উপর আল্লাহ কত নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছেন। যাই হোক ঐ মুহু্র্তে আমি আবার ভূলে গিয়েছিলাম..ঠান্ডা আলো কিভাবে তৈরি করা যায়।

তাই খানিকক্ষন উমম..মমম...মমম করলাম...খানিকক্ষন আমতা আমতা করলাম...অবশেষে বললাম এই যেমন ধরেন জোনাক পোকার আলো ? ফিলামেন্ট দিয়ে কি স্যার জোনাক পোকার যে আলো তার তাপ মাপা যাবে ?...... ব্যস আর যাবা কোথায় ....বেয়াদপপপপপপপপপপপপপপপপপপপপপপ..............বেয়াদপি করো আমার সাথে ? জানো আমি তোমার কত বড় ? জানো কত গুরুত্বপূর্ন একটা টপিক এইটা ? আর তুমি জোনাক পোকার আলো নিয়ে আমার সাথে ইয়ার্কি করো ? তোমার মত বেয়াদপ ক্লাসে থাকলে আমি আর পড়াব না। ..... এই বলে স্যার রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। তারপর কত মাফ চাওয়া চায়ি। কত কেলেংকারি। ফিউউউউ....... স্যার এর সাথে বেয়াদপি এর শাস্তিসরুপ সেই টপিকটা স্যার আর আমাদেরকে পড়াননি।

আমিও টপিকটা আজো ঠিক মতন বুজতে পারিনি। বরং রাসায়নিক বিক্রিয়া করে আসলেই ঠান্ডা আগুন বানানো যায় কিনা..তাই নিয়েই এখন আমি কনফিউজড....হে হে হে.. আপনারা আবার ভাববেন না স্যার আমাদেরকে ফাকি দিয়ে আসলে টপিকটা পড়াননি। স্যার ছিলেন আসলেই একজন খুব ভালো মানুষ এবং ভালো শিক্ষক। আমি খুব দুষ্ট ছিলাম তো তাই ঐদিন স্যার অমন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাত ঘটিয়েছিলেন .... গাছ এর শরীর নাকি স্পন্জ এর মতন : এবারও কলেজ এর আরেকটি ঘটনা, আমাদের কলেজ এর নিয়ম ছিল প্রতেক বৃহস্পতিবার মৌখিক পরীক্ষার। দশ মার্ক এর কুইজ ছিল সেটা।

ছয় নাম্বার পেলে পাশ। পাশ না করতে পারলে ডিটেনশনে দিত। ডিটেনশন ছিল তখন আমাদের কাছে এক আতংকের নাম। কারন ছুটির পর পড়া শেষ করে দিয়ে তারপর আমাদের যেতে হত। তো যাই হোক আমাদের বায়োলজী মৌখিক কুইজ শুরু হল।

আমি ঐদিন কিছুই পারিনা। অল্প একটু পরেছিলাম কিন্তু জানতাম, তাই দিয়ে পাশ হবেনা। ডিটেনশন নিশ্চিত। টেনশনে হাত পা ঘামাচ্ছে কি করি ...এই ভাবতে ভাবতে স্যার দিলেন আমাকে ডাক.... আমাকে জিগ্গেশ করলেন। বলো গাছ কিভাবে মাটি থেকে পানি গ্রহন করে ? আমার তখন এইটুকি মনে আছে গাছ জাইলেম ফ্লোয়েম নামক কিছু টিস্যু দিয়ে জটিল প্রক্রিয়া এর মাধ্যমে পানি গ্রহন করে।

কিন্ত ব্যাপারটা আমার কাছে পরিস্কার ছিল না। তাই আমি স্যারকে বললাম স্যার পুরান ধ্যান ধারনা বাদ। আমি গতকাল রাতে পড়তে পড়তে একটা নতুন থিয়োরী আবিষ্কার করেছি। সেইটা শুনেন। স্যার বল্লেন, ঠিক আছে বল, তোমার নতুন থিয়োরী।

আমি বললাম স্যার, গাছের শরীর হল বিশেষ ধরনের স্পন্জ এর মতন। স্পন্জ যেমন পানি শুষে নিতে পারে। গাছও তেমন মাটি থেকে পানি শুষে নেয়। আমার থিয়োরী শুনে স্যার বললেন, তোমার থিয়োরী ভুল। তারপর গাছের জাইলেম ফ্লোয়েম এর থিয়োরী আবার শুনালেন।

আর এর মধ্যেই স্যার এর ধারনা হল আমি যথেস্ট পরেছি। তাই স্যার আমাকে কুইজ এর ফুল দশ মার্ক দিয়ে বসিয়ে দিলেন ..... জটিল ম্যাথ এর সহজ সমাধান :এবার ইউনিভার্সিটি এর একটি ঘটনা। ম্যাথ ক্লাশে কিছু জটিল সমাধান করাচ্ছেন স্যার। দেখলাম কথা নাই, বার্তা নাই হুঠ হাঠ করে স্যার দুইপাশে নানান কিছু দিয়ে গুন করছেন। আমি বললাম স্যার এত কিছু না করে দুইপাশে শূন্য দিয়ে গুন করলেই তো হয়।

উভয়পাশে শুন্য মানে সমাধান মিলে গেল.. । স্যার জবাব দিলেন, হবেনা কেন ...অবশ্যই হবে। তুমি পরিক্ষার খাতাতে এইভাবেই কর। আমিও তোমার মার্ক এর সাথে শূন্য গুন করে মিলানোর চেস্টা করব । ## পরীক্ষার খাতা :ইউনিভার্সিটি তে মিড টার্ম পরীক্ষার খাতা দিচ্ছেলেন স্যার।

আমি তখন মহা ফাকিঁবাজ। কিন্তু স্যার যে সাবজেক্ট এর খাতা দিচ্ছিলেন ঐ সাবজেক্টে আমি পড়াশুনা শুরু করে দিয়েছি স্যার জানতেন না। তো স্যার একটা খাতা তুলে বললেন এইটা নিশ্চয় তোমার খাতা। ২৫/৬ পেয়েছো। শোনো তোমাকে বলি তোমার যদি পড়াশুনা ভালো না লাগে, তাহলে বাদ দা্ও কম্পিউটার সায়েন্স তোমার জন্য না।

অন্য কিছু গিয়ে পড়। এখনো সময় আছে। পুরাই ইজ্জত এর উপর হামলা...বেকুব হয়ে স্যার এর দিকে তাকাইয়া থাকলাম... পরে স্যার যখন খাতা হাতে দিলেন...দেখি ওমা...খাতা তো আমার না..খাতা আরেকজন এর যার রোল ১৬ আর আমার হল ১৯ ...পরে আমার খাতা যখন পেলাম দেখি ২৫/১৮ পেয়েছি ...স্যার ধরা ... ## বিনে পয়সায় বিদ্যুৎ আর বিদ্যুৎ :এবার যে স্যার কে নিয়ে কথা বলব, তাকে আপনারা অনেকেই চিনেন। তিনি আর কেউ নন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ওসমান গনি তালুকদার।

যিনি সম্প্রতি আইনস্টাইন এর থিয়োরী সম্পূর্ন করেছেন বলে দাবী করেছেন। উনি অসম্ভব একজন ভালো মানুষ। আমার ৎত্যন্ত প্রিয় একজন শিক্ষক। উনাকে একবার আমি প্রশ্ন করলাম স্যার যেহেতু টারবাইন ঘুরলেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। সেহেতু আমরা এমন একটা টারবাইন বানাই না কেন যেটা প্রথমে তেল দিয়ে ঘোরা শুরু করবে।

এরপর যেই কিছু বিদুৎ উৎপন্ন হবে সেই বিদ্যুৎ দিয়ে আমরা টারবাইন টা ঘুরাবো আর তেল লাইন অফ করে দিবো। তাতে তেল এর খরচ বাচবে। বিদ্যুৎ এর দামও অনেক কমে যাবে ....স্যার আমাকে হাসতে হাসতে বললেন, তুমি এমন কিছু বানাও, আমি তোমাকে ওয়াদা করলাম, তোমাকে আমি নবেল এনে দিব...। এর কিছুদিন পর পেপার এ দেখলাম চিটাগং এর এক ভাই এমন একটা থিয়োরী দিয়ে বিদ্যুত বানিয়েছেন। আমিতো উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটতে ফুটতে স্যারকে গিয়ে বললাম।

স্যার দেখছেন আমি যা বলেছিলাম সেইভাবে একজন বিদ্যুত বানিয়েছেন। স্যার সাথে সাথে বিরক্ত হয়ে বললেন, এমন অদ্ভুত কথা বলবা না। কারন এইটা কখনো সম্ভব না। শক্তি অবিনাশী। তুমি তাকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থা নিতে পারবা শুধু।

নতুন করে শক্তি বানাতে অথবা ধবংস করতে পারবা না। তোমার টারবাইন ঘুরাতে যে পরিমান বিদ্যুৎ দিবা, তাতেই সব শেষ হয়ে যাবে। সেই বিদ্যুৎ অন্য কোথাও কাজে লাগাতে পারবা না.... সেভেন ষ্টার গ্রুপ : আমাদের কলেজ ভবনটি ছিল তিনতলা। পুরা কলেজের মধ্যে আমাদের ক্লাসে আমরা এত চিল্লাপাল্লা করতাম যে পুরা তিনতলা গমগম করত । তো একদিন চিল্লা চিল্লি করতেছি এমন সময় আমাদের ইউনিট চীফ এসে বললেন, পামেল, নাদিম, নাজমুল, ইথার, সমর, শুভ, মেহেদী তোমরা দাড়াও..দাড়ালাম....আজকে থেকে এই ক্লাশ এর দায়িত্ব তোমাদের।

তোমরা এখন থেকে এই ক্লাস সামলাবা..যদি কোন চিৎকার চেচামেচী আমি শুনি , তোমাদের ধরব আমি আর সাতজনকেই ডিটেনশনে দিব। শুনে তো সবাই অবাক...ক্লাস এর সব থেকে দুষ্ট গুলাই নাকি ক্লাস সামলাবে। ইউনিট চীফ এর মাথা নিশ্চয় গেছে..লোল...মাথা আসলেই কার গিয়েছিল পরদিনই সবাই বুজেছিল। পুরা তিনতলা একদম শুনসান নিঝুম হোয়ে গেসিল...সেই থেকে কলেজে আমাদের পরিচয় ছিল, ইউনিট চীফের সেভেন স্টার গ্রুপ... ## কলেজ ক্যাম্পাস :একবার ধানমন্ডিতে কলেজ টাইমে কি এক কারনে কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে ড্রেস ছাড়া ঘুরছিলাম। হটাৎ দেখে ফেললেন এক স্যার।

পরদিন ক্লাসে গেলে উনি প্রশ্ন করলেন ড্রেস ছাড়া কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করছিলাম কেন ? আমি বললাম স্যার আমার তো গতকাল অফ ছিল। তাই ড্রেস ছাড়া ধানমন্ডিতে ঘুরছিলাম। কলেজ ক্যাম্পাসে তো আসিনি। স্যার বললেন পুরা ধানমন্ডিতে আমাদের কলেজ এর ইউনিট আছে। তাই পুরা ধানমন্ডি আমাদের কলেজ এর ক্যাম্পাস।

আমি শুনে বললাম...হু..এখন আমি যদি টেকনাফে একটা ইউনিট আর তেতুলিয়াতে একটা ইউনিট দিয়ে কলেজ চালু করি, তাহলে কি পুরা বাংলাদেশ আমাদের কলেজ এর ক্যাম্পাস হয়ে যাবে ? স্যার বললেন ..বেয়াদপ...যাও আজকে তোমার এক ঘন্টা ডিটেনশন ..। নাজমুল নূর এন্ড নাজমুল হাসান স্ট্যান্ড আপ এন্ড গেট আউট। এটা ছিল কলেজে আমাদের এক টিচার এর কথা। উনি ক্লাসে ঢুকেই এই কথা আমাদের বলতেন..আমরা দুইজন খুব দুষ্ট ছিলাম তো তাই :প , উনার এই কথার জ্বালায় খুব কমই পেরেছিলাম উনার ক্লাস করতে ... পরিশেষে : এমন অনেক মজার ঘটনা আছে আমার শিক্ষাজীবনে। মনে পড়লে আবার বলব।

খুব মিস করি শিক্ষাজীবন টাকে...লোল....খুব মজার ছিলো...তখন বুঝি নাই এখন বুঝি। আমার শিক্ষকরা ছিলেন সবাই খুব ভালো মানুষ, আমাকে খুব আদর করতেন সবাই। সবাইকে খুব মিস করি। অনেক কিছু শিখেছি উনাদের কাছ থেকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।